বিগত সরকারের আমল থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ছিল লাগামহীন। তৎকালীন সরকার এই ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ক্ষোভে, দুঃখে মানুষ সরকারের প্রতি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। এরি মাঝে শুরু হল সরকার পতনের আন্দোলন। বলা হয়েছিল, বিগত সরকার লুটেরা সরকার, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা ইত্যাদি ইত্যাদি। বলা হয়েছিল, সরকারের পরিবর্তন হলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে, সব সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের আয়ত্ত্বের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। মানুষ এসব শুনে আশায় বুক বেঁধেছিল। তাদের কথা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু বিগত তিন মাসে পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া কোনো স্তরে লাগেনি। কি প্রশাসনে, কি জনমনে, কি বাজারে কোথাও কোনো পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বরঞ্চ পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রশাসনে চলছে স্থবিরতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি লাগামহীন। এই সব দেখার বা তদারকি করার কেউ আছে বলে মনে হয় না।
মানুষ যে কী কষ্টে আছে তা সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার শিরোনামে ফুটে ওঠেছে। শিরোনামটা হচ্ছেÑ ‘ক্রেতার চেয়ে ট্রাকে পণ্য কম’। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্যতেল, মসুরডাল, চাল ও আলু বিক্রি করছিল। এই চার পণ্য কিনতে একজন গ্রাহককে দিতে হয় ৫৯০ টাকা। আর খুচরা বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে লাগে প্রায় ১ হাজার পঞ্চাশ টাকা। টিসিবি থেকে পণ্য কিনতে পারলে অন্তত ৪৫০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এই কিছু টাকা সাশ্রয়ের জন্য মানুষ এখন মরিয়া হয়ে ওঠেছে। যেখানে টিসিবির ট্রাক দাঁড়াচ্ছে সেখানে শত শত মানুষ লাইন ধরছে। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ জনের পণ্য থাকে। অথচ অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে। কারণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাও আবার এই সুযোগ পাচ্ছে বড় বড় শহরগুলোতে। উপজেলা পর্যায়ে এই সুযোগ আছে কি না আমাদের জানা নেই।
দেশে বিগত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। অক্টোবর ২০২৪ মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৮৭ শতাংশ। খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে খাদ্যমূল্যস্ফীতি গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠেছে। আমাদের দেশের কৃষকেরা নিরলস পরিশ্রম করে কৃষিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের কাছ থেকে কমমূল্যে ফসলাদি ক্রয় করে উচ্চমূল্যে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এই মধ্যস্বত্বভোগীর সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো পদক্ষেপ এই পর্যন্ত কোনো সরকার নেয়নি।
এই মুহূর্তে কোনো অজুহাত নয়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমান, মানুষ বাঁচান। মানুষ বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। দেশ বাঁচলেই তবে রাজনীতি। মানুষ মেরে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো রাজনীতি এ দেশের মানুষ চায় না।




