এখন সময়:রাত ৮:৫৩- আজ: শুক্রবার-৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:রাত ৮:৫৩- আজ: শুক্রবার
৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

ইয়োন ফসসেঃ অনুচ্চারিতের শব্দশিল্পী

আলমগীর মোহাম্মদ:

এই পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মোট ১২০ জন সাহিত্যিক। নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের করে যাওয়া উইল থেকে জানা যায় কারা নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন এই সংক্রান্ত ঘোষণার কথা। তাঁর উইলে লেখা আছে, ‘তাঁদেরকেই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে যারা

একটি আদর্শগত প্রবণতার মাধ্যমে কোন অনন্যসাধারণ কাজ প্রদর্শন করতে পারবেন’। ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন ইয়োন ফসসে।

তিনি একজন অসাধারণ নাট্যকার, উপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও শিশুতোষ সাহিত্য¯্রষ্টা। ইয়োন ফস¯্রে নাম অনেকের কাছে এই প্রথম পরিচিত হতে পারে। নরওয়েতে তাঁর নাটকের অসম্ভব কদর থাকলেও ইংলিশ মঞ্চে তাঁর নাটক খুব কমই মঞ্চস্থ হয়েছে।

ফসসের জন্ম ১৯৫৯ সালে নরওয়ের হাউজসান্ডে। তাঁর পরিবার ছিলো লুথারিয়ান আদর্শে বিশ্বাসী। পারিবারিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাত বছর বয়সে মুখোমুখি হওয়া একটা দূর্ঘটনা তাঁর লেখালেখিকে প্রভাবিত করেছে। নাট্যকার, উপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও শিশুতোষ সাহিত্য¯্রষ্টা ইয়োন ফসসের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে দুনিয়াজুড়ে পাঠকমহলে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে মূলত তাঁর নোবেল জয়ের খবর চাওর হওয়ার পর। এই নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করব ইয়োন ফসসের লেখাজোকা সম্পর্কে পাঠকের কৌতুহল কিছুটা মেটাতে।

মিনিমালিস্ট এক্সপ্রেশন ফসসের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর উপন্যাসে ‘প্রগাঢ় রচনাশৈলীর কল্যাণে মানব অভিজ্ঞতার সারমর্ম প্রকাশের সাহিত্যিক দক্ষতা স্পষ্ট। আগ্রহী ও নবীন পাঠকরা এখানে উল্লিখিত উপন্যাসে ফসসের অন্তর্দৃষ্টিমূলক বিবরণে মানব অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করতে সক্ষম হবেন, সমৃদ্ধ হবেন। সেপ্টোলজি ইয়ুন ফস্সের লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।

 

 

সাতটি ভিন্ন ভিন্ন খন্ডে লেখা উপন্যাসের সিরিজের লেখা হয়েছে নরওয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী একজন চিত্রশিল্পীর জীবনযাপন নিয়ে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের জীবনের ধর্মীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস কারণ তার সাথে লেখকের ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রেক্ষাপট মিলে যায়। নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে একাকী বসবাসকারী সেই চিত্রশিল্পী এবং এক বিধবা অ্যাসেলের জীবনকথা স্মরণের মাধ্যমে সেপ্টোলজি মূলত একই ব্যক্তিজীবনের দুটি ভিন্ন সংস্করণকে তুলে ধরে, যার উভয়টিই মৃত্যু, প্রেম, আলো-আঁধার, বিশ্বাস এবং হতাশার সমন্বয়ে অস্তিত্ববাদী নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। অস্তিত্ববাদী দার্শনিকদের ভাবধারায় ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত এই লেখা পাঠককে সম্মোহিত করে রাখবে কারণ আধুনিক ব্যক্তি মাত্রই অস্তিত্বের সংকট বা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের ভোগেন। দার্শনিকতার বিচারে সেপ্টোলজি‘র সাহিত্যমান অনেক উপরে।

মর্ণিং এন্ড ইভনিং প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। জীবনী নির্ভর এই উপন্যাস ‘জীবনের নিগূঢ় অর্থ খোঁজার চেয়ে বড় কিছু নেই’ ধারণাকে ফোকাস করে লেখা। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্ম হয় তার মা- বাবার একটা আশাবাদ থেকে একদিন সে ‘তার বাবার মতো একজন জেলে হবে’। এই উপন্যাসে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ও পরিবারকে প্রতিফলিত করেছেন বাস্তবিকতার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে। দার্শনিকতার বিচারে মর্নিং অ্যান্ড ইভনিং একটি এবসার্ড সাহিত্যকর্ম যা জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়কে আলোকিত করে মানবজীবনের অসারতা ও অর্থহীনতাকে তুলে ধরে।

১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে মেলাঙ্কলি দুই খন্ডে উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ঊনিশ শতকে নরওয়ের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন লার্স হার্টারভিগ। তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দিক-ঘটনার কাল্পনিক প্রতিফলন এই উপন্যাস। জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা কালীন ডুসেলডর্ফ নিজের ভবিষ্যত ও প্রতিভা নিয়ে উদ্বেজ্ঞগ্রস্ত হয়ে এক প্রকার উদ্বাস্তু হয়ে পড়া এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। গৃহহীন হার্টভিগ পরবর্তী জীবনে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার জীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই করুণ অবস্থার আরো অবনতি হয় যখন সে তার বাড়িওয়ালার মেয়ের প্রতি এক ধরণের অমোঘ আকর্ষণ থেকে যৌন বিভ্রমে আক্রান্ত হয়।

অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার বসবাসকারী উপকূলীয় এলাকার ক্ষয়ক্ষতি, বিচ্ছেদ ও শোকের সমস্ত চিহ্ন আধ্যাত্মিকতার আশ্রয়ে চমৎকার এক সৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে ফসসের অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার উপন্যাসে। বসবাসকারী উপকূলীয় এলাকার ক্ষয়ক্ষতি, বিচ্ছেদ ও শোকের সমস্ত চিহ্ন আধ্যাত্মিকতার আশ্রয়ে চমৎকার এক সৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে ফসসের অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার উপন্যাসে।

বোট হাউজ ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। এটি অপরাধ ও প্রণয়ধর্মী আখ্যান। অপরিচিত একজন বর্ণ্নাকারীর বয়ানে আমরা অতীত স্মৃতি রোমন্থন ও দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার অভিজ্ঞতা পাঠককে একটা সম্মোহনের দিকে নিয়ে যায়। উপন্যাসের শেষের দিকে অসম ত্রিভুজ প্রেম, ঈর্ষা ও বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি ভোগ করতে হয় দুই বন্ধুকে। যার শেষ পরিণতি ঘটে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

ইয়োন ফসসে ইউরোপের নাট্যমঞ্চে একজন অত্যন্ত সুপরিচতিত ও অধিক চর্চিত নাম। ধারণা করা হয় ইউরোপে জীবিত লেখকদের মধ্যে ফসসের নাটক সর্বাধিক মঞ্চস্থ হয়েছে। ‘অনন্য রচনাশৈলীতে ফসসে তার নাটকে কাব্যিক এবং প্রকৃতিবাদী আচরণের সমন্বয়ে জনমানুষের ভালোবাসা এবং বেদনাকে তুলে ধরেছেন।‘ তাঁর নাটকগুলো প্রায় চল্লিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ফসসের বিখ্যাত নাটকগুলো হলো, ‘দ্য নেম’ (১৯৯৭), সামওয়ান ইজ গোয়িং টু কাম (১৯৯৩), অ্যা সামার ডে (১৯৯৭), ও  আই অ্যাম দ্য উইন্ড (২০০৭)।

দ্য নেইম (১৯৯৫) সালে প্রকাশিত হয়। এক যুগল জীবনের জটিলতা এই নাটকের মূল বিষয়। মেয়েটি তার প্রেমিককে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় কিন্তু মুশকিল হলো সে বিষয়ে তার বাবা মা কিছু জানেন না। তবে এই না জানার পরিণাম পরবর্তীতে একটা মারাত্মক জটিল পরিবেশের সৃষ্টি করে। তাদের পরিবারে অব্যক্ত উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অব্যক্ত বেদনার এই উত্তেজনাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি নাট্যকার হিসেবে ফসসের কৃতিত্ব আমাদের কাছে তুলে ধরে। মানব জীবনের গূঢ়তম রহস্য অনুসন্ধান এবং আধুনিক মানুষের জীবনে ঘটা বাস্তবিক এক ঘটনার এই বর্ণনা পাঠককে সমাজ- শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

সামওয়ান ইজ গোয়িং টু কাম ফসসের আরেকটি অন্যতম নাটক। বিষয় ও প্রকরণগত দিক থেকে এই নাটক দ্য নেইমের মতো। তবে এখানে প্লট নির্মাণ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। সাতটি নারকীয় পাপের মধ্যে নিকৃষ্টতম দুটো দোষের প্রতিফলন ঘটে এই টেক্সট-এ।‘এক দম্পতি সমুদ্রের তীরের প্রত্যন্ত এলাকায়, ছিন্ন ভিন্ন পুরনো এক বাড়িতে চলে যান, যেখানে কেউই তাদের ধারণাকে নাড়া দিতে পারে না যে তাদের জন্য ‘কেউ আসছে’।

অ্যা সামার ডে ১৯৯৭ সালে লেখা ইয়ুন ফসসের অ্যা সামার ডে নাটকটি ‘অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার’ উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দেবে, যেখানে নাটকটির আবেগের কেন্দ্রবিন্দু একজন নারী, যিনি তার স্বামীর মাছ ধরার  ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার অধীর প্রতীক্ষায় রয়েছেন। সমালোচকদের ভাষ্যমতে, স্পষ্টত, ভয়ের ছাপ এবং অবিচল অনুভূতির উপস্থিতি সত্ত্বেও নাটকটি এক ধরনের সবল অথচ গোপনীয় প্রবণতার প্রকাশ ঘটায়, যা পাঠক ও দর্শককে এক স্বতন্ত্র নাটকীয় গতিবেগের সম্মুখীন করবে। আই অ্যাম দ্য উইন্ড ২০০৭ সালে রচিত। আই অ্যাম দ্য উইন্ড মাছ ধরার নৌকায় থাকা দুজন পুরুষকে কেন্দ্র করে লেখা এক অস্তিত্ববাদী

নাটক। ফসসের নাটকের সংক্ষিপ্ত, ছন্দময় চিত্রনাট্য মূলত মানব অস্তিত্বের মৌলিক অনুসন্ধান সম্পর্কিত অভ্যন্তরীণ উদ্বেগকে ধারণ করে, যা আই অ্যাম দ্য উইন্ড নাটকেও লক্ষণীয়।

নাটক ও উপন্যাসের পাশাপাশি ফসসে নিজ ভাষায় কবিতায় হাত পাকিয়েছেন। এই পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কবিতা সংকলনের সংখ্যা ১৩। ‘ফসসের কাব্যভাষায় নরওয়ের উপকূলীয় অঞ্চল এবং পাহাড়ের চিত্রগুলোতে বৃষ্টি, অন্ধকার, সমুদ্রতীর ও তরঙ্গের গতিবিধি অনিবার্য, যার সঙ্গে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শনের ঐতিহ্যবাহী একটা সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।‘

 

ইয়োন ফসসের কয়েকটা কবিতা বাংলা অনুবাদে পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করে এই নিবন্ধের ইতি টানব আমরা।

১.

মৃদুমন্দ বাতাসে একটি নৌকার মতো

তুমি ও আমি

তুমি ও চাঁদ

তুমি

তারারা

সম্ভবত

লাশেদের

উৎকট  গন্ধের সম্মুখে

পচছে

তাদের সীমাবদ্ধ ভূমিতে

অন্যরা, আমার মতো

অথবা যারা পুড়ছে

আশাহীনতায়

(ব্যথাহীন, হ্যাঁ অবশ্যই)

হ্যাঁ,

মৃদুমন্দ বাতাসে একটি নৌকার মতো।

 

২.

শুধু শেখো

শুধু গানটি,  সাগরের গানটি

গড়িয়ে পড়ে ঢালু পর্বতে

এবং আকাশ জুড়ে

 

নীল ডানায়, ঝিকিমিকি আলোর  মতো

কাছে আসে যেখানে আমরা একসাথে আছি

এবং যেখানে আমরা কখনো কিছু বলি না

এবং শুধু শিখি।

৩.

পর্বত তার  দম ধরে রাখে

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছিল

এবং তখন পর্বতটি সেখানে দাঁড়িয়েছিল

তারপর পর্বতগুলো সেখানে  দাঁড়াল

এভাবেই সেখানে পর্বতগুলো দাঁড়িয়ে আছে

 

এবং নত হয় নিচের দিকে

এবং নিচের দিকে

নিজেদের ভেতর নিজেরা

এবং নিজেদের নিঃশ্বাস ধরে রাখে

স্বর্গ ও সাগর যখন

নাড়া দেয় এবং ঘাই খায়

পর্বতটি নিজের দম ধরে রাখে।

৪.

এখানে একজন মানুষ  আছে

এখানে একজন মানুষ  আছে

এবং তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়

একটা বাতাসে

যা মিলিয়ে যায়

অভ্যন্তরে

এবং পাথরের গতির সাথে মিলে যায়

এবং একটা অর্থের সৃষ্টি হয়

সবসময় নতুন একতায়

যা কিছু

এবং যা কিছু নয়

নীরবতায়

যেখানে বাতাস

বাতাসে পরিণত হয়

অর্থ যেখানে

অর্থে পরিণত হয়

হারিয়ে যাওয়া কর্মকান্ডে

যা কিছু আগে থেকে আছে

এবং হঠাত

একটা উৎস থেকে

যেখানে আওয়াজ অর্থ বহন করেছিল

দুনিয়া নিজের মধ্যে বিভক্ত হওয়ার আগে

এবং তখন থেকে আমাদের কখনো ছেড়ে যায়নি

কিন্ত এটা

এটার সবকিছু অতীতে এবং সবকিছু বর্তমানে

এবং এটা

এমন কিছুতে

যার অস্তিত্ব নেই

এর মুছে যাওয়া সীমান্তে

যা কিছু আগে থেকে আছে এবং

যা কিছু ভবিষ্যতে আসবে তাদের মধ্যে

এটা অসীম এবং দূরত্বহীন

একই গতিতে

এটা মুছে দেয়

এবং  মুছে যায়

এবং টিকে থাকে

যখন এটা মুছে যায়

এবং এটা জ্বলে উঠে

এটর অন্ধকার

 

যখন এটা কথা বলে

এর নীরবতা নিয়ে

এটা কোথাও না

এটা সবখানে

এটা কাছে

এটা দূরে

এবং শরীর ও আত্মা মিলিত হয়

সেখানে এক হয়ে

এবং এটা ক্ষুদ্র

 

এবং বড়

সবকিছুর মতো

এবং ছোট

যেন কোন  কিছুই না

এবং যেখানে সকল বিচক্ষণতা

 

এবং  কোন কিছুই জানে না

নিজের ভেতরটাকে জানে না

যেখানে কোনো কিছুই বিভক্ত না

এবং সবকিছুই হঠাত  নিজের মধ্যে এবং বাকি সবকিছু

বিভক্তির মধ্যে

 

যা বিভক্ত নয়

অনিঃশেষ সীমানায় যেভাবে আমি এটাকে মুছে যেতে দিই

দৃশ্যমান উপস্থিতিতে

মুছে যাওয়ার গতিতে

এবং দিন ভর হাঁটে

গাছ যেখানে গাছ

পাথর যেখানে পাথর

বাতাসে যেখানে বাতাস

এবং যেখানে শব্দেরা একটা অবোধগম্য মিশেলে

 

যা কিছু আগে থেকে আছে তার

যা কিছু মুছে গেছে তার

এবং ঠিকে আছে

সমঝোতার বাণী হয়ে।

 

৫।

অভিনেতা সম্পর্কে কিছুকথা

যা কিছু চলমান তার মাঝে

জীবনের মতো

সবসময় জৃম্ভমান গতিতে

এমন কিছু যা শান্ত

 

এবং ভারী

জীবনের মতো

কারো কারো জন্য বোঝা

কারো কারো জন্য খুবই হাল্কা

এবং হঠাত খুব বোঝা

এবং  তারা জীবনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে বেরিয়ে এসে

এবং দাঁড়ায়

নড়বড়ে

লজ্জিত

এবং জানে না কি বলবে

তাদের কিছু বলার নেই

 

এবং কিছু না কিছু তো অবশ্যই বলতে হবে

এবং তারা এগিয়ে যায় সামনে

বাতাসের মতো হাল্কা ও সোজা পদক্ষেপে

তারা এগিয়ে যায়

এবং সেখানে দাঁড়ায়

নিজের জন্য বোঝা

একে অন্যের আলোতে

যখন লজ্জা ভেঙে যায়

 

এবং কুকুরের দূতের মতো হাল্কা হয়

এবং তখন দূতের ডানা খোলে

এবং তাদের চারদিকে ছড়িয়ে যায়

এবং তখন এটা বলা হয়ে যায়।

[ তর্জমাঃ আলমগীর মোহাম্মদ ]

 

ফসসে একজন জীবনঘনিষ্ঠ লেখক। বিশ শতকের অন্যতম দার্শনিক ধারা অস্তিত্ববাদ তাঁর লেখার অন্যতম বিষয়। মানব জীবনের প্রতিটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সমস্যা তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে ব্যক্তি মানুষের নস্টালজিয়া, স্মৃতিবিভ্রম, যৌনবিভ্রম, প্রেমের অসারতা, হারানোর বেদনা এবং মানব মনের জটিল ও প্যাচময় বাঁক উন্মোচিত হয়েছে তার উপন্যাস, নাটক ও কবিতায়। নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হওয়ার পেছনে হয়তো এটাও একটা কারণ। সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার দুনিয়াজুড়ে লেখক পাঠকের কাছে একটা আলাদা গুরুত্ব ও বার্তা বহন করে। এই বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্তি ফসসের সাহিত্যকর্মকে আরো বিস্তৃতভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

তথ্য ঋণঃ

১। দ্য নিউ ইয়র্কার ডেইলি

২। “যে সব লেখার জন্য নোবেল পেলেন ইইয়োন ফসসে” , আদনান সহিদ।

৩। পোয়েম হান্টার।

 

আলমগীর মোহাম্মদ, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক

 

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।