সোনালু ফুলের রেণু
১২.
সব শ্মশানের জন্ম হয় নদীর কিনারায়
শ্মশানে আগুন জ্বললে পাখিরা দুঃখ পায়
নদীজলে ভেসে যায় পোড়া মানুষের ছাই
শববাহকের দলে আমিও ছিলাম
পিছনে মায়ের কান্না, উত্তপ্ত রোদ্দুর
পিছনে দিদির কান্না, শীতল শঙ্খিনী
আমি মাছরাঙা, বাবাকে ঠোঁটে তুলে নিয়ে যাচ্ছি শ্মশানের দিকে
দু’ধারে গাছের সারি, উচ্ছ্বসিত ছায়া
তবুও বুকের ভেতর কান্নারত মায়ার উপমা
পাড়ার লোকেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে বিষণ্ণ হরিবোল
নদীর কিনারায় পৌঁছলে কেঁপে ওঠে বাবা
কেরোসিন, শুকনো কাঠের মাচান
দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে বাবার শরীর
নদীজলে ভেসে যায় আমাদের পিতৃছায়া
বিবর্ণ সংসারের মুখগুলো ভারী হয়ে যায়
১৩.
চাঁদের জোছনা বর্শা হয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাটির শরীরে
সূর্যের উত্তাপে সিদ্ধ হচ্ছে মানচিত্রের ধুলোবালি
ছায়ার উপর গড়াচ্ছে রোদ্দুর
পরিচিত পাখিটি উড়ে যাচ্ছে এগাছ থেকে ওগাছে
সময়টা বড্ড গোলমেলে
এপারে ওপারে মৃত শালিকের বাস
জোছনার উপর ছিটকে পড়ছে জোনাকির আলো
সূর্য নিভে গিয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে রাত্রির মমতা
মূলত, কিছুই না…
সত্য-মিথ্যার ঝাঁঝালো লড়াই
মানুষেরা আগের মতোই আছে
চাঁদটি পাখি হয়ে উড়ছে ব্যাধের নিয়মে
১৪.
দুপুর গড়িয়ে গেলে, মনে পড়ে বিরসা মুণ্ডার মুখ
এখনো তেমনি আছে
পাহাড় কাটার কোদাল বেড়েছে অনেক
চোখের সামনে পড়ে আছে বাসবরাজের গুলিবিদ্ধ লাশ
বিপ্লবী যায়, বিপ্লবী আসে
পূর্বপুরুষের রক্তাক্ত পিঠের কথা লেখা আছে ইতিহাসে
এ ইতিহাস সত্যের মতো নান্দনিক
আমরা আশা নিয়ে বাঁচি
আমরা যেকোনো সময় হয়ে যেতে পারি বিরসা মুণ্ডার তির
যুদ্ধই জীবন
বিপ্লবী যায়, বিপ্লবী আসে
১৫.
এপারে ওপারে জল। মাঝখানে চর। তবুও নদীটি নদী হয়ে বেঁচে আছে…
চরজুড়ে কাশফুল। শৈশবের লুকোচুরি…
আগুনে পুড়ছে ঘর। নদীটি দেয়নি জল। জলগর্বে উচ্ছ্বসিত নদীর জীবন । এখন শুকনো বুক। জল হাহাকার। হিংসায় হারিয়েছে নদী তার নিজস্ব যৌবন…
মাঝখানে চর নেই। আষাঢ়-শ্রাবণ। স্রোতের মায়ায় ভাসে পানসি ও কোষা…
জলের স্বভাবে বাঁচে জলীয় জীবন। জলের স্বভাবে মরে তৃষ্ণার্ত বাবুই…
নদীকথা শোনেনি মানুষ…
মাঝি ও ধীবর গেছে শ্মশানের খোঁজে…
১৬.
এইসব দিন, আর সেইসব রাত্রির ব্যবধান লিখে রাখি
শালুকের জলীয় পাতায়
উড়ে যায় জলপাখি শব্দের মোহনীয় ঝাঁকে
পুকুর উঠে আসছে উঠোনের উপর
নদী উঠে আসছে রাস্তার উপর
সাগরের জলে ভেসে যাচ্ছে তামাম দেশ
লবনাক্ত মাটির পাদদেশে বেহায়া শেয়াল
কিছু একটা শিকার করে ফিরে যাচ্ছে বনের আঁধারে
ঠেকাবার কেউ নেই
কোলাহলে কলুষিত ফসলের ক্ষেত
ফসলের মূল্য যাচ্ছে আন্দোলিত পকেটের ভেতর
কিছুই করার নেই
এইসব দিন, আর সেইসব রাত্রি এক হয়ে গেছে
তালুক পুড়ছে নিজের আগুনে
জলের কিছুই করার নেই
মানুষেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শকুনের ডাক শুনছে




