এখন সময়:দুপুর ১২:৩৮- আজ: মঙ্গলবার-২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:৩৮- আজ: মঙ্গলবার
২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

চেনা মুখ অচেনা মুখ

রোকন রেজা:

গ্লাসডোর ঠেলে দু’জন তরুণী যখন শোরুমে ঢুকল কাঞ্চন তখন চেয়ারে আধশোয়া হয়ে লো ভলিউমে মান্না দে’র গান শুনছিল।

দোকানের মধ্যে ঢুকে ওরা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। কাঞ্চন ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে সচকিত হয়ে উঠল। ঠোঁটে মাপা বাণিজ্যিক হাসি এনে কাঞ্চন বলল, কী লাগবে আপু?

ভালো পাঞ্জাবি আর হাফ শার্ট দেখান। একটি মেয়ে বলল।

কাঞ্চন বলল, এদিকে আসুন।

কাঞ্চনের পিছু পিছু ওরা ডানদিকে সার্টের গ্যালারির দিকে এগুলো। ওদের দেহ থেকে ইন্দ্রীয় অবশ করা পারফিউমের সুগন্ধ আসছিল। এয়ার ফ্রেসনারের সুগন্ধ ছাড়িয়ে গন্ধটা কাঞ্চনের নাকে এসে আঘাত করছিল। কাঞ্চন রোমাঞ্চিত হচ্ছিল। প্রতিদিন  কতরকম মেয়েই তো কাঞ্চনের দোকানে আসে। কিন্তু এরকম মাখনের মতো তুলতুলে নরম সুন্দর মেয়ে এর আগে দেখেনি কাঞ্চন।

দু’জন ঘুরে ঘুরে ঝোলানো শার্ট দেখছিল আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। কাঞ্চন একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল। তারপর ওরা কাঞ্চনের সামনে এসে বলল, আপনাদের এখানে আর অন্য ধরনের শার্ট নেই?

জি¦, আছে। কাঞ্চন বলল। বলেই কাঞ্চন র‌্যাক থেকে ভাল ব্র্যান্ডের বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ শার্ট ওদের সামনে মেলে ধরল। ওরা একটা মেরুন রঙের শার্ট আর একটা বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি নিলো। কাঞ্চন ওগুলো প্যাকেট করে দিয়ে রিসিটে নাম লেখার সময় ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, কী নাম হবে?

মখমলের মতো মেয়েটি বেহেস্তের হুরের মতো মিষ্টি কন্ঠে বলল, সুমাইয়া তাবাস্সুম রাত্রি।

ঠিকানা?

সবুজবাগ, ঢাকা।

রিসিটে মোবাইল নাম্বার লেখার একটা ঘর আছে। কাঞ্চন মহিলা কাস্টমারদের মোবাইল নাম্বার জিজ্ঞাসা করে না। প্রথম প্রথম যখন সে মোবাইল নাম্বার চাইত বেশিরভাগ মেয়েই দিতো না। কেউ কেউ অপমানজনক কথাও বলত। সেই থেকে কাঞ্চন আর মোবাইল নাম্বার চায় না। কিন্তু কেন জানি কাঞ্চনের মনে হলো এই মেয়েটার মোবাইল নাম্বার তার প্রয়োজন। সে বুকের মধ্যে সাহস এনে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা ভঙ্গিতে বলল, মোবাইল নাম্বার?

মেয়েটা নির্দ্বিধায় নাম্বার দিয়ে দিলো।

একটা পার্টটাইম জবের বিজ্ঞাপন দেখে এখানে এসেছিল কাঞ্চন। বৈশাখি ফ্যাশন হাইজের মালিক দিলীপ দত্ত চাচ্ছিলেন একজন সৎ এবং শিক্ষিত যুবক। কাঞ্চনের পড়াশোনাটা তখনও শেষ হয়নি। অনার্স ফাইনাল ইয়ার চলছে। সাতজন এসেছিল ভাইভা দিতে। কাঞ্চনকেই বেছে নিলেন দিলীপ দত্ত।

দিলীপ দত্ত প্রথমদিকে দোকানে বসতেন। আস্তে আস্তে কাঞ্চনের ওপর তাঁর আস্থা জন্মাতে লাগল। তিনি কয়েকদিনেই বুঝে গেলেন কাঞ্চন ছেলেটা সৎ। শুধু সৎ-ই নয়, মারাতœক বিনয়ীও। তারপর থেকে তিনি আস্তে আস্তে দোকানে আসা কমিয়ে দিলেন। কাঞ্চনই দোকানের মালপত্র কিনে নিয়ে আসে। কাঞ্চনই বিক্রি করে। মাসের শেষে লাভসহ হিসাব বুঝিয়ে দেয় কাঞ্চন।

বৈশাখি ফ্যাশন হাইজে কাজ শেষ করে দুটো টিউশনি করে কাঞ্চন। বাড়িতে কিছু টাকা পাঠায়। কাঞ্চনের পাঠানো টাকাতেই ছোটবোন মিতার পড়াশোনাটা চলছে। আর ক’দিন পরই ওর এস এস সি পরীক্ষা। তাছাড়া মায়ের ওষুধের টাকাটাও কাঞ্চনকেই দিতে হয়। কাঞ্চনের বাবা হঠাৎ একদিন রাতে বুকের ব্যথায় ধড়ফড় করে বিনা নোটিশে মরে গেলেন। ভাগ্যিস বড় মামা এখনো বেঁচে আছেন। তিনি এখনো যথেষ্ট সাহায্য করেন কাঞ্চনদের।

 

মেয়েটা দু’দিন পর আবারো এলো গেঞ্জি নেয়ার ছল করে। তারপর আবারও। একদিন রাত্রে ফোন করে বলল, গেঞ্জিটা ওর দুলাভায়ের গায়ে ঠিকমতো লাগছে না। ঝুলে সামান্য বড় হচ্ছে। চেঞ্জ করে দেয়া যাবে কিনা। কাঞ্চন বলল, অবশ্যই দেয়া যাবে।

এভাবেই রাত্রে রাত্রে কথা শুরু হলো। অল্প কথা। অনেক কথা। অল্প অল্প স্বপ্ন দেখা। তারপর কোনো কোনো ছুটির দিনে ওদের দু’জনকে এক রিকশায় শহরে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেল।

রাত্রিদের গ্রামের বাড়ি পাবনা। ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী। কলেজ হোস্টেলের ২৩৮ নং রুমে সে থাকে। ওর বাবার পাবনাতে গাড়ির পার্টসের বড় ব্যবসা।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেল রাত্রি। কাঞ্চন ব্যস্ত হয়ে পড়ল দোকানের কেনা-বেচায়। প্রথম দু’দিন কথা বলার পর রাত্রির ফোন বন্ধ পাওয়া গেল। তারপর কাঞ্চন যতবারই ট্রাই করল ততবারই দুঃখিত।

কাঞ্চন অগত্যা বাধ্য হয়ে রাত্রির বান্ধবী মিশুকে ফোন করল। বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করল মিশু। ভাইয়া কেমন আছেন?

এই তো আছি। একটু থেমে কাঞ্চন বলল, ক’দিন হলো রাত্রির কোনো খবর পাচ্ছি না।

বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা ফোনের ওপারে। কাঞ্চন বলল, কী মিশু, রাত্রির কোনো খবর জানো?

রাত্রির বিয়ে হয়ে গেছে ভাইয়া। গত ৭ তারিখে। ছেলে ইতালি থাকে। ঈদে বাড়ি এসেছিল। চাচাজান খুবই চাপাচাপি করছিলেন। রাত্রির কিছুই করার ছিল না। এক নিঃশ^াসে কথাগুলো বলে মিশু থামল।

ফোনটা কেটে দিলো কাঞ্চন। কাঞ্চনও জানে এই অবস্থায় আসলে রাত্রিদের কিছুই করার থাকে না।

দোকান বন্ধ করে অসময়ে বেরিয়ে পড়ল কাঞ্চন। বিকেলের আলো ক্রমশ নিঃশেষ হচ্ছে তখন নগরীর মাথায় বড় বড় দালানে। দোকানে দোকানে জ¦লে উঠছে বাতি। কোনো কোনো দোকানে আগরবাতির তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ। ফুটপাথ ধরে উদ্দেশ্যহীন এলোমেলো হেঁটে যেতে লাগল কাঞ্চন। বহুদিনের চেনা রাস্তাটা কেমন অচেনা লাগছে আজ। রাত্রির মুখটা মনে পড়ছে বার বার। কিছুতেই সরাতে পারছে না।

 

রোকন রেজা, গল্পকার

আন্দরকিল্লা প্রকাশনার ২৮ বছর আগামীর পথ ধরে অনাদিকাল

রূপক বরন বড়ুয়া আমি মাসিক ‘আন্দরকিল্লা’ কাগজের নিয়মিত পাঠক। প্রতিবারের মতো হাতে নিলাম এবারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঢাকা জুলাই ২০২৫ সংখ্যা, হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই

জলে জঙ্গলে (পর্ব-২)

মাসুদ আনোয়ার   ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বোর্ডের রেজাল্ট আউট হলো। আমি কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। যে কোনোদিন কুমিল্লা বোর্ডও ফল প্রকাশ

স্বপ্নে গড়া অবয়ব

সৈয়দ মনজুর কবির   মনটা যখনই কেমন অজনা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তখনই কেয়া জানালার ধারে এই চেয়ারটাতে এসে বসে। আজ অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে

অন্তহীন সুড়ঙ্গ

সুজন বড়ুয়া   কবর থেকে বেরিয়ে মহিম অশরীরী রূপ নিল। সঙ্গে সঙ্গে গত কয়দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ে গেল তার। ফার্স্ট সেমিস্টারের পর

রাত যখন খান খান হয়ে যায়…

মনি হায়দার   চোখ মেলে তাকায় সোাহেল হাসান। প্রথম দৃষ্টিতে সবকিছু অচেনা লাগে। কোথায় এলাম আমি? উঠে বসতেই মনে পড়ে গতরাতে অনেক ঝক্কি আর ঝামেলার