এখন সময়:রাত ১২:৪৪- আজ: সোমবার-২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:রাত ১২:৪৪- আজ: সোমবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

একটি চিরকুট সমাচার

রফিকুর রশীদ

‘মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন কমরেড। সামনে অনেক কাজ। এ সময় নিজের এলাকা ছাড়লে চলবে না।’ সেই কবেকার কথা। কমরেড হকের স্বহস্তে লেখা চিরকুটটি আজ আর নেই। গোপন সঞ্চয় লাল মলাটের বইগুলোর কোনো একটির ভাঁজে অতি যত্নে সেটি রক্ষিত ছিল। আন্দোলন-সংগ্রামে, আত্মগোপন কিম্বা শ্রেণিশত্রু খতমে-জীবনের বহু চড়াই-উতরাইয়ে ভাঁজ খুলে সেই মহামূল্য চিরকুট পাঠ করেছেন মতিন মাস্টার, ওটি পাঠ করলেই বুকের ভেতর নব উদ্যম শক্তি সাহস খুঁজে পান। এভাবে পড়তে পড়তে বহু পাঠে চিরকুটের প্রতিটি বাক্য তার মুখস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই চিরকুটটি আজ নেই। বেড়ালছানার আস্তানা বদলানোর মতো করে লাল বইগুলো শতেক টানাটানিতে যেমন হারিয়েছে কালের গহ্বরে, হক সাহেবের সেই ছোট্ট চিঠিও হয়েছে তার সঙ্গী। তবে মতিন মাস্টার যথার্থই মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন। রতনপুর হাইস্কুলের মাস্টারিকে জীবনের ধ্রুব লক্ষ্য জ্ঞান করেছেন। হক সাহেবের পরামর্শও ছিল সেই রকম— ‘সরকারি চাকরি, মধ্যবিত্তের নিশ্চিত এবং নিস্তরঙ্গ জীবন আপনার জন্যে নয়।’ একজন আমলা হয়ে জীবনযাপন করার চেয়ে বিপ্লবীর মর্যাদায় মৃত্যু শ্রেয়, সুযোগ পাবার পরও সরকারি চাকরিতে ঢোকার মোহ ত্যাগ করে রতনপুরে পড়ে থাকতে সাহস জুগিয়েছে সেই ছোট্ট চিরকুট। দু’-তিন দফার জেল খাটা ব্যতীত নিজের এলাকা ছেড়ে তিনি বিশেষ কোথাও যাননি।

কৃষক আন্দোলনের জের হিসেবে রতনপুর হাইস্কুলের মাস্টারি চলে যাবার পর ঢাকার এক বন্ধু ডেকেছিল ঢাকায়। তার ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি দেবে। তিনি যাননি। বাম রাজনীতির সঙ্গী সেই বন্ধু। আইয়ূব খানের কাছে রাজনীতি বিক্রি করেই টাকা পয়সা কামিয়েছে। হক সাহেবের প্রত্যক্ষ শিষ্য মতিন মাস্টার। আদর্শ বিক্রির এই খেলায় তিনি নেই। চাকরি হারাবার পরও মনে হয়েছে ঢাকা নয়, রতনপুরই তার কর্মক্ষেত্র। এই রতনপুরের মাটিই তার শেষ আশ্রয়। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় তিনি চেয়ে চেয়ে দেখেছেন চারপাশের অনেকেই রতনপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দেশে নিরাপত্তা নেই। ভারতে গিয়ে শরণার্থী হচ্ছে। এই উল্টো স্রোতে মতিন মাস্টারের পা ওঠে না। একবার তাড়া খেয়ে ভারত থেকে এপারে এসেছেন সাতচল্লিশে। আবার আশ্রয়ের জন্যে সেই ভারতে যেতে হবে— এ তিনি মানতে পারেন না।

রতনপুর সীমান্তবর্তী বর্ধিষ্ণু গ্রাম। মাইল পাঁচেক পশ্চিমে হাঁটলেই ভারতের চন্দননগর। বর্ডার খুলে গিয়েছে। ইচ্ছে করলে যে কোনো সময় যাওয়া যায়। প্রতিদিন নিত্য নতুন খবর আর গুজব গলাগলি করে এসে ধাক্কা মারে তার চেতনার দরজায়। তিনি নড়ে চড়ে ওঠেন। এতদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলো ফেলে সিদ্ধান্তের পথ কাটেন— দেশে এই অস্থিরতা নিশ্চয় থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধ বললেই মুক্তিযুদ্ধ হয় নাকি? ভোটে জেতা এক কথা আর মুক্তির জন্যে লড়াই অন্য বিষয়। মানুষের সার্বিক মুক্তির ওরা কতটুকু বোঝে! আর সত্যিকারের মুক্তি বা স্বাধীনতাই কি চায় ওরা! ওদের দরকার নেতৃত্ব, ওরা চায় ক্ষমতা। দেশের মানুষকে নাচিয়ে-মাতিয়ে নেতা গেলেন উধাও হয়ে। যত সব পাতানো খেলা! হুজুগে বাঙালি এখন লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে ইন্ডিয়ায়। না, মতিন মাস্টার ওপারে যাবেন না। যাবেন না, কিন্তু এসব পুরানো কাসুন্দি নিয়ে বসেছেন কেন আজ! ভেতরে ভেতরে তার কী যেন ঘটে চলেছে। তবে কি শামীমের মায়ের কান্না তাকে অতি সংগোপনে আক্রমণ করল! ছেলে ফেরেনি ঢাকা থেকে, তুমুল গোলমালে ইউনিভার্সিটি বন্ধ, সে তো কাঁদছে গত দু’ মাস থেকে। সকালে রাজু এসেছিল। শামীমের মামাতো ভাই। মেহেরপুর কলেজে পড়ে। এরই মধ্যে বেশ ক’বার ওপারে যাতায়াত করেছে। কে জানে মুক্তিটুক্তি হয়েছে কি না! এ সব নিয়ে মতিন মাস্টারের কাছে মুখ খোলে না রাজু। সে জানায়, তার বাপ-মাকে সে ইন্ডিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। ওপারে সব ঠিকঠাক করে এসেছ্ েএ কথা শোনার পর থেকে শামীমের মা কেঁদে আকুল। ভাই-ভাবীর জন্যে নাকি নিখোঁজ পুত্রের জন্যে তার এই বাঁধভাঙা কান্না, মতিন মাস্টার নির্ণয় করতে পারেন না। একমাত্র পুত্রের জন্যে তারও উদ্বেগ হয়। উৎকণ্ঠার ভারি নিঃশ্বাস ফেলে রাত পার করেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি আসার কথা ছিল, এলো না। পহেলা মার্চ, দোসরা মার্চ, তেসরা মার্চ, সাতই মার্চ — উত্তপ্ত সারা দেশ। অসহযোগ। পঁচিশের ভয়াল রাত — নানারকম খবর আসে, শামীম আসে না। উৎকণ্ঠায় দম বন্ধ হয়ে এলেও স্ত্রীর কাছে অত্যন্ত সতর্কতায় আড়াল করেন তাঁর কপালের ভাঁজে প্রস্ফুটিত উদ্বেগের কুঞ্চনরেখা। সান্ত্বনা দেন— শামীম ফিরে আসবেই। খুব জোর দিয়ে উচ্চারণ করেন, কিন্তু অনুচ্চারিত জিজ্ঞাসার কাঁটায় নিভৃতে রক্তাক্ত হয় তার হৃদয়— সত্যি আসবে তো? মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল আসে, মে আসে, দুঃসংবাদের গা পেঁচিয়ে নানান রকম সংবাদ আসে, শামীম আসে না। এদিকের ছেলেরা মেহেরপুরের বাইরে পড়তে গেলে অধিকাংশই যায় রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ে। মাইল বিশেক দূরের সাহারাবাটি গ্রামের আমিরুদ্দীন নামে একটি মাত্র ছেলে পড়ে ঢাকায়। শামীমের মাকে না জানিয়ে মতিন মাস্টার একদিন সাইকেলে চেপে সেই সাহারবাটি থেকেও ঘুরে এসেছেন। আমিরুদ্দীন বাড়ি এসেছিল এবং বাপ মা ভাই বোনকে নিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে, কাজেই দেখা হয়নি কারো সঙ্গে। সেদিন সহসা ভেতরে ধস নামার শব্দ শুনতে পান তিনি। বিধ্বস্ত চেহারায় স্ত্রীর সামনে দাঁড়াতে পারেন না বলে সারাদিন মেহেরপুরে এলোমেলো ঘুরে ঘুরে বেলা পড়ে গেলে এক খিলি মিষ্টি জর্দার পান মুখে দিয়ে ঠোঁট লাল করে রাস্তায় নামতেই রিফাতের আব্বার সঙ্গে দেখা। কথায় কথায় রিফাতের কথা জিজ্ঞেস করতেই এদিক ওদিক তাকিয়ে নিরিবিলি দেখে সে নিচুস্বরে জানায়,

— রিফাত তো শামীম বাবাজির সঙ্গেই আছে!

— শামীমের সঙ্গে মানে?

আকাশ থেকে পড়েন মতিন মাস্টর। পান চিবানো বন্ধ হয়ে যায়। শামীমের বন্ধু বটে রিফাত, কিন্তু সে পড়ে রাজশাহীতে। তারা একত্রিত হলো কোথায়! রিফাতের আব্বার কাছে জানা গেল, সতেরই এপ্রিল তাদের মুজিবনগরে দেখা গেছে। মতিন মাস্টারের বিশ্বাস হয় না— মুজিবনগর মানে তো বৈদ্যনাথতলা, সেই মুজিবনগর আর রতনপুর কতই-বা দূর, শামীম বাড়ি আসবে না? আর মুজিবনগরেই-বা তার কিসের কাজ! মন্ত্রী পরিষদের শপথ গ্রহণের কথা তিনিও শুনেছেন বটে, কিন্তু ওসব নাটক যাত্রা দেখতে যাবার রুচি হয়নি তাঁর। কিন্তু শামীম এসেছিল! কেন এসেছিল? সেও কি জয় বাংলায় নেমে গেল নাকি! তার তো মানস গঠন হয়েছে মার্কসিয় শিক্ষায়, সে এতটা বিভ্রান্ত হবে! কিন্তু বাড়ি আসবে না কেন? শামীম নয়, রিফাতের আব্বা অন্য কাউকে দেখেছে হয়তো, মতিন মাস্টার নিজেকে যখন এভাবে বুঝাতে চেষ্টা করছেন, তখনই সে জানায়— মুজিবনগর থেকে ফিরে শামীম রাত কাটিয়েছে রিফাতের সঙ্গে। সারারাত সে কী তর্ক! ৬-দফা, ১১-দফা, মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যতা এবং দুর্বলতা, তারপরও যুদ্ধ, বামপন্থীদের অবস্থান — এই সব নিয়ে তাদের তর্কের শেষ হয় না। কিন্তু রাত পোহাবার আগেই দু’ জনে উধাও।

এতদূর জানার পর অবিশ্বাসের কালো ধোঁয়া মতিন মাস্টারের মনের আকাশ থেকে অপসৃত হয়, সেই সঙ্গে মিষ্টি পানের রসে ভেজা মুখে তিতকুটে বিস্বাদ ছড়িয়ে দিয়ে যায়। রিফাতের আব্বার দিকে একবার অসহায় ভাবে তাকিয়ে সাইকেলের প্যাডেলে পা রাখতেই সে জানায়— গত পরশু খবর এসেছে, ওরা দেরাদুনে ট্রেনিংয়ে গেছে। এরপরও আকুল হয়ে প্রশ্ন করেন মতিন মাস্টার,

— ওরা মানে, দু’ জনেই গেছে?

রিফাতের আব্বা অপ্রস্তুত বোধ করে,

— না ভাই, ঠিক নাম ধরে তো খবর পাঠায়নি! তবে গেছে নিশ্চয়। কেন, শামীম কিছুই জানায়নি?

আর একটিও কথা বলতে ইচ্ছে করে না তার। অবসন্ন দেহটা সাইকেলের উপর চড়িয়ে তিনি পথে নেমে পড়েন। সন্ধ্যা তখনো নামেনি। কিন্তু আঁধার নামার আগে রতনপুরে পৌঁছুতে পারবেন এমনও মনে হয় না। উত্তর না মেলা এক অংক মগজের কোষে কোষে গেঁথে বসে— শামীম তাহলে সত্যি যুদ্ধে গেল! বাপকে কিছু না বলেই! মায়ের সঙ্গে দেখা না করেই! এ যুদ্ধের ভেতরে কলকাঠির খবর সে কতটুকু রাখে! এ যুদ্ধে কি জয় পরাজয় আছে নাকি? গোটা ব্যাপারটিতে শোষিত নির্যাতিত সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে তুলতে পারলে সেই যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন উঠতে পারে। যুদ্ধজনিত দুর্ভোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে এদের আপত্তি নেই, কিন্তু কেন এই যুদ্ধ সেই অনিবার্য প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে জনসাধারণকে যুক্ত করবে না কিছুতেই। তাতে যে ক্ষমতার ভিত্ টলে উঠবে। হা পুত্র! কে তোকে এই বিভ্রান্তির চোরাগলিতে টেনে নামাল! তোর এতদিনের রাজনৈতিক শিক্ষা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা সব মিথ্যে হয়ে গেল! এই সব ভাবতে ভাবতে গ্রাম্য রাস্তায় গোরুর গাড়ির নিচে সাইকেলের চাকা ধেবে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মতিন মাস্টার। কাত হয়ে সাইকেল থেকে পড়তে পড়তে অতিদ্রুত ঠ্যাং নামিয়ে ফেলায় সে যাত্রা রক্ষা পান। কোনো রকমে উঠে চলতে শুরু করলে চোখের পাতাজুড়ে আবার শামীমের মুখটা এসে দাঁড়ায়। যুদ্ধে যাবি তুই, কার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ! পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে পারবি? এশিয়ার বাঘ এক একটা। পঁয়ষট্টিতে ভারত বুঝেছে সেই বাঘের থাবা কাকে বলে। আজ আবার তারা নাচাচ্ছে, তোরা নাচছিস। নেচে দেখ, পায়ে কত জোর! কপালে নির্ঘাৎ দুঃখ আছে।

হঠাৎ এ সময় একটি প্রশ্ন এসে মগজে হানা দেয়— সকালে রাজু কেন এসেছিল? কী বলতে এসেছিল? মা-বাবাকে নিয়ে ভারতে যাবার কথা বলতে? শুধুই এটুকু? তা হলে আর তাকে এড়িয়ে যাওয়া কেন? এটা তো তার ফুপুর বাড়ি, শামীম তার ভাই, পুতুল তার বোন— সে বুঝি কেউ নয়! একটা কথাও তাকে বলা যায় না! ফুপুর কাছে ফুসুরফাসুর করে তাকে কাঁদিয়ে একশেষ করা হলে লাগল পুতুলের পেছনে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ভ্রাতৃঅন্তঃপ্রাণ পুতুল কিন্তু কাঁদল না। রাজুর সঙ্গে তার কী কথা হলো কে জানে! ওর ভাইয়ের কথা কি একবারও জিজ্ঞেস করেনি? কী বলেছে রাজু? এতবার ওপারে গেল, শামীমের খবর কিছুই জানে না? এতটুকু মেয়ের সঙ্গে আবার আলাদা করে কিসের কথা? আধঘন্টা ধরে কথা বলেও শেষ হয় না! নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চেয়ে দেখেন, সদর দরজায় হেলান দিয়ে ওরা তখনো কথা বলছে। এ পাশ থেকে দেখে মনে হয়— পুতুল কি তবে বড় হয়ে গেল! এই তো সবে ক্লাস নাইনে পড়ে। শামীমের বড্ড আদরের ছোটবোন। এমনও তো হতে পারে রাজুকে দিয়ে সে পুতুলের কাছেই তার খবর জানিয়েছে। তাই বলে পুতুল চেপে রাখবে সেই কথা! ওরা সবাই মিলে তাকে ভেবেছে কী— সবাই এড়াতে চাইছে নাকি! কেন, সে কি বাঘ-ভালুক? ছেলে যুদ্ধে গেল, একটা কথা শুধানো দরকার মনে করল না। রাজু এসে ফিসফাস করে, তাকে কিছুই বলে না। অতক্ষণ ধরে কী যে বলে পুতুলের কাছে, পুতুল সে কথা পেটের মধ্যে হজম করে ফেলল। সমস্যা হয়েছে ওর মাকে নিয়ে। কারো কাছে তার প্রশ্ন নেই, কেবল দু’ চোখ ভরা অশ্রু। সেই অশ্রুধারাতে ভাসে অব্যক্ত প্রশ্ন— আমার শামীম কোথায়?

আরো দিন দশেক পরে এক নিশুতি রাতে শামীম কোথায় — এ প্রশ্নের জবাব দিতে শামীম নিজেই হাজির হলো বাড়িতে। ততদিনে মেহেরপুরে মিলিটারি এসে গেছে, গ্রামে গ্রামে শান্তি কমিটি আর রাজাকার বাহিনী তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সেই আকাশভাঙা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই সে বাড়ি এলো। গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পায়ের পাতায় বেড়াল-থাবার নৈঃশব্দ আনতে শিখেছে। তবু মায়ের কান বলে কথা। পাশের ঘরে পুতুলের সঙ্গে গিয়ে শুয়েছে ওর মা। সবার আগে সে-ই টের পেয়েছে। হারিকেনের টিমটিমে আলোতে দাড়ি-গোঁফের অবাধ জঙ্গল থেকে নিমেষেই আবিষ্কার করে ফেলে পুত্রের মুখ জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে। কথা নয়, আবার সেই অশ্রু বর্ষণে পল্লবিত হয় মাতৃবক্ষের আকুলতা। পুতুল জেগে উঠে হৈ-চৈ শুরু করে দেয়। শামীম হাত ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে কথা বলে,

— মা, তুমি থামো তো! শোনো মা, আমি তো বেঁচে আছি। এই যে আবার ফিরে এসেছি। তোমাদের দেখতে এসেছি।

শামীম মুখ খোলার পর বিপদ আরো বেড়ে গেল। পুতুল এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। শামীম আকুল হয়ে মায়ের মাথায় হাত রাখে,

— মাগো, শোনো, কথা শোনো। এভাবে কাঁদাকাটি করলে আমার বিপদ হবে। এই পুতুল, থামতো! অ-মা, বাবা কি আমার উপর খুব রেগে আছে?

দরজার ওপারে দাঁড়ানো মতিন মাস্টার চোখ মুছতে মুছতে দু’পা পিছিয়ে আসেন। এতক্ষণ নিজেকে অপাঙ্ক্তেয় বিবেচনা করে মধ্যবর্তী দরজার আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন বটে, শামীমের কথা শুনে সেখানে আর দাঁড়াতে পারেন না। পিছিয়ে এসে নিজের বিছানায় চুপচাপ বসে থাকেন। চোখ মুছে নিজেকে সম্বরণ করে ভেতরের লাগামটা টেনে ধরেন। তারপর তার মাস্টারি গলায় গাম্ভীর্য ঢেলে ডেকে ওঠেন,

— খোকা, এ ঘরে আয়।

ও ঘরে কান্নার ফোঁপানি থেমে যায়। শামীম চলে আসে বাবার ঘরে। ছোট্ট খোকার মতোই সামনে এসে বিনীত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। খোকা তার বাড়ির নাম। বিশেষ ক্ষেত্রে কেবল বাবা-মা ঐ নামে ডাকে। বহুদিন পর ঐ ছোট্ট ডাকের কাছে বন্দি হয়ে যায় শামীম। অবোধ বালকের মতো ডেকে ওঠে অস্ফুটে,

— বাবা!

— এখানে এসে বসো।

বিছানায় বাবার পাশে বসতে বসতে জানাতে চায়,

— তোমার শরীর কেমন আছে বাবা?

— ভালো। আমাকে না জানিয়েই এত বড় সিদ্ধান্তটা নিতে পারলি!

— তোমাকে না জানিয়ে যাবার জন্যে আমি দুঃখিত বাবা।

— না না, কেবল দুঃখ প্রকাশ করেই সব কিছুর শেষ হয় না। এ যুদ্ধের শেষ কোথায়, কী পরিণাম সেটা তুই জানিস?

— পরিণাম কী তা কেইবা জানে! তবে আমরা আশা করি স্বাধীনতা লাভই শেষ পরিণাম।

— স্বাধীনতা?

মতিন মাস্টার ঈষৎ উষ্ণ হয়ে উঠেন— এ যুদ্ধ চালাচ্ছে কারা, কেন চালাচ্ছে, তাদের শ্রেণি অবস্থান কি তুই চিনিস? তারা আনবে স্বাধীনতা?

— বাবা, কিছু মনে করো না, ঠিক এই জন্যে যুদ্ধে যাবার আগে তোমাকে জানাতে পারিনি।

— এই জন্যে মানে?

— শোনো বাবা, তোমার কিম্বা মায়ের প্রতি আমার যে ভালোবাসা, তা কি কেবল যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে? দেশের ব্যাপারটাও তো ঐ রকমই। ভালোবাসা কতটুকুই-বা যুক্তি মানে বলো! অথচ যুদ্ধে যাবার আগে তোমার অনুমতি চাইলে এই যুক্তিতর্কের জালে ঠিকই আটকে যেতাম।

— তার মানে আমাদের রাজনীতিতে দেশপ্রেম বলে কিছু নেই?

— তা নিশ্চয় আছে। কিন্তু তুমি এখন আর রাজনীতি কর না বাবা, এই কথাটা ভুলে যাচ্ছ। তুমি আছ রাজনীতির ঘোরের মধ্যে। যাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তুমি রাজনীতি করতে, আমিও তাদের শ্রদ্ধা করতে শিখেছিলাম। কিন্তু দেশের এই দুর্দিনে তাদের ভূমিকা দেখে সেই শ্রদ্ধা আর ধরে রাখতে পারছি না বাবা। আমাকে ক্ষমা কর।

— হ্যাঁ বুঝতে পারছি, বুর্জোয়া রাজনীতির মেশিনে তোর মগজ ধোলাই হয়ে গেছে। ভাবছি, হলোটা কী করে!

— বাবা, তুমি কি শুনলে খুব কষ্ট পাবে— আমার মার্কসিস্ট বন্ধুরা আজ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে! কোথাও কোথাও পাকিস্তানি সৈন্যদেরও সাহায্য করছে!

— ভারতীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কেউ কেউ এ রকম ভুল অবস্থান নিতে পারে। কিন্তু তুই ….

— ভারতের ভূতটা যে এবার মাথা থেকে নামাতে হয় বাবা! বন্ধুকে বন্ধু বলেই মানতে হবে। তুমি জানো না— ওরা আমাদের এক কোটি শরণার্থীর জন্যে কতটা করছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কীই না করছে! শোনো বাবা, তোমাদেরও ভারতে যেতে হবে।

— অসম্ভব! গর্জে ওঠেন মতিন মাস্টার।

— ওসব পুরোনো সেন্টিমেন্ট রাখো তো বাবা! এখানে আর মোটেই নিরাপদ নয়। অন্তত পুতুলের কথা ভেবেও তোমাদের সরে যেতে হবে। সেটাই এখন জরুরি।

এতক্ষণে থালায় ভাত তরকারি সাজিয়ে ঘরে ঢোকে শামীমের মা,

— তোমাদের বকবকানি থামাও দেখি। বাতাসেরও কান আছে। নে বাবা, অল্প দুটো খেয়ে নে। দুধের বাটিটা নিয়ে আয় পুতুল।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দুধের বাটি হাতে ঘরে ঢোকে পুতুল। শামীমের কাঁধ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

— ভাইয়া, তুই কি এই রাতেই চলে যাবি?

— হ্যাঁ রে।

— রাতটুকুও থাকা যাবে না? তোর খুব ক্ষতি হবে?

— ক্ষতি তো হতেই পারে। পুতুলের হাত থেকে দুধের বাটি তুলে নিয়ে শামীম বলে, ভাত আমি খাব না মা। শুধু আমার কেন, সবারই ক্ষতি হতে পারে। বাবা, তুমি আর অমত করো না— ইন্ডিয়ায় যাবার দিন ঠিক করে ফেলো।

মতিন মাস্টার সেই আগের মুডেই আছেন,

— দ্যাখ্ খোকা, আমাকে আর ক্ষ্যাপাসনে। তুই বরং তোর মতটা শুধরে নে। আমার এই তিপান্ন বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছি, ঐ সব বুর্জোয়া পেটিবুর্জোয়া দলগুলোর ওপর ভরসা করা যায় না। তোর আর ইন্ডিয়ায় গিয়ে কাজ নেই।

হুট করে উঠে দাঁড়ায় শামীম। যেন তার সামনেই ফাঁদ, এখন কোনো রকমে পালাতে হবে। সেটাই এখন জরুরি কর্তব্য। বাবার চোখের দিকে না তাকিয়ে সে মাকে বলে,

— আমি যাই মা, তোমরা সাবধানে থেকো।

শামীমের মা আবার ফুঁপিয়ে ওঠে। ভাতের থালা মেঝেতে নামিয়ে রেখে ছেলের মুখটা আবার জড়িয়ে ধরে। মতিন মাস্টার ধমকে ওঠেন ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করো না তো! তুই তাহলে চলেই যাবি খোকা? সত্যি করে বলতো, তোর কি মনে হয়— ওদের দিয়ে সমাজতন্ত্র হবে?

— না, হবে না হয়তো। কিন্তু বাবা, সমাজতন্ত্রের চেয়ে এখন জরুরি দরকার স্বাধীনতা।

— স্বাধীনতা? এর মধ্যে একটুখানি হেসে ওঠেন— ভারতের কাছে দাসখত লিখে দিয়ে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে?

এ সময় শামীম তর্কে জড়াতে চায় না,

— জানি না বাবা, জানি না। তবু সেই স্বাধীনতাটাই আগে চাই। আমরা সেই স্বাধীনতা নিয়ে আসি, তারপর কেউ সমাজতন্ত্রের কথা ভাববে। আমি যাই।

— শোন্ খোকা। মতিন মাস্টার উঠে এসে ছেলের সামনে দাঁড়ান— শ্রেণি সংগ্রাম ছাড়া মানুষের মুক্তির অন্য কোনো পথ খোলা নেই, এটুকু ভুলিসনে যেন!

— সে না হয় স্বাধীনতার পর আবার শুরু করা যাবে বাবা। আমি এখন যাই। আবার কবে আসার সুযোগ পাবো জানি না। তোমরা সাবধান থেকো।

পুতুলের মাথায় হাত দিয়ে একবার চোখে চোখ রাখে, মায়ের দিকে মোটেই তাকায় না। তারপর ঘর থেকে ঝুপ করে নেমে পড়ে। বাইরে মিশমিশে অন্ধকার অতি দ্রুত শামীমকে ঢেকে নেয় নিরাপত্তার চাদরে। শামীমের মায়ের কান্নাধ্বনি তখন আছড়ে পড়ে গভীর রাতের ভারি বাতাসের গায়ে।

গল্পটি এখানে এভাবেই শেষ হতে পারত। পিতৃআদেশ এবং আদর্শ উপেক্ষা করে শামীম এবং শামীমের মতো বহু যুবক দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যে জীবন বাজি রেখে নির্ভীক চিত্তে লড়ছে। জয় একদিন হবেই ওদের প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তার কারণে, ওদের নির্মল দেশপ্রেমের কারণে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রতনপুরের মতিন মাস্টারে জীবনের গল্প এভাবে শেষ হয়নি। মাত্র এক মাসের মাথায় তাকে আরো অনেক মূল্য দিয়ে দুঃখ সয়ে এ গল্পের ট্র্যাজিক পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য সেই ট্র্যাজেডির কথা না বললে এ গল্প লিখে প্রকাশ করার কোনো মানেই হয় না।

‘মাটি কামড়ে পড়ে থাকা’ গুরুবাক্য শিরোধার্য করে রতনপুরে পড়ে থাকার যে গোঁয়ার্তুমিতে পেয়ে বসেছিল, আদরের কন্যা পুতুলকে হারিয়ে মতিন মাস্টার তার মূল্য দেয়া শুরু করেন। পুতুলকে যেভাবে ওরা নিয়ে গেল, তাকে হারানোই বলে। ঘটনা প্রকাশ্য দিবালোকের। তবু সাত দিন ধরে পাগলের মতো মেহেরপুর-চুয়াডাঙা-কুষ্টিয়ার মিলিটারি ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে কিছুতেই যখন পুতুলকে উদ্ধার করা গেল না, তখন সপ্তম দিনে পুনরায় মেহেরপুর ক্যাম্পে খোঁজ নিতে গিয়ে মতিন মাস্টার নিজেই আটকা পড়লেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ কয়েকটি এবং প্রতিটি অভিযোগই রীতিমতো গুরুতর। যেমন ধরা যাক— মতিন মাস্টার কম্যুনিস্ট। সেই গোড়া থেকেই কম্যুনিস্টরা সাংঘাতিক এক প্রজাতির প্রাণী বলে চিহ্নিত হয়ে আসছে পাকিস্তানে। কম্যু মানেই ভয়াবহ জুজু। তার উপরে মতিন মাস্টারের আরেক অপরাধ— তার ছেলে একজন দুষ্কৃতকারী। তিনি ছেলেকে মুক্তিবাহিনীতে পাঠিয়ে এপারে বসে মজা দেখছেন। না, কেবল যে মজা দেখছেন তা-ই নয়, নিজের মেয়েকে কোথাও সরিয়ে রেখে দেশপ্রেমিক ঈমানদার সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যে বদনাম রটাচ্ছেন এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান শমসের হাজী মতিন মাস্টারের বিরুদ্ধে এই সব গুরুতর অভিযোগ একে একে বুঝিয়েছেন আর্মি মেজর গুল মোহাম্মদ খানকে। তবু সেই মেজর সাহেবকে যথেষ্ট দয়ালু বলেই মানতে হয়। অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী সোজা মৃত্যুদণ্ডই তার প্রাপ্য। অথচ সামান্য কিছু নির্যাতনের পর দু’ দিনের মাথায় মেজর সাহেব মুক্তির আদেশ দিয়ে দিলেন। এ আদেশ না দিলেই-বা কী করার ছিল তার! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, হায়েনার খাঁচা থেকে মতিন মাস্টার সেই দিনই মুক্তি পেয়েছিলেন। অবশ্য মুক্তি লাভের পর ক্যাম্প থেকে নিজ পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসার শক্তি প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছিল তার। তা সেটা শরীরের অক্ষমতা, বয়সের দোষ হবে হয়তো। কিন্তু দাঁতে দাঁত পিষে কষ্ট করে হলেও সেদিন তিনি মিলিটারি ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সন্ধ্যা তখনো নামেনি। অনেকেই সে দৃশ্য দেখেছে।

তারপরও অবাক করা খবর হচ্ছে মতিন মাস্টার বাড়ি ফেরেননি। সেই রাতেও না, পরদিনও না, আর কোনোদিনই তিনি তার রতনপুরের মাটিতে ফিরে আসেননি। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেল, একদিন তাকে আমঝুপি বাজারে দেখা গেছে। দিন তারিখের হিসাব কষে এটুকু নির্ণয় করা গেল— মেহেরপুর মিলিটারি ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাবার সপ্তাহ খানেক পরের ঘটনা। এই সাতদিন তার কোথায় কীভাবে কেটেছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমঝুপির বিবরণে জানা গেল— মলিন পাঞ্জাবির ভেতর-পকেট থেকে একটি ছোট্ট চিঠি বের করে তিনি অত্যন্ত গোপন ভঙ্গিতে জনে জনে দেখিয়েছেন, সেটি পাঠ করার জন্যে অনুরোধ করেছেন; কেউ পড়েছে, কেউ পাগলামি ভেবে এড়িয়ে গেছে। আমঝুপির মজিদ মাস্টার সেই চিঠি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। পড়ে চমকে উঠেছেন। তারপর তিনি মতিন মাস্টারকে একরকম জোর করেই ধরে নিয়ে আসেন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে। গরম সিঙ্গাড়া খাওয়ান। কিন্তু চা তৈরি হবার আগেই চুয়াডাঙামুখী একটি বাস এসে রাস্তায় থামলে তিনি দৌড়ে এসে সেই বাসে উঠে পড়েন। তারপর আর তার নাগাল পাওয়া যায়নি, পরবর্তী খোঁজ কেউ জানে না।

কিন্তু কী লেখা ছিল সেই চিঠিতে? কোত্থেকে কীভাবে এলো মতিন মাস্টারের হাতে? কবে কখন? এসব প্রশ্নের উত্তর আপাতত উদ্ধার করার উপায় আমাদের হাতে নেই, পত্রদাতাও চলে গেছে সকল ধরাছোঁয়ার বাইরে, তবে সেই ছোট্ট চিরকুটটি মজিদ মাস্টারের কাছ থেকে উদ্ধার করা গেছে। চায়ের দোকান থেকে ছুটে গিয়ে বাস ধরার সময় সেই অমূল্য সম্পদটি তার নেয়া হয়নি, সেটি তখন মজিদ মাস্টারের হাতের মুঠোয়। চিরকুটই তো, দুতিন বাক্যের ছোট্ট চিঠি। পুত্র লিখেছে পিতাকে— ‘বাবা এভাবে যুদ্ধে না এলে এত মানুষের আত্মত্যাগ, এত মা-বোনের অশ্রুজল আমার কাছেও কেবল দুই কুকুরের লড়াইয়ের ফল বলে চিহ্নিত হতো, তুমিও একজন মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা — এই পরিচয় থেকে বঞ্চিত হতে। আমাকে ক্ষমা করো। তোমরা সাবধান থেকো।’

 

রফিকুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক

আন্দরকিল্লা প্রকাশনার ২৮ বছর আগামীর পথ ধরে অনাদিকাল

রূপক বরন বড়ুয়া আমি মাসিক ‘আন্দরকিল্লা’ কাগজের নিয়মিত পাঠক। প্রতিবারের মতো হাতে নিলাম এবারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে ঢাকা জুলাই ২০২৫ সংখ্যা, হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই

জলে জঙ্গলে (পর্ব-২)

মাসুদ আনোয়ার   ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী বোর্ডের রেজাল্ট আউট হলো। আমি কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। যে কোনোদিন কুমিল্লা বোর্ডও ফল প্রকাশ

স্বপ্নে গড়া অবয়ব

সৈয়দ মনজুর কবির   মনটা যখনই কেমন অজনা বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তখনই কেয়া জানালার ধারে এই চেয়ারটাতে এসে বসে। আজ অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে

অন্তহীন সুড়ঙ্গ

সুজন বড়ুয়া   কবর থেকে বেরিয়ে মহিম অশরীরী রূপ নিল। সঙ্গে সঙ্গে গত কয়দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ে গেল তার। ফার্স্ট সেমিস্টারের পর

রাত যখন খান খান হয়ে যায়…

মনি হায়দার   চোখ মেলে তাকায় সোাহেল হাসান। প্রথম দৃষ্টিতে সবকিছু অচেনা লাগে। কোথায় এলাম আমি? উঠে বসতেই মনে পড়ে গতরাতে অনেক ঝক্কি আর ঝামেলার