এখন সময়:সকাল ১১:৫০- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:সকাল ১১:৫০- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

ভাষার যতো মান অপমান

অজয় দাশগুপ্ত :

বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমাদের মাতৃভাষার নাম বাংলা ভাষা। আপনি আশ্চর্য হবেন জেনে প্রবাসের বাঙালিরা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের সন্তানদের বাংলা শেখায়। এ কাজ সহজ কিছু না। কাজ আর কাজের ব্যস্ত সমাজে সপ্তাহন্তের ছুটি বাদ দিয়ে যে সব অভিভাবকেরা তাদের বাচ্চাদের বাংলা স্কুলে নিতে দৌড়ায় তাদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমার ভাষায় এরাও এক জাতীয় ভাষা সৈনিক। ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার ঘটনা এখন ইতিহাস। আপনি চাইলেও আর বায়ান্ন ফেরত আনতে পারবেন না। পারবেন না নতুন করে ভাষা আন্দোলন গড়ে তুলতে। সম্ভব নয় সে চেতনাকে আগের শৈলী বা অবয়বে ধারণ করা। তাহলে কি আমাদের করণীয়?
এই যে যে সব অভিভাবকেরা কাজ করলে আরো কিছু ডলার পাউন্ড কামাতে পারতেন জমাতে পারতেন তারা তা না করে বাচ্চাদের বাংলা শেখানোর জন্য পরিশ্রম করেন তারা নতুন আন্দোলনের মুখপাত্র। কারণ তারা মায়ের ভাষা বা দেশের মূল ভাষার সাধে নয়া প্রজন্মের যোগ ঘটাতে এমন শ্রম দেন।

আমি যখন সিডনি আসি তখন একটা কি দুটি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কাজ করতো। এখন তার সংখ্যা যেমন বেশী তেমনি এলাকা ভিত্তিক এসব স্কুল বা অন্য প্রক্রিয়াও চলমান। শুধু সিডনি না পৃথিবীর সব দেশে বড় শহরে এই ধরনের কাজ চলছে। কেবল ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নয় সারা বছর ধরে চলা এই কার্যক্রমের সুফল পাচ্ছি আমরা। এখন যে কোনঅনুষ্ঠানে বা আয়োজনে একাধিক বাচ্চারা নির্ভুল ভাবে বাংলায় কবিতা বলে গান গায়। লেখা কঠিন হলেও বাচনে তারা দ্রুতই পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। আরবী ও তামিল জনগোষ্ঠী ব্যতীত আরো কারো ভেতর এমন তাগিদ দেখি না।

দুঃখের কথা হচ্ছে আমরাই হয়তো একমাত্র জাতি যারা নিজেদের মাতৃভাষা শুদ্ধ করে বলতে বা লিখতে পারি না। যাদের অক্ষর জ্ঞান নাই তাদের কথা আলাদা। যারা পড়ালেখা জানেন নিজেদের শিক্ষিত বলেন তারাই এমন করেন। আমি স্কুল কলেজের এমন শিক্ষকদের জানি যারা সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার তফাৎ বোঝেন না। আমি হলে যে যাই আর অন্য কেউ হলে যে যায় হবে সেটাই জানেন না। এটা কোন অজ্ঞতা নয় এটা হচ্ছে না জানার অভিশাপ।
আমরা গর্ব করছি ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের রক্তের ফসল এই মাস। অথচ আমারা ভেবে দেখি না ভাষার জন্য কি করছি আমরা। দেশে ঘরে ঘরে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ানোর জোর প্রতিযোগিতা । মন্দ কিছু না। সবাই চাইবে তার সন্তান আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে মেশা বা মেধা বিনিময়ের সুযোগ লাভ করুক। চাইবে তারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। কিন্তু কারো তলানী ঠিক না থাকলে সে যেমন দাঁড়াতে পারে না বা তার অবস্থান নড়বড়ে হতে বাধ্য তেমনি নিজের ভাষা হচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মূল ভিত্তি। এই ভিত্তিমূলের জন্য কি করছি আমরা? আপনাদের স্মরণ থাকতে পারে একবার জাতীয় বইমেলায় অতিথি হয়ে এসেছিলেন এক চেক ভদ্রলোক। চেক প্রজাতন্ত্রের নাগরিক এই মানুষটি বাংলা নিয়ে কাজ করেন বলে তাঁকে অতিথি করে আনা হয়েছিল। তিনি খুব মূল্যবান কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে ছোট্ট দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে তাদের ভাষায় যে কোন বই পাওয়া সম্ভব। তা আনবিক বিজ্ঞান বা মহাশুন্য কিংবা আইন বা চিকিৎসা শাস্ত্র সব বিষয়েই নিজের ভাষায় পুস্তক আছে তাদের। অথচ ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া বাংলাদেশে তা নাই। কেন নাই?
উত্তর খুব ই সহজ। আমাদের উদ্দেশ্য বা আদর্শ বহুমুখি। যে যে ভাবে মনে করেন সেভাবে ইতিহাস আর কবিতা গল্পের ব ই নিয়ে ব্যস্ত। এতে দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু গবেষণা ও জীবনের সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের কাজ কথার কথা হয়ে থেকে যাচ্ছে। ৭৫ বছর পর এই দু:খ আসলেই আর দু:খ থাকে না। হয়ে ওঠে হৃদয় বিদারক ভবিতব্য।

বলছিলাম প্রবাসের কথা। এখন বাংলাদেশীদের দাপট বিদেশের প্রায় সর্বত্র। যেখানেই বাংলাদেশী সেখানেই আমাদের ভাষা আর সংস্কৃতির জয়জয়কার। এটি কোন বিশেষ আবেগের জায়গা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকে নি। বরং আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যেটা দেখছি শহিদ মিনার বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজে যতটা আগ্রহ ততটা আগ্রহ ভাষা বিস্তার বা ভাষা ব্যবহারে দেখি না। অথচ এটাই মূল শক্তি। এতদিনে এমনটা হতে পারার কথা যে ,বিদেশের বড় বড় শহরে স্থানীয় বাংলাদেশি বা বাংলা ভাষার লেখকেরাই তাদের বই পুস্তক দিয়ে পুরোটা ভরিয়ে তুলবেন । সাথে উপরি পাওনা থাকবে দেশ ও দেশের বাইরের বাংলা ভাষার লেখকের বই। আমরা এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষরাই মূলত: বাংলা ভাষাভাষী। ফলে এ দায়িত্ব আমাদের।

আমি মনে করি ভাষা আন্দোলনের আর একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে সব ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের সম্মান আর ভালোবাসা জাগ্রত রাখা। দেশে যাদের উপজাতি বা আদিবাসী বলি তাদের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশে অবস্থান করেন। তারাও বাংলাদেশী। তাদের ভাষা আলাদা হতে পারে কিন্তু তারাও আমাদের মূলধারার অনুগামী। সংখ্যায় যারা বেশী অর্থাৎ বাঙালিদেরই কর্তব্য তাদের সাথে রাখা। এই কাজ অবিলম্বে হবার প্রয়োজন আছে।
আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি বলব যে জাতি তার ভাষার জন্য জীবন দিতে পেরেছে যে জাতি মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে দেশ অর্জন করেছে এবং রক্ত দিয়ে নিজেদের অধিকার ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে চায় তাদের জন্য বাংলা ভাষার সম্মান অনেক বড় বিষয়। কিভাবে তা হবে বা হতে পারে তা নিয়ে গবেষণার কারণ দেখি না। বাংলা ভাষা নিজেই একটি সুললিত ভাষা। জাতিসংঘ তাকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে নি। তার আছে নানাবিধ অর্জনের অহংকার। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাঙালির দেশাত্মবোধ আর ভাষার জন্য অনুরাগই আমাদের পথ দেখাতে পারে।

এত বছর পর ও বাংলা ভাষার মান অপমান নিয়ে কেন কথা বলতে হবে ? বরং আমরা চাইব আমাদের দেশ ও জাতির ভিত্তি এই ভাষা অমর হোক। ছড়িয়ে পড়ুক দুনিয়াময়। যার পতাকা বহন করবে আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা। জয়তু মাতৃভাষা।

অজয় দাশগুপ্ত, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।