শামীম নওরোজ
সোনালু ফুলের রেণু
০৯.
তোমার সামনে সবুজ গোলাপ আছে
তোমার ভেতর রঙিন ফানুস ওড়ে
আমার সামনে সফেদ জবারা নাচে
আমার ভেতর কল্পিত পতঙ্গ ওড়ে
অসহায় জানে , জানের অবুঝ ক্ষতি
জলের অভাবে মাঠেরা চৌচির হয়
পাখিরা আসে না , শুয়ে আছে সূর্যজ্যোতি
জীবন জেনেছে , জীবন এমন নয়
তোমার বাড়িতে শালিকের শোকসভা
আমার বাড়িতে শোকাহত চন্দ্রপ্রভা
১০.
আমারো ভয়ের বাড়ি , বাতাসে কাঁপন
ভালোবাসা , অভিসার এটাই অসুখ
আমি তো শিকারি নই , কৃষকের ছেলে
আমার বান্ধবী কৃষিকন্যা , ভীষণ মিশুক
জলে ও জঙ্গলে বাস , ফসলের ক্ষেত
তবুও জীবন জানি , স্নিগ্ধ রাত্রি নয়
বাতাসের হাত ধরে উড়িনি কখনো
নদীকূলে অবাধ্য জলের অপচয়
শ্মশানে আগুন জ্বলে , বাড়িতে ক্রন্দন
তবুও প্রেমিক পাখি নন্দের নন্দন
১১.
কথা বলে। শোনে…
ছায়ারা ছোটো হতে-হতে পায়ের নিকটে ফেরে
রোদ্দুরে পুড়ছে পথ। পথিক নই। হাঁটছি মাত্র
শোনে। কথা বলে…
অধিকাংশ সময় চেয়ারে ও টেবিলে
লেখাপড়া করে
বলা ও শোনার মাঝে গঠিত হয় কবিতার শরীর
১২.
শব্দগ্রহ নেই , শুনতে পাইনে তাই
চুলোভর্তি লাকড়ির বিষাক্ত আগুন
আমাদের ঘর-বাড়ি জঙ্গলের পাশে
ঘুম আসে , ঘুম ভাঙে , আতঙ্কিত হই
জলজ প্রাণিরা আসে উঠোনের ‘পর
মেটেল পাখিরা বসে চালের উপর
অন্ধকার চেপে ধরে বুকের বাঁপাশ
ভয় আসে , ভয় থাকে , সুখচর নই
ভীষণ ক্ষুধার্ত বাঘ , জঙ্গলে নিবাস
ভয় , ঘুম , অন্ধকার , সমস্ত জীবন…
১৩.
সবুজ ঘাসের উপর বিকালের রোদ্দুর
তার পাশে খেলা করছে মায়াবী পুতুল
যাচ্ছি , যাই…
পুকুরে হাঁসেরা সাঁতার কাটছে
জলের গভীরে মরমি ধীবর
ব্যাকুল আনন্দে আছে বাগানের গন্ধরাজ
মালী থাকে ফুলের পাড়ায়
মালিনী হারিয়ে গেছে রেণুর ভেতর
========================
এসো তোমাকে কিছু কষ্ট এঁকে দেখাই
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
এসো , তোমাকে কিছু কষ্ট এঁকে দেখাই
— এই ক্যানভাসে ।
ধর্ষিতা নারীর ছবি ।
দেখো, তার শাড়িখানা কত এলোমেলো
লজ্জায় ঢাকা মুখ
অশ্রুকণা শুকিয়ে পাথর ।
দেখো , কিছু ভাঙচুরের খেলা দেখো
একেবারে সদ্য এঁকেছি —
ভাঙা বাড়ির রঙ রহস্য
এখনও মিলিয়ে যায় নি ।
আসলে এটা কিন্তু ঝড়ে ভাঙেনি
জোরপূর্বক ভাঙা
একেবারে নির্মল ছবি !
কালো ছোপ ছোপ
এটা আঁকতে কালো রঙ ব্যবহার করেছি
কারণ আগুনে পুড়ে গেলে
কয়লাই হয় আর তার রঙ কালো
মিশ্ কালো —
পুড়ে গেছে বসবাসের চাল, বেড়া
দাঁড়িয়ে কেবল কিছু পোড়া নাঙ্গা খুঁটি !
কেমন লাগলো — মন্তব্য করে যেও
খুব কষ্ট করে এঁকেছি ।
—————————————
বিপথগামী সুখগাঁথা
আ ই না ল হ ক
ফুলের স্ত্রীকেশরে পরাগায়িত হয় নিগূঢ় অন্ধকার
ক্রমশ আঁধারে নিমজ্জিত হয় পৃথিবীর পথ
সূর্যের মুখে কালিমা লেপনের নির্মোহ প্রচেষ্টা সফল হলে
ব্যর্থ হয় রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল
ব্যর্থ হয় নিয়নের লাল-নীল বাতি
ব্যর্থ হয় মানুষের আলোকিত মন
নৈসর্গিক সুখ চুরি গেলে পড়ে থাকে বিষন্নতার খোলস।
পরিপাটি হৃদয়ের সুখগাঁথা বিপথগামী হলে
আফসোসের মৌন মিছিল নেমে আসে কংক্রিটের রাজপথে।
চিরকাল কর্তৃত্ববাদের শিকার নিরীহ প্রাণ
বারুদের গন্ধে সম্বিৎ ফিরে পেলে পৃথিবীর দরজায় দাঁড়িয়ে লেলিহান শিখায় দেখি প্রতিহিংসার আগুন
রাজনৈতিক রোষানলের বায়বীয় বিষ বাষ্পে তাকিয়ে
লোভ আর ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই দেখি না। যুদ্ধ কিসের সমাধান? কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার নীল নকশায় নিরীহ প্রাণ বিসর্জনের দৃশ্য দেখলে বুকের উপর এসে দাঁড়ায় দুঃখবোধের এক অসহায় পাহাড়।
================
জন্মান্ধ উত্তরাধিকার
পঙ্কজ শীল
আমরা সবাই পাই এক ঠোঙা আলো
যেখানে সূর্য নেই, কেবল গল্প থাকে
বংশের ইতিহাস, গায়ে গেঁথে যাওয়া ধুলো,
আর একরাশ অদৃশ্য ভয়।
জন্ম থেকেই চোখে একরকম ছায়া
যা আলোকে নয়, অন্ধকারকে চেনে ভালো।
বাবা শিখিয়েছিলেন-
“চোখ মেললেই জীবন দেখা যায় না,
শুধু দায়িত্ব দেখা যায়-
পিঠে চাপানো শেকলের মতো।”
মা বলতেন
“তোমারও একদিন হবে সংসার,
তুমি পাবে উত্তরাধিকার
জমি নয়, জ্ঞান নয়, কেবল বোঝা।”
আমি বুঝতাম না
কেন শব্দের ভেতর এত কাঁদা জমে থাকে,
কেন ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা ছবিগুলো
আমায় চেয়ে থাকে
অভিযোগহীন, অথচ করুণ।
আমরা উত্তরাধিকার পাই
ভয়কে ঠেকিয়ে রাখার কৌশল
প্রেম লুকাতে শেখা মুখোশ,
আর কিছু অদৃশ্য নিষেধ।
আমার পুত্র জন্মালে আমি তাকে বলব
“তুই চোখ মেল, যা দেখবি, তুই বুঝবি।
কিন্তু যা পাস, সবকিছু নিতে নেই।
উত্তরাধিকার মানে অন্ধ অনুকরণ নয়
বেছে নিতে শেখ, সাহস করে।
আর যদি জন্মান্ধ হয়েই জন্মাস,
তবুও হৃদয়ের আলোয় চলার পথ খুঁজে নিস।”
=============================
আলী আকবর ডেইলে
রেজাউল করিম
পৌষের এক শীতল মধ্যদুপুরে গ্রাম্যপথে
আলী আকবর ডেইলে এসে থমকে দাঁড়াই–
দেখি,পথের ওপাশে শোঁ শোঁ বাতাসে
বায়ুপাকা ঘূর্ণিচক্রের তোপে অবিরাম ঘুরে
অর্ধেক তার সচল,অর্ধেক তার অচল
অনতি দূরে আহত বেড়িবাঁধ,লাগেয়া সমুদ্রতট বিষণ্ন
মধ্যখানে বিস্তীর্ণ নোনা জলের খেত
কী ভীষণ ক্লান্ত অবসন্ন!
এপাশের চরের তরতাজা মৌসুমি ফসলের
গন্ধে আমার মন বিভোর
চিকচিক রোদে অতলান্ত জলে
বেদনার আগুন জ্বলে-
উদাসী মন আমার,হঠাৎ দেখা হলো পথে
সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ নাজের আলীর সাথে
কপালে বলিরেখা,চেহারায় কষ্টের দাগ তার
একদিন কি না ছিলো তার–
আত্নীয়-পরিজন,গৃহস্থালি ঘরবাড়ি
গোয়াল ভরা গরু,খেতের ফসল,পুকুর ভরা মাছ
সবই ছিলো তার…
একানব্বুইয়ের তুফানে নিষ্ঠুর রাতে আজরাইলের
বেশে এক রাক্ষসী তিমির পাখনার ঝাপটায়
সব হারিয়ে যায় তার
সেই দগদগে দুঃসহ স্মৃতি
আজও তাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়।
==============================
ম্রিয়মান আকাশের দিকে
ভানু পুরকায়স্থ
সায়াহ্ন সন্ধ্যায় নীড়গামী ক্লান্ত পাখালির মতন
আমি যখন দিনান্তে ঘরমুখী হই তখন
মনে মনে ভাবি
সকল ক্লান্তির রেখা মুছে নিয়ে নিদ্রার নিচোলে
আবার উঠবো জেগে নবযুগ এনে দিতে দিকহারা পথিকের কাছে
তবু কেনো জানি অভিমানী ঘুমের কারণে
আমি নিদ্রাহারা হই
আমার চোখ জুড়ে জ্বলতে থাকে পৃথিবীর সবিরাম অগ্নিগিরিগুলো
আমিও ক্রমশ ভুলতে থাকি পথরেখা রাশি
বিস্মরণে চাপা পড়তে থাকে তখন
কত কত সভ্যতার সুশোভিত নগর রাষ্ট্র বিদর্ভ উজ্জয়নী
মগধ কুশল
বঙ্গ পুন্ড্র রাঢ় সমতট হরিকেল
জীবনের সুদীর্ঘ লালিত স্বপ্নের লুম্বিনী উদ্যান
প্রিয় যশোদরা
নীরাঞ্জনা নদীটির তীর
অবশেষে চেয়ে দেখি অস্তাচলে মলিন সূর্যের মতো
আমিও মিশে যাচ্ছি ক্রমে
গভীর এক অন্ধকারে
অগস্ত্যযাত্রায়- ম্রিয়মান আকাশের দিকে।
======================
ইতিহাসের মুখোমুখি
এম এ ওয়াজেদ
পৃথিবীর পাঠশালায় ছড়িয়ে পড়েছে
আদিবাসী প্রতিজ্ঞাপত্রের ইনডেলিকেট রিমার্কস
চৌর্যবৃত্তির মানসিক কৃষ্ণতিথির ক্ষুধার্ত নেকড়েগুলো
না বোঝে সৌন্দর্যদায়িনী চৈতন্যময়তার সিম্পটম
না জানে মৃত্যুঞ্জয়ী ধ্রুবত্বের উল্লাসমুখর প্রাণশক্তি
না মানে পূর্ণবিকাশের রমণীয় সাহিত্য চ্যাপ্টার
যে অভিযুক্ত ফেরারি আসামিগুলো
পকেটে রাখে জাতিসত্তা নিধনের ইনডেমনিটি লাইসেন্স
যাদের হাতে শোভা পায় অবীরত্বের বক্সিং গ্লাভস
ইবলিসের মন্ত্রণাসভার আজ তারা আত্নম্ভরী রাজদূত ।
যে অসম্প্রদায়িক উদ্যানের মধুসিক্ত প্রেম গালিচায়
আমাদের শান্তিবাদী অবাণিজ্যিক সার্বভৌম দেহগুলো
আনন্দদায়িনী কনসোর্টিয়ামের অহিংস গান শুনবে বলে
এজমালি একাত্নবোধের প্রশিক্ষণাকাঙ্ক্ষী ছাত্র ছিলো
যন্ত্রণার ক্ষিপ্রগতির দুর্বিপাকের পাওয়ারফুল কমুটেটর
ভেঙে ফেলেছে মানবাধিকারের ছায়ানুসারী ক্যাটালগ
আমাদের আত্মরক্ষার বুকের তাজা হাড়গুলো
পাঁজরের হাড় থেকে একে একে খসে পড়ে
যে সদ্যোজাত শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করবে বলে
জরায়ুর পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে আসে
সে দেখতে পায় –
রক্ত ঝরছে বুলেটবিদ্ধ শ্বাসপ্রশ্বাসহীন মাতৃস্তন থেকে ।
সভ্যতার শুভেচ্ছালিপি আজ
দাসত্বের শৃঙ্খলাবদ্ধ তাঁবেদারির সামন্তবাদী অথর্ব বৃদ্ধ
তার যৌবন ধ্বংস করেছে-
দখলদারিত্বের জরাগ্রস্ত পলিতকেশ বিক্ষুব্ধতার মার্কেটিং
তার গর্ভাশয়ে খেলা করে বৈধব্যের বজ্রাহত দাবদাহ
ভেঙে পড়েছে সভ্যতার নিরাপত্তা বেষ্টনী
অন্তর্দৃষ্টির সিসি ক্যামেরার আত্নগর্বী স্বচ্ছ লেন্স
তাদেরকে বলা হয়েছিলো জীবনদায়ী স্যাকারিন খেতে
কথা শোনেনি দানবিকতার ঘৃণিত মেফিস্টোফিলিস
অথবা বিপজ্জনক স্যাবটিয়ারের লজ্জাহীন মুখগুলো
আর তাই ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে
সৌভাগ্যহীন সভ্যতাবিকৃতির অশুভ দায়ভার।
==========================
স্বপ্নের খাম
প্রতিমা দাশ
বেঁচে থাকার তৃষ্ণাগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে!
দৃশ্যমান সবকিছু অদৃশ্য অশ্লীলতার স্রোতের কাছে বন্দী!
পুরাতন শ্বাসকষ্টে থমকে আছে সামাজিক কোলাহল!
শূন্য আবেগে বিজিত শিকারী বেশে ভোরের নিস্তব্ধতা!
অমাবস্যা শীতের কাছে সূর্যের উষ্ণতার হার দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত!
মাঝেমধ্যে হুঁকোভর্তি স্বপ্নে চোখ বুজে বুঁদ হয়ে থাকি!
এই বুঝি পোড়া হাঁড়িতে মোটা ভাতের ফেনা উঠবে!
কাঁটাতার ভেঙে বেরিয়ে আসবে পৌষের সমস্ত স্পর্ধা।
শেষ অঙ্কে, নিজেকে দেখি অসহায়ত্বের আয়নায়,
মিথ্যে চুম্বন শেষে এক অন্ধপ্রেমিক বাঁশী মেরামতে ব্যস্ত!
হাড়হাভাতে কবির কঙ্কাল নিলামে উঠছে,
ঘৃণালিপি কবিতাগুলো পড়ে আছে চৈত্র মাসের গাঙের বুকে।
এক বিষন্ন সাইকেলে স্বপ্নগুলো জমা রেখেছি গোধূলির নামে।
তবে কি!
লণ্ঠন হাতে একদিন ঘরে ঘরে ডাকপিয়ন স্বপ্নের খাম
পৌঁছে দিবে?
=============================
কইতাম না
নাজমুল ইসলাম সজীব
মনোযোগ দিয়ে শুনুন
কবিতায় থাকে শব্দের বুনন
তাই না?
চেতনায় কবিতার ভাবার্থ
এখন আর তেমন পাই না
বইয়ের প্রতিটি মলাটে
অক্ষর ঘুরে বেড়ায়
তার যথাযোগ্য মর্যাদা
লাভের আশায়।
শব্দের ভাবনায় শব্দ
এক ও অভিন্ন
শব্দের দালালিতে
শব্দ আজ অস্তিত্ব শূন্য
শুরু করছি কবিতা পাঠ
অট্টালিকায় চেয়ে
শব্দের থাকতে নেই কপাট
বিশ্বের বুকে আছে যে ছেয়ে।
=============================
আশ্রয়
শুক্কুর চৌধুরী
অবশেষে বুঝে গেলাম
তাই নিজেরে গুটিয়ে নিলাম,
আমিই আমার একান্ত আপনজন
বাদ বাকী আছে যত সব সম্পর্কের বন্ধন
গড়ে উঠে সময়ের স্বার্থে যতটা যার প্রয়োজন।
ছেঁটে ফেলেছি সম্পর্কের ডাল পালা
দালাল কোঠা ছেড়ে আশ্রয় ছনের দৌচালা,
উঠোন কোণে লাউয়ের লতা সজনে ডাটার ঝুল
আঙ্গিনায় শিশির স্নিগ্ধ ঝরা শুভ্র শিউলী বেলী ফুল।
নিঃসঙ্গতার শরীর ছুঁয়ে বইবে দক্ষিণা সমীরণ
যামিনীতে গন্ধরাজ হাসনাহেনা’র সৌরভে অম্লান,
গ্রীষ্মে সারাদিন আম কাঠালের গন্ধে জুড়াব প্রাণ
নিঃশ্বাসে মেখে নেব গাঁও গেরামের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ।
এই ভালো নির্ভার দায় দেনাহীন
নেই প্রত্যাশা নেই সম্পর্কের টানাপোড়েন,
টেনে ধরেছি লাভ লোভ মোহ্ প্রত্যাশার লাগাম
কেউ করবেনা অসহ্য স্তূতি কিম্বা অহেতুক বদনাম
প্রশান্তির খোঁজে সব হারিয়ে পর্ণকুঠিরে আশ্রয় নিলাম।
============================
মহামারী
টিপলু বড়ুয়া
শূন্য শহরের পাকা রাস্তাগুলো
ফাঁকা হয়ে গেল,
মহামারীর ভয়ে, কুপোকাত হয়ে,
কত মানুষ গৃহবন্দী হয়ে গেল।
সামাজিকতা ভুলে এক একটা মানুষ
একা হয়ে গেল।
কারো সাথে কারো দেখা নেই, কথা নেই –
নিষ্ঠুর পৃথিবী আরো নিষ্ঠুর হয়ে গেল।
ভিখারির হাতে ভিক্ষা নেই-
শ্রমিকের হাতে মজুরি নেই,
অনাহারে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের
পেটে ক্ষুধা নেই।
কোন দিকে নেই কোন কোলাহল,
আশা নেই, স্বপ্ন নেই, নেই মনে বল।
তবুও নীরব মানুষ আবার জাগ্রত হবে,
মহামারী শেষে নতুন পৃথিবীর সাথে-
আবার দেখা হবে।
==============================
অস্থির সময়ের গাথা
আলী আকবর বাবুল
রাতের শহরে হঠাৎ বাজে-
লোহার শব্দ, অচেনা পায়ের চলাচল,
ট্রাফিক বাতি লাল,
তবু গুলি চলে সবুজের আদলে।
সংবিধানের পাতায় ধুলোর আস্তরণ,
বাকস্বাধীনতা শ্বাস ফেলে দেয়-
একটি কণ্ঠস্বর নিখোঁজ আজ সাতদিন,
তার কবিতা পুড়ে গেছে পুলিশের খামে।
পথঘাটে পোস্টার-
কে থাকবে, কে যাবে-
দ্বিধাগ্রস্ত মানুষ দাঁড়িয়ে ভোর দেখে,
তাদের চোখে কেবল নিঃসঙ্গ পতাকা।
প্রেসক্লাবে মাইক্রোফোন কাঁদে,
সংবাদ হয় নিঃশব্দ স্লোগান,
কেউ বলে: দেশটা ধ্বংসের কিনারে,
আবার কেউ হাসে, গণতন্ত্রের নামে।
বিকেলের সভায় একজন বলে,
“তোমার ভোট আমাকেই দাও”
কিন্তু ভোট বাক্সে পায় কার মুখচ্ছবি?
কে জানে, কে বোঝে, কেবল প্রহসন বাকি।
আমরা হাঁটি-
কান পেতে রাখি গুজবের শব্দে,
কারণ সত্য এখন
রাষ্ট্রীয় অনুমোদনের অপেক্ষায়।
অস্থিরতা আমাদের ললাটে,
প্রতিদিনের নৈশভোজে জেগে ওঠে,
এই দহন, এই দংশন-
তবু আমরা কবিতায় লিখে রাখি আশার নাম।
===================
স্বাধীনতা
হাফিজ মুহাম্মদ
স্বাধীনতা মেলছে পাখা
লাল সবুজের নিশান
মুক্তি পাগল বীর বাঙালি
কামার কুমোর কৃষাণ।
স্বাধীনতা পদ্মা মেঘনা
পালতোলা এক নাও;
ভোরের রবি ফুটছে কুসুম
আমার সোনার গাঁও।
স্বাধীনতা শিকল ভাঙা
বাংলা মায়ের গানু
রক্ত বিজয় একাত্তরের
মাতৃভূমির টান।
স্বাধীনতা এক ফালি চাঁদ
দেখলে নয়ন জুড়ে
খোকা মনে খুকির প্রাণে
মুক্তি পাখি ওড়ে।
==============================
সময়ের ছড়া আমজনতা
হোসাইন আনোয়ার
ভিনদেশিদের প্রেসক্রিপশনে
কেমন পাবো সংস্কার
আমজনাতর কাছেই চলো
পথ দেখবে চমৎকার ।
আমজনতা দূরে গেলে
‘সস্তি’ নেইকো কোথাও আর
বাড়বে কেবল ঝুট-ঝামেলা
‘শান্তি’ যাবে পগার-পাড় ।
দিল্’ টা সাফ করেই কেবল
নির্বাচন দাও তাড়াতাড়ি
ট্রেনটা ফিরুক আমজনাতার
মায়ায় ঘেরা সবুজ বাড়ি ।