নারীস্থান
নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন মেয়েরা
তোমাদের দৃষ্টির চিরুনি অভিযানে আমি যেন শিশু বনে যাই
যদিও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে রজতজয়ন্তী পার হওয়া
আমার ভান্ডারে আছে যশ কিবা অপযশ কিছু জমা
পাহাড়ের খাদ আর সমতলভূমিতে কাদায় মাখামাখি
অভিজ্ঞলোকের চোখে আমি কিন্তু
নিতান্তই ঝানু পাবলিক এক
সত্য, আমিও দেখেছি নেত্রী অভিনেত্রী নটীর সুনন্দ মুদ্রা
এখানে-ওখানে খুব একটা কম না
মেহনতি পুরুষের ঘামঝরা চোয়ালে ভালোবাসার
মেকি রঙ মেখে ওদের টানাটানির পকেটের থেকে
দামি বিড়ি ফুঁকেছি শ্রমিক সাম্যের ইশতেহার আউড়ে
বহু বিদিশা রাতের খাঁজ কেটে কাঁধে করে
ওরা আমাকে ঘরের দোর্ েরেখে গেছে
সালাম জানিয়ে
ও মেয়েরা, তোমাদের ওই আয়ত চোখের কিনারে নয়ন রেখে
পুনর্জন্মের আজান শুনতে পাই নয়া ভরসায়
এই বৈষম্য জর্জর শিশুহত্যা বৃক্ষহত্যা নদীহত্যা
পাহাড় ও বনানীহত্যার বিরুদ্ধে হাত-পা ছোড়া
এই আমি
তোমাদের মোবারকবাদ জানাই মুমূর্ষু
এই বিশে^ নারীস্থান প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে …
২
তোমার ভুরুতে বসে কবিতার অধিষ্ঠাত্রী দেবী
সাতরঙের ধনুক হাতে ছুড়েছে যে-তির
মাশাল্লাহ
আমার হৃদয়ে পশেছে তা কবিতা, গান ও কান্না হয়ে
গ্রামের ভাষায় আর দেশীয় সুরের সঙ্গে
আমাকে দেখেছ তুমি পথের কিনারে বেহালা বাজাই
আমাকে দেখেছ তুমি কুঞ্জবনে চাঁদের কিরণে ভাসা
গভীর নিশীথে বৈষ্ণবের পদাবলি আউড়ে
ফুল গুঁজে দিচ্ছি খোঁপার বিতানে হেসে
আর্মি স্টেডিয়ামে ঝাঁকড়া চুলের যুবা সেই
স্পেনিশ গিটারে বাজাচ্ছি নব্যসুরের পৃথিবী কাঁপানো তান
সে তো তোমারই শক্তির নতুন নামকরণ
তুমি যদি আসো আমার জিহ্বার অগ্রে
উন্নত মস্তকে শুনি তোমার নসিহত
তুমিই তো বৈদিক ঋষির মন্ত্র
কর্মযোগী করো জীবনের যজ্ঞ
তুমি যদি আসো আমার চিত্তের বৈশালী মন্দিরে
ফুটে উঠি লেলিহান অগ্নি
অমিতাভ গৌতমের অর্হত্বদেশনা
আমি তোমার সৈনিক দৈনিক কুচকাওয়াজে …
৩
লেসবস দ্বীপের কবিতাময়ী স্যাফো হয়ে আসো তুমি
নিজের মতোই বাঁচো তবু এই বিশে^র করাতকলে
নীল নদ কৃষ্ণ পীত লোহিত সাগর
এই দরিদ্রের কুটিরের খুঁটি ছুঁয়ে
শীর্ণ দেহে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলি
তোমার উত্থানে ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য, বুদ্ধি ও
শাসননীতি চায় সতৃষ্ণ নয়নে
তুমি সন্তান রক্ষায় সুচালো স্তনের ধনে
দীপ্তিময়ী মোগল মিনিয়েচার
দুষ্টের দমনে কালিকার শক্তি
উত্যক্তকারীর মুখে দুর্ধর্ষ ছোবল
হাবিয়া দোজখে উহাদের গড়াগড়ি
আসমানে দুই হাত তোলা পরহেজগারের
শোকর আলহামদুলিল্লাহ
তুমি বিবি আয়েশার তরবারি
তোমাকে পেয়েছিলাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলে
হেলেন কেলারে
আলো হতে রাবিয়া বসরী তুমি
তোমার আরক্ত গোড়ালিতে মর্মরিত হতে
চায় আজ
এই বিষাদিত, বিভক্ত মেদিনী …
৪
মানুষ তো স্থানে-স্থানে, মহান আল্লার দ্যুতি
তা থেকে নারীর দূরবর্তিতা আমাকে
নিম্নবর্গীয় বালামে আলাদা করেছে
সভ্যতার এই দালাল মহিমা
মুক্তিসৈনিক মৌলভী সৈয়দের মতো প্রতিবাদে
ফেটে পড়ি তাই সবল ভাষিক বিস্ফোরণে
সেই থেকে তুমি মাতৃময়ী
সোমেশ^রী ধলেশ^রী চেঙ্গি ইছামতি মহানন্দা
এইসব নামে দুগ্ধস্্েরাত
বিলিয়ে চলেছ
ছলছল, কলকল শব্দে
কূলে-কূলে
জানো কি বর্ষায় তোমার উত্থানে
খরায় নিস্তেজ, অলস চলনে
আমি থাকি সর্বক্ষণ পিছে-পিছে
বৃহন্নলাবেশী যোদ্ধা
ইলেকট্রা
সিতারা বেগম
তারামন বিবিদের সঙ্গে লয়ে
তোমাদের পতাকা উড়াই মানবশিখরে
আকাশের প্রোজ্জ্বল প্রকোষ্ঠে
লিখি তোমাদের নাম
নিকষিত সোনার হরফে …
৫
তুমি তো জানোই বাধাগুলো কোথায়-কোথায় লুক্কায়িত থাকে
স্বজন-প্রিয়জনের আলখাল্লার ভেতরে
ঝাঁসির রানিও তাহা জানতেন
কালিন্দী দেবীর শৌর্যময় প্রতিরোধের পজ্জন
পাহাড়-পাহাড়ে ঘোরে
চোখরাঙানির যুদ্ধে রুদ্র প্রমীলা আন্তিগোনের ইতিহাস
এখানে রয়েছে জেগে
শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যাপিয়া
আবলুস কাঠের আলমিরার তাকে-তাকে
মেশকে আমবরের ঘ্রাণ হয়ে
শোনো তবে আরও, ইলা মিত্রের কাহিনি অমৃতসমান
তাহা যেমন দুঃখের- তেমন সুখের শালিমার বাগ
জালিমের অত্যাচার হজম করেছে ইলা
জননেন্দ্রিয়ে প্রতপ্ত ডিমের অসহ দাহ
তবুও অজেয়-
সে তো মা আমার সে তো ভগিনী আমারই
চাষার রক্তের পুণ্যময় মূল্যের দাবিতে
শস্যের তেভাগা আন্দোলনে …
:: পজ্জন : চাকমা শব্দ : প্রচলিত লোককথা।
৬
পুরাণে কথিত তুমি মহাতেজস্বী নন্দিনী
এই প্রান্তিকের ঘরে আছ অতুল করুণা ছিটায়ে-ছিটায়ে
গৃহকোণে
তুমি তো আদতে সেই দশভুজা, অসুরনাশিনী
বয়োক্রম বাড়িছে যতই
ভবসংসারের বিবিধ চাহিদা
দলবেঁধে আসিতেছে পুরোগামী মিছিলের মতো
তোমার গেরস্ত শাড়ির সকল ভাঁজে
রাখিতেছ তা সযতেœ গুঁজে-গুঁজে
তাতে লুকাইল গুটিসুটি শ্রীবর্জিত
এই অসুর-অধম লাজভরে
তুমি ধীরে বক্ষে মোর সম্মোহনে গাঁথিলে ত্রিশূল
কী সুন্দর হেসে
সমস্যা মোকাবিলায় তোমার ধীশক্তি
বুঝিলাম পামর- ভাঙিল আদি ভুল
সত্য, ইহাই পরমসত্য- তুমি সেই দশভুজা
মুসলমানি ধারায় নাই তাহা প্রকাশের রীতি
হিন্দুমতে তাই এ বেলা তোমারে করিলাম পূজা …




