ডানকিনে কফির পেয়ালায়
এই প্রশস্ত বিকেলের আকাশে মুমূর্ষু রোগীর
মতো নিস্তব্ধ শুয়ে আছে মেঘ। আর তার চোখ
থেকে ঝরে পড়া জলে ভিজে গেছে ম্যাপলের পাতা।
একজন সোনালী সুন্দরী কিছু হাওয়া সঙ্গে নিয়ে
চুপচাপ ঢুকে পড়ে কফি হাউজের নিঃসঙ্গতায়।
তারপর ডুব দেয় ল্যাপটপে। কফি ঠান্ডা হয়ে
যাবে। একটি চুমুক দিতে সে ভুলে যাবে সর্বশেষ
চুমুটির মতো।
বিলম্বিত সন্ধ্যা এসে ঢেকে দেবে বেলমন্টের
পাহাড়। কাচে ঘেরা ডানকিন ডোনাট আরও
আর্দ্র ও নির্জন হবে। বৃষ্টি ক্রমশ প্রবল হয়ে
আছড়ে পড়বে কাচের দেয়ালে।
আমি সেই ফিরে যাওয়া বৃষ্টির ফোটার পাশে
শ্রাবণের কান্না শুনে শুনে কফির পেয়ালায়
জীবনের উষ্ণতা মেপে নেব একবার।
সেতুর ওপর ট্রেন
(উৎসর্গ: আমজাদ আল মামুন)
এই যে দেখছ সুদীর্ঘ একরোখা ট্রেন
পেছনের সব কিছু ফেলে দৌড়াচ্ছে কেবল ।
যেতে যেতে
এখন সে মনভাঙা নদীর ওপর।
দেখ,
ইঞ্জিন পেরিয়ে গেছে
এখনো কিছু অংশ তার রয়ে গেছে সেতুর শরীরে –
ওইটাই স্মৃতি।
অবশেষে পুরো ট্রেন পার হয়ে যায় ।
দেখ
জোয়ারের জলে ভরা পরিপূর্ণ নদী
তার ওপর রেললাইন বুকে নিয়ে
প্রবাসীর হৃদয়ের মতো
একা পড়ে আছে সেতু –
এর নাম শূন্যতা
এর নাম হাহাকার।।
তবুও আকাশ নীল
মেঘের ভাঁজে একটি পাখি
তিনটি ডিমে দিচ্ছে ওম
তার পাশে এক উড়োজাহাজ
পেট ভর্তি হাজার বোম।
একটু দূরে চোখ রাঙিয়ে
উড়ছে দেখ মস্ত চিল
তবুও আকাশ নীল কেন রে
তবুও আকাশ ভীষণ নীল।
তার নিচে এক বাড়ি ছিল
এখন সেটা মৃত্যু কূপ
চোখ যেদিকে যাচ্ছে কেবল
দেখছি কেবল লাশের স্তূপ
যদি ফিরে আসি কোনোদিন
তাজিংডঙের শীর্ষে পতাকাটি
ওড়ে যেন চিরকাল অভ্যাসবশতঃ।
যদি ফিরে আসি কোনো দিন
অনন্ত নীলের পরবাস থেকে
কেবলই ক্রন্দনরত এই গ্রহে
যেন আমি বুঝে নিতে পারি
এক টুকরো কাপড়ের ভাঁজে
কীভাবে কেমন করে
রক্তের স্রোতের মতো সূর্যোদয় হয়।
আকাশগঙ্গার ওই পথরেখা ধরে
ফের যদি চলে আসি পৃথিবীতে
উড্ডীন পতাকা দেখে বুঝে নেব
ওখানে নদীর ধারে এখনো হয়তো আছে
আমাদের উত্তর পুরুষ।
বাতাসের প্রত্নকণা থেকে খুঁজে পাব সুর
প্রার্থনার জাতীয় সংগীত।




