সরকার হুমায়ুন
পাথর আলীর শোবার ঘরে ক্যাকটাস দেখে সামস জী বললেন,”একশ বছর আগে কেউ কখনও ভাবেনি যে ক্যাকটাস মানুষ পছন্দ করবে, কিন্তু এখন ক্যাকটাস মানুষের ঘরের ভেতরে এবং গোলাপ ঘরের বাইরে শোভা পাচ্ছে। গোলাপের কথা বলতে গেলে আপনি পুরানো দিনের মানুষ। আপনি গোঁড়া।
ক্যাকটাস সম্বন্ধে কথা বলা মানেই অতি আধুনিক। এটা প্রমাণ করে যে, আপনি আধুনিক, সমসাময়িক। মানুষের শোবার ঘরে ক্যাকটাস রাখা — বিপজ্জনক ক্যাকটাস, বিষাক্ত ক্যাকটাস, যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে! কিন্তু এটা ফ্যাশনে চলে এসেছে এবং একবার কিছু ফ্যাশনে চলে এলে অনেকেই থাকে যারা এর প্রশংসা করে থাকে।অথচ এটি ভয়ানক।”
পাথর আলী বিনীতভাবে গল্পাকারে বলল,”
একটি সুন্দর বসন্তের দিনে একটি লাল গোলাপ ফুল একটি বাগানে ফোটে।
গোলাপ চারপাশে তাকাতেই পাশের একটা পাইন গাছ বলল, “কি সুন্দর ফুল! আমি যদি এমন সুন্দর হতাম।” আরেকটা গাছ বলল, “প্রিয় পাইন, দুঃখ করো না। আমাদের মধ্যে সবার সবকিছু থাকতে পারে না।”
গোলাপটি ঘুরে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করল, “মনে হয় আমি এই বনের সবচেয়ে সুন্দর ফুল।”
একটি সূর্যমুখী তার হলুদ মাথা তোলে জিজ্ঞেস করল, “এমন কেন বলছ, বন্ধু ? এই বাগানে অনেক সুন্দর ফুল আছে। তুমি তাদের মধ্যে একটি।”
লাল গোলাপ উত্তর দিল, “আমি দেখছি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমার প্রশংসা করছে।”
তারপর গোলাপটি একটি ক্যাকটাসের দিকে তাকিয়ে বলল, “কাঁটায় ভরা সেই কুৎসিত গাছটির দিকে তাকাও!”
পাইন গাছ বলল, “লাল গোলাপ, এ কেমন কথা? সৌন্দর্য কী তা কে বলতে পারে? তোমারও কাঁটা আছে।”
গর্বিত লাল গোলাপ পাইনের দিকে রাগান্বিতভাবে তাকিয়ে বলল, “আমি ভেবেছিলাম তোমার স্বাদ ভালো! তুমি আসলে সৌন্দর্য কি? তা আদৌ জানো না । তুমি আমার কাঁটাকে ক্যাকটাসের সাথে তুলনা করতে পারো না।”
অন্যান্য গাছগুলো ভাবল, “কি গর্বিত ফুল,”
গোলাপটি ক্যাকটাস থেকে তার শিকড় সরানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি সরাতে পারেনি।
যত দিন যাচ্ছে, লাল গোলাপটি ক্যাকটাসের দিকে তাকিয়ে অপমানজনক কথা বলতো, ‘এই গাছটি অকেজো। কেন এটি আমার প্রতিবেশী হলো? এমন কাঁটাওয়ালা গাছ প্রতিবেশী থাকাতে আমি ভীষণ দুঃখিত।’
ক্যাকটাস কখনই বিচলিত হয়নি। সে এমনকি গোলাপকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এই বলে যে, “ঈশ্বর কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া জীবনের কোনো রূপ সৃষ্টি করেননি।”
বসন্ত চলে গেল এবং আবহাওয়া খুব উষ্ণ হয়ে উঠল। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বনের গাছপালাগুলো কঠিন হয়ে পড়ে। লাল গোলাপের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল। তার পাতা শুকিয়ে ঝরতে শুরু হল। তার সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে লাগলো।
একদিন গোলাপ দেখল চড়–ইরা তাদের ঠোঁটগুলো ক্যাকটাসে আটকে রেখে সতেজ হয়ে উড়ে চলে গেল। এটি বিস্ময়কর ছিল, এবং লাল গোলাপটি পাইন গাছটিকে জিজ্ঞেস করল, “পাখিরা কী করছে?”পাইন গাছ বুঝিয়ে দিল যে, পাখিরা ক্যাকটাস থেকে পানি নিয়ে জীবন ধারণ করছে।
গোলাপ জিজ্ঞেস করলো, “তারা যখন গর্ত করে তখন কি ক্যাকটাস ব্যথা অনুভব করে না?”
“হ্যাঁ, কিন্তু ক্যাকটাস পাখিদের কষ্ট দেখতে পছন্দ করে না,” পাইন জবাব দিল।
গোলাপ বিস্ময়ে চোখ খুলে বলল, “ক্যাকটাসে জল আছে?”
“হ্যাঁ, তুমিও এটি থেকে পান করতে পার। তুমি ক্যাকটাসের কাছে সাহায্য চাইলে চড়–ই তোমার কাছে জল এনে দিতে পারে।”
লাল গোলাপটি ক্যাকটাসের কাছে পানি চাইতে খুব লজ্জা বোধ করছিল, কিন্তু অবশেষে, এটি সাহায্যের জন্য হাত পেতেছিল। ক্যাকটাস সদয়ভাবে রাজি হল। পাখিরা তাদের ঠোঁট জল ভরে গোলাপের শিকড়ে পানি দিল। গোলাপ আবার সজীব হয়ে উঠল।”
গল্পটি এই শিক্ষা দেয় যে, পৃথিবীতে প্রত্যেকেই সুন্দর, প্রত্যেকেই অনন্য, প্রত্যেকেই বিস্ময়কর এবং প্রত্যেকেরই জীবনে কোনো না কোনো রহস্য আছে।
সরকার হুমায়ুন, কল্পবিজ্ঞান লেখক




