একটি অনূদিত বাংলাদেশ
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
জন্মের বহু বছর আগে
আমি একবার ভাষার জন্য ভীষণ কেঁদেছিলাম,
‘একটা ভাষার মধ্যে সব ভাষাই থাকে’!
আমার মৃত্যুর পর একবার ভয়াবহ বিশ্ব দুর্ভিক্ষে
হাড্ডিসার ক্ষুধার্ত পাখি দেখে
হো হো করে কেঁদেছি।
তাদের তো কোনো ত্রাণ বা খাদ্য মন্ত্রণালয় নেই!
আব্বার কবর থেকে ফেরার পথে
উত্তাল সেই ব্রহ্মপুত্রের বুকে পাঁজরের হাড়ের মতো
মৃদু ঢেউ-ঢেউ জেগে উঠা চর দেখে
নীরবে কেঁদেছি।
আমাদের অন্নদাতা কৃষক।
তার খামারের উঠতি ফসল অমানুষদের দুর্বৃত্তায়নে
কচুকাটার মতো ধংসাত্বক দৃশ্য দেখে-
দু’চোখ কেঁদেছে।
মাতৃভাষা, পাখিদের অভাব, ব্রহ্মপুত্রের পাঁজরের হাড্ডি
এবং যাবতীয় দুর্বৃত্তায়ন
একটি অনূদিত বাংলাদেশ।
========================
হে বাংলাদেশ অভিশপ্ত তুমি আজ
এজাজ ইউসুফী
মায়ের চোখের জলে যে ছেলের লাশ ধোয়ালে তোমরা
কাফনে মোড়ানো কবিতার মতো–
অবুঝ ছেলেটা এভাবেই মরে গেলো?
সন্তানের লাশ বাবার কাঁধে কী অসম্ভব ভারি!
হে বাংলাদেশ অভিশপ্ত তুমি আজ।
হাজারো লাশের গন্ধে রাজপথে বুঝি
উঁকি দিয়ে যাচ্ছে হায়েনার দল,
তাকে চিনি বহুকাল ধরে বাংলার আলপথে
সে কেবল রক্তপিপাসায়–
বাবার চাওড়া বুকে শোকের মাতম তোলে।
হে বাংলাদেশ, অভিশপ্ত তুমি আজ।
শিশুর করোটি ভেদ করে যায় যে উত্তম
বুলেট ৭.৬২ এবং তাদের–
ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে ফেটে যায় আহা
ছিপছিপে শিক্ষার্থীর শিশুতোষ অণ্ডকোষ
হে বাংলাদেশ অভিশপ্ত তুমি আজ।
উন্মাদ উদ্যানে সমাবেশ করে কারা?
ওরা নাকি ছাত্রজনতার ছায়া–
এপিসি’র মধ্যে প্রকাশিত নিথর শরীর
ছুড়ে ফেলে কালচে সবুজে।
আহা, তোমাদের ঘরে ছেলেমেয়ে কয়জন?
মৃত্যুর হুইসেল কেন বাজে প্রতি ঘরে ঘরে
হে বাংলাদেশ অভিশপ্ত তুমি আজ।
===============================
তবু
মুজিব রাহমান
মাটির কাছে কী মমতা আছে মা-ই জানে
চলে গেছে দূরে অচিনপুরে নীলের টানে।
ভালোবাসাহীন সংসার দীন কুয়াশার বাড়াবাড়ি
পড়ে আছে সব খুশি-কলরব নীরব বসতবাড়ি।
শুকনো পাতার মর্মর শেষে সবুজ পাতার দিন
আবার আলোয় ভরে উঠে ঘর উজ্জ্বল রঙ্গিন।
মায়ের আঁচল উষ্ণ উঠোন শঙ্কাবিহীন আমি
মায়ের আঁচলে মুখ মুছে নিয়ে শীতার্ত পথে নামি।
থাকে না কেউ ঠিক যেন ঢেউ শূন্যে মিলিয়ে যায়
মায়ের স্মৃতি বেদনার গীতি থেকে থেকে গোঙায়।
ঝরে যায় ফুল ডুবে যায় চাঁদ অকস্মাৎ নামে রাত
ঘাস ও মাটি শীতল পাটি জুলমাতে জান্নাত।
তবু কেঁদে ওঠে কাদামাটি মন সময়ে সময়ে ফের
তবু হাহাকারে হুহু করে ওঠে সেই মমতার জের।
===========================
মাথার উপর পতাকা ছিল না
সনতোষ বড়ুয়া
মাথার উপর পতাকা ছিল না, চাঁদ-তারা ছিল শুধু,
মাটির সাথে পানি না থাকলে সে মাটি মরুভূমি ধু ধু।
বৃক্ষ ছিল পাখিরা ছিল, ছিল না শুধু পরিচিতি,
বন্ধু ছিল না শাসক ছিল, ভালোবাসাহীন ভীতি।
খাল নদী বিল প্রকৃতি ছিল, সুখ নয় ছিল দুঃখ,
মাটি ভূমি ছিল স্বদেশ ছিল না , বাঙালি চেতনা সূক্ষ্ম।
ধর্মের নামে চেতনা বুলিয়ে ভারত করেছে ভাগ।
জিন্নাহ-নেহেরু যে যাই করুক কোকিল হয়েছে কাক।
সে যা’ হবার তাই হয়েছে বাঙালি নিষ্পেষিত,
মাথা উঁচু করে জেগেছে নেতা কে আর তাহলে ভীত?
নেতার সাহসে জেগেছে বাঙালি নিজ ভূমে নিজ ঘর,
মাথার উপর পতাকা দিয়েছে নেতা শেখ মুজিবর।
====================================
কেঁপে ওঠে রাজ্যপাট
রেজাউল করিম
হেমন্তে শীত শীত লাগে
কম্বলে মোড়ানো শরীরে উষ্ণতার পরশে রাত কাটে।
মেঘ ও কুয়াশার আড়ালে আকাশে
রাতের তারারা লুকোচুরি খেলে।
মনুষ্যরূপী দানবের হিংস্রতায়
বস্তাবন্দি কুকুরছানার লাশ ভাসে জলে।
ভয়ে হতবিহ্বল আউল-বাউল,
হঠাৎ হঠাৎ মবের উৎপাতে কেঁপে ওঠে রাজ্যপাট।
রাজনীতির বীজগণিতের যোগ-বিয়োগের গুজবে
টং দোকান আজ কী জমজমাট!
===========================
কীট
মোস্তফা মঈন
প্রতিটি হাসিই নিজস্ব অর্থ প্রকাশ করে।
মানুষ তার হাসির ভেতর নিজেকে লুকাতে পারে না।
প্রতিটি কান্নারও নিজস্বতার জল ঝরে।
মানুষ তার কান্না গিলেও ফেলতে পারে।
একটি কান্নার সাথে অসংখ্য চোখ
এক হয়ে যেতে পারে
একাত্ম হয়ে পরে নিতে পারে বেদনার নীল জামা।
একটি হাসির সাথে সব ঠোঁট এক হতে পারে না।
হাসির ভেতরেও থাকতে পারে মধুর বদলে বিষ; দাঁতের গোড়ায়
থাকতে পারে বিষের থলে!
ফুলের ভেতরেও থাকতে পারে বিষাক্ত কীট!
==================================
মঃনরি
চিংলামং চৌধুরী
গহীনে আরও গহীনের নিস্তব্ধতায়
হয়ে উঠি এক গৃহী—এক ধ্যানী প্রেমিক, একগামী।
সরোবরে নামুক তবে সাত স্বর্গ-কন্যা,
নেমে আসুক আলো-ছায়ার মিহি ঢেউ।
হোক না বস্ত্রহীন তাতে কি কবির?
কবি তো একগামী—শুধু মঃনরিকামী।
ডিঙ্গাই পাহাড় দেখি অঢেল ঢেউ
অতল জলের বুক চিরে হঠাৎ জেগে ওঠা মরুচর।
নিভে যায় আলো দীর্ঘশ্বাসে ভিজে ওঠে দিগন্ত—
হয়ে উঠি একগামী হয়ে উঠি এক পরজীবী।
অতল থেকে ওঠা দীর্ঘশ্বাস,
অকথিত প্রেমের গহীন নিস্তব্ধতা।
টেনে নেয় আমাকে টেনে নেয় বারবার—
সরোবরে নামা রহস্যের আলো আর
স্বপ্নের স্বর্গদুয়ার খুলে দেওয়া
তোমার এক ফোঁটা অপাঠ্য হাসি।
=====================================
ভিটে
হোসাইন আনোয়ার
ব্যাকুলতার সমীকরণ এখন মেলে না আমার
বার বার হেরে যাই আমি, গ্লোবাল ভিলেজ নেটওয়ার্ক তত্ত্বের কাছে
শোকের দ্রোহেই করি অপেক্ষার চাষ
আসুক না সুনামী, আসুক সর্বনাশ
পুঁজি বা অভিন্ন বিস্তারে আমিও ভাঙব এখন
সামনে সমান।
কবিতা লিখি না এখন আর
দুঃখে কষ্টে অনাহারে অবিচারে গলে গলে
এখন শুধু লানত বর্ষণ করি
সেই সব স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের প্রতি
যারা আমাকে ঋণে ঋণে জর্জরিত করেছে
মানুষের ভেতর থেকে যারা ‘মানুষ’ উচ্ছেদ করেছে।
হেরে যাওয়া ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই হারাবার
তবু চিৎকার করে বলি
এঞ্জিয়োরা ফিরে যা তোদের সদর দপ্তরে
চুয়ান্ন বছরে বহুত দেখেছি, ক্ষুধা বিতরণের খেল
আর নয় কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলা।
আমি ইমিগ্র্যান্ট নই
এ ‘ভিটে’ আমার
এখানে রয়েছে আমার দখলী স্বত্ব।
যদি আঁধারে ডুবে যায় আমার আলোর অস্তিত্ব
ফেলে আসা রণাঙ্গণে আমি তো ফিরতেই পারি।
===================================================
না, কোথাও তর্জনী নেই
আইনাল হক
তিপ্পান্ন বছরের দুধের শিশুটি নিভৃতে বিপথগামী মাতার
বিরুদ্ধে মুষ্টি বদ্ধ হাতে চিৎকার করে বলে বাংলাদেশ;
চায়ের আড্ডায় মাতৃভূমি প্রীতির প্রশ্নে
বিতর্ক মাথাচাড়া দিলে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে
নগ্ন বাহু উর্ধ্বে আস্ফালন করে বলে বাংলাদেশ,
একটি শিশু দিকভ্রান্ত বাবার বিরুদ্ধে প্রজন্মের মিছিলে
দীপ্ত শপথে বলে উঠে বাংলাদেশ। হঠাৎ জনস্রোতর ভেতর
থেকে বেরিয়ে আসে একটি হাত; একটি পাঞ্জাবিহীন নগ্ন
বাহু, কিন্তু সকলে তর্জনীর দিকে তাকায়।
না কোত্থাও তর্জনী নেই, তেজোদ্দীপ্ত স্লোগান নেই
বজ্রকন্ঠের হুঙ্কার নেই, মিলিয়ন সমাগম নেই; ঊর্ধ্বাকাশের
চরম উত্তেজনা চেতনাহীন বরফ পাথর হয়ে
মিছিলের বুকে হারিয়ে যায়…
==========================
স্যালুট রয়েল-বেঙ্গল
আসিফ নূর
স্যালুট রয়েল বেঙ্গল, আপনি সঠিক সময়েই গর্জে উঠেছেন।
যখন বুড়ো শেয়াল বনে গেলেন হঠাৎ সুন্দরবনের রাজা,
লাজ-ভয়-অপমানে গুহায় লুকিয়ে গেলেন সিংহ মহাশয়,
সেগুন-গরান-কেওডার ডালে-ডালে নাচতে লাগল অসভ্য বানরেরা,
হাতিদের লাশ দেখে উল্লাসে মাতল নেকড়ে আর হায়েনার দল;
তখন আপনিই শুধু বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন ডোরাকাটা সাহসে।
যখন পশুর নদীর রক্তস্রোতে ভাসছে হরিণীর চুরমার পাঁজর,
ঝোপঝাড়ের আড়ালে ছড়িয়ে আছে বনমোরগের চাবাচোষা হাড়,
বিষণ্ন সবুজ ছেড়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে গায়কপাখির বর্ণিল ঝাঁক,
অগণিত ভৌতিক গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে বিষধর সর্পসমগ্র;
ঠিক তখনই আপনি হুংকারে ফাটলেন বজ্রের ঐশী স্পর্ধায়।
স্যালুট রয়েল-বেঙ্গল, আপনার তুলনা নেই এই সংকটকালে;
পলাতক বাঘের রাজ্যে আপনি একাই আজ হাজার বাঘের গর্জন।
=============================
রক্তসূর্যের চুক্তিনামা
খাতুনে জান্নাত
এই মাটির নিচে এখনো ঘুমিয়ে আছে রক্তের অক্ষর।
শ্বাসে ধ্বনিত হয় পদ্মার ঢেউ,
মেঘনার বুকে ওঠে যুদ্ধের প্রার্থনা।
এই তো আমার জন্মভূমি
যেখানে মা তার শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখে সূর্য,
মৃত পিতার নাম উচ্চারণেই জন্ম নেয় স্বাধীনতার ইতিহাস।
আমি জানি, বিজয় কোনো ফুল নয়,
যে ঝরে পড়ে ডিসেম্বরের শীতে।
বিজয় এক দীর্ঘ ক্ষত,
যার রক্ত শুকোয় না,
বরং মাটির সঙ্গে মিশে হয়ে যায় ধান,
পাখির চোখ, শিশুর প্রথম উচ্চারণ
“বাংলাদেশ।”
যেদিন প্রথম এই শব্দ উচ্চারিত হয়েছিল,
আকাশ কেঁপে উঠেছিল অগ্নিরঙা সান্ধ্যবেলায়।
মৃত্যু তখন নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
“তোমরা যদি মরো, তোমাদের রক্তেই ফুটবে আগামী।”
আমরা মরেছিলাম।
আমাদের কঙ্কাল দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সীমানা,
চোখ দিয়ে লেখা হয়েছিল পতাকার আলো।
তবু আজও দেখি
স্বাধীনতার পর্দায় ঝুলছে ধোঁয়ার দাগ,
বিক্রিত আত্মার মতো শহর জেগে আছে শব্দের ডামাডোলে
আমাদের শিশুদের মুখে ইতিহাস নেই,
শ্রদ্ধার নদী শুকিয়ে যাচ্ছে রাজনীতির পাথরে।
এই কি সেই দেশ,
যার নাম আমরা রক্তে লিখেছিলাম?
যে মাটিতে একবার রক্ত ঝরে,
সেই মাটি কখনও দাস হয় না।
মহাকাল যতদিন বয়ে যাবে,
বাংলার বুকের ভেতর দিয়ে চলবে রক্তসূর্যের ধারা
যেন এক অনন্ত চুক্তিনামা,
যেখানে স্বাক্ষর করে গেছে শহীদেরা
নিজেদের রক্তে,
নিজেদের মৃত্যুর অগ্নিমালা ছুঁয়ে।
আহত মুক্তিযোদ্ধা, বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা আর
বীরাঙ্গনা মায়ের স্বাক্ষর এ বাংলাদেশ তোমাদের
শ্রদ্ধা ও আগামীর অঙ্গীকার…
===========================
বিস্মরণ
এহসানুল হক কাজল
স্মৃতিভ্রষ্ট লোকেদের নগরী, সে এক
দ্বিতীয় পৃথিবী। যেন শুয়ে থাকে নিথর,
পরম্পরাহীন রাত্রির ভেতর। গল্প নেই
কোন অতিকায় জন্তুর। নেই বৃত্তান্ত কোনো
ভয়াল ভ্রমণের। মনোহর ছবি যেনো
আঁকা ছিলো চিত্রপটে, সময়ের তটে।
শ্যামল ঘাসের নিচে নামহীন কবরের
সারি। অস্থির অদলবদল, কন্ঠার সাথে
পাঁজরের মাখামাখি। অদেখা জনের কি
তীব্র সখ্য! নিয়েছে বেছে স্থির জীবন।
ভুতুড়ে জোছনা ফোটে। লতাগুল্মের ঝোপে
সাপের বেষ্টনী, শিয়ালের দল জাগে।
প্রমোদ ভ্রমণে আজ সব আনন্দ শিকারি,
বিস্মৃতি অনুরাগী তারা, লঘু হাওয়ায় চঞ্চল
যারা ভুলে গেছে শত ঘোর কৃষ্ণ রাত।
পশুর দীর্ঘ রোমশ হাত যে একদিন
ছুড়েছিল অগ্নিগোলেক হাটে-মাঠে-ঘাটে,
অবিশ্রান্ত অগ্নিবৃষ্টি যেন শ্রাবণের ধারাপাতে
ঝরেছিলো, নগরে-বন্দরে-গঞ্জে-গ্রামে,
ছিন্নমস্তক কারো ভেসেছিলো মেঘনার জলে।
শোকের লোবান জ্বলা সেইসব রাত্রিশেষে
এসেছে সূর্যালোক, নগরে উঠেছে সৌধ
ইমারত সারি সারি। বিপণি করিডরে
ব্যস্ত সুবেশ নর-নারী। রঙিন আলোর
রোশনাই চোখে, কেউবা বাণিজ্যকুশলী।
দুরন্ত দিন যায়, গায়ে মেখে সময়ের রেণু
দুর্দান্ত দিন কাটে কারো, কেউবা এলোমেলো,
তারা তো ভোজনে মাতে, উচ্ছিষ্ট বড় প্রিয়
সময় ফেরাতে চায় বিগত দিনের মতো।
আমোদে ভেজায় মন, শুধুই বিস্মরণ !
কর্মক্লান্ত রাতে নীরবে বাতাস ওঠে
ছুঁয়ে যায় অলিগলি নগরীর প্রান্তর
বিপণি সৌধ ইমারত ঘাস দূর্বাদল,
করোটির নিঃশ্বাস মেশে তার সাথে।
প্রতিটি জানালা যেন অশ্রুভেজা চোখ
প্রতিটি দরোজা যেন অলিন্দ মায়াময়।
=========================
অপরাজিত জনতা
এবি ছিদ্দিক
সেদিন সমুদয় কপট চিত্রপট বিদীর্ণ করে
মা মা বলে আমরাই জেগে ওঠে ছিলাম
প্রবল বিশ্বাস আর পাখিডাকা ভোরের শপথে।
অবিনাশী সঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় জাগ্রত হয় –
গাছ,মাটি, নদী-নালা ও আমাদের গৌরবময় অতীত
বিদ্যুৎ বেগে মানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত গ্রেনেড হয়ে ওঠে!
অতঃপর রক্তের সাগর পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম
আমাদের চিরচেনা হাওর বাওরের সবুজ দেশে।
যারা যায়নি তারা পৌঁছে গেলো ভুল গন্তব্যে!
পৃথিবীর মানচিত্রে লেখা হয়ে গেলো একটি নাম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ – বাঙালীদের স্থায়ী ঠিকানা।
আজও জাগ্রত এই সোঁদা মাটির অপরাজিত জনতা!
==============================
রোবট জীবন
শাহীন সুলতানা
জীবন এখন যান্ত্রিকতায় মোড়া বকফুল;
সবাই ব্যস্ত যে যার মতো কাজে, কাউকে দেওয়ার
মতো আমাদের কোনো অবসর নেই। আবেগ-অনুভূতি
শীতল হতে হতে পরিণত হয়েছে অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়।
আমরা প্রত্যেকে এখন থাকি- রোবট মোডে।
চারপাশে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়; বাসে-ট্রামে রাস্তায়-
পার্কে মানুষে মানুষে সয়লাব। মানুষ ভিড় ঠেলে ঠেলে
সামনে হাঁটে অথচ দিনশেষে সে বুঝে যায়–
আজকের জীবন কেবলমাত্র ব্লাঙ্ক স্ক্রিন ছাড়া
কিছুই নয়! আমরা সত্যি ভীষণ একা! আমাদের
চারপাশে শূন্যতার সমুদ্র।
সকাল থেকে রাত অবধি আমরা হাসির অনুশীলন
করতে থাকি আর ভিতরে পুষি লোহার কপাট।
মুখে কথা বলি কিংবা হাসির রেখা টানি ঠিকই কিন্তু
মন পড়ে থাকে অন্য গ্রহে, অন্য চিন্তায়।
নিজের সামনে দেয়াল তুলতে তুলতে একসময়
নিজেরাই বন্দি হই নিজের খাঁচায়।
====================
কুররী পাখির আর্তনাদ
সঞ্জয় দেওয়ান
কালের পর্দা ভেদ করে উত্তরের হাওয়া নামে
মঞ্চনাটক জমে ওঠে নাট্যশালায়।
দর্শক কুশীলবের মনোহর অভিনয় দেখে
হাসে, কাঁদে, হাততালি দেয়
কখনো নীরবতায় ডোবে।
ফাঁসির মঞ্চে থই থই মৃত্যু দেখে
মুখ ভার করে, বুনো আনন্দ করে।
এক রাজার ফাঁসি হয়
আরেক রাজা আসে
কুররী পাখির আর্তনাদে
চোখের কোণে নীরব জল ভাসে।
নাটক উপভোগ করে ঘরে ফিরে
অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জন
মীরাবাঈয়ের গানের সুরে
প্রিয় নারীর সাথে বিনিদ্র রাত কাটে।
পুকুরঘাটে গিয়ে হতবাক হয়ে যায় – পুকুরচুরি হয়ে গেছে।
===========================
সমাধি কঙ্কাল
শহিদ মিয়া বাহার
স্ট্রিট আলোর নিচে জটিল অন্ধকার
নরক ভাঙা নক্ষত্র-ফুল
বিষাদ-কষ্ট-কুয়াশা-নদী-
রাতের হিম হাওয়া ফুঁড়ে ক্রমাগত নেমে আসে রক্ত-প্রহর
নিয়নের ডানায় নীল নীল বেদনালিপি!
আঁধারি আলোর অক্ষ-পথে বারুদ-গ্রেনেড স্মৃতি সাঁতরাই
পৌরাণিক ছায়াবৃত্ত স্বপ্ন-পুকুরে
তিপ্পান্ন বছর-
ছেঁড়া-ছেঁড়া ঝাপসা সময়-
ক্রমশ: ঝরে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃন্ত থেকে এক-একটি বুলেটীয় বিকেল!
জেনোসাইড শহরতলীর এই বিপন্ন জনপদে
মরমী নিশান উড়িয়ে আজো মর্সিয়া বাজে
রক্তগীতি শোক
আত্নজার কুরবানী অহংকারে বিজয়ের নাম!
শতাব্দির বুকে দারুণ দু:সময়
ভোর প্রহরের সংক্রমিত আলোয়
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে দেখি
প্রগতির কাফনে শুয়ে আছে বিজয়-স্লোগান
মুক্তির সমাধি কঙ্কাল!
রবি বাঙালি’র দুটি কবিতা
ভজলে সৃষ্টি সাঁই মেলে
ওগো দয়াল সাঁই
কোন বা পথে খুঁজি তোমায় কোন বা পথে পাই,
মসজিদ গীর্জা মন্দিরেতে তোমায় পেতে চাই।
পুঁজা ভজন যায় বিফলে
সাঁই মেলে না ধর্ম তলে।
সব মানুষই সৃষ্টি যে তার জাতের খবর নাই।
ওগো দয়াল সাঁই
কোন বা পথে খুঁজি তোমায় কোন বা পথে পাই,
মসজিদ গীর্জা মন্দিরেতে তোমায় পেতে চাই।
গয়া কাশী কাবায় আসি
সাঁইয়ের দিদার চাই,
গোলকধাঁধাঁর ঘুর্ণিপাকে
ঘুরছে মানুষ তাই।
সাঁই মেলে না ধর্ম তীর্থে
কিতাব কিংবা কাব্যতীর্থে।
ভজলে সৃষ্টি পাবে তারে বলে রবি সাঁই।
ওগো দয়াল সাঁই
কোন বা পথে খুঁজি তোমায় কোন বা পথে পাই,
মসজিদ গীর্জা মন্দিরেতে তোমায় পেতে চাই।
=======================
নদী নির্জনে
রওশন মতিন
নদী নির্জনে গান গেয়ে যায় জননীর মুগ্ধ ধারায়,
পাললিক উর্বরা মৃত্তিকা রক্তের বীজে দোল খায়,
প্রাণের প্রমত্ত গুঞ্জরনে সৃজন বিধৌত প্রতিভাস-
ঢেউয়ের কথামালায় সুবর্ণ তরঙ্গিত গতিময়
নদী-স্রোতে কল্লোলিত বিদ্রোহী বাঙালি জীবন- লিপিকা,
ইতিহাস -স্বোপার্জিত স্বাধীনতার বিজয় উল্লাস,
নদী কিনারে প্রাচীন বটমূলের শেকড়ে ছড়ানো
অতীন্দ্রীয় মায়া লোকে ধ্যানী মহিমায় খুঁজে পাবে ,
উৎসের উজানে চর্যাপদের স্বপ্নলোকে নিগুঢ় তত্ব –
কীর্তন, পদাবলী, অষ্ট্রিক, দ্রাবিড় নিষাদ জনস্রোত।
খুঁজে পাবে- নদীকেন্দ্রীক, নদী কর্ষিত বাঙালির
স্বাধীন আবাসভূমি, জীবন-জীবিকা, বঙ্গভূমি,
সবুজ-শ্যামলিমাময় আত্ম প্রতিকৃতি, আবেগী মনন
প্রাণবন্ত ক্রীড়াময়ী নৃত্যরত নদী-যুবতীর অনিঃশেষ
ভালোবাসা, নান্দনিক বিচিত্র যৌবন লীলা,
স্বাধীনতা শুদ্ধতার স্বরলিপি,অমর বর্ণমালা।
================================
অজানা রাতের খবর
শম্পা সামন্ত
মৃত্তিকার যেখানে যেখানে ঝেড়ে ফেলা হচ্ছে জন্মদোষ
সেখানে সেখানে পুজোয় মেতেছেন পুরোহিত
বার দেখে মাস দেখে সেখানে সেখানে উৎসব
আজ থেকে পুরো তিনদিন উপোস
মেয়েটির নাওয়া খাওয়া নেই
স্থিতধি গুহার ভেতর আসন পিঁড়ি হয়ে সেঁদিয়ে আছে অন্ধকারে
তুমি তো বছরভর একথা জানো
টসটসে বোঁটায় জমে ওঠা দুধ
ধানের ডগায় হেমন্তের মমতা
মনকে বলতে পারো
নে,এবার মন্ত্র পড়
মৃত্তিকা শীতল হলে জন্মশাবক টানবে স্লেজগাড়ি
হিমেল রাত্রিতে পড়া হবে মহা উচাটন মন্ত্র
ও কীসের মন্ত্র পড়ো তুমি
সাত্ত্বিক পুরুষ
সারারাত বেয়ে সুড়সুড়ি সুড়সুড়ি গাড়ি টানছে পুরুষ শাবক
আর আমি বিভোর হয়ে ছুড়ে দিচ্ছি পালটা আঁধার
নিশিরাত অগোছালো হলে গলায় লেগে থাকে ময়ূর চিহ্ন
সারারাত মরেছি লজ্জায়
আর কাকপক্ষীর অজানা খবরগুলো তুলে রাখি খুন খারাবি রঙের কুলুঙ্গিতে
================================
প্রলয়ংকরী রাত
শবনম ফেরদৌসী
পঁচিশে মার্চ প্রলয়ংকরী রাত।
দরজা জানলা বন্ধ
তবু শুনছি গোলার আঘাত।
এক সাথে বসে সবাই
ডাকছি খোদাকে।
প্রার্থনারেই সুরে সুরে
কাঁদছে সবাই মিলে।
বিমান থেকে ফেলছে বোমা
স্থাপনা লক্ষ করে,
ছাত্রাবাস আর বস্তিতে
মানুষের লাশ আর লাশ।
শেখ মুজিবুরকে বন্দি করে
নিলো পশ্চিমা গারদে।
নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিকে
মারলো পিষে পাকিস্তানি
সামরিক শাসকে।
লক্ষ মানুষ মেরে তারা
ক্ষান্ত হলো না,
বীর বাঙালি শপথ নিলো,
লক্ষ প্রাণ যে ঝরে গেলো
বৃথা যাবে না।
বাঙালির বুকে এক বিন্দু
রক্ত থাকতে ভিনদেশী
সেই শাসকের সাথে
করবেনা কোন আপোস।
ওপার বাংলা পাড়ি দিয়ে
নিলো সামরিক শিক্ষা।
বাংলার মাটি মুক্ত করার
নিলো তাঁরা দীক্ষা।
তিরিশ লক্ষ বাঙালি
শহীদ হোল, তিন লক্ষ
মা বোন সম্ভ্রম দিলো
অতঃপর এক সাগর
রক্তের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে
আনলো ষোলই ডিসেম্বর।
===================
ছায়া
হাফিজ রহমান
হঠাৎ মনের মাঝে দুরুদুরু ছায়া কাঁপে কার?
অনিন্দিতা তুমি, এ ছায়া শুধু কি তোমার?
কার্তিকের মরা রোদ ম্লান হয়ে কোন এক বিন্দুতে দাঁড়ায়,
রূপসী নতুন শাড়ি জড়ানো তার অদৃশ্য গায়।
আর আমি যতোদূর দেখা যায়, অলখে তাকাই,
তোমার ঘুঙুরের অনাবিল সুর শুধু মনের গহীনে বাজাই।
প্রেয়সী কখন তুমি মিশে গেছো হেমন্তের ভোরের আলোয়,
আমি তবে খুঁজে নেবো অনাগত কোন এক বসন্ত বেলায়।
=====================
একাত্তরের বর্বরতা
শাহীন ফেরদৌসী
কত ভাই দিল বুকের রক্ত,কত বোন দিল সম্ভ্রম
পাকিরা ছিল বাংলাদেশের কোটি মানুষের যম।
দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন
পুড়ছে মানুষজন
বাড়িঘর পুড়ে ছাই হলো,পুড়লো পশুপাখি আর বন,
সেনাদের দেখে পালালো ভয়ে
লুকালো ঘরের কোণে
বুকের উপর বুটের লাথি, চোখ বেঁধে নেয় নির্জনে,
তারপর?
ব্রাশফায়ারে সবার সাথে ঢ’লে পড়লো নিখিলেশ
এভাবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্ম-
বলিদানে আমার বাংলাদেশ
রাজাকাররা ছিল তখন পাকিস্তানের দোসর
বাঙালিদের কাছে তারা নৃশংস বর্বর।
মৃত মায়ের স্তন খুঁজেছে দুগ্ধপোষ্য শিশু
আদর করে বাবা-মা তার নাম রেখেছে যিশু।
উদোম করে লিঙ্গ কাটে আমার
হিন্দু ভাইয়ের উল্লাসে হাসে স্তন কেটে নেয়
আমার বোন ও মায়ের।
পুত্রহারা দুঃখিনী জননী পথপানে চেয়ে অবিরত
এই বুঝি এসে ডাকলো”মা’ বলে জড়িয়ে আদর কত।
পরাজয় জেনে মেধাশূন্য করে অভিনব এক সত্তা
রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা
চোখের ডাক্তারের চোখ তুলে নেয় হার্টের ডাক্তারের হার্ট
পাকিস্তানীদের অপারেশন সার্চলাইটের এটা একটা পার্ট।
ডিসেম্বর এলো বিজয় উল্লাসে বাংলা আত্মহারা
কত বঁধূ দিল সিঁথির সিঁদুর কত মা সন্তান হারা।
উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে অর্ধমৃত মুক্তিযোদ্ধার শরীর
তৃপ্তির হাসিতে মদদদাতা আলবদর আর রাজাকারের ভিড়,
স্থানে স্থানে কত সমাধি,স্মৃতি হয়ে আছে এই দেশে
অত্যাচারীরা হাত ধুয়ে এখন চললো সাধুর বেশে।।
=========================
অযুত শব্দে
শামসুল বারী উৎপল
অযুত শব্দের ভিড়ে
উঁকি দেয় জ্যোৎস্না,
উঁকি দেয় মৃত্যু যুদ্ধ যন্ত্রণা
আমি ম্লান জ্যোৎস্নার কাছে
আঁধারের শেকলে বন্দিত্ব ঘোচাতে চেয়ে
ব্যর্থ হয়েছি বারংবার,
তোমার চোখে চোখ রেখে
মুগ্ধতার কথা বলতে গিয়ে
বলে দিয়েছি অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা,
ক্ষুধা ও হত্যাযজ্ঞের কথা,
এঁকেছি কষ্টের বাঙময় ক্যানভাস
শেকলের ঝঙ্কার।
অযুত শব্দের ভিড় ঠেলে
সুযোগ্য শব্দ দিয়ে ঠিক ঠিক বলে দেবো
আমাদের কথা, আমার কথা
সত্যি সত্যি একদিন,
অকস্মাৎ।
========================
রক্তের দামে কেনা বিজয়
মারজিয়া খানম সিদ্দিকা
চাঁদনী রাতে চারিদিকে আলোর বন্যায়
ভাসিয়ে দেয় প্রকৃতির মৃদু হাতছানি,
বনাঞ্চল-বনভূমে কতিপয় ক্লান্ত যুবক
আজ শৃঙ্খলমুক্ত,মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাসে
ছুটে আসছে নিজভূমে দেশ করে মুক্ত, স্বাধীন,
এলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
মনে পড়ছে, আজ নয় মাস আগের স্মৃতি
খাবার থালা হাতে ঠেলে হঠাৎ দৌড়
সামনের দরজায় বুটের লাথির শব্দে
আচমকা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে যেন
মা ঠেলে পেছন দরজা দিয়ে ধাক্কা
দেন, যেন তার ছেলেরা বেঁচে ফিরে।
ফিরছি ঘরে, ঘরে ঘরে আজ আড্ডায়
হাসি উল্লাসে, আলিঙ্গনে আপ্লুত হবার আশায়;
কিন্তু নয়মাসের ধ্বংসযজ্ঞের বেদনাবিধুর
নির্মমতার ছোঁয়া যেন চারপাশ,
কী নিদারুণ নিষ্ঠুরতার কাহিনী সর্বত্র!
ছোট বোনটির মুখে, চোখে-গায়ে!!
মায়ের কী যে যন্ত্রণা! অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা
অকুতোভয় যেন—একসাগর কষ্ট বুকে
ধারণ করে বিজয় নিশান উঁচিয়ে ধরেছে।
রক্তের দামে কেনা এ বিজয় আমাদের
বোনের, মায়ের, ভাইয়ের ত্যাগের; গৌরবের।
=======================
নীরবতার প্রান্তে ফেরার পথ
শারমীন সুলতানা
তুমি বললে
জ্যোৎস্নার গোলাপ আনো
আমি রাতের অনামা পথে নেমে
রুপালি এক পাপড়ি তুলে আনলাম
তুমি শুধু বললে
এ আলো আমার নয়।
তারপর চাইলে
ভোরের প্রথম নিঃশ্বাসে জাগা
এক তারামঞ্জরী।
আমি নক্ষত্রের গোপন সিঁড়ি বেয়ে
উঠে গেলাম দূর শূন্যতার দিকে
ফেলে এলাম ফেরার সব দিকচিহ্ন,
সব সেতু।
তাই পাহাড় ডাকল
তার স্তব্ধ গহ্বরে,
নদী আমায় ঘুরিয়ে নিল
অদৃশ্য স্রোতের অক্ষরে,
আর সাগর
এক দৃষ্টিতে মুছে দিল
আমার পুরোনো ছায়া।
শেষে শূন্য হাত নিয়ে
দাঁড়ালাম তোমার সামনে
ভাবলাম তুমি চিনবে
আমার হারানো আলো
কিন্তু তুমি বললে
এখন যাও
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানে।
যেদিন সেখানে ফুল ফুটবে,
সেদিনই ফিরে এসো।”
এখন আমি
অন্ধকারের দীর্ঘ বিস্তারে একা
নিজেরই লুপ্ত প্রতিচ্ছবি
খুঁজে ফিরি
নিভে যাওয়া আলোর ক্ষুদ্র কণায়।
==============================
নিয়মের বিপরীত
সোমা মুৎসুদ্দী
আমরা পারিনি একজন বিপ্লবী সূর্য সেনকে তৈরি করতে
আমরা পারিনি একজন প্রীতিলতা অথবা কল্পনাকে তৈরি করতে।
আমরা তৈরি করতে পারিনি একজন রবীন্দ্রনাথ অথবা নজরুলকে,
আমরা তৈরি করতে পারিনি বিবেক, নীতি নৈতিকতা ও ভালোবাসাকে
আমরা তৈরি করতে পারিনি,আবারও একজন নূর হোসেনকে
আমরা তৈরি করতে পারিনি নব্বইয়ের গণ আন্দোলন অথবা
হাজারো শহীদের অকুতোভয় সাহসকে,
আমরা তৈরি করতে পারিনি আবারও একজন কবি রুদ্রকে।
মন আর মননের জমিতে আমরা ঠিকই তৈরি করতে পেরেছি
হিংসা, হানাহানি, উস্কানি, লোভ, ধর্মীয় গোঁড়ামি খুন ও মব নামক সন্ত্রাসীকে।
===========================
বিজয় এসেছে
সুজন দাশ
বিজয় এসেছে অনেক দুঃখ
কষ্টের তরী বেয়ে,
রক্ত লাশের বিষানো বাতাসে
শোকের সাগরে নেয়ে!
বিজয় এসেছে মায়ের অশ্রু
বোনের বেদনা ছুঁয়ে,
অপমান গ্লানি ক্ষতের শরীরে
লজ্জায় মাথা নুয়ে!
স্বামী হারানোর নিদারুণ ব্যথা
পিতা হারানোর শোকে,
বিজয় এসেছে উল্লাস বয়ে
সকলের মনলোকে!
তিরিশ লক্ষ জীবনের দামে
দীর্ঘ নয় মাস শেষে,
সাহসের কাছে হারে অন্যায়
পশুত্ব যায় ভেসে।
পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে
বিজয় সূর্য হাসে,
বাঙালি মরে না প্রাণ দিতে জানে
দুর্জয় তেজে ভাসে!
======================
আত্মপরিচয়
মো. আসিফ ইকবাল
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির চির বিস্ময়
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির শ্রেষ্ঠ জয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির আত্নপরিচয়,
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির গৌরবের বিষয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির অবিসংবাদিত আত্নজয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
বীর বাঙালির বীরত্বগাঁথা স্বপরিচয়




