এখন সময়:দুপুর ১২:১৬- আজ: শনিবার-২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ১২:১৬- আজ: শনিবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-হেমন্তকাল

লাল মৃত্যুর মুখোশ এডগার অ্যালান পো

ভাষান্তর : জ্যোতির্ময় নন্দী

 

[মার্কিন কবি, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সমালোচক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোম্যান্টিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা এডগার অ্যালান পো (১৯ জানুয়ারি, ১৮০৯ – ৭ অক্টোবর, ১৮৪৯)’র পরিচয় সাহিত্যামোদীদের কাছে নতুন করে দেয়ার কিছু নেই। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের সারা জীবন কেটেছে নানা রকম যন্ত্রণা, আর্থিক দৈন্য ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে। বিশ বছর বয়স হওয়ার আগেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তখনই তাঁর কিছু কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। ১৮৪৯ সালে, মাত্র ৪০ বছর বয়সে, এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে পো’র মৃত্যু ঘটে।

জীবদ্দশায় একদিকে তিনি অসংযমী জীবনযাপন করেছেন, জুয়া খেলেছেন, মাদকসেবন করেছেন, অসুস্থ হয়েছেন। মৃত্যুর এক বছর পূর্বে ঘুমের বড়ি খেয়ে একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। অন্য দিকে এতসবের মধ্যেও কয়েকটি গভীর আবেদনময় কবিতা ও ব্যতিক্রমধর্মী ছোটগল্প রচনা করে শুধু মার্কিন সাহিত্যভুবনে নয়, বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজের জন্য একটি গৌরবমণ্ডিত স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে ‘হেলেনকে’’, ‘স্বপ্ন’, ‘ইজাবেল’, ‘দাঁড়কাক’, ‘অ্যানাবেল লী’ প্রভৃতি। ‘দা রেভেন’ বা ‘দাঁড়কাক’ কবিতাটি রোম্যান্টিকতা, মোহন সুরেলা ছন্দোময়তা ও তার রহস্যময় পরিমণ্ডলের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতারূপে স্বীকৃতি পায়।

পো তাঁর বেশ কয়েকটি ছোটগল্পে উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্যের সঙ্গে রহস্যময়, ভুতুড়ে, মৃত্যুর গন্ধমাখা, খুনখারাবি ভরা, আতঙ্কতাড়িত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। গোয়েন্দা-গল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান স্মরণীয়। উপরিউক্ত ধারার রচনার মধ্যে ‘আমন্তিলাডোর পিপা’, ‘কালো বিড়াল’, ‘রু মর্গের হত্যাকাণ্ড’ এবং ‘চুরি যাওয়া চিঠি’ তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর উচ্চমানের রচনাশৈলী এবং প্রতীকবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উচ্চ প্রশংসা করেছেন পরবর্তী কালের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েট্স্, ফরাসি কথাসাহিত্যিক মপাসাঁ, কবি শার্ল বদ্ল্যের ও পল ভালেরি।

বাংলা সাহিত্যেও বিপুল প্রভাব এই বিশ্ববিশ্রুত লেখকের। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের কবি-সাহিত্যিকেরা অনেকেই প্রভাবিত হয়েছেন পো’র রচনা পড়ে। রবীন্দ্রনাথের ‘একই গাঁয়ে’ আর এডগার অ্যালেন পো’র ‘অ্যানাবেল লি’র মধ্যে মিল এতটাই বেশি যে, প্রথমটাকে দ্বিতীয়টার ভাষান্তর বা ভাবান্তর বলেই সাহিত্যবিদদের অনেকে মনে করেন। আবার অনেকের মতে, জীবনানন্দ দাশের অতি বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’-এর উৎস এডগার অ্যালান পো’র কবিতা ‘টু হেলেন’। এ দুটো কবিতার মধ্যেকার মৌলিক মিলগুলোও বিস্ময়কর।

আজও পো’র সাহিত্যকর্ম সাধারণ পাঠক ও বিদগ্ধ সমালোচক সবার কাছে সমাদৃত। এখানে তাঁর লেখা অরেকটি বিখ্যাত গল্প ‘দা মাস্ক অব দা রেড ডেথ’ এখানে অনুবাদ করে দেয়া হল। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪২ সালে। এটা হলো ‘লাল মৃত্যু’ নামে এক মহামারির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে জনবিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের গল্প, ঠিক যেমনটা এখন আমরা করেছি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে।]

দীর্ঘদিন ধরে দেশকে উজাড় করে ফেলছে লাল মৃত্যু। অতীতে আর কখনো কোনো মহামারী এমন মারাত্মক বা ভয়াবহ হতে দেখা যায় নি। রক্তই হলো এর অবতার, আর এর সিলমোহর হলো রক্তের উন্মত্ততা এবং বীভৎসতা। তীব্র একটা যন্ত্রণা, হঠাৎ করে মাথায় চক্কর লাগা, তারপর লোমকূপ দিয়ে প্রচুর রক্তপাত, আর তারপর সব শেষ। এ রোগে আক্রান্তের শরীরে, বিশেষ করে সারা মুখে, লেগে থাকা রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিলে সংক্রমণের ভয়ে কেউ সেবা-শুশ্রূষার জন্যে তার কাছে ঘেঁষে না। রোগের আক্রমণ, অগ্রগতি এবং আক্রান্তের জীবনাবসান– সব মিলিয়ে আধঘণ্টার বেশি সময় লাগে না।

 

এ নিয়ে প্রিন্স প্রস্পেরোর মনে কিন্তু কোনো ভয়ডর ছিলো না। বিচক্ষণ মানুষটি বেশ প্রফুল্ল চিত্তেই ছিলেন। তাঁর জমিদারি এলাকাগুলোর প্রায় অর্ধেক মানুষই যখন মারা পড়লো, তখন তিনি তাঁর দরবারের নাইট আর বিবিদের মধ্যে থেকে হাজারখানেক সুস্থসমর্থ আর আমুদে বন্ধুবান্ধবকে ডেকে পাঠালেন। তারপর তিনি তাদেরকে নিয়ে গা ঢাকা নিলেন তাঁর সুউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা বাসভবনের সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন অন্দরমহলে। ওটা ছিলো প্রিন্সের নিজস্ব উৎকেন্দ্রিক অথচ অভিজাত রুচির সৃষ্টি একটা বিশাল প্রাসাদ। একটা সুদৃঢ় আর গর্বোন্নত প্রাচীর এটাকে মালার মতো ঘিরে রেখেছিলো। দেয়ালটার ফটকগুলো ছিলো লৌহনির্মিত। সভাসদরা সবাই ভেতরে ঢোকার পর আগুনের শিখায় গলিয়ে এবং ভারী হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ফটকগুলোর সমস্ত খিল পাকাপাকিভাবে ঝালাই করে দেয়া হলো।

 

একটা তাৎক্ষণিক হতাশা বা আতঙ্কের বশে তারা ঢোকার আর বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। আস্তানাটা প্রচুর রসদে ভর্তি করা হয়েছিলো। এতটা সাবধানতা অবলম্বন করে সভাসদরা সংক্রমণ এড়াতে পারবে বলে ভেবেছিলো। এবার বাইরের দুনিয়া তার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাক। এ ফাঁকে হাতে পাওয়া সময়টুকুতে হাহুতাশ বা দুর্ভাবনা করাটা একটা বিরাট বোকামো হবে। প্রিন্স বিনোদন ও উপভোগের সব উপকরণের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। এখানে ভাঁড়, কবিয়াল, গাইয়ে, ব্যালে নর্তকী সবকিছু ছিলো। এখানে ছিলো অফুরান সুরা আর সুন্দরী নারীরা। প্রাচীরঘেরা এ প্রাসাদের ভেতরে ছিলো এই সবকিছুই, আর সেইসঙ্গে নিরাপত্তাও। ‘লাল মৃত্যু’র এখানে কোনো ঠাঁই ছিলো না।

 

এভাবে জনবিচ্ছিন্ন থাকার পঞ্চম বা ষষ্ঠ মাসে পৌঁছার পর প্রিন্স প্রস্পেরো ওই প্রাসাদে তাঁর হাজারখানেক বন্ধুকে আনন্দ দিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ বলনাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন, যেমনটা আগে কখনও করেন নি।

 

সেই মুখোশ নাচ এক ইন্দ্রিয়বিলাসী অনুষ্ঠান ছিলো বটে! তবে যেসব কামরায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিলো, প্রথমে সেগুলোর একটু বর্ণনা দেয়া যাক। প্রাসাদের এক রাজকীয় মহলে ওরকম কক্ষ ছিলো সাতটি। অনেক প্রাসাদে এ ধরনের কামরাগুলো মিলে দীর্ঘ আর সোজাসুজি একটা দৃষ্টিপথের সৃষ্টি করে। কামরাগুলোর ভাঁজ করা দরজাগুলো দুপাশের দেয়ালের দিকে গুটিয়ে রাখা হলে এ প্রান্তের কামরায় বসে ও প্রান্ত পর্যন্ত দৃষ্টি আর কোথাও ব্যাহত হয় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা, সম্ভবত ‘উদ্ভট’ জিনিসের প্রতি প্রিন্সের অনুরাগের কারণে। এমন এলোমেলোভাবে এই কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছিলো, যাতে একবারের দৃষ্টিপাতে একটার চেয়ে বেশি জিনিস একসঙ্গে চোখে পড়তে না পারে। প্রতিটি দেয়ালের মাঝখানে ছিলো ডানে-বামে একটা তীক্ষ্ম দিকবদল। প্রত্যেক দেয়ালে গথিক স্থাপত্যরীতিতে তৈরি একটা করে লম্বা আর সংকীর্ণ জানালা তাকিয়ে ছিলো বাইরে মহলের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া একটা বদ্ধ করিডরের দিকে। জানালাগুলো ছিলো রঙ করা কাঁচের। ঘরের ভেতরকার সাজসজ্জা যখন যেমন, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জানালাগুলোর কাচের রঙ পাল্টাতো। যেমন ধরুন, পূর্বতম প্রান্তের ঘরটি সাজানো হয়েছিলো নীল রঙের উপকরণে, আর সেটার জানালাগুলোও ছিলো উজ্জ্বল নীল। দ্বিতীয় কক্ষের সাজসজ্জা, ট্যাপেস্ট্রি ইত্যাদি সব ছিলো লালচে বেগুনি রঙের,  এবং এখানকার জানলার কাঁচগুলোও ছিলো লালচে বেগুনি। তৃতীয় কামরাটির আগাগোড়া ছিলো সবুজ, এবং তার জানালার কাঁচও তাই। চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ কক্ষ সাজানো হয়েছিলো যথাক্রমে কমলা, সাদা এবং বেগুনি রঙের গৃহসজ্জা আর আলো দিয়ে। সপ্তম কামরাটা নিবিড়ভাবে ঢাকা ছিলো কালো মখমলের পর্দা দিয়ে। ভারী পর্দাগুলো দেয়ালগুলোকে আড়াল করে ছাদ থেকে ভাঁজে ভাঁজে নেমে এসেছিলো একই উপকরণ আর রঙে তৈরি গালিচার ওপর। কিন্তু শুধুমাত্র এ কামরাটায় গৃহসজ্জার রঙের সঙ্গে জানালার কাঁচের রঙের কোনো মিল ছিলো না। কাঁচগুলো ছিলো টকটকে লাল রঙের– রক্তের মতো গাঢ় লাল।

 

এদিকে সাতটা কামরার প্রতিটাতেই ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো আর ছাদ থেকে ঝুলছিলো সোনার তৈরি নানা গৃহসজ্জার সামগ্রী, অথচ কোনো কামরাতেই কোনো বাতি বা ঝাড়লন্ঠন ছিলো না। কামরাগুলোর ভেতর থেকে কোনো ল্যাম্প বা মোমবাতির আলো জানালা দিয়ে বাইরে আসতে দেখা যেতো না। কিন্তু কামরাগুলোর বাইরেকার করিডোরে প্রতিটি জানালার বিপরীতদিকে বসানো ছিলো জ্বলন্ত আগুনের একটি করে বৃহদাকার মালসা, যেখান থেকে আগুনের শিখার ছটা জানালার রঙ করা কাঁচের পাল্লার মধ্যে দিয়ে গিয়ে ঘরগুলোকে ঝলমলিয়ে আলো করে তুলতো। এর ফলে ঘরগুলোর মধ্যে অদ্ভুত জমকালো সব চেহারার সৃষ্টি হতো। কিন্তু পশ্চিমের বা পেছনের দিককার কামরাটায় এই আগুনে আলোর ছটা রক্তলাল রঙের কাঁচের মধ্যে দিয়ে কুচকুচে কালো রঙের পর্দায় পড়ে চরম ভয়াবহ দেখাতো। যারা ওই ঘরে ঢুকতো তাদেরকে ওই পরিবেশে এমন আতঙ্কজনক দেখাতো যে, প্রিন্সের সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে প্রায় কেউই ওই ঘরে পা রাখার সাহস করতো না।

 

এই কামরাটার ভেতরেই পশ্চিমের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো আবলুশ কাঠের তৈরি একটা বিশাল ঘড়ি। এর পেন্ডুলামটা দোল খেতো একটা নিরানন্দ, ভারী, একঘেয়ে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে। আর যখন মিনিটের কাঁটা ঘড়িটার ডায়াল পুরো এক পাক ঘুরে আসতো, তখন ওটার পিতলের ফুসফুসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতো সুস্পষ্ট, জোরালো, গভীর আর অত্যন্ত সুরেলা ঘণ্টাধ্বনি। কিন্তু প্রতি একঘণ্টার ব্যবধানে বেজে ওঠা এই ঘণ্টাধ্বনির প্রভাব ছিলো এমন অদ্ভুত যে, সেটা কান পেতে শোনার জন্যে ঐকতান বাজিয়েরা মুহূর্তের জন্যে বাজনা থামিয়ে দিতে বাধ্য হতো। সেইসঙ্গে ওয়াল্ট্জ্ নাচিয়েরাও থামিয়ে দিতো তাদের নাচ, আর উল্লাসমত্ত লোকগুলোর পুরো দঙ্গলের মধ্যে দেখা যেতো ক্ষণিকের অস্থিরতা। ঘড়িটার ঘণ্টাধ্বনি যতক্ষণ বেজে যেতো, দেখা যেতো, সবচেয়ে আমুদে লোকটার চেহারাও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আর অপেক্ষাকৃত বয়স্ক আর সংযত স্বভাবের ভদ্রলোকরা নিজেদের হাত দিয়ে এমনভাবে মাথা চেপে ধরতো, যেন এ শব্দে তাদের ধ্যান বা দিবাস্বপ্নের চটকা ভেঙে গেছে। কিন্তু ওই ঘণ্টাধ্বনি আর তার প্রতিধ্বনি যখন পুরোপুরি থেমে যেতো, লোকগুলোর জমায়েতে তখন বেজে উঠতো একটা হাল্কা হাসির শব্দ। বাজিয়েরা নিজেদের এমন চমকে যাওয়ার বোকামোতে হেসে উঠে একে অন্যের দিকে তাকাতো, আর পরস্পর ফিসফিসিয়ে শপথ নিতো, পরের বার ঘড়িটার ঘণ্টা বেজে উঠলে তারা আর এমনভাবে চমকে উঠবে না। কিন্তু ষাট মিনিট পর (যার মধ্যে দিয়ে মহাকালের ছত্রিশ হাজার সেকেন্ড উড়ে গেছে), আবারও বেজে উঠতো ঘড়িটার ঘণ্টা, এবং সবাই আবার ঠিকই চমকে উঠতো, অস্থির হয়ে উঠতো, চুপ করে যেতো আগের মতোই।

 

কিন্তু এসবকিছু সত্ত্বেও পরিবেশটা ছিলো আমোদ-প্রমোদে ভরপুর। প্রিন্সের রুচিটা ছিলো অদ্ভুত। রঙ আর তার প্রভাবের ব্যাপারে তাঁর একটা চমৎকার ধারণা ছিলো। বাজারচলতি ফ্যাশানের সাজসজ্জাকে তিনি পাত্তা দিতেন না। তাঁর পরিকল্পনাগুলো ছিলো দুঃসাহসী আর তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ। তাঁর চিন্তাভাবনাগুলো যেন এক বর্বর দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করতো। এমন অনেকে ছিলো, যারা তাঁকে পাগল বলে মনে করতো। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা মনে করতো তিনি মোটেও পাগল নন। তিনি যে পাগল নন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে তাঁকে দেখার আর স্পর্শ করার দরকার ছিলো।

 

এই মহোৎসব উপলক্ষে কামরা সাতটিকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে তাঁর ভূমিকাটাই ছিলো সর্বাগ্রগণ্য। বলনাচে কে কোন্ চরিত্রের মুখোশ পরবে, সে-ব্যাপারেও তাঁর রুচি বা ইচ্ছেটাই দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মুখোশগুলো যে বিদঘুটে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ওগুলোতে যথেষ্ট ঝলক, চমক এবং জাঁকজমক ছিলো– ‘হার্নানি’*-তে যেমনটা দেখতে পাওয়া যায়, অনেকটা সেরকমই। আরবীয় ধরনে আঁকা বেখাপ্পা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর কাজকর্মের কিছু অবয়বও ছিলো। পাগলাদের ফ্যাশানের মতো কিছু উন্মত্ত কল্পনার বহিঃপ্রকাশও ছিলো। ওখানে সুন্দর অনেককিছু ছিলো, জঘন্য অনেককিছু ছিলো, উদ্ভট অনেককিছু ছিলো, ভয়ঙ্কর কিছু ছিলো, এবং ঘৃণার উদ্রেক করতে পারে এমনকিছুও কম ছিলো না।

 

কামরা সাতটির মধ্যে চরে বেড়াচ্ছিলো অনেকগুলো স্বপ্ন, সাপের মতো মোচড় খাচ্ছিলো, রঙ মেখে নিচ্ছিলো কামরাগুলো থেকে, আর তাদের প্রভাবে ঐকতানের বন্য উন্মাদনাময় সঙ্গীতকে মনে হচ্ছিলো তাদের পদধ্বনি। এবং শিগগিরই কালো মখমলের পর্দায় ঢাকা সেই বড় হলঘরটায় রাখা আবলুশ কাঠের ঘড়িটায় বেজে উঠলো ঘণ্টাধ্বনি। আর তখন একমুহূর্তের জন্যে সব নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো এবং তার মধ্যে শোনা যেতে লাগলো শুধু ঘড়ির ঘণ্টার শব্দ। স্বপ্নগুলো যে যেখানে যেমনভাবে দাঁড়িয়েছিলো, সেভাবেই যেন সব প্রস্তরমূর্তি হয়ে গেলো।

 

তবে ঘণ্টার শব্দটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। আসলে মাত্র এক লহমার জন্যে ছিলো শব্দটা। তাদের বিদায় নেয়ার পেছন পেছন ভেসে গেলো এতক্ষণ চেপে রাখা হাসির হালকা শব্দ। সঙ্গীতের শব্দ এবার আরো উচ্ছল হয়ে উঠলো, আর স্বপ্নগুলো আবার জীবন পেলো, আর আগের চেয়ে আরো উল্লসিতভাবে এদিক থেকে ওদিক মোচড় খেতে লাগলো, ত্রিপদের ওপর রাখা অগ্নিকুণ্ড থেকে জানালার বহুবর্ণিল কাঁচের মধ্যে দিয়ে আসা  আলো থেকে রঙ নিয়ে। কিন্তু সাতটি কামরার মধ্যে সবচেয়ে পশ্চিমেরটিতে মুখোশধারীদের কেউই ঢোকে নি। কারণ তখন রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছিলো, এবং ও ঘরের জানালাগুলোর রক্তরঙা কাঁচের মধ্যে দিয়ে আরো ঘন লাল একটা আলো আসছিলো। আর ঝুলন্ত পর্দা আর মেঝেয় পাতা গালিচার কালোর গভীরতা মনে আতঙ্ক জাগিয়ে তুলছিলো। ঘরটার মিশকালো গালিচায় পা রাখলেই কাছে রাখা আবলুশ কাঠের ঘড়িটায় একটা চাপা যান্ত্রিক শব্দ হতো, যেটা এত বেশি জোরালো যে, অদূরে অন্য কামরাগুলোয় আমোদে গা ভাসিয়ে দেয়াদের সব হুল্লোড় ছাপিয়ে তাদের কানে পৌঁছে যেতো।

 

কিন্তু অন্য কামরাগুলো ছিলো মানুষের ভিড়ে ভর্তি, আর তাদের জীবনের হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছিলো জ্বোরো উন্মত্ততায়। আর পানভোজন হৈহুল্লোড় চলছিলো ঘূর্ণির মতো পাক খেয়ে। শেষপর্যন্ত ঘড়িটায় রাত বারোটার ঘণ্টাধ্বনি শোনা গলো। আর তখন সঙ্গীত থেমে গেলো, যেমনটা আগেই বলেছি। থেমে গেলো নাচিয়েদের নাচও। অস্বস্তিকরভাবে স্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু, ঠিক যেমনটা আগেকার ঘণ্টাধ্বনিগুলোর সময়েও হয়েছে। কিন্তু এবার বাজলো পর পর বারোটি ঘণ্টা। এতে সময় একটু বেশি লাগলো, আর হুল্লোড়বাজদের মধ্যে যারা একটু বেশি ভাবুক তারা এ ফাঁকে ভাবনাচিন্তার সময় পেয়ে গেলো একটু বেশি। তারপর শেষ ঘণ্টাধ্বনিরও প্রতিধ্বনি মিলিয়ে গিয়ে স্তব্ধতা নেমে আসার পর দেখা গেলো, মানুষগুলোর মধ্যে এমন কেউ কেউও আছে যারা এ অবসরে বুঝে গেছে যে, ভিড়ের মধ্যে মুখোশ পরা এমন একজন ঢুকে পড়েছে যাকে আগে কেউ কখনও দেখে নি। এই অচেনাজনের উপস্থিতির গুজবটা শিগগিরই মুখে মুখে ফিসফিসিয়ে চারপাশে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। উপস্থিত সকলের মধ্যে তখন সৃষ্টি হলো একটা ফিসফাস, একটা গুঞ্জন, একটা আতঙ্ক, আর একটা বিতৃষ্ণাবোধের।

 

এই জনজমায়েতে যেরকম একটা ভুতুড়ে পরিবেশের চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম তাতে নিশ্চয় পরিষ্কার বুঝতে পারছেন, কোনো সাদামাটা উপস্থিতিতে এমন আলোড়নের সৃষ্টি হতো না। সত্যি বলতে কী, এ রাতে বলনাচে যোগ দেয়ার অনুমতি পাওয়া লোকের সংখ্যা ছিলো প্রায় অগুণতি। কিন্তু সন্দেহভাজন আগন্তুকটি তার নিষ্ঠুরদর্শন অবয়বের দিক থেকে যেন রাজা হেরডকেও* ছাড়িয়ে গিয়েছিলো, এবং ডিঙিয়ে গিয়েছিলো এ অনুষ্ঠানের জন্যে প্রিন্স কিছুটা ঢিলেঢালা করে যেসব নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়েছিলেন, সেগুলোকেও । সবচেয়ে বেপরোয়া মানুষটির হৃদয়বীণাতেও এমন কিছু তন্ত্রী থাকে, যেগুলোকে আবেগ ছাড়া ছোঁয়া যায় না। এমন কি  যে একদম বেহেড হয়ে গেছে, যার কাছে জীবন আর মৃত্যু দুটোই নেহাত তামাসার ব্যাপার, তার কাছেও এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে তামাসা করা যায় না।

 

উপস্থিত সকলেই সম্ভবত এখন গভীরভাবে অনুভব করতে পারছিলো যে, আগন্তুকের সাজপোশাক আর হাবভাবে কৌতুক বা সৌজন্য বলতে কিছুই ছিলো না। লোকটা ছিলো দীর্ঘদেহী আর হাড়গিলে ধরনের, এবং তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা ছিলো কাফন বা শবাচ্ছাদনবস্ত্রে। তার চেহারা সম্পূর্ণ লুকিয়ে রাখা মুখোশটা ছিলো একেবারে যেন মরে কাঠ হয়ে যাওয়া লাশের মুখের মতোই। ওই মুখোশের নিচে কোন্ জোচ্চোরটা লুকিয়ে আছে, সেটা অনেক খুঁটিয়ে দেখেও আঁচ করা যাচ্ছিলো না। আর তারপরও হয়তো পানোন্মত্ত হুল্লোড়বাজরা এসবকিছু মেনে না নিলেও অন্তত সয়ে যেতো। কিন্তু ওই নির্বাক চরিত্রটি একেবারে লাল মৃত্যু’র বেশ ধরার মতো বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলো। তার বেশবাস ছিলো ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা। তার মোটা মোটা ভুরু, তার পুরো চেহারায় ছড়ানো ছেটানো ছিলো রক্তের বিভীষিকা।

 

বীভৎসদর্শন মূর্তিটা তখন ধীর গম্ভীর পদবিক্ষেপে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছিলো নাচিয়েদের মধ্যে দিয়ে, যেন তার পুরোদস্তুর ভূমিকায় নামার প্রস্তুতিতেই। এমন সময় প্রিন্স প্রস্পেরোর চোখ তার ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ভীষণ রকম চমকে যেতে দেখা গেলো। আতঙ্ক বা ঘৃণায় তিনি কেঁপে উঠলেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই প্রচণ্ড রাগে তাঁর চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠলো।

 

“কার এত দুঃসাহস?”– কঠোর গলায় তিনি জবাব চাইলেন তাঁর আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাক পারিষদদের কাছ থেকে– “আমাদের চিন্তাভাবনার বিরোধী সং সেজে আমাদেরকে অপমান করার দুঃসাহস কার হয়েছে? এক্ষুণি ওকে পাকড়াও করে ওর মুখোশ খুলে নাও– যাতে আমরা জানতে পারি কাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসাদ-প্রাকার থেকে আমরা কাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে যাচ্ছি!”

 

প্রিন্স প্রস্পেরো হুকুমটা দেয়ার সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন পূর্বদিকের নীল কামরায়।  সেখান থেকে বলা তাঁর কথাগুলো সাতটি কামরার সবকটাতেই সুউচ্চ এবং সুস্পষ্টভাবে শোনা গেলো। কারণ প্রিন্স ছিলেন বেশ স্বাস্থ্যবান আর সাহসী পুরুষ, এবং ঘরের নাচগান, কথাবার্তা সব তিনি হাত তুলে ইশারা করার সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গিয়েছিলো।

 

ভয়ে ফ্যাকাশে মেরে যাওয়া একদল পারিষদকে সাথে নিয়ে নিয়ে প্রিন্স নীল কামরায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি হুকুমটা দেয়ার পর প্রথমে ওদের মধ্যে ঈষৎ চেষ্টা দেখা গিয়েছিলো ওই অনধিকার অনুপ্রবেশকারীর দিকে ছুটে যাওয়ার, যে কিনা সে-মুহূর্তে হাতের কাছেই ছিলো। মাপা এবং রাজকীয় পদক্ষেপে প্রিন্সের কাছাকাছি চলে এসেছিলো সে। কিন্তু এই মুখোশধারী মূকাভিনেতার উপস্থিতি প্রিন্সের সঙ্গীদলের সবার মধ্যে এমন এক নির্বাক আতঙ্ক আর বিস্ময় জাগিয়ে তুললো যে, তাকে ধরার জন্যে হাত বাড়াতে কেউ সাহস করলো না।

 

কোনো বাধা না পেয়ে সে হাঁটতে হাঁটতে প্রিন্সের এক গজ দূরত্বে এসে পড়লো। আর বিরাট সেই জনজমায়েত যেন কোনো এক অদৃশ্য অঙুলিনির্দেশে ঘরগুলোর মাঝখান থেকে দেয়ালের দিকে গুটিয়ে গেলো। বাধাহীনভাবে সে এগিয়ে গেলো, প্রথম থেকেই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলা সেই একই ভাবগম্ভীর আর মাপা পদক্ষেপে, নীল কামরার মধ্যে দিয়ে লালচে বেগুনিটায় — লালচে বেগুনিটা থেকে সবুজটায় — সবুজটার মধ্যে দিয়ে কমলা রঙেরটায় — ওটার মধ্যে দিয়ে আবার সাদাটায় — আর তারপর এমনকি বেগুনিটায়। এভাবে সে হাঁটাহাঁটি করতেই থাকলো, যতক্ষণ-না তাকে ধরার একটা সুনির্দিষ্ট চেষ্টা চালানো হলো। এ সময় প্রিন্স তাঁর এক মুহূর্তের ভীরুতার জন্যে লজ্জায় আর রাগে পাগল হয়ে দ্রুতবেগে ছুটে গেলেন ছয়টি কামরার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু কেউই তাঁকে অনুসরণ করলো না। এক তীব্র আতঙ্কে সবাই যেন কাঠ হয়ে গিয়েছিলো। খাপ থেকে টেনে একটা ছোরা বের করে সেটা উঁচিয়ে ধরে উন্মত্তের মতো ছুটছিলেন তিনি। প্রচণ্ড রাগে যেন অন্ধ হয়ে তীব্র গতিতে ছুটে তিনি চলে এলেন অপসৃয়মাণ মূর্তিটার তিন-চার ফুট পেছনে। সে তখন কালো মখমলের পর্দাঢাকা কামরাটির শেষপ্রান্তে চলে গিয়ে, হঠাৎ করে ফিরে গিয়ে মুখোমুখি হলো তার অনুসরণকারীর। ওখান থেকে একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেলো — আর ছোরাটা মিশকালো গালিচার ওপর পড়ে গিয়ে চকচক করতে লাগলো, আর ঠিক তার পরপরই ওটার পাশে উপুড় হয়ে লুটিয়ে পড়লেন মৃত প্রিন্স প্রস্পেরো।

 

হুল্লোড়বাজদের কয়েকজন বন্য ক্রোধে উন্মাদ হয়ে ছুটে গেলো কালো কামরাটির দিকে, আবলুশ কাঠের ঘড়িটার আড়ালে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকা সেই দীর্ঘদেহী নিঃশব্দ আততায়ীকে ধরে ফেলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যখন তারা দেখলো, যাকে তারা এমন হিংগ্র আর রূঢ়ভাবে ধরতে চাইছে, শবাচ্ছাদনের মতো পোশাক আর লাশের মুখের মতো মুখোশের ভেতরে তার আদৌ কোনো দেহই নেই, তখন তারা অবর্ণনীয় আতঙ্কে নির্বাক হয়ে গেলো।

 

আর তখন সবাই মেনে নিতে বাধ্য হলো যে, তাদের মধ্যে লাল মৃত্যু এসে গেছে। রাতের গভীরে চোরের মতো ঢুকে পড়েছে সে। ফুর্তি করতে নাচের আসরে আসা লোকগুলো তারপর একে একে ঢলে পড়তে লাগলো তাদের ফুর্তি করার কামরাগুলোর রক্তসিক্ত মেঝেতে। যে যেরকম শোচনীয় ভঙ্গীতে মেঝেয় লুটিয়ে পড়লো, মারাও গেলো ঠিক সেভাবেই।

 

আর সেই আমোদ-উল্লাসের শেষ রজনীর পর মিশকালো আবলুশ কাঠের ঘড়িটাও চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো। নিভে গেলো ত্রিপদের ওপর জ্বালানো সেই অগ্নিকুণ্ডগুলোও। সবকিছুর ওপর অপরিসীম আধিপত্য বিস্তার করতে লাগলো অন্ধকার, অবক্ষয়, আর লাল মৃত্যু।

 

……………………………………………………………….

*হেরড: বাইবেলোক্ত জুডিয়া’র নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী রাজা। শিশু যিশু যাতে মারা পড়েন, সে-অভিপ্রায়ে হেরড রাজ্যের সকল ছেলেশিশুকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলো বলে কথিত আছে।

 

 

জ্যোতির্ময় নন্দী, কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক

একজন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ ও তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রের কথা

আলম খোরশেদ অনেকেই জানেন যে, প্রখ্যাত ফরাসি কল্পবিজ্ঞানলেখক জ্যুল ভের্ন এর কিংবদন্তিতুল্য গ্রন্থ ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ অবলম্বনে ১৯৫৬ সালে হলিউডে একই নামে

প্রগতির পথে, জীবনের গান, সকল অশুভ শক্তির হবে অবসান” এই আহবানে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ৫৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

\ ভাস্কর ধর \ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং প্রগতির লড়াইকে দৃঢ় করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। 

আমার বাবা কর্নেল তাহের

জয়া তাহের   আমাকে যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কর্নেল তাহেরের মেয়ে হিসেবে আপনার অনুভূতি কি? আমার চোখের সামনে এক নিমেষেই ভেসে ওঠে ৪০ বছরের অসংখ্য

ছাগল-মাহাত্ম্য

ড. ইউসুফ ইকবাল ভূপৃষ্ঠের বঙ্গ-ভূভাগে দ্রুতবর্ধমান প্রাণিকুলের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য প্রাণিটির নাম ছাগল। আমাদের একচুয়াল ও ভার্চুয়াল প্রতিবেশ-বাস্তব ও মেটাফোরিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব অপরিসীম। ছাগলের

সৈয়দ মনজুর কবির-এর অনুগল্প

শুধুই কলিজার টুকরা পারে   সম্প্রতিক সৃষ্টি হওয়া চরম বিপরীতমুখী দুই পরিবারের মাঝে একটি টানা বেড়ার আড়াল। শুধু ওপাশের আম গাছটির ছড়ানো লম্বা ডালটি চলে