সালাহউদ্দীন আইয়ুব:
[২০১২ বা তারও আগে লিখিত এ লেখার প্রথম বাক্য পড়ে পাঠক প্রতিহত হতে পারেন─তার কারণ এই দীর্ঘ বাক্যটি আমি, ইচ্ছাকৃতভাবে, কমলকুমারের স্টাইলে লিখেছিলাম। তবে পার্থক্য এই যে, লম্বা হলেও আমার নিরীক্ষামূলক বাক্য অসম্পূর্ণ না, বিশেষ্যাদি ও ক্রিয়ার অন্বয় এতে পরিষ্কার এবং, কয়েকটি কমার কমতি সত্ত্বেও, আদৌ ব্যাকরণ-বিরুদ্ধ নয়।─সা.আ.]
নির্মাল্য আচার্যের ‘এক্ষণ’-এ প্রকাশিত কমলকুমারের রু´িণীকুমার (১৯৬৮) গল্পটির মূল নায়ক উগ্র ‘স্বদেশি’-মন্ত্রে দীক্ষিত, উপেনের হত্যাকারী, বেপরোয়া বিপ্লবী যুবক, “রু´িণী”র পুলিশের হাতে যে- কোনো-মুহূর্তে নিশ্চিত ধরা পড়ার ভয়ানক আতঙ্কে দিশেহারা হবার পর, এবং গল্পের শেষে সত্য-সত্যই ‘কলিকাতার রাস্তায় রাইফেলের গুলিতে’ নিহত হবার আগে পর্যন্ত, তার সংক্ষিপ্ত বিনষ্ট জীবনের মত এক রাশ বিক্ষিপ্ত, বিপরীতধর্মী, ঘটনার একটানা আবর্তে (লাটাই-সমেত নিরুদ্দেশ ঘুড়ির মত) গোত্তা খেতে খেতে, নষ্ট হতে হতে, এক বেগমের গতর ছেড়ে আরেক বারবনিতার ক্রোড়ে আশ্রয়গ্রহণের মতন একটি হত্যা শেষ করে আরেকটি হত্যার নেশা, চক্রান্ত ও পরিকল্পনায়─তার সময়কার আরও বহু গুপ্ত সন্ত্রাসবাদীর অনুরূপ─নিজের ‘বি এ পাশ’ জীবনটাকে তুচ্ছ কীট-পতঙ্গের মত খামোখা খুইয়ে ফেলার সেই কাহিনী যা, হত্যা রক্তপাত ব্রিটিশ সরকারের নিগ্রহ পুলিশি নির্যাতন ফাঁসি কারাবরণ স্বাধীনতার সংগ্রাম মুক্তিলাভের প্রতিজ্ঞা আত্মবিসর্জন প্রভৃতি অনেকানেক স্মরণীয় আত্মত্যাগের অনুষঙ্গবহুলতা সত্ত্বেও, আমাদের মত পাঠকের মনে, ‘রু´িণী’ বা ‘রু´িণী-সদৃশ’ মত যুবকের জন্য করুণা বা সহানুভূতি দূরে থাক, সামান্য শোক বা দুঃখেরও উদ্রেক করে না। ‘রু´িণী’ চরিত্রে আগ্রহ জাগে না, তার কাহিনী করুণার অযোগ্য, দুঃখের অযোগ্য─বার বার পড়েও এই প্রতিক্রিয়া পাঠকের অপরিবর্তিত থাকে। ‘রু´িণী’র জীবনের করুণ পরিণতি যে আমাদের মনে করুণা জাগায় না, এই ‘না’ ব্যাপারটাই ‘রু´িণীকুমার’ গল্পের টেকনিক, এই ‘না’-জাগানোর মধ্যেই এই গল্পের সফলতা নিহিত।
এক
রু´িণী নিয়ে পাঠক-মনে কোনো প্রতিক্রিয়াই যাতে না হয় এবং রু´িণীর প্রতি কোনরকম সহানুভূতি যেন না জাগে, সেটাই ছিল কমলকুমারের সচেতন অভিপ্রায়। অর্থাৎ ‘রু´িণী’র মত একজন ব্যর্থ যুবকের বিনষ্ট জীবনকে বিশদভাবে, প্রামাণিক পন্থায়, সামাজিক কার্যকারণসূত্র-সমেত উপস্থাপন করা ‘রু´িণীকুমার’ (১৯৬৮) গল্পের লক্ষ্য না। কারণ ‘রু´িণীকুমার’ হলো সেই গল্প যেখানে গল্পকারকে কিছুই প্রমাণ করতে হয় না, অথচ সবই প্রমাণিত হয়ে যায়। ‘রু´িণী’র জীবনের অপচয় ও করুণার-অযোগ্য পরিণতি, পাঠকের চোখে অনেকটা প্রাকৃতিক ব্যাপারের মত প্রতিভাত হয়; তাতে গল্পকারের হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় বিধায় তা মোটামুটি অনুপস্থিত। গল্পের শেষে এই বিপ্লবী যুবক নিহত হয়েছে বটে, কিন্তু সেই মৃত্যু দৈনিক কাগজের মফস্বলী বার্তার মতো উল্লেখিত, অর্থাৎ তা যেন রু´িণীর নিজের কাছেই ‘সংবাদ’ হতে পারে নি, ফলে আমাদের মতো পাঠকের কাছেও তা তাৎপর্যহীন । প্রথমবার পড়ার সময় রু´িণীর মৃত্যুসংবাদ-সম্বলিত গল্পের শেষ বাক্যটি আমার চোখেই পড়ে নি: ‘প্রকাশ থাক, রু´িণীকুমারের এই কলিকাতার রাস্তায় রাইফেলের গুলিতেই মৃত্যু ঘটে’ ([১৯৬৮] ১৯৯০: ১৯০)। রু´িণীর গল্প যে রু´িণীর মৃত্যুর অনেক আগেই সমাপ্ত হয়েছে, এই বাক্যটি তা মনে করিয়ে দেয়। ‘রু´িণী’র মৃত্যু আর ‘রু´িণীকুমার’-গল্পের বিষয় যে এক নয়, শেষ বাক্যটিতে তারই ইঙ্গিত।
‘রু´িণী’র মৃত্যু, অতএব, ‘রু´িণীকুমার’-গল্পের বিষয় না। বিষয় নিয়ে কথা বলার আগে, গল্পটি একেবারে গোড়া থেকে অনুসরণ করা জরুরি। তার কারণ ‘রু´িণীকুমার’Ñগল্পের আখ্যানের ভিতর অজস্র ছিন্ন ঘটনার ক্রমাগত উৎক্ষেপ ঘটেছে যেগুলো ‘রু´িণী’র জীবন ও চরিত্রের মতই অসংবদ্ধ, বিক্ষিপ্ত। অর্থাৎ, ‘রু´িণী’র জীবন অসংবদ্ধ বলে, সেই জীবনের উপস্থাপনও, টেকনিকের দাবিতে, অসংবদ্ধ। অসংবদ্ধ জীবন সুসংবদ্ধ কাহিনীরূপে উপস্থাপিত হলে তা পুঁথিঘরের নোট হয়ে যেত, আধুনিক গল্প হত না। ‘রু´িণী’র জীবনের নৈরাজ্য এবং ‘রু´িণীকুমার’Ñগল্পে ঘটনার নৈরাজ্য দুটোই প্যারালাল, একটা আরেকটার উপর নির্ভরশীল: এই দুইÑপ্রকার নৈরাজ্যের ‘সমান্তরালতা’ প্রদর্শন এই গল্পের একটি আধুনিক টেকনিক।
‘স্বদেশী’-করা বিপ্লবীদের কাহিনীর অভাব নেই ইতিহাসের বইতে, কিন্তু টীকাটীপ্পনি-যুক্ত এই গল্পের ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকলেও একটা বাস্তব চরিত্র নিয়ে বিধিবদ্ধভাবে, বাস্তব-নির্ভর, ইতিহাস-সম্মত, গল্প রচনায় রূপকথা ও ফোকলোরে আকৃষ্ট রোমান্টিক কমলকুমারের উৎসাহ থাকতে পারে না।
সেরকম ঐতিহাসিক গল্পের বদলে কমলকুমার লিখতে চেয়েছেন একটা ‘রিয়ালিস্ট’ গল্প। ফলে, রিয়ালিজমের আনুগত্য গল্পের রীতিতে ও কাহিনীর পরিচর্যায় কোন্ ধরনের রূপান্তর অনিবার্য করে তোলে, ‘রু´িণীকুমার’ গল্পে তারই পরীক্ষা।
দুই
সে ঘাটের একান্তে এই বিরাট মায়াময় সুন্দরী শহরের প্রতি তাকাইল, নেড়ি কুত্তা হইতে ভিখারী, ঠগ বঞ্চক যেখানে সুন্দর, এখানে কেরানীর মত স্ত্রীর শাড়ী পরিয়া রবিবারে দুপুরের ঘুমে আচ্ছন্ন হইতেই চাহে, অন্য শহর তাহার নিকট ভীতিপ্রদ, এখানে রমনীর গোপনতা…
রু´িণীকুমার ([১৯৬৮] ১৯৯০ : ১৮৬)
রু´িণীর বিশৃঙ্খল জীবনের বিশ্বস্ত দর্পণ হতে গিয়ে এ গল্পের ঘটনাগুলোতেও অনুরূপ বিশৃঙ্খলার উপদ্রব; এখানেও, রু´িণীর জীবনের মতই, আতঙ্ক, দুঃস্বপ্ন, স্মৃতি ও ঘটনার অসহ্য, পৌর্ব্বাপর্য্যহীন, অরাজকতা। তবে, বার বার পাঠ করার পর, ‘রু´িণীকুমার’ (১৯৬৮)-গল্পে বিবৃত কাহিনীসূত্রের নি¤েœাক্ত অনুসরণযোগ্য পাঠ তৈরি করা সম্ভব:
স্বদেশী আন্দোলনের সময় বিএ পাশ যুবক রু´িণী, ‘মুক্তিকামী ভারতের প্রতীক’ রামানন্দ বসুর বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষা গ্রহণের পর, ‘রাজেন’-এর মতন রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা ও বিবিধ গোপন ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায় এবং অনতিবিলম্বে, চাঁদপুর থেকে কলিকাতায় আগত ‘ইনফর্মার’ উপেন-কে, নিজের হাতে, গুলি করে হত্যা করে। উপেনও রু´িণীর মত ‘স্বদেশী’ করা রাজনৈতিক কর্মী, কিন্তু ইংরেজ প্রশাসন, পুলিশ ও বড় কর্তাদের সঙ্গে সংশ্রববশত: তাদেরই আশ্বাসÑভরসার জোরে বিলাত-যাত্রার স্বপ্ন এবং অতি-সহজে আইসিএস পরীক্ষা পাশের প্রলোভন, এবং অসুস্থ পিতাকে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে প্রতিমাসে মানি অর্ডারে পঞ্চাশ টাকার প্রেরণের বন্দোবস্ত হওয়ায়, এই উপেন─দরিদ্র, গ্রাম্য, ভাগ্যান্বেষী, বেকুব, যুবক─পুলিশের ‘ইনফর্মার’ হিসেবে নাম লিখিয়েছিল।
উপেন, ‘রু´িণী’র মতন তার পরিচিত ‘স্বদেশী’ কর্মীদের বিরুদ্ধে, ইংরেজের আদালতে ‘রাজসাক্ষী’ হবে, এরকম গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে। পুলিশের ‘ইনফর্মার’ হবার কারণে এবং আদালতে ব্রিটিশরাজের ‘রাজসাক্ষী’ হবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায়, উপেনের হাতে টাকা-পয়সা আসার বিবিধ বাহ্য লক্ষ্মণ রু´িণী আবিষ্কার করে ফেলে, যেমন: চাঁদপুরের উপেন ‘আড়াই টাকা’ দিয়ে ‘চমৎকার মাদ্রাজী সান্ডেলস’ ও ‘আন্ডার উইয়ার’ ক্রয় করেছে, সিগারেট ফুঁকছে; তার হাতে শোভা পাচ্ছে দু-চারখানা ‘রেফারেন্স বই’, এমনকি মাস-অন্তে চাঁদপুরে, বাপের ঠিকানায়, নিয়মিত টাকা-পয়সাও পাঠাচ্ছে ([১৯৬৮] ১৯৯০: ১৮২)। উপেনের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে হিংসা এবং, ‘বৈষয়িক লাভের নিমিত্ত’, তার বিশ্বাসঘাতকতায় ক্রুদ্ধ হয়ে রু´িণী উপেনকে একটি ঘরের মধ্যে, ঠান্ডা মাথায়, খুন করে। এর আগে রু´িণী আরেকটি হত্যাকা- ও অপরাপর ষড়যন্ত্রমূলক কর্মে জড়িত ছিল; তবে পূর্বোক্ত ‘রাজেন’কে সে, খুব সম্ভবত, সরাসরি খুন করে নাই।
উপেন-কে স্বহস্তে সরাসরি খুন করার পর থেকেই রু´িণীর সন্ত্রস্ত্র, বিপদসংকুল, স্থায়ীভাবে পলাতক জীবনের সূচনা। স্বহস্তে মনুষ্যহত্যার প্রতিক্রিয়ায় রু´িণীর স্বভাব, আচরণ, মনোবৃত্তি আমূল পাল্টে যায়; এক বিধবা, ধর্মাচারনিষ্ঠ, জননীর একমাত্র পুত্র রু´িণীকুমার─যার মামা ‘জসটিস্ কিরণ এস মুখার্জি কে-সি-এস-আই’, যে ‘ব্রাহ্মণ’ মামার বৃহৎ প্রাসাদে ‘ফ্লাগ মাষ্ট ও নানা আকারের ইউনিয়ন জ্যাক সযতেœ রক্ষিত’ (১৯৯০: ১৮৬)─ সেই ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভব রু´িণী স্বহস্তে মনুষ্যহত্যার কারণে আজ ফেরারী আসামী। শৈশবের সরলতা, নিষ্কলুষ মন, পাপবোধ ইত্যাদি অন্তর্নিহিত হবার কারণে উচ্চতম ব্রাহ্মণ বর্ণের এই বি.এ.-পাশ বিপ্লবীর সঙ্গে অন্য দাগী অপরাধীদের পার্থক্য লুপ্ত হতে থাকে। অতীতে গোবিন্দবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী, ‘লোকলজ্জা’র বালাইহীন, সরলাকে ‘কলতলায় অনাবৃত দেহে ¯œান’ করতে দেখলে এই রু´িণী লজ্জায় অধোমুখ ও নির্বাক হয়ে যেত; ‘স্কুলের পেচ্ছাপখানায় কুৎসিত’ লিখন-এর প্রতি দৃষ্টিপাতকেও তার মনে হত ‘পাপাত্মক’। রু´িণীর তখনও ‘অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষালাভ হয় নাই’; সতীশের মতন শরৎচন্দ্রীয় নায়কদের মত ‘ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক’ই ছিল ব্রাহ্মণ বালক রু´িণীকুমারের রুটিন।
সে সব অতীতের কথা। রু´িণী এখন মনুষ্যহত্যায় হাত পাকিয়েছে, উপেনের ‘প্রোচ্ছলিত রক্ততরঙ্গ’ ও ‘পিচকারী রক্তধারা’ দর্শনের পর থেকে জঘন্যতম অপরাধে সে অভ্যস্ত। তার চরিত্রের বিপর্যয় ও তজ্জাত মানসিক পরিবর্তন মোটামুটি সম্পূর্ণ। সুতরাং আলোচ্য গল্প, ‘রু´িণীকুমার’, মূলত উপেন-হত্যা-পরবর্তী ও সর্বার্থে পরিবর্তিত রু´িণীর পতন, চারিত্রিক অবক্ষয়, বিকার ও অভিশপ্ত জীবনের আলেখ্য। এ কারণে, ‘কলিকাতার রাস্তা’য় রাইফেলের গুলিতে মারা পড়ার আগে পর্যন্ত, অনুক্ষণ পুলিশে ধরা পড়ার আতঙ্ক, সার্বক্ষণিক ভয় এবং বিবিধ-প্রকার দুঃসহ স্মৃতি আর দু:স্বপ্নের হামলা থেকে পলাতক রু´িণীর অব্যাহতি মেলে না।
রু´িণীর জীবন শুধু অভিশপ্ত নয়, সম্পূর্ণ বিকারগ্রস্ত। ঠান্ডা মস্তিষ্কে মনুষ্য-হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এই বিকারগ্রস্ততার শুরু। ফলে ‘লণ্ঠনের আলোয়’ উপেনের রক্ত দেখে রু´িণী ‘অপার্থিব কামভাব অনুভব’ করে; উপেনকে গুলি করে হত্যার পর চাঁদপুর থেকে পাঠানো উপেনের দরিদ্র ও অসুস্থ পিতার পোস্টকার্ডটি সে দেখে, কিন্তু উপেনের মৃতদেহের ‘শীর্ণ মুখখানি’র জন্যে বিকৃতমন রু´িণীর করুণা না হয়ে তার ক্রোধ আরো বেড়ে যায়, এবং ক্রোধ-নিরসনের জন্যে সে লণ্ঠন লক্ষ্য করে আবার গুলি ছোঁড়ে। ক্রোধের কারণ হলো: ওকে হত্যা করার পর ‘কলিকাতা নিষ্পেষিত’ (অর্থাৎ জীবন-সংগ্রামে বিধ্বস্ত) উপেনের মুখ ও তার পিতার পোস্টকার্ড প্রভৃতি দেখে রু´িণীর বুঝে যায় উপেন ছিল একটা দরিদ্র ঘরের সাধারণ হাবা-গোবা ‘অতীব গ্রাম্য’ ছেলে। ওরকম গাঁইয়া একটা ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলার মধ্যে কাপুরুষতা আছে, কিন্তু বীরত্ব নাই, সেজন্যে রু´িণীর এই রাগ। আমার এই সরল ভাষ্য থেকে কেউ যদি মনে করেন গল্পটির বিবরণ, অথবা ঘটনাক্রম, ওরকম স্বচ্ছ, তাহলে ভুল করবেন।
সময়ের দিক থেকে ‘রাজেন’-হত্যার ঘটনা, ‘উপেন’-হত্যার পূর্ববর্তী। রাজেন-হত্যার সঙ্গে যেহেতু রু´িণীও জড়িত ছিল, সেজন্যে, এক অর্থে, তখন থেকেই তার অধঃপতনের সূত্রপাত। বিকারগ্রস্ততারও। রু´িণী যাদেরই সংস্পর্শে এসেছে─একমাত্র তার মা ‘গঙ্গামণি’ ব্যতীত─তারা সবাই ভ-, কপট, পতিতা, বেজন্মা ‘ফণী’র মত বেশ্যার দালাল, ‘আবির মাখা মুখে’ নির্বিকারচিত্তে পেচ্ছাবরত ‘বয়সী খানকি’, যাদের ‘হাস্যধ্বনিতে আপন গতরের শব্দ’; যাদের দৃষ্টিপাত ও চক্ষের আন্দোলনে ‘পুরুষের উরু উচাটন’ (১৯৯০: ১৮০-১৮১) হয়। বিকৃতমস্তিষ্ক হবার কারণে, ‘কলিকাতা’র মত ‘একটি নয়নাভিরাম মায়াময় গভীর নগর’কে, রু´িণী ‘যন্ত্রের মত ব্যবহার’ (১৯৯০: ১৭১) করে চলে, পার্শ্ববর্তী ছাদে কুষ্ঠরোগী লবঙ্গলতার বিবস্ত্র শরীর ও সেই শরীরে ‘পুঞ্জীভূত স্থবির রক্তস্রোত’ তার এখনকার ‘নবীন আশ্রয়’ (১৯৯০: ১৭৬); নিজেকে যোগ্য ‘পুত্ররূপে অভিহিত’ (১৯৯০: ১৭০) করার মত পৌরুষ অর্জন করার আগেই সে, উপেন-হত্যার সাফল্যে, এক বিকৃত ‘স্বরচিত’ অহংকারে উদ্ধত। সেকারণে রু´িণী ‘গম্ভীর ¯œায়বিক অনন্ত কলিকাতা’ নগরীর সন্ধ্য এবং তার ব্যাপক ‘স্তব্ধ’ ‘নিশ্চিন্ত’, ‘সমাহিত’ সৌন্দর্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শরৎকালীন প্রত্যুষে রাত-মাখা ‘বিশেষ রক্তিম আলোয়’ গঙ্গামণিকে ‘নিঃশঙ্ক চিত্তে’ ‘কৈলাস সরোবরের তীর্থ’ থেকে আনীত স্ফটিকের মালা হাতে জপ করতে দেখে রু´িণী, মালার ওঠা-নামার মধ্যে, একদা দেখতে পেয়েছিল তার বৃদ্ধ জননীর ‘অঙ্গুলির ফাঁকে বিরাট নিরবয়বের অন্তঃকরণ স্পন্দিত’, কিন্তু মনুষ্য-হত্যায় অভ্যস্ত হবার পর একই মা-র হাতে ‘ভ্রমণশীল’ জপমালার ‘শ্রী’ এবং ‘ধী’-তে দ্রবীভূত হবার উপযোগী সরল মন রু´িণী হারিয়ে ফেলেছে।
পথভ্রষ্ট রু´িণী এখন পলাতক অপরাধী, যে-কোনো-মুহূর্তে ধৃত হবার আতঙ্কে অব্যবস্থচিত্ত। তার মন এতই বিকৃত যে নতুন নতুন পলিটিকাল শত্রু নির্ধারণের ষড়যন্ত্র ও তাদের নির্মূল করার চক্রান্তমূলক চিন্তায় তার দেহে ‘চিল্লিকার শব্দ’, মস্তিষ্কে কন্দর্পের উৎপাত এবং ‘গুহ্য লিঙ্গ নাভিস্থল তথা মূলাধার’ তখনই ‘অসম্ভব উষ্ণ’ (১৯৯০: ১৮০) হয়ে ওঠে। কমলকুমারের এই বর্ণনাকে কবিত্ব মনে করা অনুচিত। অপরাধতত্ত্বের ইতিহাসে দেখা যায় হিং¯্র অপরাধীরা পশু-পাখির ওপর অত্যাচার করে যৌনসুখ লাভ করে; সুতরাং খুনী রু´িণীর অস্বভাবী মনস্তত্ত্বের এই বিবরণ বাস্তবসম্মত।
হত্যা-ষড়যন্ত্রে জীবনটা ধ্বংস করে, ‘দুশমনতা পাপে’ (১৯৯০: ১৮৮) আকণ্ঠ নিমজ্জিত রু´িণী যে ‘অঘোরমণি না¤œী বেশ্যাসক্ত’ পুরুত মশাইয়ের, দুরারোগ্য কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত কন্যা, লবঙ্গলতার প্রতি আকৃষ্ট হবে, সেটা মোটেও আশ্চর্যের নয়। লবঙ্গলতার ক্ষুধার্ত ‘সঞ্চিত গুপ্ত প্রেমে’র জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পুরুত মশাইয়ের বাড়িতে (যে-বাড়ি বেশ্যা অঘোরমণি থেকে ‘দানপত্র’-সূত্রে প্রাপ্ত) কোনো ভাড়াটে থাকতে চায় না, কিন্তু রু´িণী ওই লবঙ্গলতার প্রতিই আকৃষ্ট। লবঙ্গলতার ‘দুরারোগ্য রোগের গভীরে’ রু´িণীকুমার দেখে ‘অদ্ভুত দিব্য নীলিমা’; লবঙ্গলতার কদর্য, রুগ্ন, বীভৎস ত্বকের ‘তেজ:সম্পন্ন চিক্কন উজ্জ্বলতা’য় সে খুঁজে পায় ‘কবিত্বে’র উপাদান; লবঙ্গের ‘স্বল্প স্থূল অবয়ব’ এবং ‘সুবিশাল উরুদ্বয়ে’ সে আবিষ্কার করে ‘মহাশান্তি’র দুর্লভ নিদ্রা (১৯৯০: ১৮৯)। তার প্রতি রু´িণীর এই অস্বাভাবিক আকর্ষণে লবঙ্গলতা বিস্মিত। লবঙ্গলতা ব্যাধিগ্রস্ত তো বটেই, রু´িণীর মত বিকারগ্রস্তও: ‘ফ্লাইং ক্লাবের প্লেন’ ও ‘বোমার আওয়াজে’ লবঙ্গলতার যৌনসুখ উদ্দাম হতে দেখা গেছে; ‘পুত্রসম্ভবা’ হওয়ার কল্পিত আনন্দে─ওই প্লেন ও বোমার শব্দে─তার ‘ঋতু আরম্ভ’ (১৯৯০: ১৮৯) হতেও বিলম্ব হয় নি।
দুই রুগ্ন নারী-পুরুষের এই বিকারগ্রস্ত, দেহসর্বস্ব, সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই পরিণতিহীন। যে-গঙ্গামণি পাহারা দিয়ে রু´িণীকে এতদিন ধরে বড় করেছে; ‘সুখ নয়, শান্তি নয়, রু´িণী শুধু বেঁচে থাক’─এই যাঁর একমাত্র প্রত্যাশা ছিল, গল্পের শেষে সেই বৃদ্ধা মার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। আমরা শুধু জানতে পারি, অনেক দিন আত্মগোপনের পর রু´িণীর মুখম-ল হয়ে ওঠে এক মূর্তিমান ‘বিভীষিকা’, লতিয়ে ওঠা অবিন্যস্ত দাঁড়ি-গোঁফে তার ‘নাসিকা’ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন। দোকানে খেলনার শো-কেসের কাঁচে নিজের, জটাধারী আরণ্যক সন্ন্যাসীর মত বিকট, চেহারাটি চোখে পড়ার পর সে থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় ধরা দেয়, কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে রাখতে পারে না। তার কারণ পুলিশ তার হস্তাক্ষরের ধাঁচ, ‘লেটারাল স্ট্রোক’, গালে ‘টোল’-না-পড়া ‘হাসি’ ইত্যাদি পরীক্ষা করে উপেনের খুনী ফেরারী আসামী ‘রু´িণীকুমার’কে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। পরে, রাস্তায় ‘রাইফেলের গুলিতে’ মৃত্যু হওয়ার আগে পর্যন্ত, রু´িণীকুমার─গল্পের বিবরণ অনুযায়ী─বেশ্যাসক্ত পুরুতমশাইয়ের কুষ্ঠরোগী কন্যা ‘লবঙ্গলতার সহিত রোগজীবাণুতে রক্তে মাংসে’, এক চমৎকার ‘ইনসেসচ্যুয়াস বোধে’র সুখ ও উত্তেজনায়, দারুণ ‘গর্বিত’ ছিল।
তিন
উত্তরকারী [দেবেন্দ্রনারায়ণ রায়] বলিলেন, “একটি কৌতুকের জন্য। আজি আট দশ বৎসর হইল, আমি যেখানে সেখানে বেড়াইতাম─কিন্তু লোকলজ্জাভয়ে আপনার নামটা গোপন করিয়া কাল্পনিক নাম ব্যবহার করিতাম। কাল্পনিক নাম রু´িণীকুমার। আপনি অত বিমনা হইতেছেন কেন?”
─রাধারাণী (১৮৮৬), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আমাদের সরকার জানে….বিড়ি খরচা পাইলেই বাঙালী পুঙ্গব সব বিদ্রোহ ছাড়িয়া দিবে
─সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত চিঠি, কমলকুমার মজুমদার, ১৯৭১
রু´িণীকুমার নামটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’ (১৮৮৬) উপন্যাস থেকে গৃহীত; রাধারাণীর প্রেমিক─এবং সে উপন্যাসের নায়ক─দেবেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ‘কাল্পনিক’ নাম রু´িণীকুমার। কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ছাড়া বঙ্কিমের রাধারাণী (১৮৮৬) রোমান্স ও কমলকুমারের ‘রু´িণীকুমার’ (১৯৬৮) গল্পের মধ্যে আর কোনো গভীর মিল দেখা যায় না। রু´িণী-লবঙ্গলতার অস্বাভাবিক, ‘রোগ-জীবাণু’তে ভরা, কদর্যপ্রকৃতির কাম ও দেহসর্বস্ব সম্পর্কের সঙ্গে, রাধারাণী ও রু´িণীকুমারের মতন উচ্চবর্ণের বিত্তশালী নায়ক-নায়িকার বহু-প্রতীক্ষিত বৈধ প্রণয়, মাল্য বিনিময় এবং বিধিবদ্ধ, সমাজসম্মত─যদিও যথেষ্ট পরিমাণে নাটকীয়─পরিণয় কোনো দিক থেকেই কমলকুমারের গল্পের সঙ্গে মিশ খায় না ।
সে ভাবে না মিললেও বঙ্কিমের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের ‘রু´িণীকুমার’ যে একটি ‘কাল্পনিক’ নাম, এই তথ্যাটির তাৎপর্য আছে। কেননা কমলকুমারের গল্পে ‘রু´িণী’কে চিহ্নিত করা হয়েছে “স্বরচিত” বলে, যাকে আমরা ‘স্বকল্পিত’ও বলতে পারি। রু´িণী তার মা গঙ্গামণির আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে, প্রহরায় বেশ্যাপল্লীর একটা ছোট্ট ঘরে পলাতক জীবন যাপন করেছে, যার অস্থিরতা, চাঞ্চল্য, এমনকি ‘কণ্ঠস্বর’ও, কিশোরশোভন। অথচ, নিছক ছেলেমানুষ হওয়া সত্ত্বেও, রু´িণী কতিপয় রাজনৈতিক ছোক্রার সঙ্গে মিতালি পাতে; রামানন্দ বাবুর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং ‘ঠোঙা’য় পাঠানো পিস্তল-রিভলবার পেয়ে নিজেকে সে ‘কল্পনা’ করতে থাকে স্বদেশী আন্দোলনের বিরাট বীরপুুরুষ হিসাবে। রু´িণীর এই পৌরুষভাব একেবারেই ‘কাল্পনিক’, তার অপরিণত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক বোধ-অনুভূতিও স্বভাবতই কৃত্রিম। কলিকাতার রাস্তায় অবাঞ্ছিত কুকুরের মত তার মৃত্যু এবং বেশ্যাপাড়ার উচ্ছিষ্টরূপ কুষ্ঠরোগী রমণীর সঙ্গে তার সম্পর্ক─যা ‘ইনসেসচ্যুয়াস’ বলেই তার কাছে ‘অপার্থিব’─ঐ ‘কাল্পনিক’, কৃত্রিম, রু´িণীর “স্বরচিত” পরিণতি।
দেখা যাচ্ছে, বঙ্কিম ও কমলকুমারের দুই ‘রু´িণীকুমার’-এ অত গভীর না হলেও সামান্য কিছু মিল আছে; তবে বুদ্ধদেব বসুর বোদলেয়ারের সঙ্গে কমলের রু´িণীকুমারের সাদৃশ্য তর্কের অতীত। ‘স্বরচিত’ রু´িণীকুমারের পাপাসক্তি, বিকার, নৈরাজ্যপ্রবণ মন─কুষ্ঠরোগীতে ‘দিব্য নীলিমা’ ও ‘অপার্থিব’ সৌন্দর্য আবিষ্কার ─এসবই, নিশ্চিতভাবে, বোদলেয়রীয় ব্যাপার, এশীয় বা ভারতীয় না। এই মিল কাকতালীয় নয়। মনে রাখা দরকার, বুদ্ধদেব বসুর ‘শার্ল বোদলেয়ার’ বই রচিত হয় ১৯৬০ সালে, এবং প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে। বুদ্ধদেবের শার্ল বোদলেয়ার (১৯৬১) বইটাকে দুই বাংলার পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর দশকের কবিদের বাইবেল বলা যায়। তার সাত বছর পরেই, ১৯৬৮ সালে, কমলকুমারের ‘রু´িণীকুমার’ প্রকাশিত। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেবের বোদলেয়ারের প্রভাব এতই স্বতঃসিদ্ধ যে তা নিয়ে আলোচনা নি®প্রয়োজন।
কমলকুমারের রু´িণী কি চায়? লবঙ্গলতার কদর্য, কুষ্ঠরোগাক্রান্ত, বীভৎস দেহের মধ্যে কী খুঁজছে রু´িণী? কী তার আরাধনার বস্তু? তার আরাধ্য, আমি মনে করি, বোদলেয়ারের কাব্যে বর্ণিত এবং বুদ্ধদেব বসুর লেখায় বিশ্লেষিত বোদলেয়রীয় ‘ক্লেদজ কুসুম’, কিন্তু বোদলেয়ারের সঙ্গে তার তফাত আছে। রুগ্ন, সিফিলিসে-আক্রান্ত ও বাল্যে পিতৃহীন, অনুতপ্ত ক্যাথলিক কবি বোদলেয়ার কদর্য বস্তুকে বিস্ময়কর আর্ট-এ পরিণত করেছেন, ‘ক্লেদজ কুসুম’ উত্তীর্ণ হয়েছে অমর শিল্পকলায়: পঙ্কজাত পুষ্প, বোদলেয়ারীয় প্রতিভার স্পর্শে, ছন্দোবদ্ধ সনেটের নিñিদ্র বুনোট, লক্ষ্যভেদী বাকপ্রতিমা ও গভীর বেদনার অপূর্ব স্থাপত্যে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু রু´িণীকুমার, কলিকাতার অপরিণত বিপ্লবী যুবক, বিপ্লবের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে সেই পঙ্কেই নিঃশেষিত। নি:শেষিত হলেও মনে রাখা চাই যে, রু´িণীর আরাধ্য যে লবঙ্গলতা সে আসলে কলিকাতার মেয়েমানুষ নয়, ‘হাইতি’ থেকে প্যারিসে আগত জীন ডু’ভাল, অর্থাৎ বোদলেয়ারের ক্লেদজ কুসুম, ‘ব্ল্যাক ভিনাস’─সেই রমণী যাকে শুধু বোদলেয়ার নয়, বোদলেয়ারের অনুগত শিষ্য এদুয়ার মানে (১৮৩২-৮৩), ফরাসী ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রকর, ফরাসী চিত্রকলাতেও অমর করে গেছেন। ‘রু´িণীকুমার’ গল্পের সঙ্গে যে কমলকুমারের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের যোগ আছে, তা কেউই অস্বীকার করবে না; কিন্তু এই গল্প-লেখার উৎসাহ ঐ অভিজ্ঞতা থেকে আসে নাই, এর উৎস বুদ্ধদেব বসুর ‘শার্ল বোদলেয়ার’, বিশেষত সে-বইয়ের প্রভাবশালী ভূমিকা। তার মানে একে প্রচলিত অর্থে গল্প হিসাবে না দেখে বুদ্ধদেব বসুর লেখায় বিশ্লেষিত মডার্নিস্ট সাহিত্যের একটি এক্সপেরিমেন্ট রূপে বিবেচনা করা সঙ্গত।
রু´িণীর জীবনের গল্প ‘রু´িণীকুমার’ (১৯৬৮) গল্পের বিষয় না, এর আসল প্রতিপাদ্য রাজনৈতিক। কন্দর্পের প্রদাহ (লিবিডো) এবং রাজনৈতিক বিপ্লবের উদ্দীপনা─গণতান্ত্রিক রাজনীতির অভিমানী ক্রিটিক কমলকুমারের বিবেচনায়─ একই বন্য প্রবৃত্তির এ-পিঠ ও-পিঠ । সেজন্যেই এই গল্পে ‘স্বদেশী’-পর্বের বিপ্লবীদের উগ্র রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বিপ্লবীদের শরীর-মনে যৌনকামনার উৎপাতকে অভিন্ন বস্তু হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দলীয় সংঘাতে নিহত প্রতিবিপ্লবীর রক্ত-দর্শনে উদ্দীপ্ত বোধ করেছে বিপ্লববাদী রু´িণী, আবার পাশের বাড়ির ছাদে নগ্ন রমণীর শরীর-দর্শন করেও সে একইরকম ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট’। রু´িণীকুমার, কমলকুমারের ভাষায়, “বাঙালি পুঙ্গব”: লিবিডোর নিবৃত্তি ঘটলে সে আর বিপ্লবী থাকবে না, অন্যান্য পুঙ্গবের মত সে-ও “সব বিদ্রোহ ছাড়িয়া দিবে” ।
[শিকাগো, ২০১২]
তথ্যসূত্র
কমলকুমার মজুমদার। [১৯৯০] ২০২২। গল্পসমগ্র। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সম্পাদিত। কলিকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স।
ড. সালাহউদ্দীন আইয়ুব
সাহিত্য সমালোচক, গবেষক ও শিকাগো স্টেট ইউনির্ভাসিটির, (ইউএসএ) ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক
ইমেইল : salahud@csu.edu