এখন সময়:দুপুর ২:২০- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ২:২০- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

অপরিহার্য- অনিবার্য সম্পদ পানি

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি

প্রাণের পৃথিবীর প্রাণ হলো পানি। পানি প্রাকৃতিক সম্পদ। সমগ্র জীব জগতের অভিন্ন সম্পদ। পানি সমগ্র মানব জাতি ও তার ভবিষ্যত প্রজন্মের অভিন্ন, সীমিত এবং অমূল্য সম্পদ। নিরাপদ পানি ও সেনিটেশন একটি মৌলিক মানবাধিকার, যা জীবনকে উপভোগ ও বিকশিত করার লক্ষ্যে অন্যান্য      জীবন-ঘনিষ্ট মনবাধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। পানি বঞ্চনার, শোষণের, অব্যবস্থার, প্রতিহিংসার অন্যতম সূচক। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি নিশ্চিত করা সভ্যতার সূচক। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের ভিতর পানি অত্যাবশ্যকীয়, অতিপ্রয়োজনীয়, অনিবার্য সম্পদ, প্রকৃতির অন্যতম মূলধন। জীবনের অঙ্কুরোদগমে, পরিস্ফুটনে, পরিবৃদ্ধিতে, পরিচর্যায় পানির আর কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ, যেখানে পানি আছে এখন পর্যন্ত। পানি আছে বলে জীবন আছে। জীবন আছে বলে জীবিকা আছে। জীবনের চর্চা আছে। সমাজ আছে, সভ্যতা আছে। সংস্কৃতি আছে, স্বপ্ন আছে। সভ্যতার সূচনা ও ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছে পানি। জীবনাচার, চাষবাস, শিল্প-সভ্যতায় পৃথিবীর মানুষ এগিয়ে গেছে পানি নির্ভর হয়ে।

পানি তৃষ্ণা মেটায়, ফুল ফোটায়, শিশির হয়ে স্বপ্ন হাসায়, স্বপ্ন ভাসায়। পানি বিদ্যুত হয়ে শক্তি দেয়, ইঞ্জিন চালায়। বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। মেঘ হয়ে কবিতা লেখায়। কবি মনে পুলক জাগায়। বৃষ্টি হয়ে হাসায়, ভাসায়, কাঁদায়। পানি বরফ গলিয়ে নদী বহায়। পানি বৃষ্টি হয়ে মাটিতে লুটায়। ভূগর্ভে ঢ়ুকে খণিজ গলায়। খণিজ পানি পুষ্টি যোগায়। মাটির প্রাণে রস সঞ্চার করে। প্রাণে প্রাণে সঞ্চারিত হয়। বন্যা হয়ে পানি কাঁদায়, ভাসায়- জীবনের মূল উৎপাটন করে। সভ্যতা ধংস করে, জীবন বিপন্ন করে। পানি আমাদের অন্তরে, বাহিরে, শিরায়, ধমনীতে।

প্রাণি,উদ্ভিদ ও জীবদেহ পানি দিয়ে গঠিত। রক্তের উপাদান পানি। পানির বহুমাত্রিক রূপ ও অবস্থাকে আমরা ব্যবহার করি, ভোগ করি, বিলাস করি। অপচয় করি।

জ্বালানি হিসেবেও পানির ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। পানির উপাদান হাইড্রোজেন নিজে জ্বলে। বাতাসে জ্বলে জ্বলে এটি পানিবাষ্পে পরিণত হয়। ঘনীভূত হয়। আবারো ঊর্ধ্বাকাশে, ট্রপোস্ফেয়ারে গিয়ে ঘণীভূত হয়ে ফিরে আসে শিলা পানি হয়ে, ফিরে আসে প্রাণের টানে। এই রুপান্তর চিরন্তন। এখানেই পানির আবেদন সর্বজনীন, সীমাহীন।

পৃথিবীতে মরূভূমি আছে। তাতে প্রাণের স্পন্দন, উদ্ভিদ-প্রাণি নেই। প্রাণের চর্চা বা নান্দনিকতা নেই। গ্রহ আছে মহাশূন্যে। আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। নেই পানি, প্রাণ, প্রাণি-উদ্ভিদ।  মরুভূমির প্রকৃতি রুক্ষ, শুষ্ক, প্রাণহীন। শুধুই প্রাণহীন। জীবনের পরশহীন কৃত্রিমতায় ভরা। মানুষ সময় ও অবস্থার সাথে তালমিলিয়ে সামাজিকতা ও সভ্যতাকে  ধারণ করে, বাহিত করে। বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিটি ধাপে মিনিট ঘণ্টা, দিবস নির্বিশেষে মানুষ নিবিঢ় ভাবে পানি নির্ভর। মানব সভ্যতা পানি নির্ভর। মানুষের আচার, বিচার দিনানিপাত পানি আশ্রিত,পানি মিশ্রিত। পানি পুষ্টির ধারক, পুষ্টির বাহক। জীবন পানি নির্ভর। আর তাই পৃথিবী প্রাণ বৈচিত্রে ভরা। বৈচিত্রের এ ধারার সংরক্ষক ও লালনকারি পানি। এ গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্ববাহি উপাদান তাই পানি।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষ ও অপরাপর জীবসম্প্রদায় তীব্র পানি সংকটের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। সঞ্চিত পানি মানব সম্প্রদায়ের ত্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলাতে পারছেনা। মানুষ বাড়ছে, পানির চাহিদা বাড়ছে, ব্যবহার ও অপব্যবহার বাড়ছে। ব্যবহার ও অপচয়ে-অপব্যবহারে পানির পরমিান কমছে। উৎস নির্বিশেষে পানি সংকটাপন্ন। সাগর দূষিত হচ্ছে। নদী পথ হারাচ্ছে, নাব্যতা হারাচ্ছে, হারাচ্ছে পানি। খালবিল জলাশয়, হ্রদ, হাওড় প্রভৃতি সময়ের সাথে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছেনা। মিঠা পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে, নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টি বাদল বা প্রাকৃতিক প্রকৃয়ায় মাটিতে পানির যথাযথ ভাবে পুনর্ভরণ ঘটছেনা। বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস প্রভৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্রা কমেছে, তীব্রতা বেড়েছে প্রাকৃতিক বহুমাত্রিক দুর্যোগসমূহের। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় বৃষ্টি না হবার কারণে সঞ্চিত পানির ওপর প্রভাব পড়ছে দারুণ ভাবে। এ প্রভাব পড়ছে উদ্ভিদ প্রাণির ওপরও। মূল্য দিচ্ছে প্রকৃতি। মূল্য দিচ্ছে জীবন।

পানির একমাত্র গ্রহ পৃথিবীতে মানুষই সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে পানি। মানুষ পানি অপচয় করে, পানি দূষিত করে। সভ্যতা যতোই টেকসই, আধুনিক ও স্বাচ্ছন্দময় হয়েছে, পানির ব্যবহার, অপচয় ও দূষণ বেড়েছে ততোই। ভূগর্ভের পানিও অক্ষত থাকছেনা।

বৃষ্টির পানি অবকাঠামো বিড়ম্বনার জন্য সঠিক মাত্রায় ভূগর্ভে পুনর্ভরণ হতে পারছেনা। অপরিকল্পিত উন্নয়ন এজন্যে দায়ী। বেশী মানুষের ঘনবসতির দেশে যে সুপরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চর্চা করা দরকার, তা কার্যত অনুপস্থিত। এ ধরণের উন্নয়নে অপচয় বেশী হয় সম্পদের। বিশেষ করে পানির। পানির অপচয় দৃশ্যমান সারা দেশে, সারা দুনিয়ায়। সব শ্রেণি, বয়স , পেশা ও অঞ্চল নির্বিশেষে আমরা পানির অপচয় করি। পানির ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পানি শুধুই উপাদান নয়, সম্পদ। সমগ্র মানব জাতির অমূল্য সম্পদ। কিন্তু মূল্যহীন সম্পদ নয়। পানি অফুরন্ত বা অবারিত সম্পদ নয়, সীমিত সম্পদ। আমরা সর্বদাই পানিকে অফুরন্ত উপাদান মনে করি। সম্পদতো কখনও মনে করিনা। সেদিন হয়তো খুব বেশি দুরে নয়, যখন পানি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় পণ্য হয়ে আমাদের ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে চলে যাবে।

পানি সমগ্র মানব জাতির অভিন্ন সম্পদ। পানি ব্যবহারে সবসময় আমাদের অধিক যত্নশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে পঁয়তাল্লিশ দেশের প্রায় নয়শত মিলিয়ন মানুষ পানি সংকটে দারুণভাবে বিপর্যস্ত। এর প্রায় দেড় মিলিয়নই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। এখানেই শেষ নয়, দু’হাজার সাতাশ সাল নাগাদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় সোয়া দুই বিলিয়ন মানুষ তীব্র পানি সংকটের মধ্যে পতিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় দু’হাজার বত্রিশ সালে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ চরম পানি সংকটে দিনাতিপাত করবে। দুহাজার পাঁচ সাল থেকে পনের সাল শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক পানি দশক হিসেবে। পানির নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সর্বাংশ জুড়ে পানির কথা থাকলেও, পানিকে নিয়ে আমাদের উদাসিনতার কমতি ছিলনা। এখনো নেই। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের উদাসীনতার শেষ নেই।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহের শতকরা সত্তর ভাগই পানির জন্য। নদী,খাল,মুক্ত জলাশয়, হাওড়, বিলের প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে। আমাদের অমনোযোগিতা আর অবহেলায় এসব নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। নিশ্চিহ্ণ হচ্ছে এদের উপর নির্ভরশীল জীববাস্তুতান্ত্রিকতা- উদ্ভিদ, মাছ, পাখি, পতংগ প্রভৃতি।

মিঠা পানির নির্ভরতা এদেশের নান্দনিক নদ-নদী, বিল-হাওড় নিশ্চিহ্ন অথবা দুর্দশাগ্রস্থ। এতে মিঠা পানির উপর প্রভাব পড়ছে। অরক্ষিত নদী-জলাশয় অনিরাপদ করছে পানি, পরিবেশ, প্রতিবেশকে-জীবনকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক ন-দনদী জলহীন হয়ে মরে যাচ্ছে দ্রুত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমের চিত্রা, কীর্তনখোলা, কপোতাক্ষ, করতোয়া ইছামতি, নারোদ, বেহুলা, বড়াল কিংবা উত্তরের সুরমা, ব্রহ্মপুত্র, নরসুন্দর, শ্যামাসুন্দরী, সুমেশ্বরি, ঘাঘট বা গোমতির অস্তিত্ব বিপন্নতা আমাদের পানি ও পরিবেশ  বিপন্নতাকে জানান দিচ্ছে। চট্টগ্রামের হালদার হালচাল মোটেও ভালো না ওপরের দিকে। পাহাড়ি ললনা কর্ণফুলিকে বহুমাত্রিক দূষণে দূষিত করা হচ্ছে তিলতিল করে। দখলদারিত্বকে ঠেকানো যাচ্ছেনা কোনভাবেই। এ নদীটির গুরুত্বকে জাতীয় ভাবে হিসাবেই আনা হচ্ছেনা। সারা দেশে মিঠা পানির প্রবাহ ক্রমেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। ত্রিশ বা পঞ্চাশ বছর আগে এ দেশে নদী বা জলাশয়গুলোকে আমরা যে ভাবে পেয়েছিলাম, সেভাবে রাখতে পারিনি। বুড়িগঙ্গা দূষণের দায় আমাদের সবার। উচ্ছেদ দৃশ্যমান, কিন্তু কতোটুকু টেকসই হবে তা এখনি বলা যাচ্ছেনা। তুরাগ বালুকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আদালতে গিয়ে রায় এনেও নদী তার কার্যকারিতা পাচ্ছেনা।

আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। দেশে পানিবাহিত রোগে প্রতিদিনে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও এখনো তা সন্তোষজনক নয়। মানুষ হিসেবে আমাদের অপরাধের বোঝা ভারি হচ্ছে। প্রকৃতির প্রতি অপরাধ, পরিবেশের প্রতি অপরাধ, সমাজের প্রতি উদাসীনতা বেড়েই চলেছে। আমাদের বোধ ও বিবেকের তাড়নাকে জাগাতে হবে। জাগাতে হবে মনবতাবোধকেও। আজ ও আগামি দিনের কথা ভাবতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। সবাকে নিয়ে- সম্মিলিত ভাবে নিরাপদ পৃথিবী গড়ার কাজ করতে হবে। পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের বসে থাকার সময়-সুযোগ নেই। আসুন, জেগে উঠি সকলে সকলের কল্যাণমিত্র হয়ে।

 

মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে