মোহিত কামাল
শিফনের অনন্য ডিজাইনের শাড়িতে অপূর্ব লাগছে স্নেহাকে।
ঢেউ খেলানো চুল ঝুলে আছে মুখের ডান পাশ জড়িয়ে বুকের ওপর। সাদা শিফনের পাড়ে সোনালি জরির কাজ। সাদা শাড়ির পুরো জমিনে শৈল্পিক ঢঙে ফোটানো আছে সিক্যুইনের কারুকাজ। শাড়িটাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ভারী জরির কাজ করা আছে ব্লাউজেও। জমকালো লুক ফেটে বের হচ্ছে স্নেহার দেহসৌষ্ঠব থেকেও। সব মিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দরী স্নেহাকে দেখতে দেখতে তার সৌন্দর্যের চুম্বক-টান খেতে লাগল রাহুলের চোখ।
দেশের সেরা বিউটি পার্লার থেকে সেজে পার্টিতে এসেছে স্নেহা। দারুণ স্মার্ট দেখালেও লজ্জাবতী পাতার মতো লাগছে। সাধারণত ছেলেদের সামনে চুপসে থাকে, কথা বলতে পারে না মুখ ফুটে। আজকের অনুষ্ঠানে এসেও একই অবস্থা হচ্ছে। কুসুম, মানে ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর প্রথম ম্যারেজ ডে উপলক্ষে বেড়াতে এসেছে স্নেহা। সাজটাও তাই নিয়েছে ভালো পার্লার থেকে। উজ্জ্বল ঝলমলে রঙের ট্র্যাডিশনাল লুকের ভেতর থেকে ফুটে আছে ভাসা ভাসা নজরকাড়া চোখ, টিকালো নাক। ওর ন্যাচারাল লুক জীবন্তক্রিয়েটিভ মেকআপের কারণে মার্জিত, হালফ্যাশনের দুর্দান্ত ছোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে। তা দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাহুলের মন জুড়িয়ে গেল। অপলক তাকিয়ে আছে সে।
স্নেহা যেদিকে যাচ্ছে সেই দিকে ঘুরছে রাহুলের মুগ্ধ চোখ। কারও সঙ্গে কথা বলছে না, কেবলই দেখছে স্নেহাকে। বুকের ভেতর ঝড় ওঠায় কুসুমের কাছে গিয়ে বলল, তোমার ওই
বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে?
বেঙ্গালুরু ফেরত একমাত্র দেবরের আবদার ফেলতে পারল না কুসুম। স্নেহাকে টেনে নিয়ে এল রাহুলের সামনে। বলল, শোন, ও হচ্ছে আমার দেবর…
কথা কেড়ে নিল স্নেহা। লজ্জা ঝেড়ে শুদ্ধ গলায় বলল, আপনার নাম রাহুল, রাইট?
স্নেহার মুখে নিজের নাম শুনে হকচকিয়ে তাকাল কুসুমের দিকে। স্নেহার প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না।
বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করছেন? স্নেহা আবার প্রশ্ন করল।
জি। নিমহ্যান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স। এখন এটির নামকরণ হয়েছে ডিম ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্স সংক্ষেপে ডিমস ইউনিভার্সিটি।
আমিও গিয়েছিলাম সেখানে। হাসপাতালের ভেতর অনিন্দ্যসুন্দর একটা ফুলবাগান আছে, দেখে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম।
বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন কেন?
অসহ্য সুন্দর বাগানটার সৌন্দর্য গ্রাস করেছিল আমাকে। কেড়ে নিয়েছিল মুখের ভাষা।
রাহুল মনে মনে বলল, অনিন্দ্যসুন্দর এ মেয়েটিকে দেখে এখন আক্রান্ত হয়েছি আমিও, বিমূঢ় হয়ে গেছি। মুখে বলল, হ্যাঁ। বাগানটা খুব সুন্দর। সেখানে বিভিন্ন সিনেমার শুটিংও হয়।
স্নেহার সংকোচ কেটে গেছে। হড়বড়িয়ে কথা বলতে বলতে প্রশ্ন করল, কতদিন থাকবেন দেশে?
দুই সপ্তাহ থাকব।
ওহ। বলে থেমে গেল স্নেহা।
থমকে গেলেও রাহুল হঠাৎ প্রশ্ন করল, নিমহ্যান্স কী কারণে গিয়েছিলেন?
মার ব্রেন টিউমার হয়েছিল। চেক করাতে গিয়েছিলাম।
মা এখন কেমন আছেন?
ভালো। পুরোপুরি সুস্থ। চিকিৎসকেরা বলেছেন, বিনাইন টিউমার। নিরাপদ। ভয়ের কিছু নেই। মা এখন ভালো।
হ্যাঁ। বিনাইন টিউমারের প্রোগনোসিস ভালো।
প্রোগনোসিস মানে কী?
মানে রোগের পূর্বাভাস, ফলাফল। অপারেশন-পরবর্তী অবস্থা কেমন হতে পারে তার ধারণা। এটাকে প্রোগনোসিস বলে।
কঠিন শব্দ। স্নেহা বলল।
আবারও হোঁচট খেল রাহুল। কী বলবে বুঝতে পারল না।
এ সময় বেজে উঠল স্নেহার মুঠোফোন। হাতে মোবাইল নিয়ে বলল, এক্সকিউজ মি, প্লিজ। বলে আড়ালে সরে গেল। রাহুল বোকার মতো দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখতে লাগল স্নেহার কথোপকথনের ভঙ্গি। কথার বিষয় শুনতে পেল না। কেবল বুঝতে পারল খুশিতে আছে সে।
কথা শেষ করে ফিরে এল স্নেহা। রাহুলকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনার হাতে ওটা কী বই?
বইটি সামনে তুলে ধরে রাহুল বলল, নোবেলজয়ী লে ক্লেজিওর একটি ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ। আজ একজন অতিথি বইটি গিফট করেছেন ভাইয়া-ভাবির ম্যারেজ ডেতে। মোড়ক খুলে গিয়েছিললাগাতে গিয়ে দেখে ফেলেছি বইটা। লোভ সামলাতে পারি নি। হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। এমন সময় দেখি আপনাকে। ভাবি পরিচয় করিয়ে দিল আপনার সঙ্গে। তার আগে থেকে বইটা হাতে ছিল। রাখতে ভুলে গেছি।
বইটা খুব ভালো লেগেছে আপনার? প্রশ্ন স্নেহার।
এখনো পড়ি নি। দেখে লোভ হয়েছে। তুলে নিয়েছি হাতে। পড়লে বুঝতে পারব ভালো কি মন্দ।
উত্তর দিয়ে রাহুল পাল্টা প্রশ্ন করল, সাহিত্য পড়েন, আপনি?
হুম।
লে ক্লেজিওর নাম শুনেছেন?
স্নেহা হাসল। মৃদুস্বরে বলল, শুনেছি।
এই নোবেলজয়ী লেখকের বিষয়ে জেনেছেন কিছু?
হুঁ। আবারও ছোট্ট জবাব স্নেহার।
রাহুল বলল, কিছু কথা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এখনো আমার ভালো করে পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর লেখা। তবে বিভিন্ন পত্রিকায় অনুবাদ-গল্প ছাপা হয়েছে। সাক্ষাৎকারের অনুবাদ ছাপা হয়েছে। পড়েছি সেসব অনুবাদ।
বাহ! আপনার সঙ্গে দেখছি মিল আছে আমার।
কী মিল?
আমিও পড়েছি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো।
কী বিষয় দাগ কেটেছে আপনার মনে?
সাক্ষাৎকারের কিছু কথা দাগ কেটেছে। উত্তর দিয়ে স্নেহা জিজ্ঞেস করল, আপনার মনে কী বিষয় দাগ কেটেছে?
রাহুল হুবহু মুখস্থ বলে গেল‘সাহিত্য তখনই গভীরতর হয় যখন তা প্রথম অনুভূতি, প্রথম অভিজ্ঞতা, প্রথম ধারণা, প্রথম অসন্তুষ্টিগুলো উপস্থাপন করতে পারে।’
উত্তর শুনে লাফিয়ে উঠল স্নেহা। প্রায় চিৎকার করে বলল, আমার মনেও দাগ কেটেছে পত্রিকার পাতায় বোল্ড করে ছাপানো কথাগুলো।
রাহুল ভাবল, দারুণ মিল তো দুজনার! মুখ ফুটে বলল, ভালো লাগছে আপনার এক্সপ্রেশন দেখে।
স্নেহা হাসতে হাসতে বলল, ভালো লাগার কারণে বইটি হাতে তুলে নিয়েছিলেন, না পড়ে রেখে দেবেন?
না, না। পড়ার ইচ্ছা জাগলে না পড়ে ছাড়ি না আমি। ছাড়তে পারি না।
আমার এক্সপ্রেশন দেখেও তো ভালো লাগছে আপনার। বইটির মতো আমাকেও আবার হাতে তুলে নেবেন না তো? বলেই হাসিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল স্নেহা।
আপনার সঙ্গ পেয়ে প্রথম ধারণাটি অসাধারণ, ইতিবাচক। প্রথম অনুভূতিটাও আনন্দময় আর প্রথম অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
বাহ! সাহিত্য এখানেই রচিত হয়ে গেল, কী বলেন?
না। রচিত হয়নি। তবে রচনা করার ইচ্ছা তৈরি হয়েছে। লোভ হচ্ছে বইয়ের মতো ধরে রাখার।
বই আর মানুষ কি এক হলো?
হ্যাঁ, একই। বই হলো চিরযৌবনা। আমার আপনার এ মুহূর্ত স্থির হয়ে বসে থাকবে। অথচ আমরা বুড়ো হয়ে যাব। বই বুড়ো হয় না। যৌবন হারায় না। কিছু কিছু মুহূর্তও যৌবন হারায় না। ম্লান হয় না।
যৌবনা শব্দটা নারীত্বের কোমল অনুভবে ছুঁয়ে গেল। উচ্ছল আনন্দধারা থেকে লজ্জার খোলসে ঢুকে যেতে লাগল স্নেহা। এক সময় লাল হয়ে বলল, ইচ্ছা করলে বইয়ের মতো তারুণ্যময় জোশটাও ধরে রাখা যায়। বড়রা বলেছেন, দেহ বুড়ো হলেও, মন বুড়ো হয় না। মনের তারুণ্য বুড়ো বয়সেও সজীব রাখা যায়।
তাহলে তো গিঁট শক্ত হতে হয়। ভালোলাগা মজবুত হতে হয়। মজবুত মন আছে আপনার?
সরাসরি নয়, পরোক্ষ প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাসতে লাগল স্নেহা। জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনার বুনিয়াদ কেমন? শক্ত, না নরম?
রাহুল হাসতে হাসতে বলল, তৈরি হয়নি।
বলেন কি! এ বয়সেও তারুণ্যের গাঁথুনি গড়ে ওঠে নি? বেঙ্গালুরুর মতো সুন্দর জায়গায় থাকেন, কেউ ডাক পাঠায় নি?
বেঙ্গালুরুর দিন কাটে রোবটের মতো। আমরা নিজেদের যন্ত্রমানব নাম দিয়েছি। পড়া, ঘুম আর পড়া। এটা হলো মূল বিষয়।
এটাই তো গড়ে দেয় আসল ভিত। বাস্তব ভিত তৈরি হলে আবেগের ভিতও গড়ে ওঠার কথা, অনুভূতিগুলো সযত্নে রাখার তাক তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।
তৈরি হয়নি। অনিন্দ্য সুন্দরী, যে সামনে আছে, খালি থাকলে জায়গা তৈরি করে নিতে পারি।
বাবা! এ যে দেখছি সরাসরি প্রপোজাল। ডাইরেক্ট অ্যাকশন।
এ ছাড়া উপায় নেই। সরাসরি কথা বলাই ভালো, দেখে ভালো লেগেছে। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছি।
দেখে ভালো লাগলে হবে না। পড়ে নিতে হবে আগাগোড়া। পড়ার পর যদি ভালো না লাগে? যেমন বইটি দেখে লোভ হয়েছে, পড়েন নি বলে এখনো কমেন্ট করতে পারছেন না, তাই না?
নিজের কথা বুমেরাং হয়ে আঘাত করল। আঘাত প্রতিহত করে রাহুল বলল, ফোন নম্বরটা পেলে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারি। নম্বরটা দেওয়া যাবে?
নিজের লোভ হয়েছে বিধায় পেতে চাচ্ছেন? অন্যের মত নিতে হবে না?
অন্যের মত নেওয়ার জন্যই তো চাচ্ছি সেল নম্বর। দেওয়া যাবে?
স্নেহা নরম গলায় বলল, না।
দপ করে নিভে গেল রাহুলের মুখ। কালো ছায়ায় ঢেকে গেল মুখের উজ্জ্বল রং।
না! কেন? ম্রিয়মাণ গলায় প্রশ্ন করল রাহুল।
না, মানে না। কারণ জানতে চাওয়া অনধিকার চর্চা। অধিকার না পেয়ে অধিকারের চেষ্টা করা মানে চাপ দেওয়া, জোর করা। আর জোর করে রিয়েল কিছু কি পাওয়া যায়?
কাটকাট কথা মুষড়ে দিল রাহুলকে। কোনো মেয়েকে এই প্রথম ভালো লেগেছে, তা নয়। তবে এ ধরনের ভালো লাগে নি আগে। এমন সরাসরি কথাও বলা হয়নি কাউকে। ধাক্কা খেয়ে সামলে নিল নিজেকে। কী বলবে বুঝতে পারল না নিউরো-ফিজিশিয়ান রাহুল।
স্নেহা বলল, আপনার নম্বরটি দিন আমাকে।
শোনার সঙ্গে সঙ্গে জল ফিরে এল পরাণে। নম্বরটা মুখে উচ্চারণ করল রাহুল।
নিজের মোবাইলে স্টোর করে নিয়ে স্নেহা বলল, ধন্যবাদ আপনাকে।
নম্বরটা নেওয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। বলল রাহুল।
অন্যদিকে এগিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসল স্নেহা। তবে শূন্য শূন্য লাগছে নিজেকে। মনে হচ্ছে খাবার টেবিলে রাহুল পাশে থাকলে ভালো লাগত। ভালো লাগছে না এখন। তবু খেতে বসেছে। অনেক গেস্ট। কেউ কেউ খাচ্ছে, কেউ আড্ডা দিচ্ছে। চুপচাপ খাচ্ছে স্নেহা। উচ্ছ্বাসময় অতিথিদের মধ্যে থেকেও একা হয়ে গেল।
আচমকা পিঠে একটা থাপ্পড় এসে পড়ল। পেছন ফিরে দেখল কুসুমকে। কী রে? একা বসে গেলি কেন? আমার সঙ্গে বসতি।
মাঝে মাঝে নিজেকে একা উপভোগ করা ভালো। এখন একা উপভোগ করতে ভালো লাগছে।
বাহ! এ যে দেখছি দার্শনিকের মতো কথা? নিউরো-ফিজিশিয়ান কি স্নায়ুর ঘরে দর্শন জাগিয়ে দিয়েছে?
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কুসুমের মুখের দিকে তাকাল স্নেহা। তাকিয়েই রইল।
দুই
সরাসরি কিংবা আড়ালে আড়ালে ছেলেরা মুগ্ধ চোখে তাকায়বিষয়টা বেশ এনজয় করে স্নেহা। আবার ভুলেও যায় সহজে। প্রপোজাল পায় পথেঘাটে, মেসেজ আসে মুহুর্মুহু। মোবাইল খোলা রাখা দায়। সুন্দরীদের এই এক জ্বালা। কাকে গুরুত্ব দেবে? বাছাই করা দুঃসাধ্য। দু-চারজন যে দাগ কাটে নি মনে, তা নয়। কেটেছে। নানা কারণে কারও সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া হয়নি। ইচ্ছা হলেও আর জড়াতে চায় না কারও সঙ্গে। অথচ গতকাল রাতের পার্টিতে দেখা রাহুলের মুখ বারবার ভেসে উঠছে চোখের সামনেসরল একটা যুবক, নিষ্পাপ চাউনি, হ্যান্ডসাম অ্যান্ড টলসব মিলিয়ে রাহুলের জন্য মনে আলোড়ন উঠেছে। ইচ্ছা করছে ফোন করতে। ফোন না করে শুয়ে রইল।
কী মিরাকল! ভাবছে রাহুলের কথা। আর ফোন এসেছে রাহুলের ভাবী কুসুমের!
ফোন ধরে স্নেহা প্রশ্ন করল, রাহুলের ভাবী সাহেবান, কী খবর?
খবর তো খারাপ। কুসুম গম্ভীর হয়ে জবাব দিল।
খারাপ মানে?
খারাপ, বিছানায় পড়ে গেছে রাহুল। অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গত রাতে ফুড পয়জনিং হয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল, স্যালাইনও দেওয়া লেগেছে।
বলিস কি? এখন কেমন?
দেখে যা। ঘুরে যা আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে।
যাওয়াটা কি ঠিক হবে আমার? কী পরিচয়ে যাব?
আমার পরিচয়ে আসবি। আমার বান্ধবী তুই।
ভেবে দেখ, আমার যাওয়াটা ঠিক হবে কি না।
আরে, গত রাতে তোকে দেখার পর থেকে মন-পয়জনিংও হয়েছে রাহুলের। তুই এলে মনটা ভালো হবে, সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরও উন্নতি হবে। চলে আয়। ভাবনার কিছু নেই।
হাসল স্নেহা। মন-পয়জনিং! সেটা আবার কী?
বিষ! বিষ! মনে বিষের ছোবল খেয়েছে!
কে দিয়েছে ছোবল?
স্নেহা, আমার ফ্রেন্ড ছোবল দিয়েছে দেবর রাহুলকে।
সে কী রে! কালনাগিনী নাকি আমি?
না। তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু। হাসতে হাসতে বলল কুসুম।
কুসুমের মুখে হাসি থাকলেও নিভে গেল স্নেহার চঞ্চলতা। চারপাশে দেখতে লাগল অন্ধকার। অন্ধকারেই টিমটিম করে জ্বলছে নিভু নিভু বাতি। এ বাতি আলো জ্বালাতে পারবে না মনঘরে, জানে স্নেহা।
চুপ করে আছিস কেন? কথা বল। আসবি কি না?
আসব।
কখন আসবি?
এখনই আসব। তোর দেবরকে বেশি লাই দিস না। কষ্ট পাবে তাহলে।
লাই দেব কেন আমি? দিলে তুই-ই দিবি।
না। সেই সুযোগ আমি দেব না।
কেন? সে কি অযোগ্য?
ছি! সে অযোগ্য হবে কেন? অযোগ্য হচ্ছি আমি। তোর ফ্রেন্ড স্নেহা।
নো, নেভার। মাই ফ্রেন্ড কানট বি আনফিট ফর রাহুল।
দুই ভাইয়ের গলায় সমবয়সী ঝোলাতে চাস নাকি?
দুই ভাই মানে? আমারটার গলায় ঝুলতে চাস তুই?
না। আমি যদি ঝুলি ছোটটার গলায়, দুই ভাই সমবয়সী বউ পেয়ে গেল না? সমস্যা হবে না?
হোঁচট খেল কুসুম। রাহুল ওর বড় ভাই থেকে পাঁচ বছরের ছোট। অথচ বউ দুটা হবে সমান বয়সী। না। মানায় না। দেবরের বউ পাঁচ বছরের ছোট হলেই ভালো।
কিছুক্ষণ ভেবে কুসুম জবাব দিল, ঠিক বলেছিস। তোর যুক্তি মেনে নিলাম।
মানলে তো হবে না। যে বিষের ছোবল খেয়েছে তাকে মানাতে হবে।
সে যুক্তি মানবে না।
বিষের ছোবল যে খায়, তার মাথায় যুক্তি থাকে না। থাকে ঢেউয়ের মতো আবেগ। ওই আবেগ সামাল দেওয়া কঠিন। কাছে গেলে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যাই কি না, ভয় পাচ্ছি।
আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে ভয় পাবি। ভয়ের কী আছে? তুই শক্ত থাকলে সেও সামলে উঠবে।
আচ্ছা। শক্ত থাকব। আসছি আমি।
থ্যাংকস সুইট ফ্রেন্ড। আয়, অপেক্ষা করছি তোর জন্য।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
মোহিত কামাল, সম্পাদক, শব্দঘর




