এখন সময়:বিকাল ৫:১২- আজ: সোমবার-২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:বিকাল ৫:১২- আজ: সোমবার
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

পদাবলি (আন্দরকিল্লা মার্চ-২০২৫)

 

খুকুমণি আছিয়ার লাশ

আসাদ মান্নান

 

লক্ষ্মণ মোটেই ভালো নয়– চারিদিকে শুধু ভয় আর

ঘনঘোর আতঙ্কের  বিভৎসিত ছায়া ;

অবাক হবার মতো তেমন কিছুই ঘটছে না, বরং এটাই

স্বাভাবিক; কেননা মানুষ নামে

যারা পরিচিত তারা কিন্তু জীব নয় –শুধু  জন্তু,

জন্তু ছাড়া অন্য  কিছু ইদানীং  চোখেই পড়ে না।

মিশন সমাপ্ত হলে সারি সারি নিহত গোলাপ

রক্তমাখা মেঘ হয়ে  ভেসে যাচ্ছে  মলিন জ্যোৎস্নায়।

 

হিমাগারে  অন্ধকার–  কতিপয়  হিংস্র  জানোয়ার

অবুঝ শিশুকে নিয়ে এ কেমন  অশ্লীল নেশায়

মেতে ওঠে! কে দেবে উত্তর? গন্ডারের চামড়া গায়ে

সভ্যতার সুশীল বাবুরা চোখ কান বন্ধ করে

মিডিয়া সেলুনে বসে পরম আনন্দে পা দুলিয়ে

তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে; আর বাল কামানোর  ক্ষুরে

গোপন বাসনা বুকে ধার দিচ্ছে নাপিত মশায়।

হাটে ঘাটে  দেখা যাচ্ছে গোবেচারা  বণিক বেনিয়া

যদিও আগের মতো খোস মনে খুব  ভালো নেই

তবু তার কায় কারবার ঠিক ঠাক বেশ চলছে :

নিজের নিয়মে নিত্যদিন সূর্য ওঠে সূর্য ডুবছে;

যদি ভয় সর্বত্রই সারাক্ষণ ওৎ পেতে রয়

তবে আল্লাহ মালুম গরীবের কী আছে কপালে!

আসন্ন মৃত্যুর  গন্ধে  ঝরে যাচ্ছে  পলাশের কুঁড়ি

মলিন বদনে আমাদের হতভাগী মা জননী চোর

ডাকাতের পাশাপাশি  বর্ণচোরা খুনি

জাহান্নামি  ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়;

নিজের শিশুর জন্য  সুরক্ষার মহল বানাতে

নিষ্ফল প্রহর গুনে জননীর চোখে ঘুম নেই :

রমজানের ঈদ আসে রক্তে ভেজা চাঁদের কেল্লায়;

ঈদের  জ্বলন্ত  চাঁদ পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে  —

ভস্মীভূত ছাই যেন খুকুমণি আছিয়ার লাশ–

এ লাশ কবরে নয় পড়ে আছে বাংলার হৃদয়ে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

======================================

 

 

 

 

 

 

 

আমি ফিরবো না

শ.ম.বখতিয়ার

 

অপরাজেয় বাংলায় তীব্র প্রতিবাদ

শুভ্র পত্রে দগদগে কবিতার শব্দ

সশস্ত্র বাহিনী বিউগলে তুলবে করুণ সুর-

আকাশ বাতাস ভারি করে,

কবরে পুষ্পস্তবক দেবে প্রতিবেশী

মোড়ে মোড়ে ব্যানার ফেস্টুন মানববন্ধন

গণমাধ্যম সরব হবে ফার্স্টলিডে

অন্তর্জালে ভাসবে শোকের অগ্নি

বিশাল সভায় কন্ঠ ছেড়ে

সরকার পতনের ডাক !

আমি ফিরবো না

আমি তোমাদের মতো সভ্য কোনো মানুষ না,

সমাজে জন্মেছি নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত হতে!

 

পরিণতি জেনেও কেনো এ পৃথিবীতে নিয়ে এলে?

মা, তোমাকে ধিক্কার জানাচ্ছি-

ঈশ্বর তোমাকেও…….

 

============================

 

একই স্রোতধারায়

দিলীপ কির্ত্তুনিয়া

 

বাড়ির পাশে নদী বয়ে যায়। দেখো,

তোমার হৃদয়ের বাসনা আমার হৃদয়ের বাসনা

এক হয়ে গেছে।

একই স্রোতধারায় ছুটে চলেছে।

 

আমাদের গায়ে দীর্ঘায়ু এক বটগাছ আছে।

তার জন্মের তারিখ শুধু মাটি জানে

আর কেউ জানে না।

আমাদের স্বপ্নগুলি তার শেকড় বাকড়ের সাথে

অনেক গভীরে। একই মাটির খাদ্য রস চুষে

বেঁচে আছে।

আমাদের মাথার উপরে একটি আকাশ ।

একই স্কুল ভিটে । একই শিক্ষায়তন ।

একে একে মিলমিশ –দিকে দিকে ।

দুর্গা পূজায় একই মণ্ডপে পূজা হয় ।

অসুখ বিসুখে একই ডাক্তারকে

ডাক্তার দেখানো  —

কালীপুজোর দিন কেউ মাছ খায় না

সবাই নিরামিষাশী হয়।

শত মানুষের বাস কিন্তু কষ্টগুলি

প্রায়শঃ একরকম। আনন্দগুলি

একটি ফুল — একটি সৌরভ।

যাপনের ঠিকানা এই মাটি

এই গ্রাম।

=============================

 

তোমার  হাতের অন্যমনষ্কতা

দুলাল সরকার

 

তোমার  হাতের অন্যমনষ্কতা আমাকে

বিপথগামী করে— বিরল উদাসীনতা

আমাকে দীর্ঘস্থায়ী বেদনা শেখায়,

আপোষ করতে বলে অন্যায়ের সাথে —

ধ্রুব যা বিরুদ্ধে যেতে  বলে—- আঙ্গুলের

নির্জীব নির্লিপ্ততা বাধ্য করে  রাতভর

মগ্ন থাকতে বিকল্প  গান্ধারে ;

হাতের নীরবতাগুলো

প্ররোচিত করে যেন অনুচিৎ সংযম শিখি,

ডুবে গিয়ে প্রলুব্ধ করে বকুল আঁধারে

মুখ রাখি দ্রাবিড় সন্ধার ঠোঁটে অব্যক্ত কান্নায়— পোশাকি পরিচয় খুলে

বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দাঁড়াই কাঠগড়ায় —

তারপর সকাল কুড়াতে গিয়ে খুঁজি আমি

ভোরের নগ্নতা,অধিকৃত সকালের ঘ্রাণ।

 

 

 

 

============================

 

 

হারিয়ে যাবো একা আর একাকী

হোসেইন  আজিজ

 

এখানে তো ছায়াসমেত তুমি আর আমি

এখানে কবিতা কোথায়?

শুধু ছন্দের মোহমায়ায় লেপ্টে থাকা

তোমার তৃষ্ণার সমান প্রতিধ্বনি

আমার মুখে একটা নষ্ট মুখোশ সেঁটে যায়!

 

আমাদের কবিতা একদিন তোমার চোখে

বিস্ময়ের অন্বেষা হতে পারে

যেখানে ছলকে উঠে শব্দলেখা,

আমার নিঃশব্দ বন্দনায় কেবল তুমি

তুমি কিংবা শব্দ, কেউ তা জানে না!

 

কোনো এক ঝলমলে সন্ধ্যায়, কবিতার উৎসবে

তোমার-আমার সীমাহীন শূন্যতা থাকবে।

কবিতা হবে না, হবে শুধু অনুভবের আল্পনা,

যেখানে তুমি আর আমি একাকার হয়ে

একা আর একাকী, একই ছন্দে হারিয়ে যাবো।

 

====================================

 

 

হরিকেলের এক কোণে

রুহু রুহেল

 

একদিন চলে গেলে আরাকান সড়ক দিয়ে

ওই পথ দিয়ে হেটে চলতে প্রতিবার কষ্ট বাড়ে

কতফুল কত ফল আর কত শত কাল

নীল গহ্বরে বিলীন; প্রচ্ছন্নে কলকাঠি নাড়ে মহাকাল

কে রাখে তার খবর, আমরা চলি নিত্য বেখবর!

 

ছলাৎছল ছলাৎছল নদীর শব্দের মতো

প্রিয়তমা অবিরাম; বুকে বাজে রুনুঝুনু

হৃদয় মন্দিরে ভাসে কেবল তোমার অপরূপ তনু!

 

হাস্নুহেনার মৌতাত গন্ধ এখনো পাই নীরব সন্ধ্যায়

গ্রীস্ম আর শরতের কামনার্ত তিথি; চাই মোহনার উপস্থিতি

কিচ্ছা কাসুন্দির বহু অবসরে

তোমার কৃতি -আকৃতি প্রতীক হয়ে জ্বলজ্বল করে

নিঃশব্দে মালা গেঁথেছে কবিতা-মূর্তির এক ভাস্বর অভিসার!

 

দক্ষিণ সড়ক বেয়ে  চলে গেলে, উত্তরায় রেখে

পূর্ব-পশ্চিম হিসেব কষতে কষতে পাড়ি দিলে

বৃহৎ প্রাচ্যের কাছে ভূমধ্যসাগর পাড়ে

সাগরতীরের বায়ুর বিষ্ণণ্ন উষ্ণ প্রবাহে দুললে বহুকাল

দিনান্তের দিনে কত কাতর;বিরহের নিস্তব্ধ পেষণ

পনেরটি বসন্তের পর পনেরো বর্ষার দিনে

হঠাৎ এক মধুর ক্ষণে সাড়া দিলে

পূর্ব প্রাচ্যের পুরনো শহর হরিকেলের এক কোণে!

 

সে পথ দিয়ে এখনো হাঁটি শুকতারার সাথে

নীল নবঘন রাতের কাল ও কোলে ঢলে পড়ি

রূপকল্পের সিঁড়িতে, কতটুকু বোঝো

কতটুকু বুঝতে চাও না! আজও জানা হলো না

 

কমনীয় ফল্গুজলে প্রিয়তমেষু মোহনা

তুমিই শুধু আরাধ্য সারথীর; একবিংশের শ্রেষ্ঠ উপমা!

 

 

================================

 

 

ফুলশয্যার গাছ

মাসুদ মুস্তাফিজ

 

গন্ধম নামক গাছটিকে আমি জানি না তাহারে আমি চিনি না—তাহার গন্ধ রুপরস আর বাহারিফুল ফলের ভয়মিশ্রিত আর্কষণ নানাভাবে আমাকে ভাবায়! হয়তো এই গাছটির ক্ষমতা সর্ম্পকে আমার ধারণা নেই—অথচ এই গাছটি আমাকে দারুণভাবে চেনে——জেনেছি এর ঘ্রাণ অদৃশ্যের সাতকাহন পৃথিবীকে মাতাল কোরেছে অবিস্মরীয়কাল থেকে। আরো বুঝেছি গন্ধমগাছের নিষিদ্ধ ফল আদম– হাওয়ার শাস্তিমিথ আর চিত্রকল্পে ঈশ্বরের মধুরতায় বপন করা। আহা! কী বিস্ময়——গাছ নিষিদ্ধ নয় পাতা নয় ফুলও নয়

মৃত্যুবোধের অমরতায় আবার যদি সেই গাছ পৃথিবীর বুকে পাওয়া যেতো অপার সুখমিশ্রিত ভাবনায় তার ফুলসুবাসে আমি আরেক জীবন পেতাম প্রিয় ফুলশয্যার রাতে!

 

 

=======================================

 

বারুদগন্ধী মানচিত্র

আশীষ সেন

 

কাছে এসো, সম্মুখে দাঁড়াও, বসে আছি

ফণীমনসার ঝোপে,

ডুব দিয়ে মুখ ঢেকে, বুদবুদ ভাসে জলের রেখায়,

দূরে দাঁড়িয়ে কচি শিশুটির মতন কলাপাতা দুলছে।

 

যাবো কি যাবো না বুক পুড়ে যায়, পুড়ে যায়

ছোঁব কি ছোঁব না দিন চলে যায়, চলে যায়।

 

আমরা পতাকা পুঁতেছি দণ্ডে, যাবো কোথায়?

 

এই সেই বুকের ভেতর বারুদগন্ধী মানচিত্র

অঘ্রাত অঘ্রাণে হাজার বছরের সুর-তান-লয়

আমাকেই শুধু কানে কানে বলে বুকে টেনে নিয়ে,

থেকে যাও, কেড়ে নাও আগুন ফোটাও

শ্রাবণে চৈত্রে বারমাসে।

 

 

================================================

 

 

 

খুঁজে নাও হে অমৃত

খাতুনে জান্নাত

 

শিল্পের শহরে আমি একা চোরাগোপ্তা কবিতা চরণ

আমাকে খুঁজছো চলমান বাতি

স্টেজের শোবিজ, পত্রিকার সাহিত্য সংসারে

আমি আজও অনিন্দ্য মুখর গ্রামের সরলপথে প্রান্তরে বাতাসের ঐকতান

পাঠশালার মুখরতায় নামতার উচ্ছসিত শিশুবেলা

হাঁটতে হাঁটতে জমা করেছি শরীরভরা কাঁটার দগ্ধ উচ্চারণ

কদলী পাতার মতো নুয়ে আসে চোখ-

গণতান্ত্রিক উল্লাসে হত্যায় উন্মত্ত জনতার হিংসায়

আমাকে খুঁজো শব্দের সহিষ্ণু ব্যাকরণে

পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় জমানো শস্যের অভিমান

আমজনতার গোপন নিশ্বাসে

ঝুলে থাকা লাশের দৃশ্যায়নে

আমাকে পাবে, ঠিকই পাবে…

 

 

 

====================================================

 

 

 

 

প্রাকৃতিক

চিংলামং চৌধুরী

 

বাইরে বয় তুমুল হাওয়া

না হোক খাওয়া না খাওয়া

তুমি হও বিনোদিনী রাই-

চলো বাইরে, হাওয়া খাই।

 

বললে, ভিতরে যন্ত্র চলে

বিজলীর আলো ঝলমলে,

জানালার কপাটগুলো বন্ধ

হোক না সবই সত্যসন্ধ!

 

ভেতরে না, বাইরেই যাই,

বাতাসেই অফুরাণ ভাসি-

প্রকৃতির সবুজেই হোক

আমাদের ভালোবাসাবাসি।

 

 

 

==================================================

 

 

 

 

অপ্রিয় রাত

সাঈদুল আরেফীন

 

যেতে চেয়েছি গন্তব্যে,হয়নি যাওয়া

যেতে চাওয়াটাও বদলে দেয়নি, কখনো বেলাশেষের গানে

প্রত্যাশার মরণ হয়েছে, ডুবে গেছে জিয়ন কাঠি

স্বপ্œ বিলাসী অচেনা কোন সরণিতে।

সৌম্য বিকেল,সূর্য ডুবি ডুবি মেরুণ আভায় ঢেকেছে

পাতাগুল্মময় সবুজ তটরেখা, সমুদ্র দ্বীপের চিলেকোঠায়

এক বসতঘর, চোখের ক্ষীণ আলোয় ভেসেছে,

সেখানটায় পৌঁছুবো বলে অলীক বৃত্তে হেঁটেছি বহুবার।

দিনেরও শেষে রাত্রি এসেছিল, আবারও সকালের দেখা হবে

এই ভেবে,

সানফ্রান্সিসকো শহরের জাদুঘর কিম্বা টেমস নদীর সুর

আশা ভাঙার কোন একদিন, হয়নি ভোর; জাগেনি সকাল আমার।

পাখিরা ডাকেনি

জীবন উদযাপনী প্রদীপে বৃত্তাবব্ধ হয়ে শিল্প গড়ি,

ঘুম ভাঙা সকালের বালিয়াড়িতে স্মৃতির চিহ্ন হয়ে

ফুরিয়ে গেছে প্রিয় শব্দগুলো। পাতা ঝরার  দিন

ঘুমিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে, তবুও অপ্রিয় রাতে আছি এই আমি।

 

 

================================================

 

 

বাংলা ভালোবাসি

আ.ন.ম. ইলিয়াছ

 

কেমন ছিলো জানতে চাসনে

ভালো ছিলনা দেশ,

বর্গি তাড়ায় বর্গি এসে

গিলে খেলো স্বদেশ।

 

সবুজ ক্ষেতে নীলের আছর

মাঠের পরে মাঠে,

শূন্য খৈলানে বলদ জোড়া

শুয়ে জাবর কাটে।

 

দাদার স্বপন সোনার মাঠে

নীল শকুনের ঘা,

নীলে ঢাকে দাদীর গতর

নীল আলতা পা।

 

কষ্ট চেপে বলছি শোন

ভালো কী ছিল আগে!

বাবার মন হয় দ্বিখণ্ডিত

সাত চল্লিশের ভাগে।

 

হায়েনার হাতে ঘুড়ির নাটাই

পশ্চিমে খাই গ্যোত,

ইচ্ছে মতো উড়ায় ঘুড়ি

খানসাহেবের পুত।

 

স্বপন দেখা স্বপন ভাঙে

ঘোর কাটার আগে,

লুটেপুটে নিলো সবে

পশ্চিমাদের ভাগে।

 

একাত্তরের মার্চে শুরু

রক্ত ঝরার দিন,

শহীদ হলো ত্রিশ লক্ষ

দেশ হলো স্বাধীন।

 

কেমন আছি জানতে চাসনে

ভালো  নেইরে দেশ,

পঁচাত্তর এ জনক মরে

এতিম হয় স্বদেশ।

 

বিষবৃক্ষের শিকড় গভীর

পাতালপুরি ছুঁই,

সুযোগ বুঝে কাটে স্বদেশ

তুলতুলে সব উই।

 

 

 

এবার জাগে বাংলাদেশি

উঠে জিন্দাবাদের রব,

ইতিহাসে যুক্ত হলো

জুলাই বিপ্লব।

 

ঘোর কাটার আগে দেখি

সব শুভঙ্করের ফাঁকি,

আধেক পাচ্ছি সুফল এখন

আধেক দেখার বাকী।

 

কেমন আছি জানতে চাসনে

বাংলার বুকে আছি,

বাংলা আমার সোনার বাংলা

আমি বাংলা ভালোবাসি।

 

 

===================================

 

 

রাস্তা

ফরিদ তালুকদার

 

বিপুল জন অরণ্যের ভিড়েও রাস্তাটা শূন্য বুক, একা

তপ্ত বালুচর, আমরা এখানে এখন আর কেউ ভোর দেখি না

করোটিতে হয় খর রৌদ্রের চাষ, আর-

পৃথিবীর বয়স গুণতে গুণতে আমরা খুঁজে ফিরি বুনো সভ্যতার ঘ্রাণ!

 

সৌম্য দর্শন যুবক

পায়ে অদৃশ্য বেড়ির ইনফ্রাসনিক আওয়াজ

তার মাথাকে অতিক্রম করে ছুঁয়ে যায় আকাশ

দুঃস্বপ্নের ঘোরে পোড়ে কাগজে তৈরী কিছু স্বপ্নের এপিটাফ

ঘুম নেই, তবু ঘুম ভাঙে!

 

অজস্র মৃত্যু অকারণ

সবশেষে তারপরও জেগে থাকে কিছু কোলাহল

কিছু গ্রন্থ, কিছু চার্টারড আইন, ও কিছু নয়

আপন স্বার্থে ব্যবহৃত হয় সব বয়ান!

 

মানুষের মন আর সভ্যতার এই চরাচর

বেড়ে উঠে দেখে দেখে একে অপরের প্রতিফলন!

 

তুমি-আমি, সেই এক যুবক, সবাই সেখানে-

মানুষ নামের এক দুর্বোধ্য অভিধান!

 

জন অরণ্যের ভিড়ে এক পথ, শূন্য বুক, একা

খুব একা!

 

================================

 

 

খুনের নেশা

নুসরাত সুলতানা

 

এমন তো হতেই পারতো

আমি আকাশী নীল শাড়ি, চোখ লেপ্টে কাজল,

আর খোঁপায় বেলীফুলের মালা পরে

তোমার লেকচার শুনছি শ্রেণীকক্ষে।

তোমার মুখে খোচাখোচা দাড়ি।

পরনে লেমন কালারের পাঞ্জাবি।

যেই আমাদের চারচোখে মিলে গেছে

পদ্মা আর মেঘনা

আমরা বোরাকে চেপে চলে গেছি ইন্দ্রের রাজসভায়

কানিজী রমণীরা পরিবেশন গেছে দ্রাক্ষার রস

তখন নেচে চলেছে রম্ভা আর মেনকা..

তুমি কাতর চোখে বললে দেখিয়ে দাও রাই..

আমি দুষ্টু হেসে বললাম— সখা, সখা হে

তুমি চাইলে আমি হতে পারি রম্ভার অধিক কিছু

তারপর আমি পায়ে ষোল জোড়া নূপুর পরে

নেচে চলেছি.. ভুলে গেছি নিজেকেও বুঝি

অতঃপর ইন্দ্রের চোখে পরম মুগ্ধতা

আর তোমার চোখে তীব্র  ঈর্ষা

অন্তরে খুনের অন্ধ নেশা..

 

================================

 

বন্ধু হবে প্রজাপতি?

শাহীন ফেরদৌসী রুহী সুলতানা

 

ছবির মতো পাখনা দুটি কে এঁকেছে জানো?

কি মায়াবী প্রজাপতি তা-কি তুমি মানো?

যেতে পারো দূর দূরান্তে কত শত দূরে?

দাওনা মধু,আছে কি ওই বাঁকা দুটি শূরে?

 

আমার কাছে যা আছে সব দেবো যদি বলো

বন্ধু হবে প্রজাপতি? নরম পাখা মেলো।

তোমার চলার সাথী হবে,চলবে একসাথে

জোনাকিরা পথ দেখাবে জ্বালবে আলো রাতে।

 

ছুটে গিয়ে আকাশ পানে তারা ছুঁতে পারো?

“মা”থাকলে দুঃখ দেয়ার সাধ্য নেইতো কারো।

যা আছে তা সবই দেবো “মা”কে এনে দাও

বিনিময়ে দিতে পারি প্রাণটাও যদি চাও।

 

সত্যি বলছি! দৃশ্যতঃ সব ওই তারাটায় আছে

পাবে তুমি”মা”-কে আমার শুকতারাটির কাছে

না পারো তো আনতে “মা”-কে আমায় নিয়ে চল

দুঃখভরা ওই তারাটির আঁখি ছলছল।

 

একা আমি বড্ড একা ভাল্লাগেনা কিছু

ভালোবেসে কেউ আমাকে ডাকে না আর পিছু।।

 

====================================

 

 

রঙের মানুষ

কাব্য কবির

 

পৃথিবীতে মেতেছো আজ

রঙবেরঙের খেলায়,

ভাবে না কেউ কি যে হবে

চলে যাবার বেলায়।

 

কেউ যাবে না সাথে তোমার

থাকবে তুমি একা,

করবে না কেউ অচীনদেশে

তোমার সাথে দেখা।

 

হিংসা, ধর্ষণ, রাহাজানি

অনাচারের পাপ,

পাপের সাজা পেতে হবে

করবে না রব মাফ।

 

অসৎ কর্ম ছেড়ে সবাই

ভালো কর্ম করো,

ধর্মের নিয়ম মেনে সবাই

জীবনটাকে গড়ো।

 

 

=================================

 

 

সাইক্লোন

ওসমান গণি

 

এভাবেই…

ক্ষুধাক্ষেত্রে ভাতের সৌন্দর্য অবর্ণনীয় সুখ

কিছুই ঈর্ষৎ বারবার বহু সান্ধ্যদীপ

ঝড় কাঁপিয়ে আঁধারে উড়ে গেছে

 

যুগযুগও নির্বংশ হয়নি সাইক্লোন

 

বারবার ঘূর্ণিঝড় পাঠ করিলাম

ইহাতে কোন মনুষ্যচরিত্র গাছপালা ও ভাষা নাই

এই বঙ্গোপসাগরের যেমন রূপ তেমনি মেধা। সে ছন্দ জানে

বিজ্ঞানও জানে জোয়ার-ভাঁটা, নক্ষত্র, মেঘতত্ত্ব সবই

জানেনা শুধু থামাতে বৃহৎ বায়ুর চাপ

 

এভাবেই বারবার ভয়ে অস্থির শহর উপকূল

 

 

 

 

======================================

 

 

যখন এলে

এহতেশাম সিদ্দিকী

 

সেই তো এলে—এতো দেরি করে কেনো এলে?

ঘরের কপাট গেছে ভেঙ্গে—

বেঁধে রাখার শিকল গেছে নষ্ট হয়ে—

কি দিয়ে আটকে রাখবো তোমায়?

তুমি যখন আমার ঘরে এলে—

তখন আমার ঘরে জলের প্লাবন

কোথায় তোমায় আশ্রয় দেই।

 

তুমি যখন এলে

তখন ঘূর্ণিঝড় সব বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।

 

তুমি যখন এলে

তখন ভিনদেশী মুসাফিরকে বিদায়ের শোককে

গৃহস্থ শক্তিতে পরিণত করেছে

অন্য কোন মুসাফিরকে আপ্যায়নের আশা নিয়ে।

 

তুমি যখন এলে

তখন কোন জনপদ শোকের কাহিনী শেষে

নতুন কোন আশায় বুক বাঁধে।

 

তুমি যখন এলে

স্বার্থের নেশা কেটে তখন লালিত ভালোবাসার পাখিটি

অচিন দেশে চলে গেছে।

 

তুমি যখন এলে

তখন অভিমানী মন এমন বন্দরে গেছে—

যেখান থেকে তোমার বন্দরে

আর ফেরা যায় না—

যে ঠিকানা হারিয়ে যায়

সে ঠিকানায় কি ফেরা যায়!

 

=====================================

 

 

ঈদ মানে ভালোবাসা

অপু বড়ুয়া

 

ঈদ দেয় জীবনের দ্বিধা গুছিয়ে

ঈদ আসে শান্তি পসরা নিয়ে

হিংসা ও হিংস্রতা

হৃদয়ের জটিলতা

মন থেকে সব দোষ দেয় মুছিয়ে।

 

ধনীদের মনে দেয় মমতার রেশ

গরিবের মাঝে থাকে সুখের আবেশ

থাকে না তফাৎ কোন গরিব ধনীর

এক হয়ে যায় সব হৃদয়ের তীর।

 

ঈদ এসে বলে যায় সবাই সমান

মানুষের মাঝে কোন নেই ব্যবধান

কদিনের দুনিয়ায়

কেউ আসে কেউ যায়

প্রাণে প্রাণে গড়ি এসো ফুলের বাগান।

 

 

=======================================

 

কালরাত্রি

সারমিন চৌধুরী

 

এই যে নেমে আসছে কালরাত্রি

চোখমুখে জেগেছে অজানা এক ভীতি

রক্তের ন্যায় মুহূর্তগুলো মাটিতে ক্রন্দন করছে

বেগতিক হচ্ছে হাওয়া ভেঙ্গে পড়ছে ডালপালা

মাথার উপর শুধু কলোসিয়ামের ক্রুদ্ধ দেয়াল

তবু আমি আছি ঠাঁই দাঁড়িয়ে নির্বাক চোখে

শক্ত করে আঁকড়ে রেখেছি স্মৃতির ফসিল

তুমি শুননি, ডানা ভাঙা পাখির গোঙানি?

কপট সৈনিকের ক্রাচের মতো ক্যাচক্যাচ শব্দ

যা ইশারা দিয়ে কেবল ধ্বংসের পথেই টানে

যেমন বসন্ত আসবার আগেই বৃক্ষের বুকে চলে

বিগত স্মৃতিদের ঝরা পড়া সুতীব্র চিৎকার,

তবু তো ফুলের মায়ায় মজে ভুলতে চাই শোক!

কিন্তু আমি ভিখারির মতো বসে আছি;

ভরসার ব্যর্থ ক্লান্তির মতো একরাশ হতাশায়।

জানো অপেক্ষার পালা ফুরিয়ে এসেছে?

এবার নিজেকে শান্ত করার ছলে ও কৌশলে

নাহয় শ্বাসরুদ্ধ করে গলাটিপে মেরে ফেলবো

যার সাক্ষী হয়ে থাকবে ভয়ার্ত এই রাত্রি।

 

 

================================================

 

আমার শেষ কথাটা

মানস কুমার বড়ুয়া

 

মাটি তো নয় যেন খাঁটি সোনা

এ দেশের মাটির প্রতিটি কণা

যেখানে সেখানে সোনা ফলে

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা

প্রিয় এ জন্মভূমির জলে স্থলে

তোমার ফল জল শস্য বায়ু খেয়ে হয়েছি বাড়ন্ত

ডুবে থাকি অবিরত ষড়ঋতুর ছায়ায় মায়ায়

রূপ বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ গ্রীষ্ম বর্ষা শরত হেমন্ত শীত ও বসন্ত

তাইতো বলি প্রগাঢ় ভালোবাসি

আমার সোনার বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি

যতই দূরে থাকি দিবানিশি স্বপ্নে স্বদেশ তোমাকে দেখি

পরম আনন্দে মনের তুলিতে হৃদয়ে আঁকি

কখনো তোমায় ভুলিব না

আমার শেষ কথাটা আজ তোমাকে বলে রাখি।

 

 

======================

 

 

ঈদ

টিপলু বড়ুয়া

 

ঈদ মানে তো

দিন-নিশিতে, আপন খুশিতে

ব্যস্ত থাকা নয়।

ঈদ মানে তো

নতুন সাজে, কাপড়ের ভাঁজে, নিজেকে সাজানো নয়।

ঈদ মানে তো-

নিজের ভুঁড়ি ভোজে, আপন কাজে ন্যস্ত থাকা নয়।

ঈদ মানে- নিজের খাবার অন্যের মুখে তুলে দেওয়া।

ঈদ মানে- নিজের কাপড় অন্যকে বিলিয়ে দেওয়া।

ঈদ মানে- সবার মাঝে নিজেকেই খুঁজে পাওয়া।

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না

শোয়েব নাঈম শব্দের মধ্যেই থাকে জীবনের আসল দর্শন। শব্দের কারণেই মানুষ হয় নির্বাসিত। এখন মঙ্গলের অমরতায় ঘামছে গ্রীষ্মের বৈশাখ মাস। মঙ্গল এই শব্দবোধে যতটা কল্যাণ

চীনের মতো আমাদেরও ভাবা উচিত

আমির হোসেন চীনে ফেসবুক, ই’নস্টাগ্রা’ম, ইউটিউব, গুগল, গুগল ম্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ক্রোম ব্রাউজারও ব্যান! শুরুতে শুনে বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝতে পারছি- ওরা আসলে অনেক আগেই

গল্পশূন্য জীবনের ইতিকথা

আন্দরকিল্লা ডেক্স : আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন

সংস্কার চাই : চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

নিখিল রঞ্জন দাশ সম্প্রতি চট্টগ্রাম এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে আগামী ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনকে দেয়া হবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের ৬০

চল্লিশ বছর পর জীবনের প্রথম প্রেম আবার ঝড় তুলল মৈত্রেয়ীর জীবনে “মির্চা, মির্চা আই হ্যাভ টোল্ড মাই মাদার দ্যাট ইউ হ্যাভ কিসড মাই ফোরহেড'”

নহন্যতে উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবীর এই উক্তি টি অবশ্যই পাঠকদের মনে আছে? মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর প্রেম কি শুধুই প্রেম ছিল নাকি সেই সাথে কিছু