এখন সময়:সন্ধ্যা ৬:১৭- আজ: বৃহস্পতিবার-৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৬:১৭- আজ: বৃহস্পতিবার
৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

ইবরাহীম মুহাম্মদ-এর সৃজনশীলতা ও ‘কথা ক্ষীণতোয়া’

শাকিল আহমদ

এক.

মুনির চৌধুরী তাঁর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটক লিখতে গিয়ে একটি সংলাপ দিয়েছেন—‘মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, সকালে বিকেলে বদলায়’। তাঁর এই সংলাপের সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া একান্তই সহজ। কিন্তু কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও পরিলক্ষিত হয়। সংখ্যায় অল্প হলেও এ ধারার একজন ইবরাহীম মুহাম্মদ।

চারপাশের চেনা-জানা অনেক কিছুই বদলে গেছে। সে হিসেবে বদলের খাতায় বন্ধুদের তালিকাও। কিন্তু অপরিবর্তিত শুধু সেই গত শতকের মধ্য আশির দশকে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস এবং কিছুদিন পরে সোহ্রাওয়ার্দি হোস্টেলে ক্রমে ক্রমে ঘনিষ্ট হওয়া ইবরাহীম মুহাম্মদ। খোলস বদলে চলার এক অনব্যস্ত মানুষ ইবরাহীম মুহাম্মদ। তখন থেকে এখনো তার সাথে সখ্যতা আছে, দেখা সাক্ষাত আছে, তার চেয়েও বেশী কথা হয় মুঠোফোনে। শুধু দূর থেকে কুশল বিনিময় নয়, এ যেন দু’টো হৃদয়ের জমাটবদ্ধ রক্তনালীকে গতিশীল করা। জীবনী শক্তিকে জাগিয়ে তোলা।

 

ইবরাহীম মুহাম্মদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পাঠ চুকিয়ে নেয় গত শতকের নব্বই এর দশকের মধ্য ভাগে। হয়তো বা খোলস পাল্টে বন্দর নগরীতে ঠিকতে অনব্যস্ত বলে এক সময় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে নোঙ্গর ফেলে সেই ফেলে আসা জন্মজঠর কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। নগর থেকে মফঃস্বল শহরে ফিরে এসেও গত তিন দশকে নিজ জন্মভিটাই বসে কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি সততার সাথে নিজের সৃজনশীল মনোবাসনাকে জাগিয়ে তোলে। শহরতলীর সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকেও অদম্য একাগ্রতায় গত তিন দশকে সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডে অনেকটা পথ হেঁটেছে।

 

দুই.

ইবরাহীম মুহাম্মদ কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রকাশনা সংস্থা ‘ঋতবর্ণ’ গড়ে তুলে। একজন রুচিশীল ও যত্নবান প্রকাশক হিসেবে গত তিন দশকে তার প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রায় শতাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনার মতো এই দুরূহ কাজটি যখন করতে হয় কোনো শহরতলীতে বসে, তখন এর প্রতিকূলতা বলাই বাহুল্য।

ইবরাহীমের সৃষ্টিশীলতা যা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে পাঠক সমাজকে চমকে দিয়েছে, তাহলো তার সম্পাদনা জগত। বিশ শতকের সমাপ্তি বছরে সেই মফঃস্বল শহরে বসে তিনি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশের ও সম্পাদনার মতো দূরূহ কাজে হাত দেন। কক্সবাজারের সৃজন সন্ধানের পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিল্প, পরিবেশ ও অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি ‘কক্সবাজার বিচিত্রা’র প্রথম যাত্রা শুরু করেন ডিসেম্বর ১৯৯৯-২০০০ সংখ্যা দিয়ে।

উল্লেখ্য-স্বাধীনতা পরবর্তী গত সাড়ে পাঁচ দশকে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন সাময়িকী প্রকাশ-প্রসারের ক্ষেত্রে বিশ শতকের শেষ দশক এবং একুশ শতকের শূন্য দশক কে প্রকাশনা জগতের স্বর্ণযুগ বললে অতুক্তি হবে না মোটেও। যদিও বলতে দ্বিধা নেই যে, আজ একুশ শতকের সিকি শতাব্দ কালে এসে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে এই প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা সর্বকালের মধ্যে অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। যাইহোক আজ থেকে সিকি শতাব্দ আগে সম্পাদকের চিন্তা-চেতনা ও ভাবনা কী রকম ছিল তা তাঁর সূচনা সংখ্যা ‘কক্সবাজার চিবিত্রা’র সম্পাদকীয় থেকে উপলব্ধি করা যায়।

“বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ এখন পত্র-পত্রিকার স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পত্রিকা আত্মপ্রকাশ উক্ত বক্তব্য মেনে নিতে আমাদের প্ররোচিত করে। খোদ কক্সবাজার থেকেই বেশ কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশ এ সময়ের প্রকাশনা অনুকূল উর্বরতাকেই চিহ্নিত করে। কিন্তু একটা বিষয় বিস্ময় সহযোগে লক্ষনীয় যে, সারা দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা দূরহ ও অপমৃত্যুশীল। … ‘কক্সবাজার বিচিত্রা’ সাহিত্য অনুরাগী কিন্তু শুধু সাহিত্যের পত্রিকা নয়। সাহিত্য যদি জীবনের নানামুখী উৎসারণের একটি হয় তবে শুধু সাহিত্য নিয়ে আপাদমস্তক বদ্ধ থাকা সুবিবেচনার প্রকাশ নয়। তাই কক্সবাজার বিচিত্রা’র ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সংস্কৃতি-উন্নয়ন-পরিবেশ-চিন্তা প্রভৃতি নানা বিষয় অবলম্বন জীবনকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অবলোকণেরই প্রয়াস। এছাড়াও পাঠকবর্গের চাহিদাও পরামর্শ সাপেক্ষে সুচিন্তিত কোন্দল চর্চাযুক্ত রাজনৈতিক নিবন্ধ এবং সুস্থ বিনোদনমূলক রচনা উপহার দিতেও কক্সবাজার বিচিত্রা সচেষ্ট থাকবে।’’

এক্ষেত্রে সূচনা সংখ্যায় সাজানো সূচির দিকে খানিকটা দৃষ্টিপাত রাখা যায়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পটভূমি কক্সবাজার, পরিবেশ, বৃক্ষ-বিনাশ, নিহত নিসর্গ, বিপন্ন স্বদেশঃ ফিরিয়ে দাও অরণ্য, শিল্প চিন্তাঃ নিভৃত গ্রামে আদর্শ শিক্ষাঙ্গন—শিলখালী উচ্চ বিদ্যলয়। উপজাতীয় ম্রো সম্প্রদায়ের জীবনগাঁথা, কক্সবাজার মনীষা, স্মরণ এবং নিয়মিত বিভাগে—সম্পাদকীয়, বাক্য-অমৃত, পাঠকের চিঠি, প্রবাসী পাঠক ইত্যাদি। এই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার বিচিত্রা বেশ ক বছর কক্সবাজার জেলা সহ চট্টগ্রামেও বেশ সুনামের সাথে অনেক পাঠকের ভালোবাসা পেতে সক্ষম হয়। ‘কক্সবাজার বিচিত্রা’র উল্লেখ করার মতো কয়েকটি বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে। এসব কাজে জড়িয়ে আছে সম্পাদকের নিষ্ঠা, শ্রম, রুচি ও ভালোবাসার বহি:প্রকাশ।

সম্পাদক ইবরাহীম মুহাম্মদ তার প্রথম সম্পাদকীয় মনোভাবকে লালন ও ধারণ করে প্রাণান্তর চেষ্টার ফলে ‘কক্সবাজার বিচিত্রা’কে অনেকটা পথ টেনে চলার প্রয়াস ও দু:সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। অবশ্য এটাই সত্য, জন্মিলে মরিতে হইবে। কেউ আগে আর কেউ পরে।

কক্সবাজার বিচিত্রা ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু সম্পাদিত গ্রন্থের কথা তুলে ধরা যায়—‘অনুবাদ-সাহিত্যিক জাফর আলম জীবন ও কর্ম’। প্রকাশ-ফেব্রুয়ারী ২০০৫। একটি ঋতবর্ণ প্রকাশন। জাফর আলম একজন প্রতিতযশা সাংবাদিক, লেখক ছাড়াও একজন শক্তিধর অনুবাদক। গ্রন্থটির সম্পাদক ইবরাহীম মুহাম্মদের সম্পাদকের কথা’র কিয়দঅংশ তুলে ধরা হলো—

“উর্দু কথাসাহিত্যের শক্তিমান কয়েকজন সাহিত্যস্রষ্টার রচনাকর্ম মুক্তধারার লেখক কাগজে ছাপানো সুলভ মূল্যের গ্রন্থপৃষ্ঠায় প্রথম যখন আস্বাদন করি তখন আমি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। অনুবাদককার কিংবা অনুবাদকের বিশিষ্টতা নিয়ে আমার কোনো কৌতুহল তখন ছিল না। তবে, এখনো বেশ মনে আছে। জাফর আলমের অনুবাদে এক টুকরো মিছিরি, নীরা, মাল্টোর শ্রেষ্ঠ গল্প, মিস নৈনিতাল, উর্দু সাহিত্যের এই বইগুলো পড়তে গিয়ে তখন বেশ স্বচ্ছন্দতাই অনুভব করেছিলাম। মৌলিক সাহিত্যাকৃতির আরষ্ঠতা বা ভাষান্তর প্রক্রিয়াজনিত বিঘ্ন সেখানে তৈরী হতে দেখিনি।”

সাংবাদিকতা এবং সাহিত্যবৃত্তি হিসেবে জাফর আলমের অবদান স্মরণযোগ্য হলেও জীবৎকালে তাঁকে নিয়ে খুব একটা মাতামাতি হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইবরাহীম মুহাম্মদের সম্পাদিত জাফর আলমের জীবন ও কর্মের ওপর গ্রন্থটি ছিল তাঁর সৃষ্টিকর্মের উল্লেখযোগ্য মূল্যায়ন।

 

‘মুজিবুল হক চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ—মধ্যাহ্নে দিবাবসান’ ইবরাহীম মুহাম্মদ সম্পাদিত। প্রকাশকাল—ডিসেম্বর-২০০৩,একটি ঋতবর্ণ প্রকাশন।

মুজিবুল হক চৌধুরী স্মারক গ্রন্থটি নানা কারণে উল্লেখযোগ্য একটি প্রকাশনা। প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক মুজিবুল হক চৌধুরী যার অকাল প্রয়াণে দেশ শুধু একজন নির্ভীক সাংবাদিক হারিয়েছে তা নয়, কক্সবাজারবাসী হারিয়েছে তাদের শৌর্য-বীর্যের পরিচায়ক একজন গবেষককে। তাঁর হাতে কক্সবাজারের শিল্প-সাহিত্যের আঙ্গিনা আরো অনেক ঋদ্ধ হতো যদি না তিনি দীর্ঘায়ু হতেন। সেদিন ইবরাহীমের মতো সম্পাদক ও প্রকাশক যদি এগিয়ে না আসতো তাহলে তরুণ গবেষক-সাংবাদিক মুজিবুল হক চৌধুরী কৃর্ত্তী পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অধরাই থেকে যেতো।

ইবরাহীম মুহাম্মদের আরো একটি উল্লেখ করার মতো সম্পাদিত গ্রন্থের নাম ‘চোখ’। এটি একটি সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ। বাংলা কবিতায় ‘চোখ’ একটি অসাধারণ অনুসঙ্গ বটে। বাংলা কবিতাকে ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিতযশা কবি রয়েছেন তাঁদের কলম দিয়ে কোনো না কোনো ভাবে কর্ষিত হয়েছে ‘চোখ’ অনুষঙ্গ। হয়তো একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতায় রচিত হয়েছে চোখ কে অনুষঙ্গ করে। এমনকি চোখ শিরোনামে কবিতা গ্রন্থের নামও রাখা হয়েছে। কবিতার এই জনপ্রিয় বিষয়টিকে নতুন মাত্রায় রূপ দিয়েছেন ইবরাহীম মুহাম্মদের এই ‘চোখ’ গ্রন্থটি। এটিও তার সৃজনশীলতার এক অনন্য সংযোজন।

তিন.

ইবরাহীম মুহাম্মদের সৃজনকলায় ব্যতিক্রমি সংযোজন ‘কথা ক্ষীণতোয়া’। খানিকটা অবচেতন অথবা সচেতন ভাবে ঋইতে লেখা এবং সামগ্রিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা বচন-প্রবচনের ধাছে লেখা কিছু একটা পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে ‘কথা ক্ষীণতোয়া’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘কথা ক্ষীণতোয়া’ বস্তুত ইবরাহীম মুহাম্মদের মেধা-মনন ও চিন্তার সংহত, ধ্বনিত অর্ন্তভেদী প্রকাশই বঠে। অনেকটা উদ্দেশ্যহীন ভাবেই প্রথমে লিখতে শুরু করে কিছু অপ্রিয় সত্যকথা। যা পাঠকের চিন্তা শক্তিকে ভাবায়, শানিত করে, বিবেককে নতুন করে জাগ্রত করে। চিন্তাশীল পাঠকের আগ্রহ-উৎসাহ-প্রশংসা দেখে লেখাতে গতি আসে আরো। সে থেকে রূপ নেয় গ্রন্থাকারে ‘কথা ক্ষীণতোয়া’। প্রকাশকাল—সেপ্টেম্বর-২০২৪, ঋতবর্ণ প্রকাশন।

প্রায় আড়াইশত মূল্যবান বাক্যকে লেখক বিষয় ভিত্তিক চিন্তা করে ভাগ করেছেন ষোলটি অধ্যায়ে। ক্রমানুসারে: ১. সম্পর্ক। সঙ্গ। বন্ধুতা ২. পদ। স্তাবক। স্মৃতি ৩. সত্য। মিথ্যা ৪. পোষাক। সৌন্দর্য ৫. জন্ম। জীবন। মৃত্যু ও ন্যায়। অন্যায়, ৭. জ্ঞান। শিক্ষা। শিক্ষক ৮. বিশ্বাস। প্রতারণা ৯. ধর্ম। মানবতা ১০. ভক্তি। ভালোবাসা। ঘৃণা ১১. দেশ। রাজনীতি। সমাজ ১২. অভ্যাস। আচরণ ১৩. সম্মান। মর্যাদা ১৪. পাপ। পূণ্য ১৫. দৃষ্টি, দর্শন ১৬. ভয়।

উল্লেখ্য—এখানে বিশরিদ চিন্তার ও কাছাকাছি চিন্তার বিষয়গুলোকে এক ফ্রেমে রাখার চেষ্টা করেছেন লেখক। যেমন—সম্পর্ক, সন্দ, বন্ধুতা ইত্যাদি। এখান থেকে তিনটি চিন্তাশীল উক্তি তুলে ধরতে পারি—

১. সম্পর্কে গুরুত্ব পারদের মতো— অর্থ ও প্রতিপত্তির তাপে ওপরে উঠে, তাপহীনতায় নিচে নামে (সম্পর্ক)

২. কেউ অবহেলা দেখালে বুঝে নিও সমাজে তার অভিমুখ উর্ধ্বপানে। আর তোমার নিম্নগামী। (সঙ্গ)

৩. তুমি ক্লান্ত বা শ্লথ হয়েছো বলে যে তোমাকে ফেলে এগিয়ে যায়, সে তোমার বন্ধু নয়। (বন্ধুতা)।

 

এসব উক্তি নি:সন্দেহে জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। পাঠক মাত্রই তা অণুধাবন করতে পারে অনায়াসে। সাথে সাথে চিন্তাশক্তিকেও খানিকটা শানিত করে তোলে। এখানে প্রতিটি উক্তিই যেন চলার পথে থমকে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার অথবা নতুন করে ভাববার পথ খুঁজে ফিরে, কিংবা আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়।

বইটির ‘কথা ক্ষীণতোয়া’ নামকরণ কে নিয়েও খানিকটা ভাবা যায়। লেখক তাঁর যুক্তির উক্তিগুলোকে ফ্রেমে বন্ধি করতে গিয়ে কোনো গতানুগতিক শিরোনাম রাখেননি। বই এর শিরেনামেই মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম ক্রিয়াকে কাজে লাগাতে হয়। যা কিছু বলা হয় তাই কথা। ক্ষয়প্রাপ্ত বা হারিয়ে যাওয়া কথাগুলোকে তল্লাশ করা বা খুঁজে বের করা। বলা যায় সহজ শব্দের অর্থ দিয়ে কঠিন বাক্য তৈরী করার মতো একটি শিরোনাম ‘কথা ক্ষীণতোয়া’। গ্রন্থের শিরোনামের মতোই প্রতিটি বাক্য যেমনি ধারালো, তেমনি অকাঠ্য সত্যও বটে। ধর্ম, মানবতা পর্ব থেকে দু’টি

 

উদাহরণ দেওয়া যায়—

১. ধর্মালয় বানিয়ে তার ভেতরে ঢোকা ভালো। তার চেয়ে ভালো ধর্মকে নিজের দেহালয়ে প্রবিষ্ঠ করে নেওয়া।’ (ধর্ম)

২. ধর্মের কারণে সহিংসতা ঘটেনা, ঘটে ধর্মের অনুপস্থিতির কারণে: আর মানুষ সহিংস হয় নিজের ধর্মের অংশ না হয়ে ধর্মকে নিজের অংশ মনে করে বলে। (মানবতা)

এখানে প্রতিটি উক্তির যৌক্তিক ব্যাখ্যা সহজেই যেকোনো পাঠককে আন্দোলিত করে, ভাবিয়ে তোলে, সুপ্ত মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তোলে। সে হিসেবে এটি গতানুগতিক গ্রন্থের মতো কোনো সাধারণ বইয়ের মাপকাঠিতে নিয়ে পাঠের যৌক্তিকতা নেই। বইটি পাঠে যে কোনো পাঠকের বিবেককে অন্তত সাময়িক হলেও শানিত ও পরিশুদ্ধ করতে চেষ্টা করবে। গ্রন্থে সন্নিবেশিত প্রতিটি বচন—প্রবচনে চিন্তাশক্তির প্রখরতা ছাড়াও আছে সুনিপুণ বাক্য গঠন। শব্দ চয়ন এবং উপস্থাপনের শৈল্পিকতা। এসব শিল্পগুণের কারণেও গ্রন্থটি একটি উচ্চতর মাত্রায় অবস্থান পেয়েছে।

চার.

জীবিকা ও জীবনের প্রয়োজনে একটি উপজেলা শহরে অবস্থান করেও শৈল্পিক চেতনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ধারণ, লালন ও বহন করে যাওয়া সত্যিই দূরূহ কাজ বৈকি। এক দৃঢ় মনোবাসনা সততার স্বপ্নকে লালন করে ইবরাহীম মুহাম্মদ এতোটাই পথ অতিক্রম করেছে। যেখানে ছিলনা কোনো আপোষ কিম্বা মাথা নোয়ানোর মতো কিছু। ক্রমাগত আমাদের মনুষ্য সমাজ থেকে নৈতিকতা লোপ পেয়ে বৈষয়িক সমাজের দিকে ঝুঁকে পরার কারণে সমাজ অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি আজ। অসম চাহিদার কারণে কলুষিত এক সমাজের দিকে আমরা ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছি। একজন সৃজনশীল মানুষ কখনো অসমচাহিদার দিকে কর্ণপাত করেনা। অতপর, পরিশিলিত সমাজ নির্মাণে ইবরাহীম মুহাম্মদের মতো আদর্শিক শিল্পবোধের মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে জাগিয়ে তোলার সময় বয়ে যায়।

 

শাকিল আহমদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আহমদ রফিক: ভাষাসৈনিক থেকে সাহিত্য-গবেষণার আলোকবর্তিকা

শাহেদ কায়েস   আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-মৃত্যু: ২ অক্টোবর ২০২৫) বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভুবনে আহমদ রফিক একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি একাধারে

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

আন্দরকিল্লা ডেক্স \ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের আত্মজীবনী ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

ফেরা

সৈয়দা মাসুদা বনি   নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের কথা শোনা থাকলেও আদতেই সেটা কেমন জানা ছিল না রিশানের। এটাই তাহলে মৃত্যুর পরের জগৎ, সে ভাবে। সে ভাবতে

ফিরে যাওয়া

বিচিত্রা সেন   রুবা.. রুবা খবরদার, না খেয়ে এক পাও বাইরে দিবি না। মুশকিল হয়ে যাবে কিন্তু! মায়ের হুমকিতে অগত্যা রুবাকে দাঁড়াতেই হয়। মা যে

চিরহরিৎ বৃক্ষের গল্প

সুজন বড়ুয়া   ছাদে উঠে দেখি শানবাঁধানো উঁচু আসনে একা বসে আছেন হরিৎবরণ ঘোষাল। একটু অবাক হলাম। এ সময় তার ছাদে বসে থাকার কথা নয়।