এখন সময়:দুপুর ১২:১৫- আজ: শনিবার-২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:১৫- আজ: শনিবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

চট্টগ্রামী প্রবাদের প্রথম গ্রন্থ : রচয়িতা জেমস ড্রমন্ড এন্ডার্সন (সপ্তম কিস্তি)

মহীবুল আজিজ

 

 

১৭১. ফেছুয়া তুল্তে হাপ উঠে।

“In digging for worms, you find a snake.” This means getting into trouble about a small matter.

 

১৭২. লাইয়ে গরু দোহন্।

Milking a cow into a basket.” i. e., Doing anything without thought of the consequence.

 

১৭৩. ধর্ম্মর জয়, অধর্ম্মর ক্ষয়।

The victory of virtue in the decline of vice.” (See captain Garton’s proverb no. 210)

 

১৭৪. কার্ন সোনায় কান্ কাডে।

The gold earring cuts the ear.” This is said to signify domestic treachery.

 

১৭৫. ডেয়া গরুয়ে বাঘ্ ন চিনে।

“The calves do not fear the tiger.” i. e., Un-burnt children do not dread the fire.

 

১৭৬. ডোর্মে গরু, বামনের না।

A fisherman’s cow and a Brahman’s boat.” This signifies grotesque incongruity.

 

১৭৭. গার্ছ কাঁঠাল ওঠত্ তেল্।

To besmear lips with oil in expectation of a jackfruit on the tree.” Counting your chickens

before they are hatched. (Same 13, 180) (See Captain Garton’s Prov. No 10) Rubbing the lips with oil while the jackfruit is still on the tree.

 

১৭৮. বর্ন বাঘতুন্ মনের বাঘে খায়।

A tiger in the mind is more ferocious than one in the forest.” i. e., Anticipation is worse than the reality; and irresolution destroys action.

 

১৭৯. আন্ড্যা পাতাতে ঠাডার ন পরে।

The thunder bolt falls not on the stray leaf.” A rebuke to insignificance.

 

১৮০. গাছত্ ন’ উঠ্তে পাঁচ্ কাঁধি।

Demanding five clusters of plantain, before anyone has climbed the tree.” i. e., Expecting results before anything has been done. (13, 177)

 

১৮১. আপনার নাক কাটি পরের অযাত্রা।

“To cut off one’s one nose to prevent another man from starting on a journey.” (110) (See Captain Garton’s Prov. No 193)নিজর নাক কাটি সতিনীর যাত্রা ভঙ্গ। She cut off her own nose, so as to prevent her husband’s second wife from starting on a journey.

 

১৮২. তিন্ লাড়ায় সুপারি সোনা,

তিন্ লাড়ায় নারিকেল টেনা,

তিন্ লাড়ায় শ্রীফল বেল,

তিন্ লাড়ায় গিরস্থ গেল।

Three transplantations make a plant of betel nut gold, and to a coconut bring ruin, three moves improve a bel tree, but three moves ruin a farmer.” Rustic wisdom.

 

১৮৩. র্ঘ বান্ধিব মুর্গ্যা,

গরু কিনিব টুর্গ্যা,

বিয়া করিব কালা,

তোই গিরর্স্থ ভালা।

It is best for a householder to build his house small, to purchase a tiny cow, and to marry a wife of dark complexion.” A small house is more durable, a small cow does not require much food, and, as fair women generally attract attention, a homely wife is best, i. e., safest.

 

১৮৪. প্রথম্ বয়সে না হইল্ পুত্

মার সুখ্ না বাপের সুখ্।

Neither is mother happy nor father, if the son does not come while they are still young.” Among other reasons there is the fear of dying before the child is started in life.

 

১৮৫. তুই দিয়ারে মুই দিয়া।

“You give and I will give.” i. e., Nothing for nothing. Inculcates reciprocity.

 

১৮৬. পুর্কু নষ্ট ফেনা,

মানুষ নষ্ট কানা।

As a tank is ruined by weeds,

So a one-eyed man is spoiled.”

This gives expression to a common (and most unjust) prejudice against one-eyed persons.

 

১৮৭. খল্ পরসী নাদান্ ভাই,

সেই বের্ডা বসতি নাই।

“A man, having quarrelsome neighbors and an extravagant brother, is a homeless wretch.” Rustic wisdom.

 

১৮৮. উজ্জা আঁইলে ঘি না উডে।

“It takes a crooked finger to hook ghee out (of a pot).” The application is obvious.

 

১৮৯. আঁধা আঁর্তু ভেঁর্উ,

এই তিন শয়তানের লেঙ্গুর।

“The blind, the lame, and the crooked,

These three are the three tails of Satan.” Another cruel prejudice against the afflicted due to the primitive belief that their afflictions are the result of sin.

 

১৯০. ঘাট র্পা হৈলে ঘাট্যা হালা।

“A ferryman is called a sala (wife’s brother, a term of abuse) when the ferry is crossed.” i. e., A squeezed orange is thrown away.

 

১৯১. আন্ধা কালা কোল-ভেঁর্উ গোদের অন্ত নাই,

তিন শ বিরাশী বুদ্ধি র্যা এক চোখ্ নাই।

The intelligence of the blind, the deaf, the crooked and of the person afflicted with elephantiasis, is infinite, and the one-eyed man possesses three hundred and eighty-two wits.” Rustic satire (See No 189)

 

১৯২. আঁতেরে তিতা, কানেরে কচু, চোখেরে তেল

এই তিন খানে না হৈলে বৈদ্য বাড়ীতে গেল্।

“Bitter for your stomach, arum for the ear, and oil for the eyes; if these fail then go to the doctor.” The rustic Pharmacopeia.

 

১৯৩. কলারে দলা, হল্দিরে ছাই,

বৌয়রে সেবিলে পুতরে পাই।

“(Throw) earth on the plantain and ashes on turmeric and wheedle your daughter-in-law if you’d please your son.”

 

১৯৪. চাল্যা বেচনী দোলায় চড়ে,

কন্নান্ কন্ দেশ পুর্ছা করে।

“A female fruit (chalya) seller when she rides in a dola (palanquin) inquires the names of villages she passes.” (As if she had never seen them before.) Thus low people becoming rich feign to forget their old acquaintances. চাল্যা রহ Bengali is চালিতা the fruit of Delenia Indica. It is very common in Assam and is there called the O fruit.

 

১৯৫. মুখ নষ্ট বরল,

বাড়ী নষ্ট অরল্।

the fruit of Delenia Indica. It is very common in Assam and is there called the O fruit.

 

১৯৬. পাঁডারে কাডে পাঁডীয়ে হাঁসে,

পাঁডায় কয় “তোর লাগিও মগধেশ্বরী আছে”।

“The she-goat laughs at a he-goat being sacrificed and the he-goat says, “Wait a bit, there is Magadeswari for you.” i. e., No one should exult over the misfortune of another.

The Magadeswari ceremony as practiced in Chittagong is said to be borrowed from the Buddhists. She-goats (or rather kids which have not brought forth young.) are sacrificed by the males of the family when a newly married bride is five months pregnant. A similar ceremony is performed if a married woman (but not if a virgin) goes mad. The ceremony is locally said to be called after a king of Magadha, and is also practiced by the local Buddhists. There are no mantras, no rites.

 

১৯৭. বার্ন্দ বুড়া হইলেও গাছত উডে।

“A monkey climbs trees even when he is old.” The pathos of this proverb is unintentional. It merely means that bad habits cling to us even in old age.

 

১৯৮. গাতে ন আঁডে গুই হাপ্ কুলা লেজে বাঁধে।

“A lizard too big for his den ties a winnowing fan to his tail.” Satirises those who take up unnecessary burdens, e. g., perhaps a busy officer who wastes his time over Chittagong Proverbs!

 

১৯৯. একেত ডোমের পোয়া, তাতে পোন্দে গু।

“A fisherman’s son to begin with and dirty in his habits besides.” This would be said (e. g.) to a man of low caste who married his son to a girl of even lower status.

 

২০০. কানা পোলার নাম পদ্ম-লোচন।

The one-eyed boy is called ‘Padmalochon’ (lotus eyed).” Satirises undeserved praise.

 

২০১. সাত পাঁচ চৌদ্ধ,

দুই টেয়া নদ্যো।

“Seven and five make fourteen; I let you off two rupees!” This typifies the moneylender’s generosity. He lets his creditor off two rupees which are not due to him!

 

২০২. ডোমে পাল্কিত্ চড়লেও কয় “বাহা, বাহা”।

“If a fisherman sits in a palanquin he tells the bearer to row fast.” বাহা বাহা” is what you say to make people go fast and may be used to singers, oarsmen & C. The meaning here is “row row”.

 

২০৩. অল্প মনুষ্য হইয়া জমিদারি পায়

কানের গুরিতে কলম গুজি ভাউয়া নাচায়!

If a low person gets landed property, he sticks a pen in his ear and causes dancing boys to perform.” Both the above practices are unfashionable and vulgar in modern Chittagong.

 

২০৪. রাওর্লি ঠাঁই পোয়া খোজন্।

“To ask for a son from a Raoli.” i. e., from a Buddhist priest (who does not marry) and is equivalent to “taking the breeks off a highland man.”

 

২০৫. যার ঠাঁই নাই মাথা,

তার কির্য় মাথা ব্যথা?

One who has no head, how he has got headache?” Honor and dishonor are equal to a shameless person.

 

২০৬. গরীব দেখিলে পেরতেও ছেব্ ফেলে।

“Any dirty fellow can spit on a poor person.” Used in depreciation of ill treatment by humble people.

 

[প্রথমেই একটি ঐতিহাসিক ভ্রান্তি-নিরসনের প্রয়োজনীয়তা থেকে বর্তমান গৌরচন্দ্রিকাটুকু সেরে নেওয়া দরকার। আসামী প্রবাদবিষয়ক পূর্বসূরি গার্ডনের সূত্র ব্যবহারকালে এন্ডার্সনের চট্টগ্রামী প্রবাদবিষয়ক গ্রন্থটির সর্বত্র ‘গার্টন’ (Garton) মুদ্রিত হয়েছে, যদিও সেটি Garton। এটি সম্ভবত এন্ডার্সনের বর্তমান গ্রন্থের একমাত্র উল্লেখযোগ্য মুদ্রণপ্রমাদ। কিন্তু ১৮৯৬ সালে গার্ডনের ‘সাম আসামিজ প্রোভার্বস্’ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশনার ১৪০ বছর পরে এসে মূলের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট কারণ থেকে যায়, যেহেতু গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ অধুনা দুর্লভ। এক্ষেত্রে আরও সংশয়ের কারণ একই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের আবির্ভাব। ১৯০৫ সালে শিলং-এর আসাম সেক্রেটারিয়েট প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত গ্রন্থটির রচয়িতার পরিচয় থেকে দেখা যাচ্ছে এর রচয়িতা Major P. R. T. Gurdon, I. A. (Philip Richard Thornhagh Gurdon)। ইনিই ১৮৯৬ সালে একই গ্রন্থের প্রথম মুদ্রণকালে ছিলেন ‘ক্যাপ্টেন’, যিনি পরের সংস্করণের সময়ে অর্থাৎ ১৯০৩ সালে উন্নীত হ’ন মেজরে। এন্ডার্সনের ‘গার্টন’ নাম থেকে একটি ঐতিহাসিক ভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। গার্ডনের পেশাগত পরিচয় থেকে আমরা সংশয়মুক্ত হতে পারি। কেননা, উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর কর্মস্থলের পরিচয় অভিন্ন। এ থেকে জানা যায় পি. আর. টি. গার্ডন ছিলেন আসামের গোয়ালপাড়ার ডেপুটি কমিশনার এবং একই সঙ্গে ‘সুপারিন্টেডেন্ট অব এথনোগ্রাফি’।

১৭১ থেকে ২০৬ পর্যন্ত সর্বমোট ছত্রিশটি চট্টগ্রামী প্রবাদ লক্ষ করলে দেখা যাবে, এসব প্রবাদে সেই সময়কার চট্টগ্রাম অঞ্চলের জীবন ও সমাজের খুঁটিনাটি নানা দিক উঠে এসেছে। তাছাড়া ব্যক্তি পরিবার সংস্কার বিশ্বাস এসবেরও কিছুটা আভাস আমরা পাই। প্রসঙ্গত জনজীবনে ধর্মবিষয়ক তৎপরতার চকিত পর্যবেক্ষণের কথাও বলা যেতে পারে। তাছাড়া কোনো-কোনো স্থানীয় প্রবাদের মধ্যে এন্ডার্সন তাঁর দেশীয় অভিজ্ঞতার প্রক্ষেপণ ঘটান যার ফলে এইসব লোকোভাষার উদ্ভবের নানা পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। এরকম একটি প্রবাদ ১৭৫-সংখ্যক প্রবাদটি (ডেয়া গরুয়ে বাঘ্ ন চিনে।) যেটির সমান্তরাল ইংরেজি প্রবাদ হচ্ছে: আগুনের অভিজ্ঞতা না-পাওয়া শিশুর অগ্নিভীতি নেই। এই প্রবাদটির একটি সর্বজনীন রূপ পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশে রয়েছে যেখানে উপমা হিসেবেও আগুন এবং শিশুর ব্যবহৃতিই প্রধান। মজার কথা, এন্ডার্সন ব্যবহৃত এই সমান্তরাল প্রবাদটি ইংল্যান্ডের লোকোজীবনে সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে বহুল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ১৬৯৮ সালে লন্ডনের জন ক্যাস্টেনুগ কফি হাউজে নিয়মানুযায়ী চালু হয় স্টকমার্কেট (এবং শেয়ার বাজার)। পরে নাান বিবর্তন পেরিয়ে ১৮০১ সালের দিকে লন্ডন স্টক মার্কেটে সেটি স্থায়ী রূপ নেয়। সেসময়ে যারা স্টকমার্কেটে বিপুল অর্থের লোকসান দিত তাদের সম্পর্কে বলা হতো: যে-শিশুর আগুনের অভিজ্ঞতা নেই সে তো জানে না আগুনের পরিণতি কিংবা আগুনে যে-শিশুর শরীর একবার পোড়া গেছে সে আর জীবনেও আগুনের কাছে যাবে না। অর্থাৎ স্টকমার্কেটে যে-একবার লোকসান দিয়েছে সে জীবনে আর কখনো সেখানে অর্থের বিনিয়োগ করবে না। প্রসঙ্গত বলা যায়, ইংল্যান্ডে তখন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি লোকেরা অবসরকালীনপ্রাপ্ত অর্থের একটা বৃহদংশ কিংবা সম্পূর্ণ অর্থটাই নিয়োগ করতো স্টকমার্কেটে। এদের অনেকেই বিপুল ক্ষতির শিকার হতো।

চট্টগ্রামের প্রবাদ সংগ্রহ ও সংকলনের ক্ষেত্রে জেমস এন্ডার্সন অনেক ক্ষেত্রেই পুনরুক্তি এড়ানোর জন্য সচেষ্ট থেকেছেন। তবে এমন অনেক প্রবাদ তাঁর গ্রন্থে লক্ষ করা যায় যেগুলো প্রকাশে ভিন্নতাবাহী হলেও বক্তব্যে সমধর্মী। যেমন ধরা যাক ১৩ (হিজ্ ন পারতে ঠেঙ টানন্), ১৭৭ (গার্ছ কাঁঠাল ওঠত্ তেল্) এবং ১৮০-সংখ্যক (গাছত্ ন উঠ্তে পাঁচ্ কাঁধি) প্রবাদগুলো। এটি এমন একটি প্রবাদ যা সারা বিশ্বে নানা ভাবেভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় এটির জনপ্রিয় প্রকাশ হলো— কাউন্ট ইওর চিকেন্স বিফোর দে হ্যাচ। প্রবাদটি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘকাল থেকে প্রচলিত। হিন্দি ভাষা (গাছ র্প কাঠাল্, হোঁট মে তেল।) ছাড়াও আসামি ভাষায় এটির প্রচলন ব্যাপক এবং আসামি ও বাংলা ভাষায় এ-প্রবাদ প্রায় একই ধরনের। এ থেকে জনপদ দু’টির পারস্পরিক নৈকট্য, ভাষা ও প্রকৃতিগত ঐক্যের দিকগুলো স্মরণযোগ্য। গার্ডনের আসামি প্রবাদগ্রন্থের ১০-সংখ্যক প্রবাদটি এন্ডার্সন উদ্ধৃত করেছেন। এটি লক্ষ করা যাক— গচত্ কঠাল্ ওঠত তেল, নো খাওতেই মেল বেল। অন্তত একশ’ ত্রিশ বছর আগেকার এই দুটি পরস্পর প্রতিবেশী অঞ্চলের ভাষিকতার ঐক্য থেকে বুঝতে পারা যায় কেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ভাষাকে ‘প্রাচীন বঙ্গ কামরূপী ভাষা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

বাংলা এবং আসাম অঞ্চলের পারস্পরিকতার আরেকটি চমৎকার দৃষ্টান্ত এন্ডার্সনের ১৮১-সংখ্যক প্রবাদটি। এটিও বহুলভাবে ব্যবহৃত জনপ্রিয় একটি প্রবাদ যেটির ভিন্ন-ভিন্ন প্রকাশ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিভিন্ন ভাষায় লক্ষ করা যায়। এন্ডার্সন সংগৃহীত প্রবাদটি— আপনার নাক কাটি পরের যাত্রা ভঙ্গ। এ-প্রবাদেরই অন্যতর রূপ বর্তমান গ্রন্থের ১১০-সংখ্যক প্রবাদ— নিজে মরি জ্ঞাতির পাতিল পেলান্। গার্ডনের আসামি ভাষার যে-সমতুল প্রবাদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে সেটি— নিজর নাক কাটি সতিনীর যাত্রা ভঙ্গ। বস্তুত প্রকাশে খানিকটা ভিন্নতা থাকলেও চট্টগ্রামী এবং আসামি প্রবাদদ্বয়ের সাদৃশ্য বিস্ময়কর। যেহেতু আসামি জনপদ ও জনগোষ্ঠি বাংলা ও বাঙালির চাইতেও প্রাচীন সেহেতু আসামি প্রবাদটিকেই চট্টগ্রামী এবং বাংলা প্রবাদটির পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ভারতবর্ষের আসাম প্রদেশে এমন কূসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে যাত্রাকালে কোনো ক্ষত-জখম-বিকৃত কিছু চোখে পড়লে সেটা যাত্রার জন্য অমঙ্গল এবং তা আসন্ন কোনো বিপদের পূর্বাভাসরূপে বিশ্বাসযোগ্য। আসামি ভাষায় ‘সতিনী’ এবং ‘সতিয়ৈ’ দু’টোই প্রচলিত। প্রথমটিতে দুই স্ত্রীর একজন এবং দ্বিতীয়টিতে বহু স্ত্রীর মধ্যে একজনের কথা বলা হয়েছে। এ থেকে এটিও বোঝা যাচ্ছে, আসামে অনেককাল আগে থেকেই বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বহুবিবাহ শুধু নয়, একই সঙ্গে একাধিক স্ত্রীকে ঘরে রাখবার ঐতিহ্যটিও ছিল। এন্ডার্সনের চট্টগ্রামী প্রবাদটিতে (১৮১) স্ত্রীবিষয়ক বার্তা না-থাকলেও দেখা যাচ্ছে একাধিক স্ত্রীসংক্রান্ত বিষয়বস্তুই প্রবাদটির মূলে স্থিত। এটির বহুধাবিস্তৃতি লক্ষ করা যায় মালয়, তেলেগু, তামিল এমনকি আফগানদের অভিব্যক্তি থেকে যেখানে এক ঘরে দুই স্ত্রী’র বর্তমানতাকে কটাক্ষ করা হয় লোকোমানসে। মালয় ভাষায় এমন প্রবাদ রয়েছে যেটির অর্থ এক ছাদের নিচে দুই স্ত্রী মানে এক খাঁচায় দুই বাঘ। তেলেগু ভাষায় পাওয়া যােেচ্ছ— এক খাপে দুটি তরবারি রাখা অসম্ভব। তামিল ভাষার অভিব্যক্তিটি বেশ মজার— যার ঘরে দুই বউ তার ঘরে আর আগুন লাগিয়ে কী লাভ! আফগান ভাষায় বলা হয়েছে: যে-লোক ঘরের ঝগড়াঝাটিকে মেনে নেয় সে আসলে দুই স্ত্রীকে স্বাগত জানায়।

চট্টগ্রামী প্রবাদগ্রন্থের ১৯৬-সংখ্যক প্রবাদটি (পাঁডারে কাডে পাঁডীয়ে হাঁসে,/ পাঁডায় কয় “তোর লাগিও মগধেশ্বরী আছে।”) থেকে এখানকার ধর্মসংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। প্রবাদটির মূল অভিব্যক্তি হলো— কারও দুঃখে উল্লাসের কিছু নেই, কেননা উল্লাসকারীর জন্যও দুঃখের সংঘটন সম্ভব। প্রবাদটিতে ‘মগধেশ্বরী’র উল্লেখ থেকে অনুমান করা যায়, প্রাচীন কাল থেকে চট্টগ্রামে মগধেশ্বরী দেবীর প্রচলন ছিল। এ-দেবীর পূজা এখনও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান। তাছাড়া এখানকার বহু এলাকায় মগধেশ্বরী (‘মায়ের’) মন্দিরের উপস্থিতি থেকে জনজীবনে এ-দেবীর প্রভাবের ব্যাপকতা চিহ্নিত করা যায়। এন্ডার্সন প্রবাদটির প্রসঙ্গে মগধেশ্বরী সংক্রান্ত যে-সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত উপস্থাপন করেছেন তা থেকে এমন ধারণা সঙ্গত। বস্তুত চট্টগ্রামে মগধেশ্বরী দেবীর প্রচলনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভূমিকার কথা এন্ডার্সন বলেন। গৃহে সমাগত নববধূ পাঁচ মাসের গর্ভবতী হলে তার উপলক্ষ্যে গৃহের পুরুষ সদস্যরা ছাগী উৎসর্গ করতো। আবার, মগধেশ্বরীর নিকটে একই ধরনের উৎসর্গ বা বলির প্রচলন ছিল, যখন কোনো পরিবারের কোনো বিবাহিত মহিলা (কুমারী নয়) মস্তিষ্কবিকৃত হয়েছে বলে প্রমাণিত হতো। বস্তুত মগধের রাজার কল্যাণে মগধেশ্বরীর পুজো প্রচলিত হয় বলে লোকেদের ধারণা। চট্টগ্রামের স্থানীয় বৌদ্ধদের মধ্যেও পুজোটির প্রচলন লক্ষ করেন এন্ডার্সন। মগধেশ্বরী-পূজোর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে কোনো মন্ত্রপাঠ নেই এবং কোনো বিশেষ ধরনের নিয়মাবলিও নেই, এতে বলিটাই মূল।]  চলবে

 

মহীবুল আজিজ, কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক

একজন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ ও তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রের কথা

আলম খোরশেদ অনেকেই জানেন যে, প্রখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞানলেখক জ্যুল ভের্ন এর কিংবদন্তিতুল্য গ্রন্থ ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ অবলম্বনে ১৯৫৬ সালে হলিউডে একই নামে

প্রগতির পথে, জীবনের গান, সকল অশুভ শক্তির হবে অবসান” এই আহবানে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ৫৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

\ ভাস্কর ধর \ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং প্রগতির লড়াইকে দৃঢ় করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। 

আমার বাবা কর্নেল তাহের

জয়া তাহের   আমাকে যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কর্নেল তাহেরের মেয়ে হিসেবে আপনার অনুভূতি কি? আমার চোখের সামনে এক নিমেষেই ভেসে ওঠে ৪০ বছরের অসংখ্য

ছাগল-মাহাত্ম্য

ড. ইউসুফ ইকবাল ভূপৃষ্ঠের বঙ্গ-ভূভাগে দ্রুতবর্ধমান প্রাণিকুলের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য প্রাণিটির নাম ছাগল। আমাদের একচুয়াল ও ভার্চুয়াল প্রতিবেশ-বাস্তব ও মেটাফোরিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব অপরিসীম। ছাগলের

সৈয়দ মনজুর কবির-এর অনুগল্প

শুধুই কলিজার টুকরা পারে   সম্প্রতিক সৃষ্টি হওয়া চরম বিপরীতমুখী দুই পরিবারের মাঝে একটি টানা বেড়ার আড়াল। শুধু ওপাশের আম গাছটির ছড়ানো লম্বা ডালটি চলে