ড. মহীবুল আজিজ
৩৬. সাত ধরনীয়ে পোয়া মারে।
Seven midwives kill the child. i. e, too many cooks spoil the broth.
৩৭. কুচ্যারে বড় চোখ ন দে।
“It is a good thing eels have not big eyes.Ó Used to be a disagreeable person whose powers of mischief are limited. The eels which lurk in the mud of the khals have very small eyes, I am told.
৩৮. দেখ্তে সুন্দর কান্ড্যা ফল।
The Kaindya or makal fruit is pleasant to look upon, being of a brilliant crimson color, but it is very bitter. “Handsome is what handsome does.
৩৯. ঝারতুন্ উঠি গচার বারি।
“He jumps from a hedge and strikes a blow.” i. e, and impertinent intrusive fellow; a Pand pry.
৪০. কাউয়ার্ মুখে হিন্দুরগ্যা আম।
“A golden mangoe in a (black) crow’s mouth.Ó Incongruity. Beauty and the Beast.
৪১. বামন্ মানষ্যর্ কুমার্ কাম্।
“A priest doing a patter’s work.Ó i. e, incongruous occupation.
৪২. আদা বেপারির্ জাহাজের খবর।
“A dealer in ginger asks after the steamer.Ó i. e, meddling in high matters.
There is an exactly similar Assamese proverb—(see capt Gurdon’s prov. No 85): এদা বেপারীক জাহাজর বাতার্ও কিয়। (p. 30
৪৩. পোন্দে শিল বাঁধ্লে ভর্ ন হয়।
“Tying stones in your loin cloth wont make you heavy.Ó The idea is that of “borrowed feathers”.
৪৪. হাতর্ ডিমাতুন্ ঝারর্ পাইখ্ও ভালা নয়।
“An egg in the hand’s worth a bird in the bush.” There is another expression similar to it as “Jharar Paiker dima O labh.”
৪৫. পরের্ উপর ভাত খায়, আঠার মাসে বছর গণে।
“The man who lives at another’s charge, counts eighteen months in a year.” There is a similar Assamese proverb- মুরত খাও, ভটিয়া পানিত যাও।” I live upon others, and go with the tide.
৪৬. ভিতরে খোল্,
হরি হরি বোল্।
Uttering the name of Hari with a empty head. “Sounding brass and tinkling cymbals.”
৪৭. ভাঙ্গা ঠেঙ গাতে পরে।
“The broken leg falls in a pit.” Misfortune seldom come alone.
৪৮. তিন্ মায়া পোআ জিঁয়ত্,
কাজির্ দরবার্ হিঁয়ত্।
“Where three women assemble is the court of a Kaji.” i. e, there is as much noise!
৪৯. যেমন গাছ তেমন বাতাস।
“The bigger the tree the more breeze it gets.” i. e, “noblesse oblige.”
(See Assamese proverb 162) “জত রাজ তত কাজ।” Wherever there are kingdoms, there are duties to be performed. (p. 53)
৫০. ঘাটত্ আই নুকা ডুবান্।
“The boat sinks at the landing stage.” Expresses disgust when a nearly finished work is spoiled.
৫১. ফুঁইচের্ পোন্দেদি কুড়াল্ চালান্।
“Pushing an axe through the eye of a needle.” Out of spite, making much of little, exaggerating failings.
৫২. ভাত্ ছিঁন্ডিলে কাউয়ার্ রাট্ নাই।
“When rice is sprinkled, there is no lack of crows.” i. e, “il n’y a pas d’homme indispensable.” There are lots more – if I pay for them.
৫৩. আট্ কামুয়ার ভাত নাই।
“A man, who does eight trades, can’t get rice to eat.” i. e, Jack of all trades is master of none.
৫৪. বান্দরেরে পস্ দিলে মাথায় উডে।
“Encourage a monkey and he jumps on your head.” i. e, don’t condescend to inferiors.
৫৫. পোয়ার্তে পয়সা হইলে কুকুর ছা কিনে।
“Boys spend their pocket money in buying puppies.” (Which in Chittagong can be had for nothing.) Foolish extravagance.
৫৬. গরুরে জিগ্যাই হাল্ ন চয়।
“No one consults the bullocks before yoking them to the plough.” Used to rebuke intrusive advice on the part of an inferior.
৫৭. আঙ্গুল ফুলি কলা গাছ হয়।
“A swollen finger looms a plantain tree.” To rebuke the foolish pride of upstarts.
৫৮. ঘরের্ গরুয়ে ঘান্ডার্ খের্ ন খায়।
“Cows don’t graze in their own farmyard.” i. e, “a prophet has no honour in his own country.
৫৯. চোর ধাইলে বুইধ্ বাড়ে।
“When the thief has run away, wisdom increases.” Cf. Locking the stable-door when the horse is stolen.
৬০. হাকিম লড়ে,
হুকুম্ ন লড়ে।
“The judge is changed. But the ruling remains.” A compliment, evidently to the stable institutions of British rule, under which judges are transferred, but their orderslive after them.
৬১. বানে বাতাসে বকা মরে,
ফকিরে কয় কেরামত্ ফলে।
“If a paddy bird perishes in a cyclone. The Fakir says it was killed by his curse.” Satirises those who pretend to imagined power.
৬২. থানার্ কাছে দি’ কানাও ন যায়।
“Even a blind man does not go by way of the thana.” Even the innocent dread the police.
৬৩. ডুব্ মারি’ পানি খাইলে একাদশীর বাপেও ন দেখে।
“If you drink when you duck your head under water, no one will know that you’ve broken your fast (ekadoshi).” Satirises hypocrisy.
৬৪. ঢেকিত্ বাড়া পৈরত্ পানি,
জামাইর্ পোয়ার ভাত্ ছোয়ানি।
“The paddy is not yet husked and the water is in the tank and yet the grandson’s Bhatchhoani ceremony is being celebrated!” (Bhatchhoani is the annaprason ceremony ) Satirises inadequate preparations for a great undertaking.
৬৫. কানা চোখে, ঘুম্ যেই, চেতনও হেই।
“To the blind man’s eye, waking and sleeping are the same.” Similar is meaning to prov. No. 25.
৬৬. হক্কলে যদি বত্ করে নৈবিদ্য খাইবে কনে।
“If all fast who will eat the offering?” Rebukes presumption, we can’t all atke leading parts.
৬৭. চিল্টা পৈলে কুটাগাছ্ হইলেও নে।
“When the kite swoops it will seize even a straw.” i. e. a thief won’t leave your house without taking something.
৬৮. গোতে গোত্ টানে;
গোদে সাত পুরুষ টানে।
“Like begets like; and elephantiasis is inherited for 7 generations.”
৬৯. কানা চোখে কুটা পরে।
“The straw sticks in the blinded eye.” For a similar expression see prov. No. 47.
৭০. ছাগলে কয় পরানে মইলাম্,
গিরস্থে কয় আনুনি খাইলাম্।
“The goat bewails its death, its owner regrets that its flesh tasted ill.” i. e, a bad bargain on both sides; used by a man who is blamed for doing his best.
[চট্টগ্রামের প্রবাদ এবং এগুলোর জেমস এন্ডার্সনকৃত অনুবাদ ও পর্যালোচনার সূত্রে অনেক তথ্য, জ্ঞান ও ইতিহাসের উৎসসন্ধান আমাদের চমৎকৃত করে। ইতোমধ্যে এসব প্রবাদের ভারতীয় উপমহাদেশীয় অন্যতর ভাষাগোষ্ঠির বিভিন্ন ভাষার সমান্তরাল উৎসের বিষয়টির উল্লেখ করা গেছে। গ্রন্থের এমন অনেক প্রবাদের কথা বলা যাবে যেগুলোর প্রায় সমরূপ হিন্দি প্রচলন রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো চট্টগ্রামী এমন সব প্রবাদও রয়েছে যেগুলোর সম্পূর্ণ ভিন্ন গোলার্ধিয় সমান্তরলতার দৃষ্টান্ত হাজির করা যাবে। উপর্যুক্ত ৩৬—সংখ্যক প্রবাদটির (সাত ধরনীয়ে পোয়া মারে।) দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যাক। অর্থাৎ গর্ভবতী মা’কে সন্তান জন্মদানে একসঙ্গে সাত রমণীর সহায়তা শেষ পর্যন্ত সেই সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রবাদটি বস্তুত বাস্তব জীবনের কর্ম ও কর্মসম্পাদনের কুশলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটির ইংরেজি ভাষার সমান্তরাল প্রবাদটি এন্ডার্সন সঙ্গে দেন যেটির অর্থ হলো একসঙ্গে অধিক সংখ্যক রাঁধুনীর রন্ধনতৎপরতায় রান্নার উদ্দেশ্যে চুলোয় চাপানো খাবারটি বরবাদ হয়ে গেল। প্রবাদটির একটি রুশ সংস্করণও লক্ষযোগ্য যেখানে বলা হচ্ছেÑ সাতজন আয়া মিলে এক—চোখ—কানা একটি বাচ্চার তদারক করছে। এর মানে হলো একটা কাজ একই সঙ্গে অনেকের অংশগ্রহণ অপ্রয়োজনীয় বা অনর্থসঞ্চারী। আমরা প্রমিত বাংলায় সমার্থক আরও একটি প্রবাদের কথা বলতে পারিÑঅনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। তুলনামূলক বিচারে বলা যেতে পারে, বাংলা প্রবাদটির মূল অপেক্ষাকৃত পুরনো উপমহাদেশীয় কোনো একটি ভাষা। হতে পারে সেটি সংস্কৃত/হিন্দি। আবার হিন্দি ভাষার উৎস প্রাকৃত, বিশেষ করে হিন্দি ভাষার মিশ্র রূপের মধ্যে উত্তর ভারতীয় শৌরসেনী প্রাকৃতের অবদান অনেকখানি।
চট্টগ্রামী এমন অনেক প্রবাদ রয়েছে যেসব প্রবাদের বয়স কয়েক হাজার বছর। এমনকি নৃবিজ্ঞানীদের স্থিরীকৃত গবেষণায় সেসব প্রবাদের প্রাচীনতা আমাদের অবাক করে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সুপ্রাচীন এসব প্রবাদ মূলত একক উৎস থেকে পরবতীর্তে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। রূপকথা, উপকথা, কিংবদন্তী এইসবকে আশ্রয় করে কেবল কেবল এক ভাষা থেকে অন্য ভাষাতেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে। লোকসমাজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলনের ধারক ও বাহক হয়ে থাকা এইসব প্রবাদ বিভিন্ন জনগোষ্ঠির সমাজজীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত ‘গল্পের রূপান্তর’ নামক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন কিভাবে একই গল্প সামান্য রূপ বা ভাব বদলে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে সক্ষম হয়। চট্টগ্রামী ৪০—সংখ্যক প্রবাদটি এক্ষেত্রে একটি চমৎকার দৃষ্টান্তÑ “কাউয়ার মুখে হিন্দুরগ্যা আম।” এখানে দু’টি পরস্পর বিপরীত জিনিসের অপ্রত্যাশিত সহাবস্থানের বিষয়টি অভিব্যক্ত। কালো রংয়ের কাকের মুখে সোনালি রংয়ের আমকে বস্তুত ব্যঙ্গার্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটমান কর্মকাণ্ডের বর্ণনায় এ—প্রবাদটি একটি যুৎসই অবলম্বন। অতি কুৎসিত ব্যক্তির সুন্দরী বধূর তুলনায় কিংবা কপর্দকহীন ব্যক্তির লটারিতে কোটি টাকা জেতার ঘটনায় এমন প্রবাদের ব্যবহার লক্ষণীয়। ইংরেজিতে এটির বহুল প্রচলিত প্রকাশ হলো ‘বিউটি এ্যান্ড দ্য বিস্ট’। নৃতাত্ত্বিকদের মতে প্রবাদটির বয়স প্রায় চার হাজার বছর। আবার ছয় হাজার বছরের প্রাচীন একটি প্রবাদও রয়েছে যেটির উদ্ভব ব্রোঞ্জ যুগ। যে—উপকথাটি এ—প্রবাদ সৃজনের সঙ্গে সম্পর্কিত সেটির শিরোনাম ‘দ্য স্মিথ এ্যান্ড দ্য ডেভিল’। গল্পটিতে দেখা যায় একজন কামার শয়তানের কাছ থেকে অতিপ্রাকৃত শক্তি পাওয়ার লোভে নিজের আত্মাকে বিক্রয় করছে। ১৮১২ সালে জার্মানির বিখ্যাত গ্রিম ভাইয়েরা জার্মান ভাষায় এ—প্রবাদটির প্রথম ইউরোপিয় আত্মপ্রকাশ ঘটান তাঁদের রূপকথার গল্পগুলোর সংকলনে যেখানে উপকথাটির শিরোনাম জর্মান ভাষায় ‘রুম্পেলস্টিল্টস্কিন’। গল্পটিতে দেখা যায়, এক ডাইনি তার জাদুর শক্তি দিয়ে খড়কে স্বর্ণে পরিণত করছে এবং এর বিনিময়ে তার চাহিদা হলো মায়ের সদ্যোজাত প্রথম সন্তান।
চট্টগ্রামী এমন অনেক প্রবাদ রয়েছে যেগুলোর উদ্ভব নিঃসন্দেহে সামাজিক জীবনের নানা পরিস্থিতি ও অবস্থানের পারস্পরিক সংশ্লেষ—বিশ্লেষের ফল। কিন্তু এটা সবসময়েই বলা যাবে না যে সব প্রবাদই গড়ে উঠেছে একটি থেকে অন্যটির প্রভাবের মধ্য দিয়ে। এমনও হতে পারে যে—প্রবাদটি চট্টগ্রামী ভাষাতেই প্রথম সৃষ্ট তার সৃজনকারী সেটির ভিন্নভাষিক বিদ্যমানতা সম্পর্কে একটুও ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এ থেকে এটাই অনুমান করা সঙ্গত, জ্ঞানী মানুষেরা সর্বদা সব জাতি ও সমাজেই ছিলেন যাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ করে তুলতে পারতেন। জ্ঞানী মানুষদের সেসব পর্যবেক্ষণ এবং প্রকাশ থেকেই পরবতীর্কালে সৃষ্টি হয় এসব মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ যেগুলো টিঁকে থাকে কালে—কালোত্তরে। লোকায়ত জ্ঞান এভাবেই পরিণত হয় জাতিগত অভিজ্ঞানে। ধরা যাক ৪৩—সংখ্যক প্রবাদটির কথাÑ “পোন্দে শিল বাঁধলে ভর্ ন হয়”। এটি এমন সব ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যাঁরা নিজের উনযোগ্যতাকে মেকি ওজনদার করে তোলার চেষ্টায় প্রাণপণ। এর সমান্তরাল হিসেবে ‘কাকের ময়ুরপুচ্ছ’ প্রবাদটি স্মরণযোগ্য। এন্ডার্সনের ইংরেজি ‘বর্যোড্ ফেদারস্’ কথাটাও প্রায় সমধমীর্। কিন্তু এটির মূল হিসেবে গবেষকগণ চিহ্নিত করেন গ্রিক ‘ঈশপ’কে। ইলিনয় অরবানা—শ্যাম্পেন বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন এডউইন পেরিকৃত ‘পেরি ইন্ডেক্স’ অনুযায়ী ঈশপের কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬২০ থেকে ৫৬০ সাল। এ—প্রবাদটি সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়া (একটির প্রভাবে অন্যাটি না হলেও।) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রবাদ। এর মধ্যে নিহিত যে সামাজিক সচেতনতা এবং সৃজনশীলতা তা উচ্চাঙ্গের চিন্তন—ক্ষমতার স্মারক। ১৭৬০ সালে রুশ ভাষায় প্রকাশিত আলেক্সান্ডার সুমারোকোভের কাহিনি থেকে দেখা যায়, রাশিয়ায় জনৈক ব্যক্তি নানা স্তরে উৎকোচ প্রদান করে নিজের সামাজিক নিম্বাবস্থানকে উচ্চে নিয়ে যায় এবং তার মধ্যে জেগে ওঠে একটা আত্মম্ভরিতা। রাশিয়ারই ইভান ক্রিলোভ—এর ‘কাক’ শীর্ষক গল্পটি বাংলা ভাষায় প্রচলিত গল্পটির হুবহু রূপ।
জেমস ড্রমন্ড এন্ডার্সনের চট্টগ্রামী প্রবাদ সম্পর্কিত বর্তমান গ্রন্থে তাঁর অধীত জ্ঞান এবং তাঁর তুলনামূলক অধ্যয়নের প্রভূত পরিচয় আমরা পাই। চট্টগ্রামী প্রবাদের বেশকিছু আসামী ভাষায় প্রচলিত সমান্তরাল প্রবাদ কিংবা ইংরেজি, রুশ এমনকি ফরাসি ভাষায় প্রচলিত প্রবাদের দৃষ্টান্ত ও পর্যালোচনা থেকে তাঁর ধীশক্তির ছাপ স্পষ্ট। তাঁর এই তুলনামূলক বিদ্যার প্রয়োগ থেকে আমরা নতুনতর জ্ঞানের সন্ধান পাই। প্রসঙ্গত এখানে আরেকটি প্রবাদের উদাহরণ দেওয়া যাক: ৫৮—সংখ্যক প্রবাদÑ “ঘরের্ গরুয়ে ঘান্ডার্ খের্ ন খায়।” ঠিক এমনতর অভিব্যক্তির একাধিক প্রবাদ আমরা বাংলা ভাষাতেই পাই, যেমন: “গেঁয়ো যোগী ভিখ্ পায় না।” কিংবা, “মক্কার লোকে হজ¦ পায় না”। এই প্রবাদটি নিঃসন্দেহে বিশ^ব্যাপী নানা ভাষায় প্রচলিত এমন একটি প্রবাদ যেটি এর উদ্ভবের ইতিহাসের কারণেই অর্জন করেছে খ্যাতি ও প্রসার। খ্রিস্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলের (মার্ক ৬:৪) শরণ নিলে দেখবো যিশুখ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের বলছেন একজন ধর্মপ্রচারকের সম্মান সর্বত্র, একমাত্র তাঁর নিজের জন্মস্থান ছাড়া। প্রসঙ্গত হযরত মুহাম্মদ (সা:)—এর ক্ষেত্রেও বলা যায় তিনি তাঁর নিজের এলাকা মক্কার চাইতেও দূরবতীর্ মদিনাতেই অধিক সম্মান লাভ করেছিলেন। বাইবেলের প্রায় সব ধর্মপ্রচারকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তাঁরা কখনই তাঁদের নিজেদের শহরে সমাদর অর্জন করতে পারেন নি। কাজেই বলা যায়, চট্টগ্রামী উপর্যুক্ত প্রবাদটির উৎসের ইতিহাস ধর্মেতিহাস সম্পর্কিত।
একই কথা প্রযোজ্য ৬৮—সংখ্যক প্রবাদের (“গোতে গোত্ টানে;/ গোদে সাত পুরুষ টানে।”) ক্ষেত্রেও। এটির সমান্তরাল হিসেবে এন্ডার্সন যে—ইংরেজি বাক্যটি (“লাইক বিগেটস্ লাইক।”) ব্যবহার করেছেন সেটির উদ্ভবও বাইবেলের ইতিহাসে নিহিত। সেখানে বলা হয়েছে একটা কুকুর থেকে একটা কুকুরেরই জন্ম হয়, মুরগিছানার নয়। তবে ৬০—সংখ্যক প্রবাদের (হাকিম লড়ে/ হুকুম ন লড়ে।) ক্ষেত্রে এন্ডার্সনের মন্তব্যটি খানিকটা বিচারসাপেক্ষ। এখানে তিনি হাকিম ও হুকুম বলতে ‘ব্রিটিশ শাসন’ ও ‘ব্রিটিশ বিচারকদের’ কথা বুঝিয়েছেন। কিন্তু তাতে করে মনে হতে পারে যে প্রবাদটি হয়তোবা ব্রিটিশ শাসনামলে উদ্ভূত। ‘হাকিম’ এবং ‘হুকুম’ দু’টো শব্দই যেহেতু ফারসি তাই বলা যায়, প্রবাদটির উদ্ভব মধ্যযুগের সুলতানী শাসনামলে। প্রবাদটি এখনও যথাযোগ্যভাবে প্রচলিত রয়েছে।
এভাবে বলা যায়, প্রায় প্রতিটি প্রবাদের বিচার—বিশ্লেষণ ও উদ্ভবেতিহাসের সম্যক পর্যালোচনা থেকে আমরা বিচিত্র জ্ঞান ও বিদ্যার সন্ধান লাভ করতে পারি। এটা তো সকলেরই জানা, প্রবাদ লোকসাহিত্যের এমন একটি উপাদান যা জীবন ও সমাজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাকার নানা বিষয়ের খনি। জেমস ড্রমন্ড এন্ডার্সনের গ্রন্থটি সেরকমই একটি গ্রন্থ যেটি ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত হলেও আজও এটির সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম।]
—ক্রমশ
মহীবুল আজিজ, কবি ও কথাসাহিত্যিক