এখন সময়:বিকাল ৫:৪১- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:বিকাল ৫:৪১- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

জাপান এবং রবীন্দ্রনাথ- অজানা কথা 

প্রবীর বিকাশ সরকার

এশিয়ায় রবীন্দ্রনাথ প্রথম নোবেল পুরস্কার অর্জন করার ফলে জাপানে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। তাঁকে সরকারের সমর্থনপুষ্ট আমন্ত্রণ পাঠানো হয় ১৯১৫ সালেই। তিনি ব্যস্ততার কারণে জাপান ভ্রমণ বাদ দেন প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। অবশ্য পরের বছর বিপুল অভ্যর্থনা জানায় তাঁকে জাপানিরা। শুরু হয় জাপান-বাংলা সম্পর্কের দ্বিতীয় অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় শুরু হয়েছিল ১৯০২ সালে যখন জাপানি পণ্ডিত ওকাকুরা তেনশিন প্রথম ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন; অতিথি হন ঠাকুর পরিবারের সদস্য রবি ঠাকুরের ভাইপো বিপ্লবী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে। প্রায় দশ মাস ছিলেন কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য জায়গায়। ঘনিষ্ঠ হন স্বামী বিবেকানন্দ, অবনীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে। স্বদেশী আন্দোলনের যুগ তখন, ফলে অনেক বিপ্লবীর সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়। ওকাকুরার সঙ্গে তখন সঙ্গী ছিলেন এক তরুণ ভিক্ষু শিতোকু হোরি, তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ওকাকুরার অনুমতি নিয়ে শান্তিনিকতনের আশ্রম বিদ্যালয়ে রেখে দেন। শিতোকু কিছুদিন সংস্কৃত ভাষা শেখার জন্য শান্তিনিকেতন তথা পরবর্তীকালের বিশ্বভারতীর প্রথম বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করেন।

 

ওকাকুরার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় তাঁর জীবনে নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। প্রথমত, এমন একজন বিদেশি আগন্তুকের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি যাঁর ভাবমূর্তি তাঁকে বিলক্ষণ ধাক্কা দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এমন একজন পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন যাঁর রয়েছে বহুমুখী পাণ্ডিত্য বিশেষ করে, প্রাচ্যধর্ম, রাজনীতি ও কলাশিল্প সম্পর্কে। তৃতীয়ত, এশিয়াবাদ বা এশিয়ানিজম অথবা প্যান-এশিয়ানিজম যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে প্রাচ্যভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন এই মতবাদের উদ্গাতা ওকাকুরার কাছেই। এই তিনটি বিষয়ের কারণে ওকাকুরা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের জীবনে অদ্বিতীয়ম একজন মানুষ, যাঁর গভীর-গভীর প্রভাব রবীন্দ্রনাথের জীবনে সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের আমৃত্যু জাপানপ্রীতির মূল কারণই ছিল ওকাকুরার জাপান। ওকাকুরা জাপানে ফিরে গিয়ে টোকিও ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতার আয়োজন করেন যেখানে প্রায় ৭০ জন বিদগ্ধ পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, শিল্পীসহ গুণীজন উপস্থিত হয়ে তাঁর ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শ্রবণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও উপস্থিত ছিলেন। এশিয়ার নতুন বন্ধু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলার নবজাগরণ আন্দোলনে ঠাকুর পরিবারের অগ্রণী ভূমিকার কথাও তুলে ধরতে ভোলেননি ওকাকুরা। তাঁর এই ভারত ভ্রমণের বর্ণনা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জাপানে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

 

ওকাকুরার সঙ্গে পরিচয়ের পর রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে জাপানের প্রতি দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সম্মুখে তখন শিতোকু হোরি, জাপানিদের রুচি-সৌন্দর্যবোধ, বাকসংযম, আত্মসংযম, অনুসন্ধিৎসা, কর্মনিষ্ঠতা প্রভৃতি গুণের দ্বারা আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। প্রকৃতি পাগল রবীন্দ্রনাথ জাপানের প্রকৃতি তখনও দেখেননি, শুধু দেখেছেন কিছু জাপানি নাগরিক। যে প্রকৃতি পরবর্তীকালে তাঁকে আমূল বদলে দিয়েছিল। ১৯০৩ সালে ওকাকুরা তাঁর দুজন প্রধান শিষ্য চিত্রশিল্পী য়োকোয়ামা তাইকান ও হিশিদা শুনসোওকে কলকাতায় পাঠালেন রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে। আসলে আসার কথা ছিল ওকাকুরারই, তিনি সদ্যনির্মিত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে চিত্রকর্মের কাজ করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন কিন্তু বৃটিশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়াতে উক্ত দুজন শিষ্যকে পাঠান। অবশ্য তাঁরাও সেইকাজ করতে পারেননি কর্তৃপক্ষের প্রতিবন্ধকতার কারণে। কয়েক মাস তাঁরা কলকাতা ও অন্যান্য জায়গায় কাটিয়ে জাপানে প্রত্যাবর্তন করেন। এর ফলে একটা কাজ হয় জাপান-বাংলা কলাশিল্পের ভাববিনিময় সম্পর্কের সুদূরপ্রসারী দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ঠাকুর বাড়িতে অবস্থান করার ফলে জাপানি শিল্পীদ্বয় বাঙালি চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু প্রমুখের মধ্যে চিন্তা-চেতনা, কলাকৌশল, রীতিনীতির বিনিময় ঘটে। তাইকান ও হিশিদা বিভিন্ন স্থান ঘুরে অনেক হিন্দু দেবদেবী ও বৌদ্ধ প্রতিমার প্রতিচ্ছবি এঁকে নিয়ে যান। তাঁরা স্বদেশে ফিরেও বেশ কিছু ছবি আঁকেন ভারতীয় প্রতিমা মূর্তি নিয়ে। অসাধারণ সেইসব ছবির সঙ্গে বৃহত্তর বাঙালি বা ভারতীয়র পরিচয় নেই বললেই চলে। এই অনালোকিত বিষয়টি নিয়ে বর্তমান লেখক “জাপানি শিল্পে ভারতীয় পুরাণ ও জনসংস্কৃতির প্রভাব” শীর্ষক একটি গ্রন্থ লিখেছেন, কলকাতার আত্মজা পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালে। উক্ত শিল্পীদ্বয়ের পরে দুজন জাপানি দারুশিল্পের প্রশিক্ষকও ১৯০৫ সালে শান্তিনিকেতনে যান কারুশিল্প শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে। রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁদের কাজকর্ম দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

 

১৯০৭ সালে জাপানের খ্যাতিমান তরুণ বৌদ্ধভিক্ষু ও পণ্ডিত কিমুরা নিক্কি বাংলাদেশে গমন করেন পালিভাষায় উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। চট্টগ্রাম শহরের অদূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক মহামুনি মহাস্থবির বৌদ্ধমন্দিরে তিনি তিন বছর অবস্থান করে পালিভাষা শিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি ভারতীয় ধর্ম ও বাংলা ভাষা শিক্ষালাভ করে পালি বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। অসীম সাহসী ও মেধাবী শিক্ষক কিমুরা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচিত হয়ে শান্তিনিকেতন পরিদর্শনে যান। কবিগুরুর সঙ্গে গভীরভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০ বছর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে জাপানে প্রত্যাবর্তন করেন। বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম, বেদ ইত্যাদি নিয়ে মহামূল্যবান গ্রন্থসমূহ

 

লিখে গেছেন। তিনি বাংলা ভাষায় পাণ্ডিত্যপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম জাপান ভ্রমণ করেন ১৯১৬ সালে তার প্রস্তুতি নিতে জাপানে ফিরে আসেন অধ্যাপক কিমুরা। দোভাষী হিসেবে কবিগুরুর তত্ত্বাবধান করেন। অনুরূপ নেতাজি যখন জাপানে আসেন তাঁর দোভাষীর দায়িত্বও অধ্যাপক কিমুরা পালন করেছিলেন।

১৯১১ সালে আরেক তরুণ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিত কাওয়াগুচি একাই ভারত ভ্রমণকালে কলকাতায় অবস্থান করেন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। শান্তিনিকেতনেও তিনি যান। অনুরূপ ১৯১৩ সালে যান প্রথিতযশা বৌদ্ধপণ্ডিত ও ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড.তাকাকুসু জুনজিরোও। তাঁর সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের ভাব হয়। কবির জাপান সফরের প্রস্তুতি পরিষদের তাঁরা দুজনেই ছিলেন অন্যতম প্রধান সদস্য। অধ্যাপক তাকাকুসুর সঙ্গে কবির একাধিকার সাক্ষাৎ ঘটে ও পরস্পর মতবিনিময় করেন। তাঁকে উপহার দেন রেশম কাপড়ে স্বহস্তে লিখিত ধম্মপদ থেকে উৎকলিত একটি বাণীর লিপিচিত্র। আজও সেটি অধ্যাপক তাকাকুসু প্রতিষ্ঠিত মুসাশশিনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। বর্তমান লেখক এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ ২০১১ সালে সাপ্তাহিক ২০০০ সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন।

১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথের জাপান ভ্রমণ নানা দিক দিয়েই উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যেমন শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, তেমনি রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই ঘটনা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। এই ভ্রমণের সময় তিনি একাধিক বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন যাঁরা তাঁর প্রকৃতিনির্ভর শিক্ষাপদ্ধতির প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁরা শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রনাথকে সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করেন, সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রভাবশালী শিল্পপতি এবং জাপানের প্রথম ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি শিবুসাওয়া এইইচি, রাষ্ট্রনায়ক এবং বিশ্বখ্যাত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কাউন্ট ওওকুমা শিগেনোবু, য়োকোহামা বন্দরনগরীর সিল্ক ব্যবসায়ী ও শিল্পকলার বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক হারা তোমিতারোও, মেয়েদের উচ্চশিক্ষার্থে প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিনজোও নারুসেসহ আরও অনেকের সঙ্গে।

 

প্রায় তিন মাসব্যাপী রবীন্দ্রনাথের এই জাপান পরিভ্রমণ কতখানি প্রভাব ফেলেছিল তাঁর জীবনে ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থে তা বিধৃত আছে। অত্যন্ত সজাগ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে তিনি জাপানকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারই প্রমাণ মেলে ‘জাপানের কথা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে যেটি তিনি ১৯১৮ সালে লেখেন। সেখানে তিনি বলছেন, “আমি যখন জাপানে ছিলুম, তখন একটা কথা বারবার আমার মনে এসেছে। আমি অনুভব করছিলুম, ভারতবর্ষের মধ্যে বাঙালীর সঙ্গে জাপানীর এক জায়গায় যেন মিল আছে। আমাদের এই বৃহৎ দেশের মধ্যে বাঙালীই সর্ব প্রথমে নূতনকে গ্রহণ করেছে এবং এখনো নূতনকে গ্রহণ ও উদ্ভাবন করবার মত তার চিত্তের নমনীয়তা আছে।”

কবি রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম জাপান ভ্রমণ করেন তখন মহাসংস্কারের যুগ মেইজি শেষ হয়ে তাইশোও যুগ (১৯১২-১৯২৬)শুরু হয়েছে। নূতনকে গ্রহণ ও উদ্ভাবনের জোরালো প্রবাহ তখন পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে, নূতনকে গ্রহণ ও উদ্ভাবনের মধ্য দিয়েই মাঝারি গোছের সাম্রাজ্য জাপান পার্শ্ববর্তী উদীয়মান শ্বেতাঙ্গ মহাশক্তি রাশিয়াকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করেছিল। এই রুশ-জাপান মহাযুদ্ধে (১৯০৪-৫) জাপানের বিপুল বিজয় সমগ্রবিশ্বকেই তাক্ লাগিয়ে দিয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ শক্তিকে এই প্রথম কোনো ক্ষুদ্র একটি সংকর জাতি পরাজিত করার ঘটনা ইতিহাসে আর নেই। ফলে একমাত্র স্বাধীন জাপান ছাড়া শ্বেতাঙ্গশক্তির দখলে বন্দী থাকা প্রতিটি এশিয়ান জাতিকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিল তাদের মুক্তিকামী চেতনাকে। উদ্বুদ্ধ করেছিল জাপানের এই দুঃসাহসিক সমর অভিযান এশিয়ায় আন্দোলনরত জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দকে। ভারতবর্ষ তার ব্যতিক্রম ছিল না। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে গান্ধী, নেহেরু, বিপীনবিহারী পাল প্রমুখকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

১৯০৭ সালে চট্টগ্রাম ভ্রমণকালে এক সভায় রবীন্দ্রনাথ জাপানের এই বিজয়কে স্মরণে রেখে বাঙালিকে জেগে উঠতে আহবান জানিয়েছিলেন। জাপান নূতনকে গ্রহণ করে পশ্চিমাশক্তির সমকক্ষ হয়ে উঠেছিল এটা রবীন্দ্রনাথও বুঝতে পেরেছিলেন, বলেছেনও তাঁর লেখায়। য়োরোপের নূতন সমরাস্ত্রই শুধু নয়, জাপানি জাতিটাকেই তাঁর চোখে ও মননে নূতন বলে প্রতিভাত হয়েছিল। এই নূতনত্ব হচ্ছে জাপানিদের দেশাত্ববোধ, প্রকৃতিলালন, প্রকৃতিজাত সংস্কৃতি, শিল্পকলা, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদি যা তাঁর নজরে এসেছে ব্যাপকভাবে এই প্রথম। সুতরাং কবি হিসেবে, বাঙালি হিসেবে নূতনের পিয়াসী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নূতন জিনিসগুলো জাপান থেকে ধার করে ভারতে তথা বাঙালি সমাজে প্রচলন করতে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সদ্যপরিচিত জাপানি বন্ধু ও ভক্তদের কাছে তিনি তাঁর আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন অকুণ্ঠচিত্তে। জাপানিরা তাঁর আগ্রহে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে মোটেই কার্পণ্য করেননি। বরং স্বদেশের অর্থ খরচ করে কলা-সংস্কৃতি-ক্রীড়াবিষয়ক প্রশিক্ষকদেরকে ভারতে পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথের জাপানি সংস্কৃতির মূল্যায়নকে মর্যাদা দিয়ে। প্রভাবশালী শিল্পপতি ও শিল্পকলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হারা তোমিতারোও পাঠিয়েছেন তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্য চিত্রশিল্পী আরাই কাম্পোকে। কাম্পো রবীন্দ্রনাথের ভারত প্রত্যাবর্তনের পরপরই কলকাতায় যান তাঁর একাধিক সঙ্গী নিয়ে ১৯১৬ সালেই। ঠাকুরবাড়িতে অবস্থিত “বিচিত্রা” ভবনে শিখিয়েছেন জাপানি চিত্রকলার কলাকৌশল। প্রায় দুবছর অবস্থান করে বিস্তর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন ভারতীয় চিত্রকলা সম্পর্কেও। তোমিতারোও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী তরুণ কলাশিল্পের শিক্ষার্থী মুকুলচন্দ্র দেকে বৃত্তি দিয়ে জাপানে রেখে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সঙ্গত কারণেই তা হয়নি। কিন্তু মুকুল দে যা শিক্ষালাভ করেছেন জাপানে এই মাস তিনেক সময়ে তাতে করে আমৃত্যু তিনি জাপানের পরম ভক্ত ছিলেন। কলকাতায় গমনকারী জাপানি চিত্রশিল্পীদেরকে তত্ত্বাবধান করেছেন।

 

এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও চারবার জাপান ভ্রমণ করেছিলেন যথাক্রমে, ১৯১৭, ১৯২৪ এবং ১৯২৯ সালে দুবার। এইসব ভ্রমণকালে জাপানের সঙ্গে সৃষ্ট হয়েছে সুদীর্ঘ অসামান্য এক ইতিহাস। বিশিষ্ট জাপানি নাগরিকদের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব জাপান-ভারত-বাংলাদেশ এই ত্রিদেশীয় রাজনৈতিক সম্পর্কের এক শক্তিশালী ভিত স্থাপন করেছে তা সমগ্র এশিয়া মহাদেশে এক বিরল ঘটনা এবং অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। যা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা হয়নি বললেই চলে।

 

 

 

প্রবীর বিকাশ সরকার, জাপান প্রবাসী, সব্যসাচী লেখক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।