এখন সময়:দুপুর ২:০৬- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ২:০৬- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

পদাবলী (জুন সংখ্যা ২০২৩)

প্রভাতের পুষ্পমহল

ফকির ইলিয়াস

 

‘ভালোবাসার স্বপ্নগুলো কেমন হয়’-তোমার এ প্রশ্নের সঠিক জবাব

আমি আজও দিতে পারিনি। বলতে পারিনি- বৃষ্টিকে ভিজিয়ে দেবো বলেই

আমি একদিন সাঁতার শিখেছিলাম। একদিন; সুপ্রভাত হে পর্বতচূর্ণ !

-বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে সেরেছিলাম সকল আরাধনা

আর বলেছিলাম-

তুমি এসো,

যে তোমাকে নিয়েই যুগ-যুগের অপেক্ষা,

কাক্সিক্ষত স্বপ্নের মানবী আমার !

 

চাঁদমগ্ন রাত ঘিরে আমি যে স্বপ্ন দেখতাম, সেই স্বপ্নের রঙ

ছড়িয়ে দিতাম তোমাকে লেখা চিঠিতে! শুকনো গোলাপ-পাপড়ি

ছেঁটে দিয়ে উজ্জ্বল করতাম আমার প্রেমের রঙ,

লাল সবুজ অক্ষরে বার বার লিখতাম -‘ভালোবাসি’ ।

 

সেই ভালোবাসার ধরনী রাঙিয়ে একদিন সবকটি বসন্ত

হয়েছিল আমাদের। সবগুলো সমুদ্রের ঢেউ বাজিয়েছিল

তরঙ্গ, তোমার আমার প্রাণে প্রাণে।

 

এমন অজ¯্র ঢেউ বুকে নিয়েই আমরা ছুটে বেড়িয়েছি

সুরমার অববাহিকা থেকে

লন্ডন কিংবা নিউইয়র্কের মহাসড়ক।

প্যারিসে, দেখেছি ওস্কার ওয়াইল্ডের সমাধি ঘিরে প্রতিদিন

কীভাবে জড়ো হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা

হাজারো তরুণ-তরুণী। কীভাবে ছিটায় পুষ্পরেণু!

 

মানুষ আজীবনই প্রেম চায়। প্রেম মানেই যাপিত

জোসনার পরাগ। প্রেম মানেই কাছে থাকার অমর

অভিলাষ। যা কখনও শেষ হয় না- শেষ হওয়ার নয়।

 

তোমার অনেক প্রশ্নের উত্তরই আমি দিতে পারিনি।

অথচ সহ বাগানের ফুল কুড়িয়ে এনে,

আমি সাজিয়েছি যে পুষ্পমহল,

সেখানে তোমার কীর্তি ছাড়া অন্য কিছুই নেই!

প্রকৃতপক্ষে উজ্জ্বলতার কোনো সংজ্ঞা থাকে না,

খালি চোখে দেখাও যায় না সেই ঝলকের গভীরতা।

 

 

===========================

 

 

মীরখানার ফকিরি

রিজোয়ান মাহমুদ

 

৭৫

আজ সকালে তোমার ঠুমরিতে ভরা কার গীত

আমি কইলাম তুমি মাঘ ও পৌষ মাইস্যা শীত!

দরিয়ার পানি ঢুকে বুকে ভাসে নুন, লালন হাছন

আমি মরি যাই, তয় বুকে বান্ধিনি মন্দ্রিত প্রহসন।

 

৭৬

রুন ও মীর তোমরা দু’জনেই এসো, ধীর বসো কাছে

বুকের গল্পটি সন্তর্পণে খোল তুমি, মীর মিশে গাছে।

মীরের নিঃশ্বাস ছুঁতে গিয়ে ওখানেই লালনের বিষ

সকালের রোদ লুটপাটে ব্যস্ত ভালোবাসা অহর্নিশ।

 

৭৭

তোমার বেদনা থেকে সৃষ্টি হবে অনিন্দ্য আকাশ

বৃষ্টিতে ভিজেও চাঁদ বিন্দুজলসম তোমার প্রকাশ।

যদি কখনো বা চোলি ঘেমে ওঠে চন্দ্রবিন্দু লজ্জা

নদীজলে ভেসে যাবে জ্বর সেতো আমারই সজ্জা।

 

৭৮

খেতের নাড়ান থেকে বীজের সাক্ষাৎ মর্মমূল খুঁজি

আকণ্ঠ ডোবানো চাষার দাহিকা এক দ্বগ্ধ গ্রাম বুঝি!

দেরী হলে হাত ধরে নিয়ে যাবে আমাকে বুবুর বাড়ি

তুমি পুকুর সাঁতরে পাবে দেবদারু ছায়া সারি সারি।

 

৭৯

তোমাকে ভালো না বাসলে আমার যে গোনাহ্ হবে

সেকথাই ঘুরেফিরে শূন্যের মাঝারে আর কোনো নভে!

দরিয়া ছিল না বুকে উন্মাদনা ছিল বুকের পাঁজরে

তুমি আমার দর্শন, আমারই ধর্ম, সাক্ষী যাও সরে।

 

৮০

তুমি পরমাত্মা আমার রুনর গোর, উপরে মঞ্জিল

জীবাত্মায় যে ফড়িঙ ওড়ে দেখিনি কখনো বিল।

শিরায় রক্তের চিঠি শুধু নুন, জিহ্বার অনন্য স্বাদ

আমার দোররা দেয়া পিঠে রুন, নিচে সুগভীর খাদ।

 

৮১

খুব গভীরে যখন আমি, রুন বলে ধীরে যাও দূরে

মীরের রুহানি হাতে একা আমি রুনর দুঃখদ ঘোরে।

রবীন্দ্র জোছনা ছুঁয়ে লজ্জা পাতারা খেলছে গানে

রুনুর তিল টানা বুকে গভীর জখম আমাকেই টানে।

 

 

=====================

 

নাজিমুদ্দীন শ্যামলএর কবিতা

 

 

জ্বলি যায় মন

 

পুন্ন মাসির চাঁদ’র আলো চাইর মিক্কা

থৈ থৈ গরের। একলা ঘরত আঁত্তে

শুধু তোঁয়ার কথা মনত পরের।

কেন গরি পার হই গেলগই

এতাক্ষিন বছর। চোখর আড়াল

হই গেলাগই, হই গেলাগই পর।

 

বাড়ির লগে বিলের আইলত-

কতদিন পইর পারত, বই থাকি

সুখ দুঃখুর কথা কই, কতদিন

তোঁয়ার কথা ভাবি ভাবি একেলা

জাগি রই- এইন বেয়াক্কিন আঁই

তোঁয়ারে কনদিনও ন কই। আর মনত

কী আছিল তুই না জানিলা।

তোঁয়ার মনর খবরও আঁরে না দিলা।

দূরে গেইও ভালা হইয়ে

ভালা থাইক্কু সারাজীবন। তারপরেও

চান্নিপহর দেখিলি তোঁয়ার

লাই আঁর জ্বলি যায় মন।

 

চক্ষু

 

আমার বাম চোখের কথা-ডান চোখ বোঝে না।

দুই চক্ষুর মাঝখানে আছে এক অপার সাগর

তার বুকে লুকিয়ে আছে এই জনমের কান্না।

চক্ষু সাগরের পাতালপুরীতে রাখা এক সিন্দুকে

লেগে আছে অলৌকিক তালা চাবি!

সে তালা জন্মেও খোলে না।

 

অতঃপর বুকের সব জল আর কান্না

জমে থাকছে শুধু জীবনের পরতে।

চোখের কান্না হায় কেউ তো দেখে না।

দুই চক্ষুর ব্যবধান আহা কখনো ঘোচে না।

 

চক্ষু

 

এই দুই চোখের কতকিছু দেখা হয়নি,

বাকি রয়ে গেছে বিস্তর…

তবুও কেবল দুই চক্ষু মুদিয়া আসতে চায়,

কেবল ঘুম নামে চক্ষু বাহিয়া…

 

সবুজ গাছের পাতা ঝরে যায়

দেখা হয়নি। এখনো দেখিনি

ব্যথার অপার মহিমা। তবুও

নেমে আসে ঘুম…

 

 

 

টিপসই

 

আমি বিদ্যালয়ে যাইনি কোনোদিন।

নাম দস্তখত জানি না। অক্ষরজ্ঞান

আমার কখনো ছিল না। কোনো বর্ণ

আমি চিনি না। কেবল চেয়েছি আমি

একটা নদী, চেয়েছি এক আকাশ নীল।

তুমি এসে উঠন্ত বেলায় বললে

ভালোবেসে সব দেবে আমায়,

শুধু সাদা পৃষ্ঠায় নির্ভুল টিপ চাই।

আমিও অবোধ বালক ঠিক দুপুরের

আগেই টিপসই দিলাম ভালোবাসায়।

 

তারপর তুমি তো এক বিস্ময় সমুদ্র;

ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেঙে দিলে পাড়ের জীবন,

আমি এক শূন্যতা কিছুই নেই কোথাও;

আমার জীবন ভাসিয়ে নিলো তোমার বিশাল ঢেউ।

 

 

ভালোবাসা জলের স্মৃতি

 

এই যে সমুদ্রের ঢেউ এসে

পায়ে পায়ে লুটিয়ে পড়ছে,

চেনা ছোঁয়ায় ভিজিয়ে দিচ্ছে

চোখের পাতা, বুকের পশম।

সেসবের সাথে মিশে আছে আমার

যাপিত অতীত। এই সাগর পাড়ে

ঢেউয়ের সাথে ভেসে এসেছিলে

মৎস্যকন্যা। আমি তো জলের রঙে

কিছুই বুঝিনি। কেবল তুমি জড়িয়ে

ধরে বলেছিলে ভালোবাসি। তারপর

সমুদ্রকন্যার সাথে কৃষ্ণবাগান

আমিও করেছি মন্থ’ন। আর তুমি

আকণ্ঠ করেছিলে আমার কবিতা পান।

আমাদের নদী হলো। তারপর নীল আকাশ।

তবুও জেগে আছে শূন্যতার বসবাস।

ভালোবাসা শুধু জলের স্মৃতি যাপিত বেদনা;

আমাকে কাঁদিয়েছে জেনো সমুদ্রের কন্যা।

 

 

=========================

দ্রোহী মুখ

রূপক বরন বড়ুয়া

 

অজয় নদীর ছবি তুমি কি এঁকেছো?

যে নদী বয়ে নিয়ে গেছে তোমায়

সে তো হোয়াং হু!

বুকে নীল ক্ষুধার গর্জন তুমি কেবল শুনেছো

তোমার চিৎকার দেয়ালে দেয়ালে আগুনে কয়লায়

বুকের ভেতর শুধু হাহাকার, হু হু!

 

ও নদী বয়ে গেছে দিয়ে গেছে কষ্টের প্রেম

বিরহের বারোমাসি।

 

তারে তুমি ফেলে এলে পশ্চিমে! পূবের ধ্যানে

আশালতা তেওতা’র গান শুনে গোমতির পাড়ে

প্রণয়ের গান কেবল তুমিই কি শুনেছো?

আশা’র ভেলায় ভাসি মেতেছো দ্রোহের গানে

অগ্নিবীণা’র পালক উড়ে মুক্তির দুয়ারে

অধীনতার শৃঙ্খল দু’হাতে ছিঁড়েছো।

 

সুর আর স্বরে এতো মাদকতা, চোখের দু’ ভাঁজে

আগুনের ফুলকি সাত-সমুদ্দর তেপান্তরে

আগুন আগুন বলে চিৎকারে সবাই

প্রবল ক্ষুধার ঘুড়ি দিয়েছে জানান সকলের মাঝে

অনশনে অনশনে জ্বালাও পোড়াও দুর্গে শিবিরে

এ গৃহে শাদারা বেমানান, ঠাঁই নাই, নাই।

 

শেষবার তোমার বোবা দৃষ্টি মাটির সুগন্ধে

জাতপাত ধুয়ে গেছে লোবানের শব্দ আরকে

সবুজ জমিনে বিপ্লবী সূর্যের ছবি উড়ে

কাঁটাতার সীমানার এপাড় ওপারে সংকীর্ণতা ঊর্ধ্বে

কবিতার মতো শব্দ লয়ে শব্দহীন মৈত্রীর চুমুকে

পুরো বিশ্বকে ভাবিয়ে দিলে মুক্ত প্রাণের ঝংকারে।

 

=============================

 

অভিবাসী পাখা

এজাজ ইউসুফী

 

দিগন্তে দিয়েছে খুলে মোমের নকল পাখা

তোমাকেই উড়াল দিতে হবে নীলিমায়।

সভ্যতা তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছে সেটা,

কী করে অপর দেশে দেশান্তরি হয়ে

মানবেতর জীবন সঙ্গ ও সঙ্গমে–

কাটিয়ে ফিরবে নিরুপায় খাটিয়ায়।

ইকারুস একটি আকাশ চেয়েছিলো

উড়ে যাব এথেনীয় শব্দে কান পেতে।

প্রখর সূর্যের তাপ তাকে উড়তে দিল না

নামিয়ে দিয়েছে উত্তাল সমুদ্রে।

ডিডেলাস, পুত্রের সমাধিসৌধে

গড়ে তুলেছিলো জলজ ভাস্কর্য।

তোমারও মোমের পাখা গজিয়েছে আজ।

ঈর্ষান্বিত ডিডেলাস হত্যায় মেতেছে

এথিনি তোমাকে পৌরাণিক পাখি করে দিলো!

 

===============

 

চিত্রিত সকল ব্যথা

শঙ্খশুভ্র পাত্র

 

প্রকৃত নূপুর এই মধুমাস চৈত্র সমাগমে

বসন্ত দুপুর কোকিলের কুহু তানে নির্জনতা

ভেদ করে অঝোর বাদল! একাকিত্বে প্রেম জমে

বয়স গণনা মাত্র তপশিলি, শিলীভূত কথা

 

কে আর মনস্থ করে? প্রবীণ বয়সে এই ভাবালুতা

আশ্রয় চেয়েছে যথোচিত শ্রম ভাবো, আশ্রমিক

একটু প্রশ্রয় দিলে, দিল উচ্চকিত জানি, ঝুটা

বাক্যে কখনও মেলে না সুর, সারি, শারীরিক

 

অধিকন্তু ভূতাবেশে, স্নায়ুতে লূতাতন্তুর ঢেউ…

আরশিহীন আশীর্বাদ, নিজেকে দেখি না কতদিন!

অন্তর সমীপবর্তী অন্তরালে আছে ঠিক কেউ,

বর্তি নিয়ে বার্তাবহ, জাগাবে আঁধার, আলাদিন

 

প্রকৃত নূপুর এই মধুমাস চৈত্র সমাগমে

চিত্রিত সকল ব্যথা জমা হোক শ্লোকে আর শমে

 

==========================

সাদা কালোর কষ্ট কাব্য

(সাফা, প্রিয় বন্ধু আমার)

বিজন মজুমদার

 

নদীর ওপরে মেঘ, জলভরা কলস ঢেলে দিচ্ছে সমূহ বেদনার কালো বেলেনটিন

ঘাটের টিপ্ টিপ্ বৃষ্টিস্নাত মন

তুমি বলেছিলে হেমন্ত বাঁধো গান

“এই একলা দিনে মেঘলা

তারপর বৃষ্টি ঝড়ো হলে শুরু করো

মান্না, সুবীর, কিশোর, সতীনাথ।

মেঘ জল ঢেলে দিচ্ছে কর্ণফুলী’র বুকে

সিগারের ধোঁয়ার কু-লী পাক দিয়ে

আকাশ ফুঁড়ে মাতাল বহ্নিকোণ

ক্যানভাস ভেসে যায় সাদা কালো মনোভুমি।

শার্টল ট্রেনে কদমতলী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়

পায়ে পায়ে ঝিম দুপুরে কাটা পাহাড় ডিঙিয়ে

গুণ গুণ মনে মশগুল সুবীর সেন…

‘সারাদিন তোমায় ভেবে হলো না আমার…

শামসুকে নায়ক বানিয়ে চলতো হাসির ফোয়ারা

পুরো ক্যাম্পাস তখন তুমুল আনন্দে আত্মহারা

বিজন, স্বরূপ, উত্তম আশীষ, মাসুদ, জীবন

কার্পাস তুলোর মতো পলি আর হাওয়ায়

যেন মুক্তো কুড়াতো সেই আনন্দ বন্যায়।

এইভাবে না বলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি তোমার

কর্ণফুলী আজো ডাকে বৃষ্টিস্নাত পুণ্যজলে

স্রোতে আজো ভাসে জীবনের খেরো খাতা

প্রখর রোদ, ডি.সি. হিল গোধূলী বেলা

তোমার অপেক্ষায় শোকে জড়বৎ নত নেত্র

আমার কষ্টটা কাটাবো কীভাবে বলতে পারো!

====================

 

আবেগের পাখিগুলো

নূরুল হক

 

না থাক যাবো না আর, কেন যাবো কার সাথে কবে

গোড়ায় পড়েছে বাধা। জলশূন্য শোকে ক্লান্ত আমি

পড়ে থাকো তুমি নগরের সেই অন্ধ কলরবে

অস্তগামী সৌরলোকে অপ্রসন্ন ঘোলাজলে নামি

 

কথা ছিলো যাবে তুমি সাথে যাবে চিম্বুক পাহাড়

যাবার আগ্রহ নিয়ে কবিতার প্রচ- উচ্ছ্বাস

ইতিহাস মাথা কুটে। ভেঙে পড়ে অস্তিত্বের হাড়

দুজন ছিটকে পড়ি অন্যপ্রান্তে বেড়ে ওঠে ঘাস।

 

কবিতা লিখি না আমি সেই থেকে, চেতনায় ঘুন

দু ধারি করাত যেন চেটে খায় প্রবাল হাঙর

আবেগের পাখিগুলো একে একে হয়ে যায় খুন

ধসে পড়ে অনন্তের অনির্ণীত নির্বোধ প্রহর।

 

কথা ছিলে যাবে তুমি। লিখা ছিল লুপ্ত ইস্তেহার

সরে যায় কালক্রমে পথভ্রমে চিম্বুক পাহাড়।।

 

======================

 

ভালোবাসা ভালো নেই

কমরুদ্দিন আহমদ

 

ভালোবাসা ভালো নেই, দেহ-মন ভয়ানক অসুস্থ

হৃদয়ের টিস্যুগুলো এলোমেলো, বুকে তার

অব্যক্ত ব্যথা, হেড-কোয়ার্টারের স্ক্রু-নড়বড়ে

লোকে যারে পাগল বলে, সেই তো প্রেমিক

বসবাস তার পিরিতি নগরে খুঁজে ভালোবাসা বোধ

যত্রতত্র রাখে না ছাগলের মতো অস্থির মুখ!

 

ভালবাসা সুন্দরী অলৌকিক পত্র খুঁজে আন্তর্জাতিক

সম্পর্ক অধিদপ্তরের বারান্দায়

নিজের মতো  ভালো সে মায়ার বাঁধন

হরেক রকম পাগলের মেলা বিশ্বময়

একদল ভ–প্রেমিক তাকে হাত পা বেঁধে নিয়ে যায়

আন্তন চেখভের ছয় নং ওয়ার্ডে।

 

কথিত মানবতার পূজারী, নারী-স্বাধীনতার ধ্বজাধারী

অস্ত্র-ব্যবসায়ী, সুদি-মহাজন, গণতন্ত্র প্রচারক

ক্ষমতাপূজারীসহ বিচিত্র পাগল আছে সেই দলে।

পাগলের বোধে নিজে বড় বিজ্ঞজন, সুস্থ মানুষ

বাকি সব বদ্ধপাগল, তাই ভালোবাসা

ভালো নেই পৃথিবী নামক গ্রহে।

 

ওরা ভালোবাসার নাম করে ভালোনাশায় ব্যস্ত

সন্ত্রাসীদের বন্ধু, অর্থ ও অস্ত্রের সরবরাহকারী

পাকা খেলোয়াড়, যুদ্ধ যুদ্ধখেলা ফেরি করে বিশ্বব্যাপী

অদ্ভুত এক খেলায় ভালোবাসা বন্দি

ভালোবাসা যুদ্ধের কারায়।

সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞের উৎকণ্ঠায় এখন বিশ্ববাসীর বসবাস।

 

===================

 

শব্দের গয়না

নিলয় রফিক

 

গোলাপ নজরে বান, সমুদ্রে ভ্রমণ

উজানে লাটিম ঘোরে, অন্তিম ঠিকানা

রোদের মেঘের সেতু পারাপারে রথে

বারোবছর দৃষ্টি শব্দের গয়না।

 

চকচকে স্বপ্নশিরা গাছের মুকুল

সভ্যতার নিরুদ্দেশে আমের সুরভি

ঢেউ পড়েছে পাঁজরে ভিন্নচোখে গান

সুরের কণ্ঠ অচল, মৈনাকে নাচন।

 

ধানেজমি পোকাবীজ মরণে অসুখ

স্বার্থের নামতা গোণে মুদ্রাতলে সুখ।

 

=======================

বিভৎস আর্তনাদ

সুব্রত আপন

 

সীমাহীন ক্লান্তির ঘোরে পাপড়ি ছড়ানো বিছানাও-

বিষাক্ত মনে হয়-বীভৎস আর্তনাদে অনুভব হয়

ফণাতোলা সাপের বিষের প্রভাব

যন্ত্রণার আবেগে ঊর্ধ্বে ঈশানে

নিঃশ্বাস ফেলে প্রেমিক মন।

 

যুৎসই সমাজব্যবস্থা নিমজ্জিত কুয়াশার ইন্দ্রজালে

স্বৈরাচারী শাসকের পালিত শুয়োরের বেড়েছে উপদ্রব

নিতে চায় না অন্যায়ের দায়-

ভূলতে চায় বিপ্লবী ইতিহাস।

 

নিষিদ্ধ উদ্যানে ঝলসে গেছে পদ্মফুল

পরিত্যক্ত কয়লায় দেখি ভয়াবহ শোক

আত্মহননে জেলখানায় কয়েদি হয়ে সয়ে যায়

অন্ধত্বের কালোঘোড়ার পৈশাচিক কমান্ড।

 

=====================

 

ভেতরের বাঘ

সুজন আরিফ

 

ভেতরের বাঘের দেখায় জ্বলে ওঠে নির্মোহ ফুলের আসন

শনাক্ত বোতামে ঘোর লাগায় আগুনের জলপট্টি

পুরোদমে সূর্য হয়ে পড়ে শান্তিপ্রিয় কুয়াশাজীবন

রজঃস্বলা পৃথিবীর চোখে অপূর্ব এক আলোর আভাস

আত্মার আমন্ত্রণে সৃষ্টি হয় মৌলিক কবিতা

গণিকার সিঁথিতেও ঐতিহ্যের সীমাহীন উত্থান

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের খবরে স্তম্ভিত বাজারের ব্যাগ

মান বাঁচাতে তবুও নদীগুলো খুঁজে নেয় সমুদ্রের অভিধান।

জোনাকির উদ্বেগ মিথ্যা করে বিজয়ীর বেশে লড়াকু রাত

জলপরির ইশারায় খুঁজে নেয় দেহকলার পূর্ণ স্বাদ

বৈরী বাতাসেও জমে ওঠে রাতজাগা তারাদের আসর

ভালো লাগে দ্রোহের অক্ষরে রচিত এই স্বর্গের অনুসরণ।

=================

 

শূন্যতা

রেহানা বীথি

 

আমাদের আশেপাশে কেউ নেই

একটা কিচিরমিচির বাড়ি ছিল

ওটার শরীর এখন খেয়ে ফেলেছে মাটি…

 

কাউকে যে ডেকে বলবো

দেখো, ব্যথাদের নেড়েচেড়ে দেখো

ওদের ভীষণ জ্বর

তেমন কেউ-ই নেই আশপাশে!

 

থাকলে বলতাম

ঝিঁঝি ডাকছে

কানে তালা লেগে যাচ্ছে

ভয় ক্রমশ আলিঙ্গনে পিষে ফেলতে চাইছে

আমরা মরে যাচ্ছি…

 

কেউ নেই, কেউ-ই নেই আশেপাশে!

 

কবিতা পড়ে একটা ফুঁ দেয়ার মতো কেউ নেই!

গল্প পড়েও একটা ফুঁ দেয়ার মতো কেউ নেই

 

অথচ আমি জানি

নিশ্চিত করেই জানি

গল্পের ফুঁ-এই আঙুল আগল খুলবে

কবিতার ফুঁ-এ খুলে যাবে একটি ছায়াপথ…

 

========================

 

আমার মা

রওশন রুবী

 

আমার মাকে কেউ কোনদিন কাজল পরতে বলেনি

প্রিয় রঙের শাড়ি এনে আবদার করেনি জড়িয়ে নাও সবুজ কোলাহল,

জানতে চায়নি প্রতিদিন খেতে গেলেই মনহন্ত আগলে দাঁড়ায় কেন?

চোখের নিচে কৃষ্ণগহ্বর কালোর চেয়ে কালো আর

ডানা ভেঙে পড়ে আছে কেন সব ইচ্ছেফড়িং?

 

কত রোদপোড়া বিবর্ণ গোপন জীবন ধারণ করে তিনি হয়ে ওঠেছিলেন

হিরোসিমা, নাগাসাকি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ;

কেউ তার খোঁপাবেঁধে দিয়ে বলেনি- নে ছায়াপথ গেঁথে দিলাম,

ছুটে যা; না হয় স্বাধীনতা জমে জমে মরে যায় বুকের কোঠর।

 

তিনি কখনো অভিমান করেননি, অনুযোগে নুয়ে পড়ে বলেননি-

কাঠিন্যে ঠোঁকর খেয়ে বেড়ে উঠা মানুষের অনুযোগ থাকতে নেই;

তার ছায়ায় ছায়ায় বড় হয়েছে ভিন্ন ধর্ম গোত্র বর্ণের মানুষ,

তিনি পাপ-পুণ্য, ধর্ম-জাত,নারী পুরুষ বুঝতেন না

তিনি বুঝতেন নিরাকার, মানুষ, ভালোবাসা, উদারতা ছাড়া

পৃথিবীর রঙ ফুরিয়ে যায়, ফিকে পৃথিবী ভালোবাসতে জানে না।

ভালোবাসতে বাসতে তাই তিনি শূন্য হয়ে যেতেন, আর তখন পৃথিবীর খোলস ভেঙে

বেরিয়ে আসতো শেয়াল, শকুন, হাঙরের দল, দম আটকে আসতো তার,

কত শত প্রয়োজন তার এক সকাল থেকে আরেক সকাল

হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে ডুবে গেছে বিবর্ণতায়।

নীলনদের চেয়ে সুগভীর ক্ষত নিয়ে দরজা খুলে প্রথম আলোটুকু গায়ে মাখতেন,

মরচে পড়া স্বপ্নরা আকাশমুখী মুখের উপর জমে হতো শ্যাওলার আস্তরণ।

মাঝে মাঝে অসহ্য বেদনায় রাতের নিভৃতিকে চুরমার করে

জলাভূমি হতো সাদা চোখ, তিনি পবিত্রগ্রন্থে আত্মমগ্ন হতেন;

সুরেলাকণ্ঠে পাঠ করতেন আয়াত, আমাদের ঘুম ভেঙে গেলে দেখতাম

রহস্যময় দ্যুতির ভেতর আলোকিক আলো।

পরদিন সকাল থেকে মা কেমন ঘোর লাগা হয়ে যেতেন।

সব লেন-দেন গুটিয়ে একদিন সত্যকে বরণ করলেন।

 

আমরা আজো তার ঘরের উপর জন্মানো ক্লোরোফিলে হাত রেখে

ঐশ্বরিক শীতলতায় মদির হয়ে যাই।

 

 

 

========================

 

 

দেয়ালের রঙ সবুজ

মিনু মিত্র

 

আলোর ভিতরে অন্ধকার

শব্দবিহীন কী বীভৎস আওয়াজ

শোনা যায় না দেখা যায় না

শুধুই হাহাকার।

 

রঙের খেলনাগুলো স্মৃতির পাতা

স্পর্শ করে

সামনে যা আছে তা শুধুই প্রচ্ছদপটের চিত্র

কেবল আটপৌরে দেহটাই মুক্তির সন্ধান দেয়

 

রাষ্ট্র বা সমাজ কোনোটাই ভাবায় না

তবুও ভয়…..

দেয়ালের রঙ খানিকটা পুরনো

যদি কালির প্রলেপে ঠিকানা খোঁজে অন্য কোথাও।

 

রঙের হাহাকার

শব্দবিহীন আওয়াজগুলো মিলিয়ে যায়

সবুজের দৈর্ঘ্য-প্রস্থে।

 

শূন্যতা ঘুরেফিরে আটপৌরে কালো রঙটাতেই

মিশে যেতে চাই।

বর্ণবাদীরা খাঁচায় বাস করে সমাজ নিলামে তোলে

শ্রেণিবিন্যাস ঘটে অযাচিত অবস্থানে।

 

===================

 

স্বাগতম হে গ্রীষ্ম

হাফিজ রহমান

 

বসন্ত বিদায় নিতেই জেগে ওঠে নতুন বছর

আনন্দ জোয়ারে ভাসে বাংলার প্রতি গৃহকোণ

নতুনের দোলা লাগে প্রকৃতির চিরন্তন সফর

বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দ উল্লাসে ভরে থাকে মন।

 

আবহমান বাংলার এ যেন এক অফুরান খেলা

ষড়ঋতুর ষড়রূপের পশরা সাজে এই বাংলায়

গ্রীষ্ম যে শুরু তার অগণিত ফলভার রসের মেলা

নানান স্বাদের ফলে গ্রীষ্ম বয়ে চলে কালের খেয়ায়।

 

ঋতুরাজ বসন্তের সমস্ত রূপরাজি সকল ফুলের সমাহার

সুমিষ্ট ফলের স্বাদে ধরণী পড়েছে ফাঁদে পেয়ে উপহার।

 

 

 

 

==============================

 

লাভের নদী

উৎপল কান্তি বড়ুয়া

 

লাভের দু’চোখ জ্বল জ্বল জ্বল জ্বলে আপন পাড়ায়

লাভের নদী যাক তো বয়ে চায় সে আপন ধারায়।

 

লাভের বাতির প্রিয় সাথি লোভের মহারাণী

লাভের দু’হাত যায় টেনে যায় গাধার মতো ঘানি।

 

লাভের চোখে মোহের কুলুপ আপন পকেট ভারি

লাভের গতির ঝাঁজালো রোদ ধারালো তরবারি।

 

লাভের পথেই ফুটুক তো চাই তৃষ্ণা নামের ভোর

লাভের নেশার পরম পেশার খোলে বসেন দোর।

 

লাভের সময় আদর্শময় না হোক তাতেই কী!

লাভের রাতেই স্বার্থ-কুপি জ্বালিয়ে রেখেছি।

 

লাভের নানান ক্যারিশমাতেই নানান অলি গলি

লাভের আশায় ভালোবাসাও হয় রে জলাঞ্জলি।

 

লাভের অংশ হয় ধ্বংস যদি, তখন ভয়-

লাভ ছাড়া কেউ ক্ষতি মেনে নেয়ার পক্ষে নয়।

 

লাভের ঘরে টানলে ক্ষতি সুখের বাড়ি নিঃস্ব

লাভের সাথে লোভ অতঃপর লাভের পাগল বিশ্ব!

 

 

====================================

 

শেষ ট্রামে

সুলতানা নুরজাহান রোজী

 

জীবন পালিয়ে বেড়ায় মায়ায় জড়ায় সুখের রং !

বেহিসেবি পথে ছুটেছে সময় হিসেবের হালখাতা হাতে নিয়ে।

গোধূলি ছায়া মহলে দিন শেষে করে অবুঝ কীর্তন।

সেখানেই সুখগুলো পাখির পালক হয়ে উড়ে যায় দূরে বহুদূরে ধোঁয়াশা কালোর মেঘে।

শাখায় শাখায়  দোলে ফেলে রাখা মন অবিচল পান্থপথে।

আলো হয়ে আসে শ্রাবণের মৃদু রোদের বিলাসী হাসি।

অবশেষে জীবনের পরিতাপে পসরা সাজিয়ে ইচ্ছেগুলো ডানা মেলে

না পাওয়ার বেদনা নিয়ে গুমরে গুমরে কাঁদে গোধূলির শেষ ট্রামে।

ওখানেই পড়ে থাকে কিছু চিহ্ন শোক স্মৃতি হয়ে।

লেনাদেনা আর বেদনার নীল কষ্ট চুকিয়ে শেষ করে দিন চলে যায় শিকল পরা নিয়মে ।

হাসিকান্না জীবনগলিতে জীবনের নোনা সমুদ্রের ঢেউ এসে বলে ফিসফিস করে কানে কানে হেসে –

‘তবুও জীবন!’

 

 

=============================

 

হাতের মুঠোয় থাকো

কাসেম আলী রানা

 

আমি যখন তোমার হাতের মুঠোয়  থাকি,

তখন পৃথিবীর তাবৎ নিয়মকে অনিয়ম করে ফেলি,

নিজের খাম-খেয়ালী মতো সব কিছু উদযাপন করি!

তোমার সাহসে আমি এমন দুঃসাহসী  হয়ে উঠতে পেরেছি!

 

আমার গৃহ নেই,তুমি আমার বসত ঘর!

আমার কোন আশ্রয় নেই, তুমি আমার আশ্রম!

আমার কোন আকাশ নেই, তুমি আমার দিগন্ত জোড়া রংধনু!

আমার কোন মেঘের বহর নেই, তুমি আমার মেঘের  মায়াময় সুখ!

আমি কখনো ফুল ছুঁতে পারিনি, তুমি আমার আঙ্গুলে ফুল হয়ে জড়িয়ে থাকো!

 

খুনসুটির ছলকলায় তুমি কেবলই উত্তাল সমুদ্র হয়ে ওঠো!

আমি হয়ে যাই দুর্ণিবার লোভী একজন হিংস্র ডুবুরি!

ডুবে যাই সমুদ্র তলদেশে অজানাকে অবিষ্কার করতে,

খুঁজে আনি একচল্লিশটি নীল চিংড়ি, অ্যাকুরিয়াম ফিস, আরও অনেক নামহীন অজানা উদ্ভিদ!

 

তুমি বাঁকা চোখে হাসো। হেসে হেসে বলো- এসব আর এমন কী?

তোমাকে আমার পুরো সমুদ্রটাই দান করে দিলাম,

শুধু  আমার হাতের মুঠোয় থাকো!

 

======================

 

 

উত্থিত আলোর আলেখ্য

নুরুন্নাহার মুন্নি

 

সৃষ্টি হোক, আজ এমন কিছু সৃষ্টি হোক

জীবনের ষড়যন্ত্রকারী হৃদয়ের প্রগাঢ়তা–

¯্রােতের বাহনে মিলিয়ে যাক

উপত্যকার ঝর্না বেয়ে নেমে আসুক বার্তা

আকাশ জুড়ে বর্ণিল সাজের মিথ্যে প্রলোভন,

মৈথুন মনের রংছাপ, গোলাপি সৌন্দর্য, মুছে যাক

 

সব, সব ধুয়ে মুছে যাক,

আজ সৃষ্টি হোক, এমন কিছু সৃষ্টি হোক

প্রমোদিত আত্মা অন্ধত্বের শিকল টেনে ধরুক

অশ্রু আর বৃষ্টির কান্না সঙ্গম করুক

নির্লজ্জ হোক পাথরের শীতল প্রেম

সৃষ্টি হোক, আজ এমন কিছু সৃষ্টি হোক

প্রজন্মের মানিব্যাগ ভর্তি লালসার অস্থিরতা গিলে নিক

ভূগোল ভাস্কুলার প্রেম, আজ সৃষ্টি হোক।

 

===========================

 

রহস্যে যাপন

রাশিদা তিথি

 

চলেছে           কোথায় সময়

শঙ্কাহীন           নিরাসক্ত!

হচ্ছি ছাই         বোধের তাপে

গড়িয়ে            পড়ে বাষ্প।

 

রাত্রি-দিন       জেগে জেগে

বুনেছি            যতো স্বপ্ন

আলগোছে     যাচ্ছে ধুয়ে

পারছি কি       তাকে বাঁধতে?

 

ঘুমিয়ে            তারার আলো,

আঁধারে          ভেসে বেড়ায়

যাপনের         সকাল বিকাল

রহস্যে           জীবন অপার!

 

অভিমান        কেবল জমে

উদ্ধত             ব্যথার শিরে।

বসন্ত             ভেজে ভোরে

বিবর্ণ              জামা গায়ে।

 

স্মৃতিরা            ড্রয়িংরুমে

পুরাতন           অ্যালবামে চোখ।

 

 

==============================

 

 

কীর্তনের বিবৃতি

অনিক রায়

 

কীর্তনীয়াদের কত সুখ;

তাদের বাকযন্ত্র কত তীব্র,

চোখের বাঁধের দুয়ার খোলা।

উন্মুক্ত আসরে ;

আমি অদৃশ্য ভক্ত তোমার প্রত্যাশায়-

আমি আর তোমাকে দেখেছি কই,

আমি আবদ্ধ পদাবলি;

রাতের কাছে থামিয়ে দিয়ে

শাসনের মাপকাঠি –

আমি অন্ধকারেও পথ পেয়ে যাব।

আমার বাকযন্ত্র কাঁদে আসরের উপকূলে ;

বন্দিদশায়-

তবু আমি বিবৃতি দিই তোমার জন্য যা পৌঁছায়

প্রতিটি  সম্প্রদায় সংঘের  শ্রীখোলে।

 

 

 

=========================

 

 

পাথুরে জীবন

টিপলু বড়ুয়া

 

রাতের অন্ধকারে যেখানে

চাঁদ দেখা যায়-

জোনাকিরা মিটিমিটি আলোতে

যেখানে মন রাঙায়-

ঝিঁঝি পোকারা অবিরাম শব্দে

যেখানে বিনামূল্যে গান শোনায়।

 

দালান ঘেরা শহর ছেড়ে আজ-

মন যেন সুদূরে পাড়ি দিতে চায়।

শহরে বন্দী- পাথুরে জীবন যেন আজ-

মুক্তি পেতে  চায়।

 

==================================

 

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে