কাল
সবাই আছে কিনা তা তো জানিনা
তবে অনেকে কিন্তু আছে! মুখে কাপড় দিয়ে
আমি সোজাসাপটা, ঘোরপ্যাঁচেও নেই
সবার দেখি মুখে মুখোশ, ঘামের গন্ধে, টেলকম
সুগন্ধি আরক মাখা নতুন,নতুন লেবাস পরা
চেনা সবাই তবু অচীন লাগে।
দু- একজন খুব সরব হাজার মানুষ চুপ
কাজের কথা কেউ বলে না! গোগ্রাসে সব গিলছে
মানচিত্রের বেহাল দশা ওরা খামছে ধরছে।
দেশটা গোল্লায় যাক, পেটে পিঠে লাগুক ছ্যাঁকা
হোক না ব্যাংক ফাঁকা দূর দেশে ওদের সিন্দুক আছে রাখা।
ময়না
যে কথা কয়টা তুমি শিখেছো উড়তে উড়তে হাটখোলাতে আর তেপান্তরে গিয়ে, ওসব এখন
মন কাড়ে না, ভাতশালিকে গান শুনায়
আমার ছেলেকে ঘুম পাড়ায়,টিনের চালে
পাড়ার মাথায়!উড়ে উড়ে জাত চেনায়।
তুমি তো পোষ মানো না, ভালোমন্দ খেয়ে সুযোগ
বুঝে পালাও কেবল পালাও। ঘর চেনো না
পরের গাছে, পাতার তলে লুকিয়ে শিস দিয়ে যাও
আচ্ছা কারে তুমি রাখো খুশি! মন ভুলাও।
তোমার ওই মন পালাই, পালাই
মন ভজানো শব্দ কথায় মন ভরাও
শ্যাম রাখি না কুল রাখি, দাগা খাই, দাগা খাই।
শক্তি
তারে দেখেছিলাম এই তো ক’বছর আগে
ফুটপাত ধরে নেভেল হয়ে সি,আর,বি দিয়ে যেতে
বাতাসের দেয়াল বুকে ঠেলে! সেদিন শিরিষ গাছের
পাতার বুকে পড়তে পেরেছিলো সে প্রণয় কবিতা
শুনতে পেয়েছিল ব্যর্থ প্রেমের গান,হুড়মুড় করে
টেনে নামিয়েছিলো ঝুম বৃষ্টি, শরীরে অজস্র স্রোতের
প্লাবন, দলাইমলাই করে তেথলে দিয়েছিলো দুর্বার
মুখ ও বুক! এক বিশাল নদী টেনে নিয়ে গিয়েছিল
ঘরবাড়ি, পশুপাখি, গেরস্থালি, তৈজসের জনপদে।
আজ তাকে দেখছি হাতে নিয়ে নাড়ছে প্রজন্মের ধারাপাত,
মৃত্তিকার জমিনে খুঁজছে অতীতের রোদ
হাতড়াতে দেখছি ওকে হারানো দূরবীন।
চোখের কোণ বেয়ে নেমে যাচ্ছে পৃথিবীর ভোর,
অন্ধকার ঘরে ডুবে যাচ্ছে তেজস্ক্রিয় যৌবন।
প্রবাস
আশ্চর্য! আসলে তাই তো, চারিদিকে তাকিয়ে দেখি
সবই ঠিকঠাক আছে অথচ কি যেন নেই!
পরিচিত কিছু নেই, ভোর, রোদ, সন্ধ্যা, রাত
যার যার মতোন! জ্যোৎস্না সে তো আছে পড়ে
বাঁশঝাড়ে, বাবলা বনের ধারে! দীঘিজলে এপার ওপার
তারামণ্ডল বুকে জল ঢেউয়ে হারাই
আমি একা হয়ে যাই।
চোখের কোলে আকাশ,পাখি আর মেঘের
ঘরে ফেরার টান, সন্ধ্যা, রাত, চোরকাঁটা
আয়ুর ঘরে রাত কাটায়
চুরি করে নিয়ে যায় সবুজ পালক!
তারপর একসময় আর কেউ থাকে না
দৃষ্টিতে শুধু গ্লেসিয়ার
একা, একা, একা একাই তো…
ফিরে আসি, ফিরে আসি না!
বুকের পাথর ছুঁই।
নদী
হাতটা ছুটে যাচ্ছে আমি এগোচ্ছি, এগোই
সব অচিন, অপাঙ্গে দেখি কবিতার লোভনীয় শরীর,
উড়ে যাচ্ছে তার আধো জলেভেজা সভ্যতার আচার
জল উপচে পড়ছে স্তনের ডগা ছুঁয়ে ছলাৎ ছলাৎ!
ঘাটের সিঁড়িতে অন্য এক সলাজ ধ্রুপদ, কলসির যৌবন
মিলিয়ে যায় ঘাস মাড়িয়ে আলপথে! আমি ফিরে আসি
কামুকী বুদবুদে, ফেনা এবং ফেনায় রোমাঞ্চিত শরীর!
কবে ফেলে এসেছি বনবাদাড় সবুজ মায়া,পাথর ক্রন্দন
আমাকে নিয়ে তোমাদের বারোমাসি, ভুলে গেছি, ভুলে
গেছি স্বজন পিরিত। কত নামাবলি গায়ে আমার উদোম শরীর নিয়ে
যাযাবর ভালোবাসা ধুয়ে নিই জ্যোৎস্নায়
পাথারে! ফিরে আসি জল বুকে, ফিরে যাই জলের বিহনে।




