তাকে কখনও না বলো না
(হেলাল হাফিজ কবিবরেষু)
রেজাউল করিম
অশান্তিকে শান্তি মনে করে
যাপিত জীবনান্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে
এই ধরাতলে কেউ কেউ।
যদি ভালোবেসে মান—অভিমান বিরহকে
সঙ্গী করে বাঁচতে বাঁচতে কেউ যদি মরতে চায়
তাকে কখনও না বলো না।
আহ,জীবন! এই এক জীবনে মানুষ
কতো রঙে রাঙাতে চায় যার যার জীবন
কেউ কেউ প্রেম করে খুনি হতে চাইলে
তাকে খুনি হতে দাও
তাকে কখনও না বলো না।
এখন কেউ যদি দ্রোহের আগুনে জ্বলে
মিছিলে যেতে চায়
তাকে কখনও না বলো না।
আহ,জীবন! বিচিত্র রঙে রঙিন এই জীবন
যারা বেঁচে থাকতে চায়
তারা বেঁচে যায়
তাদের চিন্তায় কর্মে দ্রোহে প্রেমে বিরহে
ভালোবেসে নিঃসঙ্গ হয়ে—
তবু মানুষ শেষ পর্যন্ত ভালোবাসে
যার যার জীবনকে।
যে এভাবে জীবনকে ভালোবাসতে চায়
তাকে কখনো না বলো না।
==================================
অবেলায় রোদ
রূপক বরন বড়ুয়া
গায়ে জড়িয়ে আছে সন্ন্যাসী রোদ
গাছপালা চুপচাপ কারো জন্য অপেক্ষায় আছে!
কত কথা পাতা হয়ে উড়ে যায়,শুধু থেমে থাকে
ভোরের স্মৃতিকাহন।
জ্বলন্ত উনুন মাথায় করে কত কাক উড়ে গেছে
এ বাড়ি ও বাড়ি! শেষমেষ নেমে গেছে
কালো দীঘির জলে, পোড়া পালক ধুয়ে নেয়
উবু হয়ে, চঞ্চুতে দীর্ঘতর ক্ষুধা, চোখে বিষণ্ণ আলোক।
এভাবে তেজ হারাতে হারাতেও জেগে উঠতে চায়
কতিপয় যুবক, আকাশের একফালি চাঁদ দেখে
হাতের কাস্তে ঝলকে ওঠে শেষবার
নিজেরে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ আরেকবার
কোথায় রেখে গেছে আবাদি শস্যদানা?
এতো শ্রম কোথায় হয়েছে জমা, কোথায় ঠিকানা।
তবু রোদটুকু ধরে আনে আলোয়ানে বাঁধে
শীতল শরীরে যতটুকু ওম দেয়া যায়
পড়ন্ত বেলায়! আলো অঁাধারি ছায়ায়
সন্ন্যাসী রোদ হেঁটে যায়, হেঁটে যায়।
================================
পুতুলনাচ
আসিফ নূর
কালো পুতুলের ঝাঁক নাচছে খুব লাল—সবুজ জামা পরে,
মঞ্চের রঙিন আলোয় ঢাকা পড়েছে চিকন সুতার ছল;
দর্শকসারিতে ফুটছে তাই বারে বারে করতালির ঢেউ।
গ্রিন—রুমে সাজসজ্জায় ব্যস্ত আরো কিছু কুৎসিত পুতুল,
কন্ট্রোল—রুমে বসে কারসাজিতে ফুঁ দিচ্ছে শুভ্রবেশী জাদুকর;
গুপ্ত নির্দেশমতো কলকব্জায় তেল ঢালছে ধূর্ত বাজিগর।
বোকা দর্শকের দল মঞ্চের ভেলকিতে মাত, নেপথ্যকাহিনি
বোঝে না বলেই হাসিমুখে ধোকা খায় অভিনব মহাসুখে।
===============================
স্বপ্ন—কথকতা
আশীষ সেন
সমস্ত দিনের ক্লান্তি ফোঁটা ফোঁটা ঝরে,
সন্ধ্যার বাদুড় এসে কথা বলে যায়—
দুর্বোধ্য সংলাপ, যার কোনো অর্থ বুঝি না।
অকস্মাৎ হরতাল, সমস্ত শহর স্তব্ধ হিম,
সন্ত্রাসের ভেড়াগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে
চাঁদের আলো,
কখনো কখনো জানালা পেরিয়ে
ঢুকে পড়ে আমার টেবিলে লেখার খাতায়।
এই খাতা তোমার—আমার গোপন সংসার,
আমরা দু’জনে একদিন নদীপাড়ে
বাবলা গাছের তলায়, পার্কে ও সঙ্গীতে
বুনেছি অনেক নকশীকাঁথা,
জীবনের স্বপ্নে স্বপ্নে দিন গেছে চলে
বেঁচে আছি প্রতীক্ষার টেবিল সাজিয়ে
শুধু তোমাকেই দেখি— লিখি কিছু প্রণয় ভাষণ
ক্লান্তির প্রদীপ জ্বেলে আলোকিত করি অন্ধকার।
আজকাল দুর্বিনীত কাল এসে দরোজায়
করাঘাত করে, খান খান ভেঙে যায় ধ্যানের পুতুল,
অবরুদ্ধ হয়ে যায় স্বপ্ন—কথকতা তোমার আমার।
=========================
অভিযোজন
সৌহার্দ সিরাজ
পরিবর্তনটা ভেতরে দরকার ; বাইরে নয়
বাইরে কিছু নেই
যা করার ভেতরে করো; বাগান করো
যে বাতিটা নিভে গেছে তাকে আবার জ্বালাও
মৃত্যু শিল্প হয়ে উঠবে
প্রথমে বুঝতে পারিনি
সেই ফাঁকে না—বুঝার ব্যাপারটা ঢুকে পড়েছে
বাড়ি পোড়োবাড়ি হয়েছে
কাবু করা না গেলে অনেক কিছু হারাতে হবে
ওভাবে বলো না
সম্পত্তি থাকে না; কারোর নেই
সাঁকোটা সাবধানে পার হতে পারলেই হলো
মৃত্যু জীবনের শেষ ঠিকানা নয়
এটা শুধু ব্যক্তির বিনাশের কৌশল
মনে রেখ জীবনই মৃত্যুর শেষ ঠিকানা
প্রতি মুহূর্তে জীবন অঁাকো চিন্তার রংতুলিতে
মৃত্যু নয় জীবনই হোক শ্রেষ্ঠ ড্রয়িং
==========================
সরলার নিবেদন
রুহু রুহেল
হে আমার চেতনার বিশালরাজ্য
তুমি স্বদেশমুখী হও, বাংলাদেশমুখী হও
বাংলাদেশ আমার আপনার প্রিয় দেশ
যাদের অবদানে আত্মত্যাগে পেয়েছি এই দেশ
সবার প্রতি সাম্যশ্রদ্ধা অবারিত নিবেদন
ভিন্নতার নেই কোন অভিনিবেশ
হে মহান প্রভূ তুমি আমাদের সরলতা দাও
সকলকে সঠিক পথের দিশা দান করো
সকলকে সত্যিকার দেশপ্রেমিক বানিয়ে দাও
চাঁদাবাজ ধান্দাবাজ যারা এখনো লুটেরাজে মত্ত
হয় তাদের সৎ পথে ফিরে আসার সুযোগ দাও
নয়তো তাদের বিতাড়িত করো প্রিয় জন্মভূমি হতে।
ওহে প্রিয় ব্যবসায়ী স¤প্রদায়
ওহে প্রিয় ব্যবসায়ী স¤প্রদায়
ওহে প্রিয় ব্যবসায়ী স¤প্রদায়
আপনারা আন্তরিকভাবে শুনুন
যতটুকু সম্ভাবনা আপনাদের আছে
ব্যবসাকে নিজ দেশের পণ্যে ঢেলে সাজান
যদ্দুর সম্ভব দেশের টাকা দেশে রাখুন
আপনাদের স্লোগান হোক, দৃঢ় প্রত্যয় হোক
—দেশী পণ্য কিনে হোন ধন্য
—দেশী পণ্য কিনে হোন ধন্য
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম
দেশী কাপড়ের হোক, দেশী কাপড়ের হোক
আমার দেশের পণ্য কত বিখ্যাত জানি কয়জন?
যদি ভালোবাসা থাকে, অন্তরে দেশপ্রেম থাকে
তাহলে দেশী থাকতে, বিদেশপণ্য কেন কিনবো?
সাজাবো দেশের নীতি ও অর্থনীতি; জাগো তো এইবার
দু হাত ছড়িয়ে বুক উঁচিয়ে বলবো সবাই
বিদেশপণ্য নয় আর, দেশী পণ্যে সাজাবো
আমার আপনার সবার পরিবার
হে চেতনার বিশালরাজ্য তুমি স্বদেশমুখী হও
ওহে চেতনা; তোমাকে বলি বাংলাদেশ মুখী হও
আর অপরাজনীতির ধার ধারিও না, শেষবার ভাবো ,
প্রত্যেকের আত্মদান উচ্চকিত হোক, আমাদের চেতনা
একমাত্র —বাংলাদেশমুখী হোক, বাংলাদেশমুখী হোক
সরলার নিবেদনে সমস্বরে সকলেই বলি—আগামীদিন
ঈদ, পূজা, প্রবারণা , বৈশাবী, কিংবা বড়দিন
দেশী পণ্যে সাজাবো দেহসজ্জা হোক অমলিন।
==============================
গোলাপি চাঁদের আলো
শামীম নওরোজ
নিজেদের কাঁটাতারে নিজেরাই বন্দি…
কিছুটা দূরত্বে থাকা ভালো । নদীর এপারে
ভয়। নদীর ওপারে ভয়। দু’দিকে টহল চলে।
কেউ কারো বন্ধু নয়। অথচ আপন। মিথ্যা…
মাঝখানে কাঁটাতার। রক্তাক্ত শরীর। ছেঁড়া দাগ…
কিশোরী ফেলানি কাঁটাতারে ঝুলে আছে।
এদৃশ্য দেখার আগে তোমার সীমানা থেকে
কিছুটা দূরত্বে থাকা ভালো। তুমি তো মানুষ
নও! হননের জুতসই বন্দুকের ভালো বন্ধু।
কে কাকে হনন করে,? পোড়ায় শ্মশানে?
কবরে নামিয়ে কাঁদে প্রতিবেশী পাখি।
তামাশা বহুত। তামাশা–তামাশা খেলা।
তামাশা করেছে সৃষ্টি বিগত শাসক।
” ভালোবাসা ” শব্দটি দারুণ মিথ্যা।
নিঃস্ব, একাকী…
এপারে মানুষ। ওপারে মানুষ। মাঝখানে
হিংসার রোদ্দুর। মানবতা মৃত কাক।
প্রান্ত থেকে দূরে থাকাটাই ভালো…
আমারা ভালোই আছি…
নিজেদের কাঁটাতারে নিজেরাই বন্দি…
=======================================
একাকী একান্তে
আনোয়ারুল ইসলাম
জীবনে যাদের বাসিয়াছি ভালো তাহারাই ভুল বোঝে
কখন কী ভাবে ছোট করা যাবে সেকথা গোপনে খেঁাজে
আলো নয় তারা আলেয়াকে চির সত্য সঠিক মেনে
কথার ছুরিতে ফালা ফালা করে এ বুকে আঘাত হেনে।
তাইতো হৃদয়ে বেদনা—অগ্নি থেকে থেকে নেভে জ্বলে
অনুভবে বুঝি চোরাবালি জমা নগ্ন পায়ের তলে।
নীড়হারা পাখি নীড় খুঁজে ফেরে সাঁঝের অন্ধকারে
তবুও যে তার হয় না তো ঠাঁই এতোটুকু কারো দ্বারে!
সেকাল একাল সব কাল গেল চেতনার সংঘাতে
বিবাগী সময় অকারণে হায় নিলাজ দু’হাত পাতে।
আপনার চেয়ে অপরের ঘরে ঘানি টানা ঢের ভালো
ঠুসিতে বন্ধ চোখের কিনারে অভিসম্পাত কালো।
পরজীবী লতা হয়ে বেঁচে থাকা নিছক করুণা শুধু
কেউ তা বোঝে না বুঝলেও সেথা জেগে ওঠে মরু ধু—ধু।
কাটে না দিবস কাটে না রজনী স্মৃতির বিন্ধ্যাচলে
তুষের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরি প্রতিক্ষণ প্রতি পলে।
একাকী বিজনে মরমের কোলে ঝরিয়ে অশ্রুধারা
এ জীবন থেকে ছুটি পেতে চাই কাজ তো হয়েছে সারা।
ধিক্কার দিয়ে কথার বাণেতে বিদ্ধ করেছো যারে
ওই চেয়ে দেখো আসছে পালকি তুলে নিতে বুকে তারে।
=================================
ফিরিয়ে দাও ত্রিশ লক্ষ প্রাণ
মুস্তফা হাবীব
একক কারো রাজভাবনার বলি শত সহস্র মানুষ,
বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্নে মুগ্ধ
স্বাধীনতার নেশায় উন্মাতাল সাত কোটি বাঙালি।
ঘুম থেকে জেগে উইপোকা— প্রজাপতির মতো
অগ্নিলাভায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমার পিতা, আমার ভাই
শত্রুরা খাবলিয়ে খেয়েছে আমার মা বোনের শরীর।
নিরাপদে ছিল সে নির্দিষ্ট বেষ্টনীর ভেতর
নিরাপদে ছিল সাহাবিরা, পুত্র পরিজন কুটুম পাখিরা
এতো ঝড় তুফান, রক্তে ভাসছে নৌকো, কিছু দেখোনি
দীর্ঘ ন’ মাস টানা অমাবস্যা শেষে
আকাশে চাঁদ— সূর্যের নিয়মতান্ত্রিক অস্ত উদয় শুরু হল
তিনি সানন্দে লাল গালিচা মাড়িয়ে বসলেন ময়ূর আসনে।
পলাতক যতো দোসর, ভাই—ভগ্নি, খান্দানি আবেশে
নৌকার আগা পাছায় বসে সোনার ফসল তুলল ঘরে
আনন্দের জোয়ারে টইটম্বুর দিক দিগন্ত
পদ পদবির আভায় চিকচিক করছে স্বজনদের চোখ।
বাকশালের গোড়াপত্তন, দুঃশাসনের মুগুর
মানুষের না ছিল বাঁচার অধিকার, না বাকস্বাধীনতা।
আজ বিকলাঙ্গ বধির চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে
মৃত অবয়বকে যারা মমি করে রাখার অঙ্গীকার করো
সাজতে চাও উজানী মাছ, তোমাদের বলছি……
ফিরিয়ে দাও একাত্তরে হারানো ত্রিশ লক্ষ প্রাণ।
=============================
এমন কে আছেন যার স্ত্রী অসুস্থ
শিশির আজম
কাউকে কিছু না বলে
আজ এই সাতসকালে হঠাৎই অসুস্থ হলেন আমার স্ত্রী
আমি বিস্মিত
শঙ্কিত
তাহলে এতোদিন উনি সুস্থ ছিলেন
আমি বুঝিনি
আর আমি রাশি রাশি কবিতা লিখেছি ওনাকে নিয়ে
রাশি রাশি কবিতা
আর ভাগাভাগি করেছি জীবন
ওনার সঙ্গে
অবলীলায় সিঁড়ি টপকে ওপরে ওঠা বিখ্যাত ঐ প্রাচ্যবিদ
ঐ নারীর সঙ্গে
যিনি জানতেনই না অসুখ কী
প্রিয় অনিমেষ
মো. আইনাল হক
তুই হয়তো গা বাঁচিয়ে বেশ আছিস, অনিমেষ
নিয়মিত অফিস করছিস, মাস শেষে মোটা স্যালারি;
শপিং, ছেলেমেয়ে, ভ্রমন, আড্ডা তাই না?
ইজি চেয়ারে কফির মগ হাতে নিশ্চিন্ত বিলাস যাপন
নির্ঘাত ভুলিয়ে রাখে দুঃখের দিনের অতীত ইতিহাস।
বিশ্বাস কর! এমনটাই চেয়েছি বন্ধু।
চেয়েছি সাহেবদের মতো কোট, শার্ট, প্যান্ট,
পলিশ করা জুতায় সুসজ্জিত হবে তোর জীবনের সবকটি বসন্ত।
কুয়াশার কুহেলিকা সরিয়ে
ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত করবি ভবিষ্যৎ
নিজেকে প্রমাণের মঞ্চে সুযোগ কোথায় পিছুটানের?
অন্তত তোর একটা গোছানো পৃথিবী হোক,
এ আমার একান্ত চাওয়া অনিমেষ;
আমি চাই সংগ্রামমুখর অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায়
তোর পায়ের তলার মাটি শক্ত হোক;
সত্য ও বিপ্লবের প্রত্যয় নিয়ে জীবনের যে সূচনা
পরিশ্রমের পটভূমিতে তা শতভাগ পূর্ণতা পাক,
তোর সফলতার গল্প ছড়িয়ে পড়ুক দিক থেকে দিগন্তর।
=======================================
দেখা হবে
সুশান্ত হালদার
আমাদের দেখা হবে
সুনীল মঞ্চে কিংবা পল্টনে
কবিতার আসর পালিয়ে
যে কবি এসেছে সমতট উপচিয়ে গণতন্ত্রের মিছিলে
সে কি জানে জীবনানন্দ সভা ঘরে
প্রেমিকা তার মরেছে কবিতার বিষ পান করে?
আমাদের দেখা হবে
নদীতট কিংবা মহাস্থানগড়ে
হু হু বাতাস যদি ক্ষিপ্ত হয় কালো মেঘ কালো গর্জনে
পেতে দেব বুক বৈশাখ ঝড়ে
যেভাবে বিপ্লব ধেয়ে আসে গণ আন্দোলনে
আমাদের দেখা হবে
নাইক্ষ্যংছড়ি কিংবা রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে
পাহাড় ছেঁায়া মেঘ যদি ভিজিয়ে দেয় আষাঢ় তাণ্ডবে
মনে রেখ…
এ বদ্বীপ রক্ষার্থে টার্বাইন হবো আততায়ী সম্মুখে!
================================
রাত্রির ইনসমনিয়া
মঈন ফারুক
রাত্রি এলে নিদ্রার তুমুল অনুরাগ জাগে,
বিরামহীন নিস্তব্ধতায়
দেখিয়ে চলে গলতে থাকা শরীর।
দৈব অপেরা— চলছে… চলছে… চলছে…
কুচকুচে স্থির দৃশ্য
বেনাম নকশা
স্থবিরতায় ঘেরা
ঘোর ঠেলে পাঠায়, অপতন দূরে
নিয়ে ছেড়ে দেয়, বলে সাথে যাবো না।
রাত্রির অগাধ বিশ্বাস
নিজের ওপর
সে পারে
একরঙা স্কেচ চোখের ওপর পটু ভাষাবিদ,
টেনে ধরে;
জানি, নিদ্রা স্বাবলম্বী হলে রক্ষা পাওয়া যেত।
প্রতিশোধে রাত্রিকে নিয়ে থাকি
নিদ্রার ওপর
দাবি রাখি না ভালোবাসার বদলে।
==============================
সংসার ও ইউক্রেন
বিদ্যুৎ কুমার দাশ
চাইনা রাজনীতিতে জীবন—
প্রেমের ঘরে পোড়ে শ্মশান।
ভেতরে বাইরে হৃদয়ের জ্বালায়Ñ
যুবক স্বর্গ নরকে পালায়।
ঘরের ভেতর শিষ বিষ কথায়Ñ
ইউক্রেনের যুদ্ধ সংসারে অঁাকে।
চ^ঁাদনি রাতে মাঝি ডুবে যায়Ñ
মরা আদরে কার খেঁাজ কে রাখে।
মৃত্যু আমার পথে লম্বা হয়ে ছাড়িয়ে থাকে
এইসব মৃত্যু ভাবনা চিন্তা মাথায় হাওলায় হয়ে অঁাকে।
=========================
পেটের ভিতর জ্বলে দোজখের আগুন
আসিফ আলতাফ
দিন আমি গ্লাসে ঢালি
আর কোকো কোলার মতো পান করি
তবুও
মুদ্রাস্ফীতির মতো গ্যাসের উর্ধ্বমুখী চাপ;
আমার পেটের আয়তন দেখে লোকজন বলে
টাকা হলে মানুষের ভুঁড়ি ও টাক উভয়ই বাড়ে
যেহেতু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাই পকেটের দিকে তাকাই
একটা বানর দাঁত বের করে হাসে;
রাত গ্লাসে ঢালি
কোমল পানীয়র মতো গলায় ঢেলে দেই
মাছের কাঁটার মতোন গলায় আটকে যায়
অথচ চব্বিশ মাস মাছ খাই না
তবে কাঁটা এলো কোত্থেকে ;
অন্ধকার সীমারের মতো চেপে আছে বুকে
দারিদ্র্য কাঁটা হয়ে আটকে আছে গলায়
তোমরা খাচ্ছো বিরানি পোলাও
বাতাসে ভেসে আসে সুন্দর ঘ্রাণ
আমার তো ঘুম আসে না হরেন কাকু
পেটের ভিতর দাউ দাউ করে জ্বলে দোজখের আগুন
=============================
অমানুষ
আরিফ মোর্শেদ
নিজের কাছে হেরে গেলে
বড় কোন ক্ষতি নাই,
পরের কাছে হেরে গেলে
মনে ভীষণ কষ্ট পাই!
খারাপ হয়েও সাধু সাজি
মধুর ভীষণ মুখের বুলি,
স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে
আপন পথের দরজা খুলি!
শপথ করে ভুলে যাই
রাখার কোন ইচ্ছে নাই,
ভোর বেলা তুমুল প্রেমিক
সন্ধ্যা হলে ভুলে যাই!
এক মানুষের এতো রূপ
বুঝবে কারো কুয়ত নাই,
মানুষ কেবল বাইরে থেকে
ভিতরে কেবল পশু হায়!
আপনার জন্য মঙ্গল শুধু
ক্ষতি করি দেশের দশের,
মানুষ নই অমানুষ হয়ে
পৃথক করি আপন পরের!
বিষণ্ণতার সাইপ্রেস বৃক্ষ
এম এ ওয়াজেদ
প্রতিসারিত বিম্বের বিকৃতির তীক্ষè থাবায়
নিজস্বতা অথবা স্বকীয়তা হারায় গোলাকার দর্পণ
শোচনীয় ব্যর্থতার ধারবাহী পিস্তলে
আত্মসমর্পণ করে সভ্যতার নৈরাশ্যবাদী হাম্মাম
অন্তঃপুরের যে সুকেশা রমণী রাজার মনোরঞ্জন করতো
প্রেমবিলাসের দীর্ঘপদ মক্ষিকার সংকীর্ণ উপত্যকায়
সে রমণী মিশরীয় রাজরানি ক্লিওপেট্রা হতে পারেনি ।
নিস্তব্ধ নিশীথের স¤প্রসারিত দুর্দশার মৃতপ্রায় চৌকাঠে
সৌভাগ্যের যৌগখনি প্রতীক্ষা করে নতুন সূর্যোদয়ের
গভীর নিদ্রার নিষ্প্রভ অনুজ্জ্বল নিঃসাড় অনুভূতিরা
অমীমাংসিত প্রতিযোগিতার অথর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ দিনমজুর
শোষণের জলবায়ু ধ্বংস করেছে তার আত্নপ্রকাশ
অবক্ষয়ের নির্লজ্জ আদেশনামা তার মৃত্যুপ্রকল্প
দুর্ভাগ্যের ভয়ংকর সম্ভাবনাবিনাশী দণ্ডিত পরোয়ানা
কেড়ে নিয়েছে নির্মল অভিব্যক্তির প্রাণসঞ্চারী জ্বালানি।
উৎকট ভোগলালসার লাইসেন্সপ্রাপ্ত বদ্ধবৈষম্য
অবলম্বিত আত্মপ্রতারণার প্রযোজিত সংকেতলিপি
ভূখণ্ডের পার্বত্যিক দস্যুতার সন্ত্রাসবাদী রাজদম্পত্তি
ভুলে যায় সৃষ্টিশীল শিষ্টাচারের কারুকার্যময় রংতুলি
তার পোশাকে শোভা পায় ঔপনিবেশিকতার নষ্ট গ্রামার
অরণ্যানীর ক্রন্দনরতা মুকুলিকা ভুলে গেছে
স্বাধীনতা দলিলের নির্ভেজাল ডিক্লারেশন।
বিচ্যুতির সন্দেহবাদী বিসংকুচিত দিগদর্শন যন্ত্র
অবজ্ঞার প্রতিরক্ষাহীন জরাগ্রস্থ অসভ্য ডিফল্টার
মুক্তির মুক্তবেণি কেড়ে নিয়েছে
সভ্যতার লম্বাগ্রীবার পৈশাচিক ডেমোনস্ট্রেটর
মতিবিভ্রমের উন্মত্ততার প্রলম্বিত বিশ্বায়নের খাসজমি
দখল করেছে স্বঘোষিত কর্মদানবের আসুরিক মালদার
বিষণ্ণতার অপ্রতিবাদী সাইপ্রেস বৃক্ষ
চিরকাল বহন করে প্রতারিত গণতন্ত্রের বিষণ্ণ রোগব্যাধি ।
==================================
আজ বিজয়ের শপথ করি
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
আজ বিজয়ের শপথ করি স্বাধীনতার রাখব মান,
দেশের তরে, দশের তরে মানবতার গাইব গান।
লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে জাতির সেবায় দিব মন,
হিংসা বিভেদ ভুলে গিয়ে এসো মোরা করি পণ।
দেশের চেয়ে বড় যে আর এই ভুবনে কিছু নাই,
কোথায় গেলে বলো তবে এমন সুখ আর শান্তি পাই।
মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা বাবার সোহাগ পেয়ে সুখ,
ভাই—বোনদের মুখের হাসি ঘুচিয়ে দেয় সকল দুখ।
তবু কেন আজকে মোরা ছুটছি সবে দিগ্বিদিক?
কিসের অভাব ঘুচতে তবে পরের দেশে মাগছি ভিখ?
দেশের টাকা লুটে যারা দিচ্ছে পাড়ি পরের দেশ,
নিজের সুখের তরে তারা দেশটাকে যে করছে শেষ।
মন থেকে আজ জানাই মোরা তাদের তরে হাজার ধিক্,
শত্রু তারা দেশ ও জাতির সব হারিয়ে বুঝবে ঠিক।
দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হলো লক্ষ ভাই,
তাঁদের তরে সালাম জানাই আমরা তাঁদের ভুলি নাই।
তাঁরা আছে হৃদয় মাঝে থাকবে বেঁচে চিরদিন,
শেষ হবে না সারা জীবন তাদের কাছে মোদের ঋণ।
স্বাধীনতার জন্য তাঁরা দিয়ে গেল নিজের প্রাণ,
বিনিময়ে স্বাধীনতা করে গেল মোদের দান।
===================================
এটম বোমার ফাঁসি
রফিক আনম
বিজ্ঞাপন দেখে সৌন্দর্যের রহস্য জানতে ফেনায় নষ্ট কর চামড়া
ভালোমন্দ বোঝার জ্ঞান কেড়েছে তোমার বিকৃত উন্মাদনা
মারণাস্ত্র প্রদর্শনী দেখেও তুমি উল্লসিত !
মানুষ মারতে কোন পক্ষে শক্তি বেশি হিসাব মেলাতে কুতর্ক
যেমনি ভাবে করাচী—সোনাকাছির খদ্দেরেরা
বেশ্যার পারফরমেন্স মূল্যায়নে মুগ্ধ
যারা মারণাস্ত্র বানায় তারা অমানুষ
যারা যুদ্ধের সমর্থক তারা গণ্ডমূর্খ
আসামির কাঠগড়ায় কাশ্মীর
ফরিয়াদি ফিলিস্তিন
সাক্ষী হিরোশিমা নাগাসাকি
বিবেকের আদালতে এটম বোমার ফাঁসি
===============================
উড়ো চিঠি
এম কে হক
কাউকেই ভালো লাগছে’না ইদানীং
এমন কি নিজেকেও নয়
সমালোচনা মৃত অর্থহীন শেকড়ের গল্প।
শক্তির খেলায় মত্ত বর্ণমালার পরিচয়
অক্ষরের বুকে ছোপ ছোপ অঁাধার
বেঞ্চগুলো নগ্ন মথিত উল্লাস
তোষণের পথ আরও দীর্ঘ বাকি।
বাজারে দাম বেড়েছে মার্কিন কাপড়ের
বিশেষ করে সাদা লাল কালো ..
শান্তির মিছিলে ধর্মঘট অগণিত উড়ো চিঠি
মুখোশের চোখগুলো ইতিহাস বন্দী।
রক্তে মিশে গেছে কেমিক্যাল ভাইরাস
বন্দি টাকা আত্মচিৎকার ঝিমিয়ে পড়া টাকশাল
উদর চোখ উদগ্র পিপাসা কাতর
তামা তামা কালো মাটিতে কখনো ফুল ফুটে না।
========================
কিশোর বেলায় গাঁয়ে
রবি বাঙালি
খলশিডাঙা নদী পাড়ে ছোট্ট আমার গাঁয়ে,
মেঠোপথের দুই ধারেতে শস্য দোলে বায়ে।
হলুদ রাঙা সর্ষে ফুলে কি অপরূপ সাজে,
ইচ্ছে করে বলতে তারে রেখো মনের মাঝে।
নদীর পারে হিজল তলে রাখাল বাজায় বাঁশি,
কি মায়াবী সুরের খেলা হতে চায় মন দাসী।
ছবির মতন গাঁও যে আমার ফুল পাখিদের মেলা,
ফুলের সাথে পাখির সাথে কাটাই মধুর বেলা।
দাদি নানি বর্ষাকালে নকশীকাঁথা জুড়ে,
রঙিন সুতায় মনের কথা গাঁথে সুচের ফুঁড়ে।
পল্লীবালা কিশোরীরা মটরশুটি তুলে,
তাদের সনে ভাব করিতে ঘরকে যেতাম ভুলে।
কত কথার জাল বুনেছি কৈশোর প্রেমের ফাঁদে,
তাদের জন্য হৃদয় আজো ভীষণ ব্যকুল— কাঁদে।
===============================
বিজয় পতাকা
মাহবুবা চৌধুরী
আমি দেখি প্রতিটি নিহত মুখ কবিতা ও গল্পে
ধাণের শীষে হিজল বনে গাছে গাছে
শ্যাওলার গন্ধময় ঘাটে
শতরঙ্গে ভরা ওদের নিহত মুখ
আমাকে কাঁদায় হাসায়, সগর্বে ফুলে ওঠে বুক।
কিন্তু ওরা বিমর্ষ কাতর ব্যর্থতায় পর্যদস্ত।
পলাশ ফোটার দিন ওরা ফিরে এলে
দেখে ক্ষুধার্ত মানুষ গ্রামগঞ্জ ছেড়ে
মাটির সেঁাদালো গন্ধ ছেড়ে
হন্যে হয়ে ছুটে আসে শহরের দিকে।
শস্যের সবুজ মায়া মমতার কোল নিঃস্ব করে ।
শহরের উষ্ণ ঠেঁাট সে—ও তৃষ্ণাহত
চারিদিকে কাকের বিলাপ
দাসত্বের বাকল পরিহিত সবাই কৃতদাস।
এই সব দৃশ্য দেখে সূর্য অস্ত গেলে
নিহত মানুষ ফিরে যায় দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে
ওদের রক্ত ও মাংস থেকে মজ্জা থেকে
ঝরে যায় দেশাত্মবোধের অমরতা।
অবগুণ্ঠিত জননী আমার—— কবে স্বাধীন হবে।
কবে উড়বে বুকের বিন্দুতে রাঙা বিজয় পতাকা।
===============================
আকাশঘুড়ি
অনন্ত পৃথ্বীরাজ
ঘুড়ি ওড়ানোর সেই দিনগুলো কই গেলো!
আমাদের এখনো বোশেখ আসে ঋতুর পালাবদলে।
লাটাই সুতো হাতে আমার; দূর আকাশে ঘুড়ির ওড়াউড়ি—
সুতো কেটে, ঘাঁই—মেরে ব্যতিব্যস্ত রাখতো সারাক্ষণ।
দিনশেষে আকাশ থেকে ঘুড়িটাকে টেনে নামিয়ে আনতাম,
আমাদের জীবনটা ঠিক ঘুড়ির মতই কি নয় এখন !
==============================
এমন একটা ঘর থাকলে
মোহাম্মদ আবদুস সালাম
এমন একটা ঘর থাকলে
দালানকোঠার কী দরকার!
মনের সুখে বাস করব
চারদিকটা চমৎকার।
ঠাণ্ডা বাতাস বইবে কেবল
ফুলের ঘ্রাণটা কী সুন্দর!
মাটির মেঝে শুয়ে থাকবো
থাকবে না কেউ ধুরন্ধর।
ইজি চেয়ারে থাকবো বসে
প্রিয় বইসব পড়বো রোজ।
ক্ষিদে পেলে লাল চালেতে
থাকবে শুধু সবজি ভোজ।
নিয়ন আলো থাকবে না আর
প্রদীপ জ্বলবে অনির্বাণ।
জ্যোৎস্না থাকলে ভিজবো রাতে
শুনবো তখন কবিরগান।
জুঁই চামেলি টগর গোলাপ
থাকবে আরো নানান ফুল।
পড়বে মনে জীবন স্মৃতির
ফেলে আসা অনেক ভুল।
===================================
মাগো আমি যুদ্ধে যাবো
অপু বড়–য়া
মাগো আমি যুদ্ধে যাবো অস্ত্র নিয়ে হাতে
শত্রুসেনা রুখবে বলে ছুটছি অঁাধার রাতে।
গোলা বারুদ কামান এবং মেশিনগানের গুলি
গুড়ুম গুড়ুম উড়িয়ে দেবো দুশমনদের খুলি।
আতঙ্কিত দেশের মানুষ যায় বাড়ি ঘর ছেড়ে
জ্বালিয়ে আগুন শত্রুসেনা আসতে থাকে তেড়ে।
বসত বাড়ি হাঁড়ি পাতিল সবটি পুড়ে ছাই
পালিয়ে যেতে তাও ছিঁড়েছে গায়ের কাপড়টাই।
তখন কোথায় মা ভাই বোন কোথায় প্রাণের ছেলে
ওরা কারা? দেশ পুড়ছে গানপাউডার ঢেরে।
কাণ্ড দেখে নির্বাক মা জ্ঞান হারালেন বাবা
কলেজ পড়া বোনের উপর অত্যাচারের থাবা।
সাহস নিয়ে যুদ্ধে নামে মুক্তিকামী ছেলে
লক্ষ হাজার পাক হানাদার অমনি মেরে ফেলে।
জীবন দিয়ে দীর্ঘ নমাস যুদ্ধে করে শেষে
বীর বাঙালি বিজয় আনে সোনার বাংলাদেশে।
দুচোখে মার ঘুম আসে না অশ্রু বাঁধন হারা
ছেলের খেঁাজে বাবা নিখেঁাজ কোথায় গেলো তারা।
রাত কেটে যায় ভোরের আলোয় আর ফেরেনি ঘরে
যুদ্ধে গিয়ে হারিয়ে গেলো দূরের তেপান্তরে।
মামণিটা ফুঁপিয়ে কাঁদে তার খোকা নেই পাশে
বাবা ছেলের নামটি লেখা দেশের ইতিহাসে।
রক্তের দামে কেনা বিজয়
মারজিয়া খানম সিদ্দিকা
চাঁদনী রাতে চারিদিক আলোর বন্যায়
ভাসিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির মৃদু হাতছানি,
বনাঞ্চল—বনভূমে কতিপয় ক্লান্ত যুবক
আজ শৃঙ্খলমুক্ত,জয়ধ্বনি তোলে
ছুটে আসছে নিজভূমে। দেশ করে শত্রুমুক্ত,স্বাধীন;এলো আমাদের কাঙি্ক্ষত বিজয় আজ।
ফিরছে ঘরে, ঘরে ঘরে আজ আড্ডায়
হাসি উল্লাসে আলিঙ্গনে আপ্লম্নত হবে সময়।
হায়রে!নয়মাসের ধ্বংসযজ্ঞের বেদনা বিধুর নির্মমতার ছেঁায়া চারপাশে,
কী নিদারুণ নিষ্ঠুরতার কাহিনী সর্বত্র!
ছোট বোনটির মুখে, চোখে, গায়ে!!
মায়ের কী যে যন্ত্রণা! অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা
অকুতোভয় বাঙালি যেন————
এক সাগর কষ্ট বুকে ধারণ করে বিজয় নিশান উঁচিয়ে ধরেছে।
রক্তের দামে কেনা এ বিজয় আমাদের বোনের,মায়ের,ভাইয়ের ত্যাগের, গৌরবের।
=======================================
লোভ
ইশরাত জাহান রুতমিলা
যা চেয়েছি তাই পেয়েছি নিয়েছি দুহাত পেতে
না চাইতেও অনেক দিয়েছে খোদাতায়ালা নিজে
কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই মাবুদের কাছে।
দেয়নি শুধু একটি জিনিস লোভ
তার জন্য নেই অভিযোগ নেই কোনো ক্ষোভ।
লোভ হলো ভয়ংকর ঘাতক রিপু
এর ফাঁদে দিলে পা নিশ্চিত মৃত্যু।
এই মৃত্যু আসে কখনো ধনে কখনো প্রাণে
সামর্থ্য চুরি অমূল্য সময় লোভে নেই কেড়ে।
লোভের তরে দিনে দিনে মানুষ হারায় হুঁশ
অবৈধ পথে কামাই অর্থ পরে ভদ্রতার মুখোশ।
দুনিয়ার লোভ লালসা নেকড়ে স্বরূপ
কোনো কিছুতে তুষ্ট না করে বাড়িয়ে তুলে দুঃখ।
পৃথিবীতে আমিই সর্বাপেক্ষা ধনী
কারণ ছলচাতুরী লোভ লালসার বন্দি নয় আমি
===============================
ক্রমবর্ধমান দুঃখ
টিপলু বড়ুয়া
চাঁদের আলো আজ ম্রিয়মান—
কালো রাতের কালো রঙে—
কালো ফুলে সজ্জিত হৃদয় বাগান।
লক্ষ—হাজার দুঃখ বুনেছি
চাঁদের মুখেও দুঃখ দেখেছি
ধার করা আলোয় সে যে আলোময়।
সূর্যের কাছে চন্দ্র ঋণী
কালোর মাঝে আলোর বিকিকিনি।
জোছনা রাতে জীবন—খাতায় দেখি—
ঋণ বেড়েছে দিনে দিনে—
শৈশব—কৈশোর ছেড়ে যাচ্ছি প্রবীণে।
বয়সের সীমারেখা পেরিয়ে যতই সামনে যাই—
ক্রমবর্ধমান দুঃখ শুধু আমাকেই খুঁজে বেড়ায়।