ইসরাইল খান :
বাঙালির অনেক মন্দ বা খারাপ স্বভাব-চরিত্রের উল্লেখ করে তরুণ বয়সেই আহমদ শরীফ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক-সংস্কৃতি, চিরায়ত বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, লোকায়ত মনন-সাধনার রূপ-স্বরূপ আহমদ শরীফের থেকে অধিক অনুধ্যান অনুশীলন করেছেন ক’জন? অনেকেই বলেছেন, আহমদ শরীফ ছিলেন এক্ষেত্রে তাঁর সমকালীন এবং পূর্বসূরি গবেষকদের মধ্যে অদ্বিতীয়। কার্ল মার্কস তাঁর পূর্বসূরি দার্শনিকদের ঋণ স্বীকার করেও যেমন অনন্যসাধারণ মনস্বিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন, আহমদ শরীফও তেমনি তাঁর পূর্ববর্তী অতুল সুর, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখের ঋণ স্বীকার করেও বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস অনুশীলন ও প্রণয়নে অধিকতর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বাংলার প্রায় আড়াই হাজার বছরের জীবন চর্যার দালিলিক প্রমাণ পরীক্ষা করে যে শতগ্রন্থ তিনি রচনা সম্পাদনা করেছেন, তাতে তিনি দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে: ‘আমাদের বাঙালিদের বড় হবার সম্ভাবনা ছাড়া আর কিছু নেই।’১
সাক্ষী মেনে বলেছেন : ‘গত আড়াই হাজার বছর ধরে যিনিই বাঙালী-চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তিনিই বলেছেন যে, বাঙালী চোর, মিথ্যাবাদী, ভীরু-কাপুরুষ, পরশ্রীকাতর, ঈর্ষাপরায়ণ ইত্যাদি।২
মনস্বী আহমদ শরীফ বাঙালির এই চারিত্রিক দৈন্য ও তার কার্য-কারণ উদ্ঘাটন-অনুশীলন করেছেন তাঁর অন্যতম সেরা গ্রন্থ বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য (১ম ও ২য় খন্ড), বাঙলা, বাঙালী ও বাঙালীত্ব, সংস্কৃতি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ প্রভৃতিতে।
বলতে গেলে বাঙালির ইতিহাসের সকল আলোচনায়ই বিষয়টি ঘুরে-ফিরে এসেছে। আবার মননশীল মৌলিক প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে, এবং তাতে বাঙালির উন্নতির উপায় উদ্ভাবন ও অবনতির কারণ খুঁজতে, বুঝতে, বুঝাতেও তাঁকে শাশ্বত বাঙালির অন্তর্নিহিত চারিত্রিক ঐতিহ্যিক প্রবণতা ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। যেমন বাঙালি ও বাঙলা সাহিত্য-র প্রথম খন্ডে প্রাচীন বাংলার দেশ, কাল, মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বকীয় স্টাইলে আলোচনা করেছেন যখন, তখন বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও তাঁকে বলতে হয়েছে।
আহমদ শরীফ বাংলাদেশের দেশ-কাল-জাতি মানুষের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় উদ্ঘাটন করেছিলেন বাঙালির উন্নতি, উজ্জীবন ও মঙ্গলকামনায়। এবং বিগত এক হাজার বছরের লিখিত সাহিত্য-শিল্পের স্বরূপ বিশ্লেষণের প্রয়োজনে। কারণ, মানুষ তার সাহিত্যে শিল্পে নিজের বিশ্বাস-সংস্কার আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই প্রতিফলন ঘটায় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। মনসামঙ্গলের চাঁদ-সদাগর বেহুলা সনকা, চন্ডীমঙ্গলের ভাড়–দত্ত ফুল্লরা খুল্লনা, ভারতচন্দ্রের চতুর চরিত্রসমূহ যে আচরণ করে, বুদ্ধিমত্তা, ভাঁড়ামি, কিংবা ঠক, চালিয়াতি-জালিয়াতির পরিচয় সেসব ব্যাখ্যা করার জন্য বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জেনেটিক্যালি নির্ণয়ের জন্যই বারবার তিনি বাঙালির জাতি-গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে গিয়েছেন। বিভিন্নভাবে, প্রসঙ্গক্রমে, বুঝাবার প্রয়োজনে তিনি ফিরে গিয়েছেন বৌদ্ধযুগে, পাল ও সেন আমলে। বাঙালির সমাজ-বিকাশের নানা খতিয়ান তুলে ধরে তিনি স্পষ্ট বলেছেন: আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য যে, দুই হাজার বছরের মধ্যে- অশোক শুদ্ধ ধরলে তেইশ শ বছর হবে এর মধ্যে মাত্র অল্প কয়েক বছরই বাঙালী স্ব-শাসিত ছিল।৩
১৯৪৭ সনের আগের ঐতিহাসিক সময় কালের বাঙালি বলে খ্যাত শশাঙ্ক, দিব্যক, রুদ্রক, ভীম, হুসেন শাহ, রাজা গণেশ, যদু-জালালুদ্দীন গংএর পরিচয় দিয়ে তিনি দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে, তাঁরাও আসলে বাঙালি ছিলেন না। অতএব ১৯৪৭ সনের পূর্বপর্যন্ত বাঙালি জাতিকে কোনো বাঙালি প্রশাসক কেন্দ্রীয়ভাবে শাসন-নিয়ন্ত্রণ করেননি। ফলে বাঙালি কোনো একক সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলায় বিকশিত হয়নি। ১৯৪৭ সনের পরে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপর্যন্ত বাঙালির রাজ্যশাসন কার্যে প্রাধান্য ছিলনা। কাজেই বাঙালি বিদেশি বিভাষি বিজাতি কর্তৃক শাসিত শোষিত হওয়াতে তাদের চারিত্রিক বিকার বিকৃতির বৈচিত্র্য যেমন লক্ষ্যণীয়, তেমনি, সংস্কৃত পরিমার্জিত উন্নত হবার সুযোগও ছিল সীমিত। বর্তমান বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই একই রাষ্ট্র বা প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় ছিল না বলেও চারিত্রিক ও সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণায়ও অনৈক্য সুগভীরভাবেই লক্ষ্য করা যায়। তাই ‘বাঙালীর চরিত্র’ বলতে মহল্লা, এলাকা, গোত্র বা বর্ণের লোকেদের চরিত্র বুঝায়না।৪ বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহের সবই নিন্দার্থক অবজ্ঞাসূচক ও নীচুমানের কেন- এই প্রশ্নেরও কারণ আহমদ শরীফ অনুসন্ধান করেছেন। তিনি বলেছেন : আজকাল যে-কথাটা স্বীকৃত হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ আমরা যদি অস্ট্রিক-মোঙ্গলদের বংশধর হই, তাহলে সেই অস্ট্রিক-মোঙ্গলেরা চিরকাল এদেশে ছিল নির্জিত নিপীড়িত। তাদের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিন্ম বর্ণের ও নিন্ম বিত্তের অস্পৃশ্য তারা কখনও মানুষ হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। তাদের মধ্যে যারা বনে-জঙ্গলে পালিয়ে গেছে তারা সাঁওতাল গারো খাসিয়া ইত্যাদি। যারা এখানে ছিল তাদেরকে দেখছি দাস ও অস্পৃশ্য।… এই দেশে শতকরা পঁচানব্বইজন ছিল বৌদ্ধ। সে-সময়ে তাদের কোনো জাতিভেদ ছিল না। তারপর আবার যখন ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনর্জাগরণ হলো, তখন সেন-আমলে নতুন করে বর্ণবিন্যাস করা হয়েছে। কাজেই আমাদের ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র পর্যন্ত সমগ্র বর্ণবিন্যাসটাই হচ্ছে কৃত্রিম।… কাজেই আমাদের পরিপূর্ণ পরিচয়টা জানতে হলে বুঝতে হলে সর্বপ্রকার সংস্কার ও সংকোচ ত্যাগ করে আরম্ভ করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, ‘বাঙালী-বাঙালী’ ‘বাঙলাদেশ-বাঙলাদেশ’ করে চিৎকার করলেই আমাদের আত্মপরিচয় মিলবে না।… সামন্তযুগে সর্ব-বঙ্গীয় বলে কোন কিছুই ছিল না, সংস্কৃতিক্ষেত্রেও সেই খ-রূপ। এক অখ- বঙ্গীয় সংস্কৃতি বলে সে-যুগের সংস্কৃতিকে অভিহিত করবার কোন উপায় নেই।৫
এখনও যেমন ঢাকা শহরের হাজারীবাগ লালবাগ সোয়ারীঘাট চকবাজারের লোকদের থেকে গুলশান-বনানী-ধানম-ীর বাঙালিদের সংস্কৃতি ভিন্ন, তখনও তেমনি ছিল। অতএব ঢালাওভাবে বাঙালির সংস্কৃতি ও বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একই রকম খারাপ ও নিম্ন মানের ছিল বলে মনে করার কোন কারণ নেই। সাধারণ বাঙালিদের মধ্যে মনুষ্যত্বের সাধনার পরিচয় এবং বিদ্রোহের ঐতিহ্যও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। একনজরে আহমদ শরীফের রচনায় বাঙালির যে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তার কতিপয় উল্লেখ করছি :
১. বাঙালি আত্মপ্রবঞ্চনাকারী।
২. বাঙালি নিজের মনের মত না হলে কিছুই গ্রহণ করেনা, অর্থাৎ যুক্তিবাদী নয় । আবেগী ও সংস্কার দ্বারা
চালিত। ভোগলিপ্সু কিন্তু কর্মকুণ্ঠ।
৩. বাঙালি বহুদেবতার উপাসক (‘পঞ্চোপাসক’)।
৪. বাঙালিরা কিছু করতে পারেনি। শুধু নিয়েছে। সাত শ বছরে একজন দরবেশও মুসলমান সমাজ তৈরি করতে পারেনি। তাদের সব দরবেশ আলমাদানী, আল-বোখারী, সমরখন্দী।
৫. বাঙালি ঐতিহ্য ও বংশ-গৌরব লোভী। খান্দানে বিশ্বাসী। বাঙালির কোনও নিজস্ব ঐতিহ্য নেই। সৃষ্টি করতে পারেনি বলেই তারা আরবের মরুভূমিতে, সাহারায়, গোবী মরুভূমিতে ঐতিহ্য সন্ধান করে বেড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত ড. আহমদ শরীফের প্রশ্ন : “কিন্তু ঐতিহ্য দিয়ে কি হয়?” তাঁরই উত্তর : “ঐতিহ্য দিয়ে কিছুই হয় না। মহাপুরুষের ছেলেকে তার ঐতিহ্য কেনো মহাপুরুষ করে না? শেরশাহের ঐতিহ্য ছিল না । কিন্তু তিনি স্বয়ং ইতিহাসের ঐতিহ্য হয়েছেন স্বকর্ম দ্বারা”।৬
৬. বাঙালী বুদ্ধির দীপ্তিকে সৃষ্টি-কর্মে নিয়োজিত করেনি বলেই রাষ্ট্রে-ধর্মে-শিল্পে-সাহিত্যে-দৈনন্দিন জীবনে যৌথ অনাচার, নির্লজ্জ কামপরায়ণতা, মেরুদ-হীন ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, রুচিতারল্য এবং অলঙ্কার বাহুল্যের বিস্তার বাঙালির সমাজদেহে দুষ্টক্ষতের মত প্রকট। তাছাড়া, মিথ্যাকথন, ভীরুতা মামলাপ্রিয়তা, প্রবঞ্চনা বাঙালী চরিত্রে সুলভ ছিল।৭
অতুল সুর, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য গ্রন্থের উপসংহারে তিনি প্রায় পূর্ণাঙ্গ একটি নিবন্ধই লিখেছেন। সম্রাট বাবরের উক্তি উদ্ধৃত করেও আহমদ শরীফ বাঙালি-মানসের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় দিয়েছেন; লিখেছেন : “বাঙালীরা ‘পদ’কেই শ্রদ্ধা করে। তারা বলে আমরা তখ্তের প্রতি বিশ্বস্ত। যিনি সিংহাসন অধিকার করেন, আমরা তারই আনুগত্য স্বীকার করি।”
৭. বাঙালির চরিত্রের বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্য অর্থাৎ দ্বান্দ্বিকগুণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অন্যত্র তিনি লিখেছেন :
আগেই বলেছি, বাঙালী সঙ্কর জাতি। নানা গোত্রের রক্তের মিশ্রণের ফলে বিভিন্ন চারিত্রিক উপাদানের বিচিত্র সমন্বয় ঘটেছে তাদের জীবনে। এর ফলে বাঙালী চরিত্রে নানা বিরুদ্ধ গুণের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। ভাবপ্রবণতা ও তীক্ষèবুদ্ধি, ভোগলিপ্সা ও বৈরাগ্য, কর্মকুণ্ঠ উচ্চাভিলাষ, ভীরুতা ও অদম্যতা, স্বার্থপরতা ও আদর্শবাদ, বন্ধনভীরুতা ও কাঙালপনা প্রভৃতি ও দ্বান্দ্বিকগুণই বাঙালী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।৮
৮. একই সূত্রে প্রসঙ্গত তিনি লিখেছেন :
বাঙালী ভাবপ্রবণ ও কল্পনাপ্রিয়। উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনাতেই এর প্রকাশ। তাই বাঙালী যখন কাঁদে তখন কেঁদে ভাসায়। আর যখন হাসে তখন সে দাঁত বের করেই হাসে। যখন উত্তেজিত হয়, তখন আগুন জ্বালায়। তার সবকিছুই মাত্রাতিরিক্ত। তার অনুভূতি- ফলে অভিভূতি গভীর। কেঁদে ভাসানো, হেসে লুটানো আর আগুন জ্বালানো আছে বটে, কিন্তু কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী নয়। যেহেতু উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা মাত্রেই তাৎক্ষণিক ও ক্ষণজীবী, তাই বাঙালীর গীতিপ্রবণতার উৎস এখানেই।৯
৯. কালো-পিপঁড়ের মত বাঙালী অতি চালাক। তাই সে ধূর্ততা যত জানে বুদ্ধির সুপ্রয়োগ তত জানে না। ফলে আত্মরক্ষা ও স্বার্থপরতার হীন প্রয়োগে তার তীক্ষ্ন বুদ্ধি কলুষিত হয়, আত্মপ্রতিষ্ঠার মহৎ প্রয়াসে প্রযুক্ত হয় না। তাই তার সংঘশক্তি নেই, ব্যবহারিক জীবনের উন্নয়নে বুদ্ধির অবদান গ্রহণে সে অক্ষম। ১০
১০. ভাবপ্রবণ বলেই বাঙালী মুখে আদর্শবাদী ও বৈরাগ্যধর্মী; কিন্তু প্রবৃত্তিতে সে একান্তভাবে অধ্যাত্মবাদীর ভাষায় ‘বস্তুবাদী’, গণভাষায় ‘জীবনবাদী’ এবং নীতিবিদদের ভাষায় ‘ভোগবাদী’। এজন্যে বাঙলাদেশে জীবনবাদ বা ভোগবাদ অধ্যাত্মচিন্তার উপর বারবার জয়ী হয়েছে।… বাঙলার ও বাঙালীর যা গৌরব-গর্বের অবদান, তা সবসময়েই ছিল ব্যক্তিক অবদান, সামগ্রিক জীবনে তা ক¦চিৎ ফলপ্রসূ হয়েছে। তাই বাঙালী মহৎ পুরুষদের মহা অবদানের ফলভোগে ধন্য হতে পারেনি। এই বাঙলাদেশেই চিরকাল নতুন চিন্তা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু লালন পেয়েছে সামান্য। তবু যখন আমরা স্মরণ করি এই মাটির বুকেই- এই মানুষের মনোভূমেই উপ্ত হয়েছিল বজ্রযান, সহজ যান, কালচক্রযান, কায়াবাদ, নবন্যায়, নবস্মৃতি, নবপ্রেমবাদ ওয়াহাবী-ফরায়েজী মতবাদ কিংবা ব্রাহ্মদর্শন; তখন গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠে। আবার যখন স্মরণ করি, মীননাথ, গোরক্ষনাথ, দীপঙ্কর, শীলভদ্র, জীমূতবাহন, রামনাথ, রঘুনাথ, চৈতন্যদেব, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, তীতুমীর, শরীয়তুল্লাহ্, দুদু মিয়া, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এদেশেরই সন্তান, তখনো নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।১১
১১. কিন্তু শুধু বিশ্বাস নিয়েই সংসার, জগৎধর্ম চলে না। তার কাজ চাই। আর সেজন্য চাই আমাদের সংঘশক্তি। কোনো এক সমালোচক বলেছিলেন- বাঙালি বালির ন্যায় একত্রে বাস করে কিন্তু মাটির (এঁটেলমাটি, এঁটেলমাটি দ্বারাই কুমারেরা মৃৎশিল্প
তৈরি করে) মত ঘনীভূত হতে পারেনা। ড. আহমদ শরীফ এই বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এই ভাষায়:
বাঙলার কোন সংঘশক্তি নেই। তবু বাঙলার চিন্তার স্বকীয়তা, মানস স্বাতন্ত্র্য ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কখনো অবলুপ্ত হয়নি এবং তা একাধারে লজ্জার ও গৌরবের।১২
১২. সে (বাঙালী) তর্ক করে, যুক্তি মানে, কিন্তু হৃদয়বেদ্য না হলে সে জীবনে আচরণ করেনা। তাই সে বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ্য ও ইসলাম ধর্ম মুখে যতটা গ্রহণ করেছে, অন্তরে ততটা মানেনি। সে তার জীবন ও জীবিকার অনুকূল করে রূপান্তরিত করেছে ধর্মকে। এভাবে দেশে লৌকিক ধর্মই কালে কালে বাঙালীর জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে।১৩
১৩. বাঙালীর স্বাধীনতাপ্রীতি, স্বাজাত্যবোধ ও সঙ্ঘশক্তির সাক্ষ্য নগণ্য বটে, কিন্তু তার মাটি ও মর্ত্যপ্রীতি সর্বত্র সুপ্রকট।১৪
১৪. আমরা জানি দাসত্বে ও আনুগত্যে মানুষের সত্তার মূল্য-মর্যাদাবোধ বিলুপ্ত কিংবা শীতকালীন ওষধিগুল্মের মত অদৃশ্যে সুপ্ত থাকে। বাঙালীরও ছিল তাই। তার চরিত্রে চাটুকারিতা স্তুতি-প্রশস্তি প্রবণতা বেশি, আর সম্ভবত আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে আত্মনির্ভর হয়ে স্বাধীনচেতনা-চিন্তা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ প্রজন্মক্রমে না থাকায় সে কর্মকুণ্ঠ হয়ে পড়েছিল, অথচ ভোগ-উপভোগ সম্ভোগস্পৃহা কিংবা লিপ্সা ছিল অটুট। এমন মানুষ সাধারণভাবে কৃপা-করুণা-দয়া-দান-দাক্ষিণ্যে প্রত্যাশী হয়ে স্তাবকতায় চাটুকারিতায় সেবায় আনুগত্যে অভ্যস্ত হয়। আর এভাবে চরিত্র তথা আত্মসম্মানবোধ বিনষ্ট বলেই মিথ্যা-ভাষণে, চুরিতে, ঠকাঠকিতে আর ভিক্ষাবৃত্তিতে তার কোন শরম সংকোচ ছিলনা। গরীবেরা অসুয়াগ্রস্ত আর কোন্দলে হয়। বাঙালীর মিথ্যা ভাষণের, কোন্দল প্রবণতার, চুরির এবং প্রতারণার কাহিনী দেশী ও বিদেশী পর্যটক থেকে ব্রিটিশ প্রশাসক অবধি সবাই অল্প বিস্তর বলে গেছেন বিগত পাঁচ/ছয়শ বছর ধরে।
যেমন : ১. তোমেপিয়েস-এর ১৫১১-১৫ খ্রীস্টাব্দের অভিজ্ঞতা : ‘বাঙালীরা বড় বণিকের জাত এবং খুব স্বাধীন প্রকৃতির। ব্যবসায়ের মধ্যে তারা মানুষ হয়। সব ব্যবসায়ীই অসৎ All the marchants are false)… কোন লোককে অপমান করতে হলে তাকে ‘বাঙালী’ বলা হয়। (এখনও ‘শালা বাঙ্গাল কোথাকার’ বলে গালি দেওয়ার রেওয়াজ আছে)। তারা অত্যন্ত বিশ্বাসঘাতক। তারা খুবই তীক্ষèবুদ্ধি। মালাক্কায় অনেক বাঙালী পুরুষ ও নারী থাকে। পুরুষদের অধিকাংশই জেলে ও দর্জির কাজ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব খারাপ কাজ করে।১৫
১৫. গোলাম হোসেন সেলিম রচিত ফার্সি পুস্তক রিয়াজুস সালাতিন (১৭৮৮) শীর্ষক গ্রন্থেও ইংরেজি তরজমা (আবদুস সালামকৃত) থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন আহমদ শরীফ, সংস্কৃতি গ্রন্থে : But in affairs relating bargains giving and taking and purchases and sales and other worldly matters, no race in all the four quarters of the globe is equal to the Bangalees in wicketness, duplicity, Knavery and villainy, they do not consider loans repayable and the promises which they pledged to perform in one day, they do not fulfil in one year.১৬
১৬. বাংলার জাগরণের অন্যতম কর্ণধার, বাঙালি মনীষী রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩)ও বাঙালির চরিত্র সম্পর্কে সদর্থক মন্তব্য লিপিবদ্ধ করতে পারেননি। আহমদ শরীফ সংস্কৃতি শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ইংরেজিতে লেখা সেই উক্তিটি : As regards physical, upon the whole inferior to the modern nations… a great portions of these are inferior in character to the former class and are very often met tools of the neferious of verjery and foregery.১৭
১৭. আহমদ শরীফ যে কেবল বাঙালির নিন্দনীয় দিকগুলোকে চিহ্নিত করেছেন, তাই নয়, তার ভাল গুণের কদর করেছেন, প্রশংসাও করেছেন এই বলে যে :
তবে বাঙালীর প্রশংসাও রয়েছে। প্রাচীন বাঙলার খবর আমাদের জানা নেই। তবে গত হাজার বছরের বাঙালীর সাহিত্য শিল্প-ব্যাকরণ-অলঙ্কার স্থাপত্য ভাস্কর্য-চর্চায় অনেক উচুঁ মানের নিদর্শনও মেলে…(সেইসব নিদর্শন অবলম্বনে আহমদ শরীফ প্রায় পঞ্চাশটি গ্রন্থ সম্পাদনা ও রচনা করেছেন, সেজন্য এখানে তার আলোচনা করা হলো না)।১৮
১৮. রাজনীতি-করা আধুনিক হিন্দু ও মুসলমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে তিনি লিখেছেন :
রাজনীতিক্ষেত্রে শ্রেয়োবাদী উদারপন্থী হিন্দু মুসলিমরা যতই এক জাতিত্বের বা একক জাতীয়তার কথা বলুন না কেন, বাস্তবে ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু কেবল হিন্দু হয়েছিলেন, হয়েছিলেন হিন্দু উজ্জীবনবাদী। আর মুসলমানরাও হয়েছিলেন বিশ্বমুসলিম ভ্রাতৃত্বচেতনা পুষ্ট হয়ে স্বদেশে পরবাসী। কেননা মনের মিল বা মতের অভিন্নতা ছিলনা, হিন্দুরচিত মধ্যযুগের ও আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে মুসলিমদের প্রতি ক্ষোভ, বিদ্বেষ, নিন্দা ও অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছিল। সেজন্য শিক্ষিত দেশজ মুসলমান বাঙলা ভাষার পরিবর্তে উর্দুকেই বরণ করতে চেয়েছিল।
এমনি বক্তব্য আহমদ শরীফের রচনায় বারবার এসেছে। সব উদ্ধৃত করা সম্ভব নয়। তবে এ প্রসঙ্গে ড. আহমদ শরীফের আর মাত্র একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে উপসংহারে যাব। যেমন তিনি নিজেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ বলেছেন :
বৈরাগ্য-প্রবণ জৈন বৌদ্ধ বৈষ্ণব মতবাদ বাঙালিচিত্তে কর্মকুণ্ঠা আরও প্রবল করেছে। এমন মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি বা চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করে। বাঙালী চরিত্রে যে, একদিকে মিথ্যাভাষণ, প্রবঞ্চনা, চৌর্য, ছদ্মবৈরাগ্যভাব, চাতুর্য, সুবিধাবাদ এবং সুযোগসন্ধান তোঁয়াজ ও তদ্বিরপ্রবণতা প্রভৃতির প্রাবল্য এবং আত্মসম্মানবোধের অভাব, অন্যদিকে জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে যে দেবানুগ্রহজীবিতা রয়েছে, তা ঐ কর্মকুণ্ঠারই প্রসূন। তাই বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যযুগে আমরা বাঙালীকে কেবল তুক্-তাক, দারু- উচাটন, ঝাড়-ফুক, বাণ-মারণ, বশীকরণ, কবচ-মাদুলি, যোগতন্ত্র ও ডাকিনী যোগিনী নির্ভর দেখতে পাই। তার সাহিত্যে পাই দেবতার স্তুতি ও মাহাত্ম্যকীর্তন। তার গানে গাথায় পাই বৈরাগ্যমহিমা ও পারত্রিক চেতনা। চিরকাল বিদেশী শাসন-শোষণের ফলে স্বাধীনভাবে আত্মবিকাশের সুযোগ মেলেনি বলেই হয়তো বঞ্চিত দরিদ্রের নিঃস্ব জীবনে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভের এ-প্রয়াস; দৈবশক্তির সাহায্যে অলৌকিক উপায়ে বাঞ্ছাসিদ্ধির ও প্রয়োজনপূর্তির এই আগ্রহ এবং বাঁচার তাগিদেই অনন্যোপায় মানুষের ভিক্ষাবৃত্তি, মিথ্যার আশ্রয় ও প্রতারণার পথ বরণ আবশ্যিক হয়েছে।২০
আড়াই হাজার বছর ধরে নির্জিত, শাসিত, শোষিত দরিদ্র অসহায় বাঙালি বাঁচার তাগিদে নানা অসৎ অমহৎ পন্থা অবলম্বন করলেও তাদের চরিত্রে নানা দুর্যোগের পরেও যে জেগে ওঠার বা বিপদে দুর্যোগে বেতস-লতার ন্যায় টিকে থাকার প্রাণশক্তি ও সৃজনশীলতা এবং বিদ্রোহ-বিপ্লব এবং সংগ্রামের আকাক্সক্ষা রয়েছে সেই গুণের ও সেইসব সংগ্রামও বেঁচে-জেগে-ওঠার আর বিদ্রোহ ও বিপ্লবের পটভূমি, কাহিনীও আহমদ শরীফ তাঁর রচনাবলিতে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন।
তিনি যতো শ্রম দিয়ে বাঙালির নিন্দনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ উদ্ঘাটন করেছেন, ততোধিক শক্তি-প্রয়োগে নিজেকে মেরুদণ্ড সম্পন্ন বাঙালিরূপে প্রতিষ্ঠার অনুধ্যান অনুশীলন করে গিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন যে, একটি নৃতাত্ত্বিকভাবে নিম্ন স্তরের স্বভাববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতির মানুষও কীভাবে উন্নত, উচ্চতর সাংস্কৃতিক চেতনার পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারে। তাই তিনি সুযোগ পেলেই চাঁদ সদাগরের দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের মহিমা কীর্তন করেছেন। কর্নেল তাহেরের বীরত্বপূর্ণ বিপ্লবকে প্রশংসা করেছেন। সকল শিল্পী-সাহিত্যিকের স্বতন্ত্র, উন্নত মেজাজের চরিত্রের স্বাতন্ত্র্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেসব আমাদের পাঠক-সকলের দৃষ্টির গোচরে এনেছেন। করেছেন কীজন্য তারও বিবরণ আহমদ শরীফ নিজেই দিয়ে গিয়েছেন :
ইতিহাস-চেতনা দিয়ে যদি আমরা উদ্বুদ্ধ হতে চাই, তাহলে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে আমাদের। সেজন্য আমাদের বুঝতে হবে যে, আমরা একটা নির্জিত জাতি, আমরা একটা পীড়িত জাতি। আমরা দুই হাজার বছর বিজাতি, বিভাষী, বিদেশিদের দ্বারা পীড়িত হয়েছি, নির্জিত হয়েছি। আমাদের স্বগোত্র স্বজাতি আজও নিরন্ন, নিপীড়িত নিম্নবিত্ত ও মানবিক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে- হাড়ি ডোম মুচি মেথর বাগদিরাই আমাদের স্বগোত্র, স্বজাতি, আমাদের ভাই। আমাদের দেহে তাদেরই রক্তের ধারা বহমান। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, সাঁওতাল, কুচ, গারো, খাসিয়া, চাকমা আমাদের ভাই। আমরা যারা আমাদের গোত্র পরিচয় মুছে দিয়ে আমাদের জাতি-পরিচয় লুকিয়ে বিদেশী, বিভাষী, বিজাতি শাসকশ্রেণীতে মিশে যেতে চেয়েছি, শাসকের সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ করেছি, আত্মপ্রবঞ্চনা করেছি- তার জন্য আমাদের দুর্দশা ভোগ করতে হয়েছে, আজও হচ্ছে। এটা আমাদেও উপলব্ধিতে না আসলে ইতিহাস চর্চা অর্থহীন।… বাঙালিকে মানুষ হতে হলে আত্মসম্মানবোধ এবং স্বাধীন মানুষের চেতনা অর্জন করতে হবে। মুনাফেকের স্বভাব ত্যাগ করে…. মেরুদ- ঋজু করে দাঁড়াতে হবে। বাঙালির চাই চরিত্র, চাই মনুষ্যত্ব, চাই মহত্ত্ব, চাই আদর্শপরায়ণতা, চাই মহৎ ও সুন্দরের জন্য সাধনা ও সংগ্রাম। এসব অর্জনের চেষ্টা করলে বাঙালির সুপ্তশক্তি, অবদমিত শক্তি, আড়াই হাজার বছরের অবদমিত শক্তি জেগে উঠবে। বাঙালি পৃথিবীর বুকে মানুষ হয়ে দাঁড়াবে- প্রকৃত আত্মপরিচয় ঘোষণা করবে। তখন পৃথিবীকে জানাবার মতো একটা নতুন বাণী নিয়ে বাঙালী দাঁড়াবে।২১
প্রকৃতপক্ষে বাঙালি ও বাংলাদেশ অনুন্নত কেন, এবং উন্নতির উপায় কী? এসব যদি জানতে না চায় এখনও, এখনও তা না-ভাবে, তাহলে জাগ্রত, উন্নত, মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রশক্তিসমূহের শোষণ নিষ্পেষণে বাঙালি ও বাংলাদেশ এক সময় হয়ত হারিয়ে যাবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাঙালির মধ্যে যে-আত্মসম্মানবোধের জাগরণ সূচিত হয়েছে, তাতে আশাবাদী হতে চাইলে নিরাশ হবারও কারণ নেই।#
তথ্যনির্দেশ
১. সম্পাদক : আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাঈদ-উর-রহমান প্রমুখ, কনভয়, ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি (সুকান্ত একাডেমীর সেমিনারভিত্তিক সংকলন), ঢাকা, ১৯৭৮, পৃ. ৬৫
২. পূর্বোক্ত, পৃ. ৬২
৩. পূর্বোক্ত, পৃ. ৫৪
৪. পূর্বোক্ত, পৃ. ৫৮-৫৯
৫. পূর্বোক্ত, পৃ. ৫৫-৫৭
৬. বৈশিষ্ট্যগুলো কনভয় ও সংস্কৃতি থেকে সংক্ষেপে নিজের মত করে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটোই আহমদ শরীফের বক্তৃতা বা আলোচনা। সংস্কৃতি পুস্তকাকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করে ১৯৯২ সনে।
৭. আহমদ শরীফ, বাঙলা বাঙালী বাঙলীত্ব, কলকাতা (সাহিত্যলোক), ১৯৯২, পৃ.১৯ এবং বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য, ঢাকা, ১৯৮২ (অষ্টাদশতম অধ্যায় বা উপসংহারের ‘লোক-চরিত্র’ অংশ দ্রষ্টব্য), পৃ. ১০৫৪-৫৭
৮. আহমদ শরীফ, নির্বাচিত প্রবন্ধ, ঢাকা, ১৯৯৯, পৃ. ৪১
৯. পূর্বোক্ত, পৃ. ৪১-৪২
১০. পূর্বোক্ত
১১. পূর্বোক্ত, পৃ. ৪১-৪৩
১২. কনভয়, পূর্বোক্ত, পৃ. ৬২ ও নির্বাচিত প্রবন্ধ, পূর্বোক্ত, পৃ. ৪১-৪৫ এবং বাঙলা বাঙালী বাঙালীত্ব, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৩
১৩. বাঙলা বাঙালী বাঙালীত্ব, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৩-১৪
১৪. পূর্বোক্ত
১৫. সংস্কৃতি, পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৬-৭৭ । সুখময় মুখোপাধ্যায় প্রণীত বাঙলার ইতিহাসের দুশো বছর শীর্ষক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত।
১৬. সংস্কৃতি, পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৭
১৭. পূর্বোক্ত
১৮. পূর্বোক্ত
১৯. বাঙলার বিপ্লবী পটভূমি, কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা, কর্নেল তাহের সংসদ, ঢাকা, ১৯৮৯, পৃ. ১৯
২০. বাঙলা বাঙালী বাঙালীত্ব, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৯
২১. কনভয়, পূর্বোক্ত, পৃ. ৬২
উল্লেখ্য, আহমদ শরীফের প্রথম দিককার রচনায় বাঙালির চরিত্র সম্পর্কে ‘ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি’ শীর্ষক সেমিনারে ‘বাঙলাদেশের সংস্কৃতি’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ওজস্বী ভাষায় সেদিন যে ভাষণ তিনি দেন, তাতেই প্রথম বাঙালির চরিত্র সম্পর্কে তীক্ষ্ন শরের মতো তিনি এই উক্তিগুলো করেছিলেন এবং তাঁর এই বক্তৃতা সেদিন শ্রোতৃম-লীর চিত্তে আলোড়ন তুলেছিল এবং বহুদিন ধরে এই বক্তব্যের জন্য আহমদ শরীফ আলোচিত বিতর্কিত হয়েছিলেন। ঐ বক্তব্য ছিল তাঁর সারাজীবনের গবেষণারই প্রসূন । এই গবেষণালব্ধ জ্ঞানই তিনি সুশৃঙ্খলভাবে প্রথম সংযোজন করেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বাঙালি ও বাঙলা সাহিত্য শীর্ষক গ্রন্থে।
ইসরাইল খান, গবেষক ও প্রাবন্ধিক