রাক্ষসকুল
মুখে তুলে দাঁতে কেটে চিবিয়ে
গলাধঃকরণ করে পাকস্থলীতে নিয়ে গিয়ে
পুরো হজম না করা পর্যন্ত
আমরা কেউ কাউকে ছাড়ছিনে!
তুমি জলে রাক্ষস
আমি বনে রাক্ষস!
তুমি হাসপাতালে রাক্ষস
আমি বাজারে রাক্ষস!
তুমি রাজনীতিতে রাক্ষস
আমি বাণিজ্যে রাক্ষস!
তুমি অফিস-আদালতে রাক্ষস
আমি স্কুল-কলেজে রাক্ষস!
তুমি পথে পথে রাক্ষস
আমি পদে পদে রাক্ষস!
তুমি হও আমার গ্রাস
আমি হই তোমার সর্বনাশ!
শেষমেশ একে অপরকে
হাঁ’র ভেতর নিয়ে গিয়ে বলি—
‘পরিপাকতন্ত্র’ জিন্দাবাদ!
রাক্ষসদের বশংবদ সবখানে!
আমরা কে না হয়ে উঠি রাক্ষস!
রাক্ষসদের রাজত্বে রাক্ষস বন্দনা!
তাদেরই সর্বত্র জয়জয়কার!
কীভাবে রাক্ষসের উত্তরাধিকারী হয়ে
রাক্ষস সমাজে আরও কুলীন হওয়া যায়,
তারই কৌশল ও দক্ষতা শিখতে
স্কুলঘর-কলেজঘর তৈরি করছি!
কীভাবে টেনে ধরব?
কীভাবে দংশন করব?
কীভাবে রক্তাক্ত করব?
কীভাবে খাবলে ধরব?
কীভাবে গিলে খাব?
সেই পাঠ্যক্রমের বই থেকে রচনা মুখস্থ করি!
রাক্ষস হয়ে কী দ্রুত বংশধর বাড়িয়ে তুলছি?
কী দ্রুত বাড়ছে এণ্ডিগেণ্ডি ছানাপোনা!
নিজের পুত্র ও দত্তক পুত্র
ভাই ও ভাতিজা এবং ভগ্নি ও ভাগ্নে,
কেউ আর রাক্ষসকুলের কুলত্যাগ করে
মানুষ হতে চাইছে না!
দুইকুল তিনকুল আগেও তো মানুষ ছিলাম
আঁতের টান নাড়ির টান এইকালে এসে
হারিয়ে ফেলছি!
আমলনামা
সব আমলের আমলনামায়
আমাদের নাম উঠতে উঠতে আর উঠে না,
দু’একবার নাম উঠলেও
তা আর শেষমেশ থাকে না!
তলানিতে গিয়ে তলিয়ে যায়!
সব আমলেই মীনাবাজার!
প্রদর্শনীতে যা থাকে—তা আমরা ছুঁতে পারি না!
ক্রয়ক্ষমতা আরও দুর্দশায় দূরবর্তী!
সব আমলেই আমরা আমড়া চুষি!
ভুষিমাল হয়ে যার তার গুদামে মজুদ হই!
আমাদের স্বপ্নগুলো নিয়ে একদল অশ্বারোহী
রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়ে!
আর আমরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি!
আমরা স্বপ্নমালা নিয়ে শুধু জপ করি না!
স্বপ্নচারী হয়েও
রোগাপটকা হয়ে কাদের পেছনে পটকা ফোটাই?
শুধু কি পটকা ফোটাই?
নিজেরা নিজেদের রক্তাক্ত পোটলও তুলি!
তুলি দিয়ে শেষমেশ কার ছবি আঁকা হয়ে যায়!
রাতের বেলায়
স্বপ্নছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি,
সকালবেলায় উঠে দেখি—
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছি বিছানায়!
গণ্ডগ্রামের গণ্ডমূর্খ
মুখে বাতাস নেওয়ার সুযোগ পেয়ে কিছু লোক
ইচ্ছেমতো ফুঁ তৈরি করে নিয়ে,
যাকে তাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে চাইছে!
যাদের উড়িয়ে দিতে চাইছে—
তাদের শেকড় কোথায় প্রোথিত?
—তা তারা জানে না!
ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ পাঠকও তারা নয়!
তারা বুঝতে পারছে না
তারা একেকটি ফোলানো গ্যাস-বেলুন,
একটি আলপিনের খোঁচায় চুপসে যাবে!
ফুঁ দিয়ে চুল্লিতে আগুন ধরিয়ে
ভাত রান্না করার কথা! তা না করে—
এর-ওর ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে!
গণ্ডগ্রাম থেকে এসে গণ্ডমূর্খ হয়ে থাকার পরও
তারা হয়ে উঠেছে ক্ষিতিপতি!
যার তার পতি ভাবা শুরু করেছে!
চৌকিদারের পাহারায় চৌকিতে পা মেলে বসে
অন্যের চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে!
সাবান পানিতে ফুঁ দিয়ে বাবল তৈরি করে ভাবছে,
তারা কী না শক্তি পেয়েছে?
সেই বাবল বাতাসে কতক্ষণ থাকে?
তাঁদের ফুঁয়ের শক্তি তো ফুয়েলশক্তি নয়,
—নয় কয়লাশক্তিও!




