নুসরাত সুলতানা
১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে মৌলভী মো. ইয়াসিন খান এবং মেহেরুননেসা খান এর চতুর্থ সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। সেদিন এই জন্মের সাথে বাংলাদেশের ভাগ্য জড়িয়ে গিয়েছিল। আর মহাকাল তা গভীর যতেœ নিজের গর্ভে লুকিয়ে রেখেছিল। আজ স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে একজন স্বাধীন নাগরিক হয়ে আমি, আমরা তা পলে, পলে উপলব্ধি করছি।
আপনি একজন পবিত্র কোরানের হাফেজ ছিলেন।
অবিভক্ত বাংলায় আপনি মেট্টিক ও ইন্টারে যথাক্রমে দ্বাদশ ও চতুর্থ স্থান লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৪ সালে কারাগারে বসে এল. এল. বি ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ই আপনি ছিলেন চূড়ান্ত সফল।
১৯৪৮ সালে বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আপনারই হাতে গঠিত হল। ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। তারপর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য এক অঙ্গে পরিণত হলেন।
বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত ৭ই মার্চের ভাষণেও আপনার মতামতের এবং পরামর্শের প্রতিফলন ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আত্মগোপন করে ভারতে চলে গিয়ে আপনি নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, আর বিচক্ষণতার সাথে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে লাগলেন। গঠন করলেন মুজিবনগর সরকার।
প্রথমে আত্মরক্ষা,তারপর প্রশিক্ষণ এবং সবশেষে আক্রমণ ও পালটা আক্রমণ এই নীতিতে হলেন মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক।
২২শে ডিসেম্বর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান এবং অন্যান্যদের সাথে দেশে ফিরলেন। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে ছেড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রীত্ব। দিলেন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। আপনি আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন মানিকজোড়।
আপনি আর বঙ্গবন্ধু একসাথে দেশের জন্য কাজ করতে পারলে, আজ বাংলাদেশ হত বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশ।
বাংলাদেশের ভাগ্যে নেমে আসে দূর্যোগের ঘনঘটা।
বঙ্গবন্ধু আর আপনার গভীর ভালোবাসায় আর বন্ধুত্বে ফাটল ধরালো শেয়াল মোশতাক। ছেড়ে দিলেন মন্ত্রীসভা। তাজউদ্দীন বুকে বুঝি আপনার অভিমান আর অনুযোগের জোয়ার উঠল? এত বিচক্ষণতা, এত সফলতা এত দূরদর্শিতা সবকিছু দিয়ে আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছিলেন প্রতিক্রিয়াশীলদের গভীর চক্রান্ত! কেন গেলেন না আপনার এত প্রিয় মুজিব ভাইয়ের কাছে? নিজের স্ত্রীর কাছে তো ঠিকই আশঙ্কা করেছিলেন, “মুজিব ভাই যেভাবে চলছেন আমরা কেউই বাঁচব না। দেশ স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে চলে যাবে”। হলও তো তাই। আমরা হলাম পিতৃ হন্তা, ভাতৃহন্তা জাতি। ১৫ আগস্টে জোহরা আপনাকে পালিয়ে যেতে বললেন। আপনি পালালেন না। বললেন, “না এখন পালালে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হবে। আমি তা হতে দিতে পারি না ” নিজের সম্মান নিয়ে এত ভাবলেন, কেন বুঝলেন না আপনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের দৃশ্যপট অন্যরকম হত! আপনি অ্যারেষ্ট হলেন।
২রা নভেম্বর রাতে স্বপ্নে দেখলেন, বঙ্গবন্ধু বলছেন, তাজউদ্দীন আমার একা লাগছে, তুই আয়! ৩রা নভেম্বর ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাগলা ঘন্টা বাজছে। আপনি মুচকি হেসে বললেন দেখেন আমাদের মৃত্যু ঘন্টা বাজে নাকি! বেয়নেট এর শেষ খোঁচায় বললেন, হায় বঙ্গবন্ধু তুমি দেখে গেলে না, কে তোমার আপন, কে তোমার পর!
৭১ এ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আসুন আমরা এমনভাবে কাজ করি, যেন ইতিহাস আমাদের খুঁজে না পায়”
মাটি খুঁড়ে যেমন খনি বের করে আনে খনিবিদরা, ইতিহাসের জঞ্জাল সরিয়ে প্রজন্ম বের করে আনবে আপনাকে। আপনি যুগে যুগে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, আনুগত্য আর দূরদর্শিতার উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে জ্বলবেন।
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক




