প্রফেসর ইদ্রিস আলী
উপরে নির্মল নীলাকাশ। দিগন্তব্যাপি উঁচু নিচু মাটি, বৃক্ষ, ঝোপ ঝাড়ের শ্রীমান শ্রীবিষাদের পাহাড় শ্রেণী। উঁচু বিদীর্ণ কাটা পাহাড়ের পাশ দিয়ে আঁকা—বাকা পাহাড়— কোলে পিচঢালা পথ। নির্বাক বৃক্ষরাজি । নীচে নির্মল স্রোতস্বীণি, পাহাড়ি নদী। পুব দিক থেকে নেমে এসে বাঁক নিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। নির্মল জলের স্নিগ্ধ নিবিড়তা। যৌবণ তারুণ্যের চপলতা। প্রবাহের গাম্ভীর্যতা, চলার রহস্যময়ী স্বকীয়তা । কী অপূর্ব!
দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে্যর কোন কমতি নেই। রুপ লাবণ্যের কোন ঘাটতি নেই। যেন বহমান রুপসাগর। যেন চলমান রুপবতী। যেন উপচে পড়া যৌবন সরস্বতী।
আমাদের পাহাড়ি মেয়ে কর্ণফুলি। আমাদের নাচের রানী কর্ণফুলি। লুসাই রুপসী পাহাড়ি কন্যা, চির অনন্যা কর্ণফুলি। মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের হৃদপিন্ড থেকে উৎসারিত রাম পাহাড় সীতা পাহাড়ের বুক চিরে পাহাড়ের কান্নাকে অগুনিত, অপরিমেয় সাগরের নীল জলে অঞ্জলি দেয়া পাহাড়ি নদী কর্ণফুলি।
সবুজ, অবুঝ, আনমনা, আনকোড়া, নির্বাক পাহাড়ের সংবেদনশীল জীবন্তসত্তা কর্ণফুলি। আমাদের এই বাংলাদেশের পাহাড়ি নদী কর্ণফুলি। দক্ষিন পুর্ব বাংলা অঞ্চলের সামাজিকতা, সাংস্কৃতিকতার ভান্ডার কর্ণফুলি। আঞ্চলিকতার বহমান দর্পন, জাতিসত্তার পবিত্রতা নিশ্চায়ক ভাগ্যবতী নদী কর্ণফুলি। বিরহীর বেদনার অশ্রু, হতভাগ্য প্রেমিকের আত্নাহুতির ঠিকানা, কুলবধুর উদাসী পথচাওয়ার সীমাহীন সীমানা, সাম্পান মাঝির উদাস কন্ঠের আকুতি—আর্তনাদ, সাংস্কৃতিক নদী, অর্থকরি নদী, বাণিজ্যের নদী, নির্ভরতার নদী, আত্মীয়তার নদী, কর্ণফুলি।
নীরব, নিস্তব্ধ, নির্বাক পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের এই নদীতীরে পড়ন্ত বিকালে বসে জলের ওপর বৈকালিক আলোর পতন ছন্দ, মৃদুমন্দ হালকা বাসন্তী প্রতিফলন।
সাথে নিকট, দুরের ন্যাড়া ক্ষত হালকা সবুজ পাহাড়ের নির্বাক— নির্বোধ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টির সবাক অন্তরদোলা আমাদের দুলিয়েছে সারা বিকেল।
অপুর্ব, অভুতপুর্ব, অদৃশ্যপূর্ব, অনিন্দসুন্দর, অমোচনীয় এক জীবন্ত অনুভূতি। মন ভরে যায় যখন এরকম একটি প্রাচুর্যময়, ঐতিহ্যমন্ডিত, ঐশ্বর্যে্যর রানী নদীর পাড়ে বসার সুযোগ হয়। আমাদের আজ তা—ই হয়েছিল। আবার কবে হবে জানিনা।
বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বার্ষিক বনভোজনের আয়োজকদের ধন্যবাদ অফুরন্ত। এমন সুযোগ যেন আসে বার বার, কোলাহল ক্লান্তি ভরা প্রতিটি ব্যস্ত জীবনে। রসায়ন সমিতির এই আয়োজনে যুক্ত ছিলেন যথাক্রমে— প্রফেসর রিয়াজুল হক, প্রফেসর শামসুদ্দিন আজাদ, প্রফেসর মনজুরুল করিম, শওকত হোসেন, উপাধ্যক্ষ সিরাজউদ্দিন, ব্যাংকার নুরুন্নাহার, এস ভিপি মোঃ আবুল হাসেম, প্রফেসর ফরিদ আহমদ, প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম, প্রফেসর মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রফেসর নুরুল আনোয়ার, উপাধ্যক্ষ মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রমূখ।