যখন দুঃখ প্রস্তুত হতে থাকে
দুঃখের একটি মেয়ে
অনেক দূরের
নন্দনকানন কাটা পাহাড়ের গায়ে
যখনই ছেঁড়া মেঘের জিহবা ঘামে
যখন ধরার চেষ্টা করি
আমার বাবার মানা যেন কখনোই কোন দুঃখ
হাত দিয়ে না ছুঁই।
বাবা অসুখের সময় দু’হাতে চেপে
ঝরঝর করে কাঁদতেন
আমার মা কাছে বসে দেখতেন,
আমি দূর থেকে গ্রীষ্মকালে কালোমেঘ
দেখতাম – যেন শরবিদ্ধ মানুষ বুকছিদ্র
জলের ফোয়ারা চোখের সাঁতার
একেকটা লবণের গোলা।
বাবা না বুঝে মতন অল্প জল
মুখে নিয়ে লবণের স্বাদ পাই।
একদিন সকাল বেলায় বাবা মেসওয়াক করছেন
এদিক – ওদিক ধীর পায়ে হাঁটছেন,
আমি ক্ষীণস্বরে বলি,
বাবা, তোমার দুঃখের লবণাক্ত জল ক্ষার এবং ধার জিহবার তল পর্যন্ত পৌঁছালে
তুমি – বাবাকে চিনতে সহজ উত্তম
বাবাকে দুঃখের সাথে মেলাতে ভীষণ কষ্ট একদিন মা কাঁদলে সরল বুঝতে পারি
দুঃখ – আমার অশিক্ষিত ‘মা
বাবা ভারী বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত।
শূন্য কবিতা
অতদূরের মেঘাদি তুমি আর কতদূর যাবে
যারা গেল আগে তাদের দেখতে পাবে।
ভেবো না, তুমিই শুধু যাচ্ছ একলা ও একা
পেছনে রয়েছি আমরাও একদিন হবে দেখা।
আসাটা উৎসবে আঁকা
যাওয়াটা আজ কেন একা শূন্য – ফাঁকা।
পাঠকের শেষ পৃষ্ঠা
বই ভিন্ন মাদকতা
পৃষ্ঠার পরের পৃষ্ঠা
শরীর – মনকে নিয়ে যায় তপোবনে
বারংবার হারিয়ে ফেলি গল্পের উঠোন
অরণ্য রক্তাক্ত করে আবারও খুঁজে পাই
চরিত্রের চূর্ণ ঘাট –
তখন আরম্ভ নিজেকে খোঁজার, কিম্বা তুমি,
পাঠ একটি ঘূর্ণন চক্র
হঠাৎ দেখি, একদম শেষের পাতায়
তুমি আছ
যেন দুষ্টচক্রের হাতে তোমার শ্লীলতাহানি
আমি তড়িঘড়ি বইয়ের পৃষ্ঠা বন্ধ করি
তোমার-ই জন্য ডার্ক লজেন্স খুঁজতে যাই
ভাবি, মুড সুইং হলে ভারী বিষণœতা কমে যাবে
এসব ব্যর্থতা লেখক বোঝে না
শুধু অসুস্থ করতে জানে।
বুকে বাঁচে বুকে মরে
একটা নরম ঘোর লাগা হেনাফুল
কী কথা সেদিন বলে গেল
খুব গোপনে সে নিজেকেই দেখে যাবে
একদিন – গভীর যাপনে ‘
আমাকে মুগ্ধতা দেবে হেনাফুল
আমাকে ঝাপটা মারে হেনাফুল
এ ফুলটি পৃথিবীর কোথাও ফোটে না
মৃত্তিকা রক্তাক্ত না হলে ফুলের ভ্রুণ
কখনো বাঁচে না
আমাতে আচ্ছন্ন থাকে সে সর্বদা
তার বুকে গড়ানো মহাকালের মায়া
আমি তার অনুভবের মধ্যে বাঁচি!
সে জানে দারুণ, আমি বিরামবিহীন
অনিঃশেষ চিহ্ন খুঁজি
যেন মনে হয় পু-্রবর্ধন সম্মুখে
দুপেয়ে মানুষ তাকে দেখতে পায় না
রাতের আঁধারে নৈঃশব্দ্য যখন দুঃখে ভরা
মোমবাতির বাতাস একটানা শ্বাসরুদ্ধকর…
তখন ঘুমাতে পারে না অদেখা মনোফুল
বুকে বাঁচে – বুকেই মরে সে।
বাউলের রক্তজবা হাত
চেনা পথটা হারিয়ে ফেলি
দুরের পথটা মায়া মায়া
সব পথ লড়াইয়ে একা
তবু কেন বলি, তোমারে অপয়া!
ভরা দিনে কেন নামে শূন্য পথ
মায়াবাদ চড়চড়িয়ে করুণ হাঁটে
পা – নেই এখন রুহের মিতার
জীবন ফকির নামে রুক্ষ ঘাটে।
আহ্লাদী মেঘেরা দূরে সরে যায়
ধূপগুড়ির আদরে ভরে জল
শিশুদের মন কলসের নেশা
মৃদঙ্গের তাল এগোয়নি খলবল।
মেদবহুল মেঘেরা দৌড়ে খুব
নদীঘাটে বাউলের রক্তজবা হাত
কালিদহ হবে পার অসৎ সময়ে
ভিনঘাটে উঠবে কি সোনালী প্রভাত!




