এখন সময়:রাত ১২:৩৩- আজ: সোমবার-২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:রাত ১২:৩৩- আজ: সোমবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

আনন্দ বেদনার যুগলবন্দীতে স্বপ্নপূরণের গল্পকথা

প্রদীপ খাস্তগীর

হর্ষ-বিষাদ, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না এবং প্রেম-বিরহ নিয়েই তো সম্পূর্ণ সমগ্র মনুষ্যজীবন। এক অদ্ভুত ও অনিবার্য বৈপরীত্যময় অনুভূতি ভরা এ জীবন বহমান জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। প্রতিটি সৃষ্টিরই বেদনা থাকে, ঠিক মায়ের প্রসব বেদনার মতো। মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর কান্না না শোনা পর্যন্ত মা-বাবার মন সুখ ও আনন্দে হাসে না। এই কান্নার মধ্য দিয়েই হাসি ও আনন্দের প্লাবন নেমে আসে। এই আনন্দধারার মধ্য দিয়েই শুরু হয় নবীন শিশুটির আগামীর পথ ধরে এগিয়ে চলার মিশন ও ভিশন। আজ থেকে প্রায় নয় দশক আগে মিরসরাই উপজেলার নিভৃত পল্লী কাটাছড়ায় ১৯৩৭ সালের ২৭ আগস্ট জন্ম নেয়া শিশুটি আজকের সারা বিশ্বে আলো ছড়ানো খ্যাতিমান চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেনের জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠা ও মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে শুধু সফল ব্যক্তি হিসেবেই নয়, ধারাবাহিক কর্মযজ্ঞের অভিযানের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লিপিবদ্ধ বিবরণ ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থটি। এটা আত্মজীবনী হলেও ইতিহাসের উজ্জ্বল হীরকখন্ড। তাঁর কষ্টকল্পিত ও স্পর্ধিত অভিযাত্রায় সফলতার আনন্দগুলোর পাশাপাশি যাত্রাপথে বিছানো কণ্ঠকজ্বালা ও বেদনা এক সঙ্গেই ছিলো। এই যাত্রায় তিনি একজন নিঃসঙ্গ পদাতিক হলেও লক্ষচ্যূত নন, নীরবে ধ্যানমগ্ন যোগীর মতো

তাঁর মানবসেবা ব্রতের আরাধনার সিদ্ধি লাভ ঘটেছে নানান প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে। তাই তাঁর আনন্দগুলো বেদনাবিদ্ধ। আবার এই বেদনাগুলো আনন্দাশ্রু সিক্ত। ঋদ্ধ পাঠকের কাছে ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ কখনও শুধুমাত্র আত্মকাহিনি হিসেবে মনে হবে, আবার ইতিহাসের উপাদান হিসেবেও আখ্যায়িত হবে। ‘ভিক্টোরিয়ান এরা’র প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী, গবেষক ও ইতিহাসবিদ থমাস কার্নাইল লিখেছেন ‘বায়োগ্রাফিই একমাত্র সত্যিকারের ইতিহাস। কেননা, যাঁরা বায়োগ্রাফী লিখেন তাঁরা অনেক বড় বড় ঘটনার সাক্ষী ও দ্রষ্টা; এমনকি স্রষ্টা ও নায়কও হতে পারেন।

 

অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। তবে এই স্বপ্ন ঘুমিয়ে দেখা কোনো অলীক রূপকথা নয়। এই স্বপ্ন তাঁর ঘুম কেড়ে নেয়ার একটি বাস্তব তাড়না। তাঁর আত্মনিবেদিত জীবনের ভাঁজে ভাঁজে বেদনা ও আনন্দ পালাক্রমে এসেছে। একে অপরের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে বারবার। হয়ত পৃথিবীর সব শুভ উদ্যোগের সাথে এভাবেই মিশে থাকে হর্ষ ও বিষাদ চষবধংঁৎব ধহফ চধরহ. চক্ষু হাসপাতালের জায়গার বন্দোবস্তু করতে পেরে তাঁর মধ্যে আনন্দের যে রূপটি তিনি অনুভব করেছিলেন, তা তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। এই পুরষ্কার তাঁর সতত উদ্যমশীল মনের পালে প্রবল দখিনা হাওয়া লাগিয়েছিল; যাতে তাঁর উদ্দীপনার তরণী আরো কল্যাণের পথে ধাবিত হয়।

আাবির প্রকাশন থেকে প্রকাশিত অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন প্রণীত আত্মজীবনীমূলক ‘প্লেজার অ্যান্ড পেইন’ গ্রন্থটিকে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক. জন্ম থেকে বিলাতফেরত হওয়া পর্যন্ত সময় (১৯৩৭-১৯৬৮), খ. ডাক্তার হিসেবে পেশাগত জীবনের প্রারম্ভ থেকে দেশব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি গঠন (১৯৬৮-১৯৭২), গ. মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ে গ্রামমুখী চক্ষু চিকিৎসার সামাজিক আন্দোলনের প্রস্তুতি, সংগঠন ও চূড়ান্ত রূপদান (১৯৭২-১৯৭৯), ঘ. চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থায়ী রূপদান হতে ইমপেরিয়াল হসপিটাল প্রতিষ্ঠা (১৯৭৯-২০২৪) ঙ. ‘আমার আমি’ থেকে ‘সমাপনী নিবেদন’ (২০২৪-২০২৫)। প্রথম পর্বটিকে ‘প্রিপারেশন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বটিকে ‘মাইন্ডসেট’, তৃতীয় পর্বটিকে ‘অরগানাইজেশন’, চতুর্থ পর্বটিকে ‘পারফেকশান’ এবং পঞ্চম পর্বটিকে ‘কনটেমপ্লেশন’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

এই পাঁচটি পর্বের প্রতিটি পর্ব রোমাঞ্চকর অভিযান, যা বিস্ময়কর ও বর্ণিল। জন্মের পর বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান শাসনামল পেরিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ আমলের স্পর্শধন্য ও যাপনকারী অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন সাধারণ গ্রামীণ জীবন থেকে একদা বিশ্ব শাসনকারী বৃটেনে লেখাপড়া ও চিকিৎসা সেবাব্রতে ব্যাপৃত থেকে কেন এবং কিভাবে পুনরায় গ্রামমুখী চিকিৎসা সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করলেন তা এই আত্মজীবনী গ্রন্থে উন্মুক্ত হয়েছে। এই গ্রন্থটি মানুষের জন্য দেশের জন্য অবহেলিত মানবতার জন্য অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের জীবনব্যাপী ত্যাগ পাঠকদের কাছে নতুন ভাবনার উৎস হবে বলে বিশ্বাস করা যায়। এ গ্রন্থের ধারাবাহিক সূচিতে উল্লেখ আছে ৪০টিরও বেশি অধ্যায়। প্রতিটি অধ্যায়ে আছে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত  এবং কষ্টকল্পিত কিছু অভিজ্ঞতা; যার মধ্যে দিয়ে মূর্ত হয়েছে একজন মানবতাবাদী ও দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মিশন ও ভিশনের অবিরাম অভিযানের কীর্তিগাথা। তাঁর দেশপ্রেমের  ভিত্তি সোপান নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এ সময়ে তিনি মিরসরাই ও চট্টগ্রাম শহরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছিলেন। সেই সময়ের একটি অবিস্মরণীয় রাতের বর্ণনা এই গ্রন্থে তুলে ধরেছেন ডা. রবিউল হোসেন: ‘‘… দেখলাম- শাহ আলম দাঁড়িয়ে। সাথে একটা লম্বা লোক। হারিকেনের আবছা আলোয় তার অবয়ব টের পাচ্ছিলাম তিনি দীর্ঘদেহী লোকটিকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। শাহ আলমের কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছিলাম। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের পরিচিত। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এরিয়া কমান্ডার। আগেও বারবার আমার বাড়িতে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য এবং নানান প্রকার সহায়তার জন্য। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, দীর্ঘদেহী লোকটির শরীরে একটা বড় ছিদ্র। সে ছিদ্র দিয়ে হারিকেনের আলো দেখা যাচ্ছিল। দেখে আমি শিউরে উঠলাম। ভাবতে পারছিলাম না- এ কী করে সম্ভব। এত বড় ক্ষত নিয়ে এ মানুষটি বেঁচে আছে কীভাবে। লোকটির বাড়ি জোরারগঞ্জ। সে ছিল গুলিবিদ্ধ। এ এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। আমি তাড়াতাড়ি তাঁদের বসতে দিলাম। আমার কাছে কিছু গজ ব্যান্ডেজ ছিল- দ্রুততার সাথে ড্রেসিং করে দিলাম সাবধানে।” এভাবেই দেশপ্রেমিক ডা. রবিউল হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশমাতৃকার প্রতি নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।

ডা. রবিউল হোসেনের সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত সৃষ্টিশীল এবং লক্ষ্য পূরণের পথে তিনি অনেক বড় মাপের মানুষের সান্নিধ্য ধন্য হয়ে অসাধ্য সাধন করেছিলেন। যাঁদের প্রেরণা ও প্রণোধনায় তিনি তাঁর মিশন ও ভিশন বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন তাঁদেরকেও তিনি তাঁর অভিযানের সারথি হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এই তালিকায় এমন কিছু নাম আছে যাঁদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও কীর্তি রয়েছে।

অধ্যাপক. ডা. রবিউল হোসেন এর এই অটোবায়োগ্রাফিটি সাধারণ ও সাবলীল সুনিপুণ ভাষায় সুলিখিত। বলা যায় সহজ সরল একটি জীবন রেখার নির্মেদ বর্ণনা। গ্রন্থটির অনুলিখনকারী উত্তম কুমার আচার্য্য তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কুশলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বিশ্বে আলো ছড়ানো একজন মানবিক মানুষ। দেশের বাইরে বাংলাভাষি ছাড়াও তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত ও অনুসারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তাদের জন্য গ্রন্থটির একটি ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করা যেতে পারে। কেননা তাঁর এই সৃজনকীর্তির বৈশ্বিক প্রসার ও স্বীকৃতির দাবি রাখে।

 

প্রদীপ খাস্তগীর, কবি ও প্রাবন্ধিক

আন্দরকিল্লা প্রকাশনার ২৮ বছর আগামীর পথ ধরে অনাদিকাল

রূপক বরন বড়ুয়া আমি মাসিক ‘আন্দরকিল্লা’ কাগজের নিয়মিত পাঠক। প্রতিবারের মতো হাতে নিলাম এবারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঢাকা জুলাই ২০২৫ সংখ্যা, হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই

জলে জঙ্গলে (পর্ব-২)

মাসুদ আনোয়ার   ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বোর্ডের রেজাল্ট আউট হলো। আমি কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। যে কোনোদিন কুমিল্লা বোর্ডও ফল প্রকাশ

স্বপ্নে গড়া অবয়ব

সৈয়দ মনজুর কবির   মনটা যখনই কেমন অজনা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তখনই কেয়া জানালার ধারে এই চেয়ারটাতে এসে বসে। আজ অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে

অন্তহীন সুড়ঙ্গ

সুজন বড়ুয়া   কবর থেকে বেরিয়ে মহিম অশরীরী রূপ নিল। সঙ্গে সঙ্গে গত কয়দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ে গেল তার। ফার্স্ট সেমিস্টারের পর

রাত যখন খান খান হয়ে যায়…

মনি হায়দার   চোখ মেলে তাকায় সোাহেল হাসান। প্রথম দৃষ্টিতে সবকিছু অচেনা লাগে। কোথায় এলাম আমি? উঠে বসতেই মনে পড়ে গতরাতে অনেক ঝক্কি আর ঝামেলার