কুমার প্রীতীশ বল
আষাঢ়ের আকাশ। ভারি বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বৃষ্টি হচ্ছে। বিরামের কোনো লক্ষণ নেই। ভরা পূর্ণিমার দিনে এমন একটি পরিবেশ নিতান্তই মন্দ লাগল না প্রস্তরযুগের গুহামানবটির।
প্রাচীন পৃথিবীর ব-দ্বীপ উপত্যাকার এক কোণে একটি ঘন বনভূমির মাঝে একটি ছোট্ট গুহা ছিল। গুহাটির নাম শিলাগুহা। এখানে বাস করত ওই গুহামানব। অন্যদের তুলনায় একটু সাহসী। কতযুগ পর সেই প্রাচীন শিলাগুহা থেকে বেরিয়ে এমন আলো-বাতাস গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেল। না, সে-সব দিনের কথা এখন আর মনে করতে চায় না গুহামানব। প্রস্তরযুগে মানুষের কোনো নির্দিষ্ট নাম ছিল না। তাই এই গুহামানবেরও কোনো নাম নেই। কিছু অর্থহীন সাধারণ শব্দ ব্যবহার করত। প্রাচীনকালের গুহামানবেরা শিকারী-সংগ্রাহক ছিল। যাযাবর জীবনযাপন করত। তাদের জীবনযাত্রা বর্তমান সময়ের থেকে ভিন্ন ছিল। প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গুহামানব শিকারে বের হয়। পশুর হাড়, শিঙ, শুঁড় সংগ্রহ করে।
একদিন গুহামানব শিকার করতে করতে গভীর জঙ্গলে চলে যায়। সেদিন সে অন্যরকম একটি পাথর খণ্ড খুঁজে পায়। পাথরটি ছিল চকচকে। গায়ে ছিল অদ্ভুত নকশা। গুহামানব পাথরটি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করল। পাথরটি অন্য পাথরের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। গুহামানব সিদ্ধান্ত নিল, এই পাথর দিয়ে নতুন হাতিয়ার তৈরি করবে। শিলাগুহায় ফিরে ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না যখন তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার, সে-সময় গুহামানব কাজ শুরু করে। অবশেষে একটি ধারালো হাতিয়ার তৈরি করল। পরের দিন। গুহামানব নতুন হাতিয়ার নিয়ে যথারীতি শিকারে যায়। সহসা শিকারও মিলে যায়। গুহামানব শিকারের পিছু নিল। নতুন হাতিয়ার দিয়ে নতুন এক প্রাণী শিকার করল। শিকার নিয়ে গুহামানব যখন শিলাগুহায় ফিরল মুশকিল বাধল তখনই। কেউ একজন জানতে চাইল, শিকারের পরিচয়। গুহামানব বলতে পারল না। কারণ পাথরে তৈরি হাতিয়ার দিয়ে গুহামানব এমনই আঘাত করেছিল, ওর সমস্ত মুখমণ্ডল, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে গিয়েছিল। চেনার কোনো কায়দা থাকল না। শিকারকৃত প্রাণীর নাম জানার জন্য তখন গুহাবাসীদের মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হলো। পরিচয় না জানায় শরীরের ওপর ওঠে উল্লফন করল অনেকে। শিকারকৃত প্রাণী আর গুহামানবের পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ হয়ে গেল সমস্ত গুহাবাসী। গুহার দেয়ালে দেয়ালে শিকার আর নতুন দিগন্তের গ্রাফিতি আঁকতে শুরু করল। তারা বিভিন্ন রঙের মাটি এবং পাথর ব্যবহার করে গ্রাফিতিগুলো তৈরি করল।
এতোসব উত্তেজনার মধ্যে পরদিন অন্যরকম এক প্রাণীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গেল। কয়েকজন ওর কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইল। তখন জানতে পারল, থেঁতলে যাওয়া প্রাণীটি তাদেরই সগোত্রীয়। ওর একটা নাম ছিল-লালচাঁদ।
কুমার প্রীতীশ বল, প্রাবন্ধিক




