একটি জাতি বা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এর মূলে থাকে শিক্ষা। সে জাতি বা দেশের শিক্ষার গুণগত মান এর ওপর দৃশ্যমান হয় উন্নয়নের মাপকাঠি। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে বহু সরকার এর আগমন-প্রস্থান হয়েছে। কিন্তু কেউ স্থায়ী একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেনি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখন সে তার মতো করে শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়েছে। এর ফলে বিগত অর্ধশত বছরে জাতি মেধা মননে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বৈশ্বিক যে কোনো প্রতিযোগিতায় আমরা অনেক দূরে থেকে যাচ্ছি।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবশ্যই এটা একটা শুভ উদ্যোগ। কিন্তু এসব সংস্কারে এবং বাস্তবায়নে যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন সেটা কী আমাদের আছে? তাই অন্যান্য কমিশনগুলোকে সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য দরকার স্থায়ী ‘শিক্ষা কমিশন’। ইতোপূর্বে গঠিত নানা শিক্ষা নীতিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য যুগোপোযোগী অসাম্প্রদায়িক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর শিক্ষাক্রম চালু হয়নি। আমাদের শিক্ষা কাঠামো সব সময় স্বেচ্ছাচারিতা চলেছে। যার কারণে আমাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক ড. নাদিম মাহমুদ বলেছেন- “সাধারণ শিক্ষা, বিদেশি কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা, মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ নানা শ্রেণিতে বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের চিন্তা চেতনাকে এক কাতারে যেমন আনতে পারছে না, তেমনি দেশে দক্ষ মানব সম্পদ গড়তেও সক্ষম হচ্ছে না। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা না গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামাল দেওয়া কেবল দুরূহ নয়, আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকিও বটে।”
এই জন্য আগামী পঞ্চাশ বছরের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে আমাদের টেকসই শিক্ষা কাঠামো তৈরি করতে হবে। স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। এমন একটি শিক্ষাক্রম থাকবে যা কেউ পরিবর্তনের সাহস করবে না। শুধু পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান ও আর্থসামাজিক সংযুক্তিগুলোর আবর্তন করা যাবে। এর বাইরে মৌলিক ও নৈতিক শিক্ষার রূপরেখা অভিন্ন থাকবে। বিভিন্ন দেশ তাদের শিক্ষাকে এমনভাবে সাজিয়ে রাখে, যাতে করে তারা পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে পারে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে কমানো এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ উন্নত করার ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ড. নাদিম মাহমুদ সম্প্রতি তাঁর এক নিবন্ধে আরো বলেন- আমরা এমন একটি স্থায়ী শিক্ষা নীতি কমিশন দেখতে চাই যেখানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ধর্মীয় ও সামাজিক অসহিষ্ণুতা কমানোর জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষা কাঠামোর চর্চা থাকবে। যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটবে এবং গড়ে উঠবে দক্ষ মানবসম্পদ।
দেশের অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মতো টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি স্থায়ী ‘শিক্ষা কমিশন’ এর বিশেষ প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে মেধা ও মননে গঠিত হবে উন্নত জাতি বা রাষ্ট্র। তাই এই স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন এবং এর দ্রুত বাস্তবায়ন সময়ের দাবি বলে মনে করি।

প্রাচীন বাংলার স্বচ্ছ ইতিহাস রচনায় তাম্র-শিলালিপি মুদ্রা ও প্রত্ন-ভাস্কর্য কতটা দরকারি
ড. আবু নোমান উৎস বা সূত্র যতটা স্বচ্ছ যৌক্তিক ও প্রায়োগিক হয় ইতিহাস তত বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এ কারণেই ইতিহাস রচনায় উৎসের ভূমিকা অত্যন্ত