আলম খোরশেদ
ই তো গেলমাসেই অতিক্রান্ত হল বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জীবন্ত কিংবদন্তি, শ্রী পবিত্র সরকারের পবিত্র জন্মতিথি। এই দীর্ঘ জীবনে কী বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই না গেছেন তিনি! সাতাশি বছর আগে জন্মেছিলেন যে-দেশে, সেটি আজ ভিনদেশ। জন্মেছিলেন যমজ, আর জন্মের প্রায় পরপরই দত্তক হিসেবে চলে গিয়েছিলেন এমন এক সংসারে, যে-সংসারের অধিকর্ত্রী ছিলেন তাঁরই সন্তানহীনা দুই পিসি। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় দশ বছর বয়সে দেশান্তরী হয়ে চলে আসেন ভারত তথা ইন্ডিয়া নামক অপর এক দেশে। আর খুব কমবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া তাঁর যমজ বোন লীলা রয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানেই, ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের বলিয়ারপুর গ্রামে স্বামীর সংসারে। সেই বোনের সঙ্গে প্রায় চল্লিশ বছর পরে দেখা হয়েছিল তাঁর স্বগ্রামে ২০১৩ সালে, যখন বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনার কাজে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। তো, সাতচল্লিশে উদ্বাস্তু হয়ে নতুন দেশে গিয়ে শুরু হয় তাঁর দারিদ্র্যপিষ্ট কঠিন ও দুর্বহ সংগ্রামমুখর জীবন, খড়ুগপুরের রেল কলোনির দুকামরার
ভাঙাচোরা এক বসতিঘরে। তার সঙ্গে যোগ হয় এক দীর্ঘস্থায়ী, ক্লেশকর শারীরিক প্রতিকূলতা। তবু এরই মধ্যে তিনি বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়-বহির্ভূত পাঠ দুটোই পুরোদমে চালিয়ে যেতে থাকেন, মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ছিল যার অনিবার্য পুরস্কার। আর সব ভালোছাত্রের মতোই তিনি তখন ভর্তি হলেন বিখ্যাত স্কটিশ চার্চ কলেজে অর্থনীতি পড়ার বাসনা নিয়ে। কিন্তু রক্তে যার ভাষা ও সাহিত্যের নেশা পরিব্যাপ্ত হয়ে গেছে এরইমধ্যে তাকে কি আর আটকে রাখা যায় ¯্রফে লাভলোকসান আর চাহিদা ও জোগানের বিশুষ্ক গণিতে! তিনি তাই সব ছেড়েছুড়ে ফের নাম লেখালেন বঙ্গবাসী কলেজের বাংলা বিভাগে, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল চিরদিনের মতো। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর দুই পরীক্ষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হলেন তিনি। এরপর একে একে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান; সেখান থেকে উচ্চতর শিক্ষার্থে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন; ভাষাতত্ত্বে পিএইচডি লাভ; শিকাগো, মিশিগান, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অর্জন; একপর্যায়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসে ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দেওয়া, অতঃপর দীর্ঘ সাতবছর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বপালন; পাশাপাশি নিরন্তর লেখালেখি, গবেষণা, অনুবাদকর্ম, অভিধান ও ব্যাকরণচর্চা; নানাবিধ প্রশাসনিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ব্যাপৃত থাকা; গান গাওয়া, নাটক করা— কী নেই তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে? তারপরও কি না ২০১২ সালে ‘নন্দন’ পত্রিকায় ধারাবাহিক আত্মজীবনী লিখতে বসে তিনি তার শিরোনাম দেন: অল্প-পুঁজির জীবন! একেই বুঝি বলে বিনয়, ভদ্রতা ও ভালোমানুষির পরাকাষ্ঠা।
তো, এহেন পবিত্র মানবের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎটি সংঘটিত হয়েছিল ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর নিজেরই গ্রন্থভারাক্রান্ত ‘সেঁজুতি’ নামের বাড়িটিতে, তাঁরই এক অবিচল ভাবশিষ্য, আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু রাজীব চক্রবর্তীর দূতিয়ালিতে। মনে আছে সেবারে তাঁর কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলাম গোটা তিনেক বই, তাঁর স্বহস্তে লিখিত শুভেচ্ছালিপি সমেত। এর মধ্যে ছিল তাঁর সদ্যপ্রকাশিত উল্লিখিত আত্মজীবনীটিও। আর ছিল, তাঁর লেখা প্রথম রম্য রচনার সংকলন ‘স্বচক্ষে স্বকর্ণে’ ও শিশুতোষ গ্রন্থ, ‘বাচ্চারা খুব বিচ্ছু হয়’। ‘স্বচক্ষে স্বকর্ণে’ বইটি পড়ে তাঁর আরেকটি বিশেষ গুণের পরিচয় পাই, যা আমাদের সমকালীন সাহিত্যে ক্রমশই দুর্লভ হয়ে উঠছে। সেটি তাঁর অসাধারণ রসবোধ, নিজেকে নিয়ে ব্যঙ্গ-কৌতুক করার বিরল সাহস ও ক্ষমতা। খোদ রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে রাজশেখর বসু, সৈয়দ মুজতবা আলী, বুদ্ধদেব বসু, দিলীপকুমার রায়, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অশোক মিত্র, এমনকি অমর্ত্য সেন প্রমুখ আমাদের পূর্বসূরি বড় লেখকদের প্রায় সবার লেখাতেই এমন বুদ্ধির দীপ্তি, প্রসন্ন হাস্যরস ও সূক্ষ্ম রসবোধের শিল্পিত প্রকাশ থাকলেও বর্তমানে তার ধারাটি ক্রমেই যেন শুকিয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে পবিত্র সরকার এক আশ্চর্য ও শ্রদ্ধেয় ব্যতিক্রম। সম্প্রতি অতিমারির কারণে ঠাঁইনাড়া হবার সময় বইটি সম্ভবত কোথাও অজ্ঞাতবাস নিয়েছে, তা নইলে আমার এ উক্তির স্বপক্ষে সেটি থেকে কিছু সরস উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সংবরণ করা কঠিন হত। ও হ্যাঁ, বইটিতে সরকার মহাশয়ের সঙ্গে আমার নিজের একটি তুচ্ছ মিল খুঁজে পেয়ে তাঁর প্রতি আমার অনুরাগ ও শ্রদ্ধার পারদটি যে কিঞ্চিৎ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল, সেই কথাটিও এক্ষণে অসংকোচে কবুল করে নিতে চাই। সেটি আর কিছু নয়, তাঁর অকৃত্রিম প্রাণিপ্রেম তথা মার্জারপ্রীতি!
কারও কারও জানা থাকতে পারে, পবিত্র সরকার প্রায় ছান্দসিকের দক্ষতায় তাৎক্ষণিকভাবে দুর্দান্তসব ছড়া নির্মাণে সিদ্ধহস্ত, কিন্তু এর বাইরেও তিনি যে শিশুকিশোরদের জন্য গদ্যে পদ্যে নানা ধরনের বই লিখেছেন এবং এখনও লেখেন,এটা সম্ভবত অনেকেরই অজ্ঞাত। তাঁর লেখা ‘নাতি-নাতনিদের কথা’, ‘নাতি গণেশের ভুঁড়ি’, ‘ছলছুতো’, ‘হাসতে হাসতে বানান শেখা’, ‘কথা ও কাহিনি’, ‘সুভাষ থেকে নেতাজি’ ইত্যাদি সেরকমই কয়েকটি জনপ্রিয় শিশুতোষ গ্রন্থ। প্রসঙ্গত, ‘বাচ্চারা খুব বিচ্ছু হয়’ গ্রন্থের ভূমিকাতে সেই বইয়ের সম্ভাব্য পাঠকদের কথা বলতে গিয়ে তিনি খুব একটা মজার কথা লেখেন, ”একটু উচ্চাশা নিয়ে পাঠকদের মধ্যে আমি শিশু থেকে তাদের পিতামাতা আর দাদু-দিদিমা সবাইকে ধরেছি।” এবং তাঁর এই ‘ধরা’টা যে নেহাত ভুল ছিল না, তার সাক্ষাৎ প্রমাণ এই লেখক স্বয়ং, যিনি বইটি হাতে পেয়ে প্রথম সুযোগেই সেটি পড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন, এবং শেষ না করা পর্যন্ত তা আর নামিয়ে রাখতে পারেননি, এমনই টানটান মজাদার গদ্যের বয়ন আর গল্পের ভিয়েন বসানোর ক্ষমতা তাঁর। আসলে সত্যিকার বড় মানুষদের মন ও মননে সততই এক শিশু বাস করে, সেই চিরশিশুটির বয়স যতই বাড়–ক না কেন তার ভেতরের সারল্য, তার অপার কৌতূহল আর কৌতুকপ্রিয় মনটির মৃত্যু হয় না কখনও। পবিত্র সরকারের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের আর সব বড় লেখকের মতো তাঁর মধ্যেও শিশুদের জন্য প্রগাঢ় এক দরদ ও দায়বোধ কাজ করে বলেই জটিলসব ভাষাতাত্ত্বিক বিষয় আর কঠিন কঠিন ব্যাকরণের বই লেখার পাশাপাশি সবসময়ই তিনি শিশুকিশোরদের জন্য কলম ধরার সময় বার করে নিতে পেরেছেন।
এরপর আরও একটিবার তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। মনে পড়ে সেবার তিনি উপহার দিয়েছিলেন ছোট কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান ও ওজস্বী একটি গ্রন্থ, যেটি ঠিক তাঁর ভাবনার চেনা চৌহদ্দি কিংবা সচরাচর চর্চিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বইটির নাম ‘মৃত্যু’, যা একদিকে মৃত্যুবিষয়ক যাবতীয় তথ্য ও তত্ত্বের আকরবিশেষ এবং অন্যদিকে মৃত্যু নিয়ে লেখকের নিজস্ব চিন্তা, ভাবনা, কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, অনুভূতি, উপলব্ধি, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণের সমাহার, এককথায় যাকে বলা যেতে পারে তাঁর জীবন ও মৃত্যুদর্শনের সারাৎসার। এটি গোপন করার কোনো বিষয় নয় যে, আমরা প্রত্যেকেই চেতনে, অবচেতনে মৃত্যুচিন্তা দ্বারা প্রবলভাবে তাড়িত হয়ে থাকি। অথচ কেউই ঠিক নিশ্চিত করে জানি না জীবনের এই অমোঘ এবং একমাত্র সুনিশ্চিত সত্যটিকে কীভাবে গ্রহণ ও মোকাবিলা করতে হয়, কীভাবে শান্ত ও অচঞ্চল চিত্তে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় তার জন্য। পবিত্র সরকারের এই নিবিড় গবেষণালব্ধ এবং দার্শনিক প্রজ্ঞাপূর্ণ গ্রন্থটি আমাদের সবাইকেই সাধারণভাবে মৃত্যু নামক জটিল, নির্মম ও অনিবার্য প্রপঞ্চটিকে বুঝতে ও তার মুখোমুখি হতে প্রভূত সাহস ও শক্তি জোগাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই গ্রন্থটি পাঠে এতটাই আশ্বস্ত হয়েছি ও একইসঙ্গে মানসিক শক্তিলাভ করেছি যে, এজন্য লেখকের প্রতি আমার অন্তত কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামে তাঁর আশিতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমাদের ‘বিস্তার’ শিল্পকেন্দ্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। মনে আছে সেবার টানা একঘণ্টার বক্তৃতায় তিনি একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে বেশ স্বচ্ছন্দে ও অবলীলায় তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন, যা উপস্থিত আরও অনেকের মতো আমাকেও অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করেছিল খুব। পরবর্তীকালে তাঁর সেই দৃষ্টান্ত আমি খুব সচেতনভাবেই আমার জীবনে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি। তবে সবসময়ই যে তাতে তাঁর মতো সফল হতে পেরেছি বা এখনও পারি, সেকথা অবশ্য বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না। সেদিনের বক্তৃতায় তিনি একটি বিষয় উত্থাপন করে আমাদেরকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই সেদিন আমরা প্রথমবারের মতো জানতে পারি যে, বিশ্বের বিপন্ন ভাষাদের তালিকায় আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাটিও নাকি ইতোমধ্যে তার নাম লিখিয়ে ফেলেছে! তখন পর্যন্ত সেটির অবস্থান তালিকার নিচের দিকে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে তার দ্রুত পদোন্নতির আশঙ্কাটিকে তিনি কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেননি। সেদিন তাঁর এই আশঙ্কাটিকে আমাদের অনেকের কাছেই নেহাত অমূলক মনে হলেও, আজকের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অতটা নিশ্চিন্ত আর থাকতে পারছি কই! অবশ্য বক্তৃতাশেষে প্রায় জাদুকরের মতো পকেট থেকে একটি চিরকুট বার করে এনে তাঁর সদ্যরচিত একখানি অপূর্ব ছড়া পাঠ করে আমাদের মনখারাপের আবহটাকে তিনি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি সেদিন। শুধু কী ছড়াপাঠ, এরপর মিলনায়তনের কোনো এক সংগীতরসিক শ্রোতার অনুরোধে তিনি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে পরপর ক’টি রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েও উপস্থিত সবাইকে রীতিমতো মুগ্ধ ও অভিভূত করে দিয়েছিলেন! তা করবেনই বা না কেন, তিনি তো আর ¯্রফে একজন শৌখিন গায়কমাত্র নন, বাজারে যে তাঁর তিন তিনটে রবীন্দ্রসংগীতের সিডিও বর্তমান, সেই খবর কজন রাখেন!
এহ বাহ্য, তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা আমার এই চাটগাঁ শহরেই করোনার আগের বছর, অনেকটা কাকতালীয়ভাবে। একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে কী এক অনুষ্ঠানে যেন যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি সেবার। আমি তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য ‘বিনে স্বদেশীয় ভাষা’ নামে বাংলা ভাষাবিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি। অনুষ্ঠানটির বেশ কটি পর্ব ততদিনে প্রচারিত হয়ে গেছে, কিন্তু একটি বিশেষায়িত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর বলার জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত বক্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি কিছুতেই। বিষয়টি ছিল, ‘ভাষানীতি ও ভাষাপরিকল্পনা’, যা আমার বিবেচনায় একটি রাষ্ট্র কিংবা জনগোষ্ঠীর ভাষাব্যবস্থার সুষ্ঠু
প্রয়োগ, বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের জন্য, যার জন্মই হয়েছে মূলত ভাষার ভিত্তিতে এবং যার গোটা কাঠামোটিই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাষা ও ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতির ওপর ভর দিয়ে। ঠিক সেই সময়েই অনেকটা যেন মেঘ না চাইতেই জল এর মতো উদয় হলেন স্বয়ং ভাষাবিজ্ঞানী পবিত্র সরকার, যিনি আমার বিবেচনায় এই বিষয়ের ওপর প্রশ্নাতীতভাবেই শ্রেষ্ঠ প-িত ও বিশেষজ্ঞদের একজন। তাঁকে অপ্রত্যাশিতভাবে আমার শহরে পেয়ে গিয়ে আমি যেন একেবারে হাতে চাঁদ পেলাম। তাই আর কালবিলম্ব না করে তাঁর আমন্ত্রকদের কাছ থেকে একটি সকালের জন্য তাঁকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে এসে আমার অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করিয়ে ফেলি। বলাবাহুল্য, সেটি ছিল আমার এই গোটা অনুষ্ঠানমালার শ্রেষ্ঠতম পর্ব, যা কিছুদিন বাদে প্রচারিত হবার পর বোদ্ধামহলে ব্যাপক প্রশংসিত ও আলোচিত হয়েছিল। বাঙালির বুধসভার অন্যতম প্রধান জ্যোতিষ্ক, আমাদের পরম গর্বের ধন ড. পবিত্র সরকারের উদ্দেশে এই ব্যক্তিগত শ্রদ্ধালেখটি রচনা করতে গিয়ে, তাঁর মতো এক অবিসংবাদিত ভাষাবিশেষজ্ঞের মুখোমুখি বসে বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে পারার সেই অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতাটির কথা মনে করে আজ রীতিমতো শ্লাঘা অনুভব করছি।
এই মহীরুহতুল্য মানবের এমন বিশাল-পুঁজির মহার্ঘ জীবনের উদ্দেশে এ-ই আমার অল্প-পুঁজির শ্রদ্ধার্ঘ্য।
আলম খোরশেদ, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক