তবু এসো, পদব্রজে বাতাসের ওপর
খুরশীদ আনোয়ার
তুমি নেই,
তোমার সুঘ্রাণ জড়িয়ে শুয়ে আছি দীর্ঘক্ষণ
তুমি নেই,
তোমার ছায়া শরীরে লেপ্টে থাকি,
নক্ষত্র-খচিত শাদা বিছানার
ওপর অনুক্ষণ
এ কেমন অনুভূতি?
আমি শুয়ে থেকে জেগে থাকি,
নাকি জেগে জেগে শুয়ে থাকি?
তুমি হাওয়া হয়ে আসো
হাওয়ার ওপর হাঁটাচলা করো
তোমাকে দেখে না কেউ, শুধু আমি দেখি।
সেই হাত যুগল
সেই উন্মীলিত শাদা করতল
সেই আলিঙ্গনের ভাষা
সেই প্রকম্পিত গোলাপি ঠোঁট
স্মিত হাসি
উদ্ভাসিত হয় না আর দাঁতের
দুধেল ধবল প্রদর্শন।
আমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে
বিন্দু বিন্দু ক্লোরোফিল হয়ে
আসা যাওয়া করো।
তুমি আমার জন্যে বিশুদ্ধ অম্লজান
আমার বেঁচে থাকার অন্তিম আশ্রয়।
সুদূর মালয়া থেকে অলৌকিক ডানার
দ্রুত সঞ্চালনে এসে পড়ো আপন নিবাসে
রাতুল রাতুল নরম বিছানার টানে!
হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে
একান্ত তোমারই নাম
ভোর ফুটবার আগে
জায়নামাজের ওপর নিথর বসে থাকি
তুমি তোমার কাজ নিরন্তর করে যাও
হৃদয় শব্দ করে বলে ওঠে তোমার নাম
কম্পমান প্রতিটি হাত আর
পায়ের আঙুল জপে তোমার একান্ত নাম
জানি, ডান দিকে থাকে না হৃদয়
কেউ কি জানো? দক্ষিণেও বুকের ভিতর
সমতালে স্পন্দিত হতে থাকে
তোমার পবিত্র নাম।
ফাঁকা হাত, জপমালা নেই
তবুও অগণন বিদ্যুৎ চমকানোর
মতো স্বতঃস্ফূর্ত এ কেমন নামজপ?
=======================
আমার না–লেখা কবিতাটি
আসাদ মান্নান
দূরন্ত মেঘের পিঠে মাঝে মাঝে চোখ মেলে দেখি
মোহিনী নারীর মতো মনোরম শরীর দুলিয়ে
নগ্ন পায়ে হেঁটে যাচ্ছে আমার না-লেখা কবিতাটি;
কুয়াশায় হতাশায় তাকে পেতে আশার আলোয়
টকটকে পূর্ণিমায় কত ঘোর অমাবস্যা নামে;
মন্দিরে মন্দিরা বাজে– নিরালোকে দীপাবলি জ্বেলে
অপেক্ষার উপকূলে চন্দ্রালোকে শব্দের আগুন
জ্বালিয়ে দিয়েছে এক অলৌকিক রহস্যের দেবী।
কবিতার জন্য আমি নারী আর নদীর পেছনে
কত যে ছুটেছি! ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে
পড়ে আছি
শূন্যতার কোলে; শূন্য থেকে মহাশূন্যে ডানাহীন
উড়ন্ত মেঘের পিঠে চড়ে চৈতন্য রহিত এক
অন্ধ তীরন্দাজ ছুটছে– কেউ তাকে থামাতে পারে না:
অন্ধকারে ধীরে ধীরে দৃষ্টি জুড়ে পর্দা সরে যায়:
আমাদের যতীন বাবুর ওই বাঁশ বাগানের
মাথার উপরে দেখি মাধবী লতার মতো
বাঁকা
একফালি খুকু চাঁদ ওঠে একা একা; আচানক
দেখা গেলো তার বুকে দুর্নিবার প্রমত্ত ঝড়ের
ঘূর্ণি তালে আদিগন্তে দুলে ওঠে কবির নিখিল;
রহস্যের জাল বুনতে বুনতে সে আসে নীরব স্রোতে
গা ভাসিয়ে, যেন এক নিরুদ্বিগ্ন শাদা রাজহাঁস,
বাতাসে কম্পন তুলে ভেসে যাচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে।
তারপর দেখতে দেখতে দীর্ঘ উপত্যকা পার হয়ে
জীর্ণ শীর্ণ নদীতীরে বেলা ডুবে যায় — খেলা শেষ:
আমার হলো না আর লেখা সেই প্রিয় কবিতাটি,
যে কবিতা লিখতে গিয়ে হারিয়েছি নিজস্ব নারীকে ।
কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে এখন! তবু কেন
নিশ্চল গোধূলি নামে ঢিলে ঢালা মেঘের যোনিতে;
বুকের ভেতরে বয়ে যাচ্ছে এ কেমন লু হাওয়া!
বালুঝড়ে ল-ভ- মরূদ্যান বসতি খামার–
মাঝে মাঝে এ রকম হয় — কবিতা উটের মতো
গ্রীবাটা বাঁকিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে অগোচরে ;
কখনো বা মাথার খোড়লে ঢুকে কৃমির মতন
নড়াচড়া করে ; আবার কখনো দেখি হিমাগারে
এক মৃত কাছিমের মতো চিৎ হয়ে পড়ে আছে —
সব কিছু তচনচ হয়ে যাচ্ছে,– আমি সুন্দরের
পাপড়ি ছুঁয়ে কবিতাকে উঠে আসতে বলেছি যখন
সে তখন আমার উঠোন ছেড়ে চলে গেছে দূরে
বহু দূরে হাজার শতাব্দী দূরে মেঘের ওপারে —
আমার হলো না আর কবিতার সঙ্গে সহবাস:
চালাক চতুর আর ধোঁকাবাজ খ্যাতির বেপারী
বেহায়া পিরীতি নিয়ে ফুর্তি করে প্রেমের ডাঙায়;
তুমি প্রিয় শব্দপীর! কবিতার ধ্যানী মহাদেব
আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাও তোমার আশ্রমে।
======================
গোলাপী চাঁদের আলো
শামীম নওরোজ
মালকিন, দয়া করে অব্যাহতি দিলে
খুব খুশি হবো। আপনার পরকীয়া
সাহেব জানলে, আমাকে হাজতে যেতে
হবে। তার চেয়ে, আমাকে ছাড়ুন। চলে
যাই। দুনিয়াতে ভাতের অভাব নেই।
হাকিমের পাদদেশে ঘোরগ্রস্ত মশা।
কামড়ায়। রক্ত চোষে। হুকুম নড়ে না।
কার জন্য কারাগার? কোন গারে বাস
করে কারা? আপনি বলতে পারবেন?
রানির নির্দেশ, আসামিকে বেকসুর…
জলে জলযান। জলযুদ্ধ নিয়মিত।
কে মারে? কে মরে? কার জন্য আদালত?
রামরাজ্য। ইচ্ছা মতো সব করা যাবে।
মালকিন, দেখে যান, আমি বেকসুর…
=============================
একটি নদীর কথা
রজব বকশী
এই নদীটির কথা বারবার বলে যাই
যে নদীর টলটলে জলে
তৃষ্ণা মেটাই, গোছল করি
ময়লা বা দাগ পরিস্কার করে
ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠি
সেই নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলে
বেহাল, দুষিত
আদিকালের সঙ্গীনি ও আমার প্রাণের নদীরে…
বাঁ বুকের পাশ দিয়ে বয়ে বয়ে যায়
ভালোবাসার একটি নদী
========================
নিবৃত্তি
শম্পা মনিমা
দাঁড়িয়ে রইলাম বারান্দায়
ঝড়ের বাতাস ইচ্ছে করে ওড়ায়
আম গাছের নতুন ডালে পাতায় পাতায়;
অধীর আগ্রহে বেঁকে বৃদ্ধ বনস্পতির মাথা নুইয়ে দেয়।
গাছ সে হিংস্রতা মনে রাখে না,
সে আবার ফুল ফল সুশীতল ছায়া নিয়ে
সুন্দর সেজে ওঠে হাওয়ায় ।
এমন অনেক রাত্রি মনে রাখে না আসক্তির অবলম্বন
কিছু মনে রাখে না কবরের মাটিও
তারা মায়ের মতই লালন করে যায় মানুষেরে –
চেয়ে থাকি রাত্রির চোখে,
যাকে কেউ কোনোদিন ভালোই বাসেনি গভীর –
তাকেই দাহ করার মায়ায় ভালোবাসে স্নান করায়
মানুষের পৃথিবী অন্ধকার – সব অবহেলা ভুলে
আকাশ জুড়ে জ্বালিয়ে রাখে হাজার হাজার তারায়
নেহাতই ষড়রিপু আচ্ছন্ন আমি –যে পারে না
সব সংঘাত, ব্যথা, অভিমান সরিয়ে সহিষ্ণু হতে!
=========================
সুঁই সুতোর গল্প
তাপস চক্রবর্তী
সুঁই সুতোর গল্প সবাই জানে
দিন-দিন প্রতিদিন
সেলাই মেশিনের গরগর শব্দ শুনি শুধু…
যেমন দর্জি বোঝে কাপড়ের মাপ
পরিমাপ
বুকের দৈর্ঘ্যরে দু’পাশে সবুজ উঠান।
অথচ পিঠের প্রস্থে খোলা বিল
বোতামে উদোম
বাহুর বৃক্ষে নৃপতির চোখ।
কাঁচির হাতলে লেগে থাকা সুতো
পায়জামার দু’পাশে আজ তোমার আমার
উল্টো পাঠ।
তবুও মেরুদ-ের সিঁথি ধরে
মেঠোপথ
সেই পথে কেউ যায়নি অনেকদিন।
তবুও সুঁই সুতো, সুতো ও সুঁই
কাঁচির বুকে
আঁকা তুই শুধু তুই।
===========================
শস্যবতী
শঙ্খশুভ্র পাত্র
অন্ধকারে ঊর্ধ্বমুখী প্রদীপের সমুজ্জ্বল শিখা
আমাকে লজ্জিত করে প্রায়শ একতরফা প্রেমে।
সাজসজ্জাহীন শয্যা। সতত সংশয়, কুজ্ঝটিকা
মন নিয়ে এগোব কি, বস্তুত, আটকে থাকি ফ্রেমে।
নিশ্চল মূর্তির দিকে ফিকে হয়ে আসে প্রণোদনা।
বুদ্ধিমতী শিখা, টীকা, দাউদাউ, দুরন্ত আগুন…
পলাশে দেখেছি, লাসে। কটাক্ষে, নিপুণ আলপনা।
পুনঃ, তাকে দেখে নিয়ে আষাঢ়স্যে এঁকেছি ফাগুন।
শস্যবতী মন তার। উর্বরতা, যেন উপশম
খেত জুড়ে বিনন্দিত। পল্লবিত সবুজ বাতাস
জানে সে প্রবলভাবে এই দৃশ্যে কৃষকের শ্রম
আভূমি রক্তে-ঘামে জড়িয়েছে জীবনের শ্বাস।
আসলে সে দীপাধার জানে সেই অন্ধকার, লিখা…
হাওয়া না বইলে, অগ্নি, কীভাবে জাগবে প্রাণশিখা?
==============================
বরষার বারতা
মারজিয়া খানম সিদ্দিকা
বৃষ্টি পড়ে ধরার পরে
অঝোর ধারায় ঝরে
বর্ষা এসে বৃষ্টি ঝরায়
না পরোয়া করে।।
বৃষ্টি পড়ে তালের পাতায়
বৃষ্টি পড়ে ছাতায় ছাতায়
টইটম্বুর যে দীঘি,
বৃষ্টি পড়ে ঘরের চালে
বৃষ্টি পড়ে গরুর পালে
সারাটি দিন লাগি।।
হাঁসের ছানা বকের ছানা
ঠোঁটের ফাঁকে খুঁজে খানা
ক্ষুধার্ত আজ বড়,
মা পাখিটি চুপটি করে
ঘরে বসে ঘাপটি মেরে
আজ সে জীব কী জড়!!
জুঁই চামেলি কদম কেয়া
উঠলো নেচে ডাকলে দেয়া
সুবাস ছাড়ে সাথে,
বাগান বিলাস থরে থরে
খুকুমণি মনের ঘোরে
বর্ষার জলে মাতে।।
জল মিশেলে হাওয়ার তালে
উঠলো কৈ মাছ উজান খালে
আয়লো তোরা সবে,
ডাল খিচুড়ি রান্না সাথে
ভাজা কৈ মাছ চলে পাতে
বর্ষা ভোজন হবে।।
=================================
মেঘদূত
শিমুল সুলতানা
আসবে বলে পেজাতুলোর আকাশ ছেড়ে উড়াল দিলে –
কল্পলোকের ফানুস মেলে উড়ি উড়ি এই আমাকে
স্বপ্ন দোলায় হাওয়ার তালে –
এগোয়নি আর স্বপ্ন পিছু, যতটা তার ছিল কিছু –
ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে – বেসেছিলে কি সত্যি ভালো!
আমার পুরো আকাশ জুড়ে একটা ছায়া – একটা মানুষ,
ভুল কি তবে মানুষ চেনা! মেঘের দলে নিবি বলে হাতছানিতে ডাকলি শুধু,
ডমরু বীণার তালে তালে মেঘ ময়ূরের পেখম মেলে ছিলাম বসে অপেক্ষাতে –
মেঘের দলে ঘুরব বলে মনে মনে স্বপ্ন ছিল –
মেঘদূত এক আসবে বলে – নীলকন্ঠী শাড়ির বসন-
অঙ্গ জুড়ে নূপুর বাদন – ভয় কি তার সুখের আশায়!
তার যে ছিল একটা আকাশ।
মেঘদূত এক আসবে নিতে পথের বাঁকে মিলিয়ে যেতে –
অনেকটা দিন নীলের আভায় –
ছড়ায় বুকে প্রেমের রাগে সংগপনে!
এই যে আমার অপেক্ষা রাগ – অভিমানে ঝড়লো বৃথা।
=================================
বর্ষা এলে ময়ূর নাচে
মোহাম্মদ আবদুস সালাম
বর্ষা এলে ময়ূর নাচে
ফুটে কদম ফুল।
বর্ষা এলে মন ভিজে যায়
ভ্রমর ফুটায় হুল।
বর্ষা এলে অথৈ জলে
নাইতে নামে রাধা।
বর্ষা এলে প্রেমের ¯্রােতে
মন মানে না বাধা।
বর্ষা এলে বাঁশির মাঝে
কৃষ্ণ তুলে সুর।
সেই সুরেতে পালিয়ে যায়
ধরার সব অসুর।
বর্ষা এলে কালচে মেঘে
আকাশ থাকে ঢাকা।
প্রেম না থাকলে মন ভরে না
চারদিকটা ফাঁকা।
বর্ষা মানে সজল পাতায়
রবি রশ্মির খেলা।
উদাস মনে ভাসিয়ে দিই
কৃষ্ণ প্রেমের ভেলা।
=================
শূন্যে এবং শূন্যতায়
সেঁজুতি রহমান
মাছমুরালের শিকারী নখের আঁচড়ে
মৃত্যুর আর্তনাদ
রক্ত ঝরে…
রক্তাক্ত হয় জলজ জীবন;
কিছুক্ষণ আগেও তো বেঁচে ছিলাম!
এখনো শরীর জুড়ে হাওয়ায় দুলছে পদ্মকোরক
ইচ্ছে ছিল ফিরে যাব প্রস্তর যুগে
অথবা বর্তমানকে টপকিয়ে
ভবিষ্যতের নভোচারী হব
কিন্তু ইচ্ছের পায়ে পরলো বেড়ি
ঋতুর বদল হয়ে গ্রীষ্মের পরেই নামলো তুষারকাল
সময় থেমে গেল বর্তমানে।
এখন শুধু দীর্ঘশ্বাসের বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ হয়
আর জলের গন্ধমাখা কিছু ভেজা স্মৃতি
গড়িয়ে পড়ে শূন্যে
মিলিয়ে যায় শূন্যতায়।
=========================
শঠতার গলাবাজি
সারমিন চৌধুরী
মাঝেমধ্যে এমনটা কেন হয়?
চলতি পথে আচানক থেমে যেতে হয়
থমকে যায় হৃদয়ের সুবাতাস, নিরুদ্ধ কষ্টে
নষ্ট চেতনার অহেতুক আস্ফালনে
চাওয়াটা কি আকাশচুম্বী হয়ে যায়?
ফলসা বৃক্ষের অহংকারের নেপথ্যে!
কিংবা খুবই কি অপ্রয়োজনীয়;
হৃদয়ের স্পন্দনে আঁকা জলরঙের ছবিটা ?
যদি নাইবা হবে তবে কেন এত নির্মম নিষ্ঠুরতা
কেনই বা নিশ্চিহ্ন হবার আগেই
মুছে দিতে চায় কেউ কারো পদচিহ্ন চলার পথে
হৃদয়ের লেনদেনে এত দৈন্যতা!
সময়ের পরিক্রমায় মেনে নিতে হয় অপচয়
মিথ্যা অজুহাতের নাটকীয় অভিনয়
সবাই যে সবাইকে ঠকিয়েই জিততে চায়,
তাদের বিবেকের দংশনে নিজের প্রতিচ্ছবি
আয়নায় দেখার ইচ্ছাটা জাগে কি ভুলেও?
মানবিকতা অধিক সংকীর্ণতায় মহান
ক্ষণিকের দুনিয়ায় মিথ্যা অহংকার বেঁচে থাকুক
সত্যটা মুখ লুকিয়ে নিভৃতেই দেখে যাক
স্পর্ধাহীন শঠতার গলাবাজি।
===============================
হলুদ খাম
নাদিয়া ফারহানা
একটা চিঠি আসুক
হলুদ খামে
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকুক
ভালোবাসার কাব্য।
ডাকপিয়নের অপেক্ষায়
কেটে যাক কিছু সময়
ছুটে ছুটে দেখা হোক
ডাক বাক্সৃ
একটা চিঠি আসুক অন্তত।
হলুদ খামের ভিতর আসুক
কিছু অনুভব
মন খারাপের সন্ধ্যা গান
অলস বিকেলের বৃষ্টি ঘ্রাণ
চিঠি বয়ে নিয়ে আসুক বসন্ত।
নীল লাল সাদা খামের
নানান রঙ্গের নানান ঢংয়ের
চিঠি তো চাই নাৃ
চিঠির ভাজে জড়িয়ে থাকুক
ভালোলাগার আবরণ
প্রতীক্ষা ও উৎকন্ঠার শিহরণ।
হলুদ খামের সহজ সরল
মায়া জড়ানো সাবলিল
একটা চিঠি আসুক শেষ পর্যন্ত।।
===============================
অচেনা স্মৃতি
ডা. আবদুর রাজ্জাক খান
স্মৃতির কি কোন রঙ আছে?
গোলাপি, আকাশি কিংবা ধূসর,
নাকি সাদাকালো কখনো শুধুই নিকশ কালো।
স্মৃতির কি কোন ঘ্রান আছে?
মন মাতানো ফুলেল কিংবা আতরমাখা মৃগনাভী,
নাকি গলিত লাশের নাক চাপা হায়েনার উপস্থিতি।
স্মৃতি কি মনের বারান্দায় দোলনায় চাপা সুখটান?
নাকি রক্তের দামে ভুলতে চাওয়া অশ্লীল উপাখ্যান।
স্মৃতি তুমি হয়োনা কখনো স্মৃতি
যদি আনতে না পারো এক চিলতে হাসি
কিংবা এক ফোঁটা নোনা জ্বল।
========================
ছায়ার ফুটেজ
সাজ্জাদুর রহমান
এমন বিষণœ ছিলোনা মেঘের ভূগোল
চাঁদ-জোৎস্নার সাপলুডু খেলায়
কিশোরী কানন প্রেম কবিতার ফুল ফোটাতো
বেশ মাতওয়ারা ভোর-বিকেলগুলো
সোনালি জোনাকির কুমারীত্বে ছুঁতো লাল রুমাল।
শত উল্কা এড়িয়ে জোড়া কবুতর
ডানা মেলতো বুনো শ্যাওলার ঝিলে
প্রিয় রাতের সুগন্ধি সহ্যায় রচনা হতো
পরস্পর হাত ধরাধরির বোঝাপড়া।
প্রতিরোধ নিকষ অন্ধকারের শামিয়ানা
ঢেকে আছে পৃথিবীর ঝুলন্ত সুন্দর
চিন্তার চঞ্চুতে গেঁথে আছে গন্তব্যমুখী ইচ্ছের ফসিল
সারি সারি বেদনার অশ্রুনদী পেরিয়ে
জয়ী হোক দ্বীপজ্বলা ঘ্রাণ
আর জলেস্থলের বিপণিবিতান বিপণন করুক
মানবতার ছায়ার ফুটেজ
সভ্যতার তৈজসপত্রে সাজানো থাক
গ্রামের পথ, গার্হস্থ্য অরণ্য ।
তৃষ্ণা কাতর অরণ্যচর বুকে
জেগে উঠুক মানবতাবাদী শিশিরের মিছিল
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির সাহস দ্রবণ
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ মুছে
ক্লান্ত সংবিধানে উন্মুক্ত করুক ছায়ার ফুটেজ।
=============================
যে জলে পৃথিবী ভিজে
এম. কে. হক
মনে পড়ে, আজকাল খুব মনে পড়ে
ভোরের হিমেল বাতাসে লোমকূপে
খোপের দেউরীতে কে যেন লজ্জানত আঘাত করে!
কত অজানা ধুপন্তী প্রহরে।
ভাবতে ভাবতে ভুলেই গেছি..
সন্ধ্যার নিঃশব্দ অভিমানী বকুলের মতো
সে গন্ধ এখনো উসকো খুসকো চুল ক্ষয়িঞ্চু
বগলে কাঁপন জাগায়..
নিস্তব্ধ দুপুর, হলদে কাঁঠালপাতা যেমন ঝরে পড়ে।
আচমকা মেঘে-মেঘে ভরে উঠে আকাশ
দখিনা ঝড়, কি নিদারুণ দীর্ঘশ্বাস!
ভেঙে দিয়েছে ঘর,বসতি,অগোছালো স্বপ্ন
আকাশকে জানতে চেয়েছিলাম
যে জলে পৃথিবী ভিজে, আমি কেন ভিজি না!
সন্ধ্যার শীতল নিঃসীম আঁধারে
তোমায় পুড়ে পুড়ে ভীষণ মনে পড়ে ।।
===========================
অদৃশ্য আবাস
সুফিয়া শীলা
তোমার মাঝে মৃত্যু হোক আমার ,
মৃত্যু হোক তোমার চোখের কৃষ্ণগহ্বরের ঘূর্ণিপাকে;
মৃত্যু হোক দৃষ্টির তীক্ষ্ণতার প্রখরতায় ,
মৃত্যু হোক উত্তপ্ত চুম্বন-লাভার স্রোতে ;
মৃত্যু হোক, মৃত্যু হোক আমার।
বিদ্ধ হতে চাই–
তোমার বা-পাশে পাঁজরের খডগে,
বুকের জমিনে জমে থাকা শিশিরের
তেপান্তরের মাঠ হোক আমার শেষ ঠিকানা;
জোছনায় ভেজা আলিঙ্গনে ঝরে যেতে চাই
ভোরের শিউলির মতো,
দুহাতের সর্বগ্রাসী খেলায়–
আগুন লাগুক ঝকঝকে পা-ুলিপির প্রতিটি স্তবকে।
আমি হতে চাই বিলীন,
মৃত নক্ষত্রের ন্যায় মিশে যেতে চাই তোমার মহাকাশে;
আমাকে যেনো খুঁজে না পাই কেউ কোনোদিন,
করতে না পারে স্পর্শ কিংবা অনুভব ;
যেনো কোনোদিন কোনোকালেই কোন
অস্তিত্ব ছিলো না আমার,
এমন মৃত্যু হোক আমার।
শুধু বেঁচে থাকো তুমি!
তোমার ছিল বন্ধু সুজন
[সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ কে]
বদরুননেসা সাজু
যেখানে গ্যাছো শান্তি পাও, শান্তি পাও
দূর থেকে মনে হয় এখনো আছো
যেভাবে ছিলে নিজের ঘরে।
যেখানে আছো — বৃক্ষ আছে ফুল আছে পাখী আছে
মানুষের ভালোবাসা আছে;
কী গাছ লাগানো হলো কবরগাহে
বকুল কাঠগোলাপ কাঁঠালীচাপা?
গাছগুলো বড় হয়ে অজস্র ফুলে ছেয়ে যায়
আবার বৃক্ষতলে সতেজ ফুলগুলো
বিছিয়ে রাখে বলে ভালোলাগে, ভালোলাগে
হলুদ সোনালু, বেগুনী জারুল-লাল কৃষ্ণচূড়াও তাই
কী গাছ লাগানো হলো কবরগাহে?
চিরসবুজ তারুণ্যের প্রতীক কোন বৃক্ষ!
বাদলে ও যে বৃক্ষ সুদৃঢ় থাকে!!
তোমার ছিল মেদহীন পাতলা দেহ
সবাই চিরতরুণ বলতো — বয়সের ভারে মুটিয়ে যাওয়া
মেদবহুল শরীর কখনো ছিল না তোমার।
তোমার ছিল সফলতার জীবন সাহিত্যময় জীবন
তোমার ছিল পড়ালেখার তৃষ্ণাকাতর জীবন
বিশ্বসাহিত্যের ভূবনে প্রবেশের জীবন
অনুবাদ কর্মে সৃষ্টিশীলতার জীবন;
তোমার ছিল লাইব্রেরির সাথে বন্ধুময় জীবন
তার বাইরে তোমার ছিল দৈনিক আজাদীর ‘খোলা জানালা’।
তোমার ছিল সকল বয়সী
বড় ছোট নারী পুরুষ বন্ধু সুজন, সবার সাথে
তোমার ছিল সখ্যতা – সরলতা কথাবলা – আলাপচারিতা।
================
পাথুরে জীবন
টিপলু বড়ুয়া
রাতের অন্ধকারে যেখানে
চাঁদ দেখা যায়-
জোনাকিরা মিটিমিটি আলোতে
যেখানে মন রাঙায়-
ঝিঁঝি পোকারা অবিরাম শব্দে
যেখানে বিনামূল্যে গান শোনায়।
দালান ঘেরা শহর ছেড়ে আজ-
মন যেন সুদূরে পাড়ি দিতে চায়।
শহরে বন্দী- পাথুরে জীবন যেন আজ-
মুক্তি পেতে চায়।




