এখন সময়:দুপুর ২:৪৭- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:দুপুর ২:৪৭- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

প্রমাদ থেকে অপ্রমাদের পথে

চিরহরিৎ

হালকা একটা মানুষের অবয়ব, সেখান থেকে খুদিত হচ্ছে তার চোখ। চোখের কোঠরটি এখন স্পষ্টই চেনা যাচ্ছে, আমার কিছু দূরের এক জন্মের। অনেকটা ফ্লোরিডা থেকে মিসিসিপির এই পানশালায় আসতে যেরকম সময় লেগেছিল আমার, সেরকম একটা নাতিদীর্ঘ পথ। আমি জেনিফারকে ডাকছিলাম, জেনি, জেনি বলে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলনা, সে ছোট ডিভাইনটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে গিয়ে আরও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাতে তার ফর্সা, সুন্দর পা-খানা হাঁটু অব্ধি উন্মেচিত হয়ে ওঠে। বেপরোয়া বানর জর্জ, তড়িঘড়ি করে বার-ম্যানেজার মিঃ গোবিন্দকে বলে, বুঝলে মিঃ ঘোষ, আমি কিন্তু এরকম একটা মালের খোঁজে এখানে এসেছিলাম, কিছুটা ডাচ আবার কিছুটা ইন্ডিয়ান, একদম টশটশে অ্যাভাকাডো। গোবিন্দ ঘোষ মৃদু হাসে, হাসলে তার মুখ দিয়ে বিশ্রি গন্ধ বেরিয়ে আসে। তাই জর্জ ফার্নানডেজ, একপা পিছিয়ে অ্যাবসোলুট ব্লু ভতকা গিলতে থাকে; সেই ফাঁকে মিঃ ঘোষ তার স্বভাবসিদ্ধ ঢঙ্গে তার স্বদেশি গোয়ানিজকে আর ছেড়ে কথা বলতে রাজী নয়। সে বলতে থাকে, বুঝলে বাছা, আমি তোমার বাপকে চিনি সেই স্কুল জীবন থেকেই; কোন কিছুতেই তার মন ছিলোনা শুধু সুন্দরী নারী বাদে, সেটা দেখছি তোমার মাঝেও প্রথিত হয়েছে অপটিক্যাল ক্যাবেল দিয়ে।

 

জর্জের মাথায় ওসব উপমা, অপটিক্যাল ক্যাবেল কিছুই ঢুকতে রাজি নয়, তার এখনই জেনিফার-ভান-ডার-হার্টনের শরীরের সান্নিধ্য দরকার। ওদিকে বেপরোয়া পুরুষের কুকুর সদৃশ্য গোঙানিতে, জেনিফারের হালকা পাতলা ঘুমটাও ভেঙে যায়। সে বারের পেছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে, স্যাঁতসেতে বাথরুমটাতে ঢুকে পড়ে, তারপর বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে, আয়না দেখতে দেখতে তার সুন্দর মুখখানিতে পানির ঝাপটা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আহ্, কী দারুণ আমেরিকার পানি, ইচ্ছে করছে জামাকাপড় ছেড়ে সোজা বাথটাবে শরীরটা এলিয়ে দিই, জেনিফার মনে মনে বলে। যেই ভাবা অমনিই কাজ, জেনিফার তার কালো নীল জামাটা ছেড়ে ফর্সা দেহটা এলিয়ে দেয় বাথটাবে। জর্জ সেটা আঁচ করতে পেরে দ্রুত এগিয়ে চলে বারের পেছনের দরজা দিয়ে। কিন্তু না, এবারও জর্জের বাধা হয়ে দাঁড়ালো পুঁচকে মেক্সিকান আলবার্তো, সে নাইন-এমএম পিস্তলটা জর্জের দিকে তাক করে, বিশাল চামড়ার টুপির ভিতর চিৎকার করে বলতে থাকে, উহু, জেনিফার তোমার জন্য নয়। সে আমার প্রভু নিলের বাগদত্তা, তাকে তুমি কোন ভাবেই ছুঁতে পারবে না, নারী লোভি জর্জ; বলতে বলতেই সে শূণ্যে গুলি ছোঁড়ে। গুলির শব্দে জর্জ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, দুহাত বুকে জড়িয়ে কাঁপতে থাকে।

ছোটখাটো গড়নের নিল এসে প্রথমেই মাটিতে কাঁপতে থাকা জর্জের পাছায় সজোড়ে দুটো লাথি মারে তারপর শালার ইন্ডিয়ান বলে গালি দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে এবং প্রতিবারের মতই তাদের মাঝে একটা দীর্ঘ সঙ্গমের ইনিংস গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটা তাতেই সীমাবদ্ধ থাকে কারণ অবাধ যৌনতার পরে কেউ কাউকে এক মুহূর্তের জন্য সহ্য করতে নারাজ। জেনিফার, জর্জের জিন্স-প্যান্টের পকেট টেনে ধরে গলা চেঁচিয়ে বলে, শালা বিয়ে করার মরদ না থাকলে শরীরের সাধ নিতে আসিস ক্যান, বুনো আমেরিকান? নিল তার পকেট থেকে বিগত মাসের হোটেলের বিলগুলো দেখিয়ে বলে, হারামজাদি, তোর সাথে রাত কাটানোর জন্য হোটেল অ্যাম্বেসডরে এই পর্যন্ত ৫০,০০০ ডলার বিল দিয়েছি। কথাটা শেষ হতে, না হতেই শুরু হয় হাতাহাতি, একপর্যায়ে মিঃ গোবিন্দের হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই সেদিনের মতো দুই চির-প্রেমিক-শত্রুর আজন্মের ঝগড়াটা শিকেই ওঠে। ওদিকে, জর্জ ফার্নানডেজ, জেনিফারের নরম হাতটি ধরে সিগেরেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে, জেনিফার, উড ইউ ম্যারি মি? নিল, আলবার্তোকে তার বিশাল হার্লে ডেভিডসনের পেছনে বসিয়ে এক মুহূর্তেই হাওয়া। মোটর-সাইকেলটা ছুটছে তো ছুটছে: আরাকানসাস, ওকলাহোমা, ক্যানসাস হয়ে ইউএস-কানাডিয়ান বর্ডারের রকসাম-রোড পেরিয়ে গেল।  নিল, আলবার্তোর দ্বিমত সত্ত্বেও রাস্তাটার প্রান্ত ছুঁইয়ে মন্ট্রিল শহরের দিকে এগিয়ে গেল, যেখানে কোবাল্ট স্টোনের পথ দেখে দুজনেরই চোখ জুড়িয়ে গেছে। কনকনে ঠান্ডায়, নিল একটি ফুটপাথ-ক্যাফেতে বসে একটা গাঁজা ধরিয়েছে মাত্র; আলবার্তো তাকে ইশারা দিয়ে একটি আগন্তুক তরুণীকে দেখিয়ে বলে, এটা তোমার জন্য পারফেক্ট একটা রুটি হতে চলেছে, প্রভু। মেয়েটি কাছে আসতেই, নিল গাঁজার ধোঁয়াটা তার মুখে ছড়িয়ে দেয়, মেয়েটিও তার মুখ থেকে গাঁজার স্টিকটি নিয়ে দ্রুত বন্ধু বনে যায়। মেয়েটির পড়নে স্কটিশ চেকের ছোট স্কার্ট, মনে হচ্ছে তার লম্বা লম্বা মসৃণ পা-দুখানাকে আরও লোভনীয় করে তুলতে সে নিতান্ত খাটো মিনিস্কার্টটা কোমড়ে জড়িয়েছে। নিলের আর তর সইছিলো না, সৌজন্য সাক্ষাতের পরেই নিল নিয়মমাফিক মেয়েটিকে নিয়ে একটি দামি হোটেলে উঠে গেলো, হোটেলের লোহার তৈরী সরু সিঁড়িটাতেই উঠতেই, নিলের জেনিফারের কথা মনে পড়ে গেল। তার চোখের কোণে জল জমে গেল। তার চোখে ভেসে উঠলো, জেনিফারদের পুরনো বাড়ির কথা, একটা সিঁড়ি সাপের মতো প্যাঁচ মেড়ে উঠে গেছে কাঠের বাড়িটির তৃতীয় তলায়, যেখানে সে তার জেনিফারকে নিয়ে লোহার রেলিংটাতে ঝুলতে ঝুলতে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিত। আহ্, সে দশ-এগারো বয়সটাতে জেনিফারকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো কিন্তু এখন জেনিফার হয়ে গেছে অন্য আরও দশটি মেয়ের  মতোই তার কামনা মেটানোর বস্তু মাত্র। সে মারিওয়ানার শেষ টানটি দিয়ে সিগারেটের ফিল্টারটি ডাস্টবিনে ছুঁড়ে মারতেই থুথু নির্গত করে বলে, আই হেট সেক্স, ওয়েন আই শেল গ্যাট রিড অফ ইট? হোটেল রুমের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে আলবার্তোর ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা। অবশেষে নিল দরজাটা খুল্লো, ছোট স্কটিশ স্কার্ট পড়া মেয়েটি তার চামড়ার জ্যাকেটটা আলবার্তোর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে দ্রুত হারিয়ে গেল। আলবার্তো চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘প্রভু এভাবে কী জীবনটা যাবে? আমাদের তো কোথাও না কোথাও থিতু হতে হবেই।’

 

 

 

 

নিল হাসে, হাসতে হাসতে বলে, ধরে নাও এটাই জীবন।

আগামী নভেম্বরের শেষে জেনিফার ভান ডার হার্টনের বিয়ে। খবরটা শুনে, নিল আকাশ থেকে পড়ে। অথচ একটু পরেই শুরু হতে চলছে তার জীবনের প্রথম পর্ণছবির শুটিং। কতো পথ, কতো চেষ্টা করে যে সে সুযোগটা হাতিয়েছে, সেটা এই এলেমেলো জীবনের রাজপুত্র নিলই একমাত্র অনুধাবন করতে পারে। পরিচালক মঁসিয়ু ক্রিস্টফ এসেছে সোজা প্যারিস থেকে, অতি পারিশ্রমিকের লোভে অথচ তিনি নিজেই পর্ণ সিনেমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি সদ্য সুইমিংপুল থেকে উঠে আশা বিকিনি পড়া লেবানিজ নতুন মুখ আলিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে, ইনি হচ্ছেন আপনার নায়ক, নিল। তোমরা চাইলে এখনই অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ফিরে যেতে পারো। কিন্তু কোন কিছুতেই, কিছু হয়ে উঠছিলো না যেন। মঁসিয়ু ক্রিস্টফ তাঁর সহকারী, মাদাম মিয়েকে একটা চুরুট ধরিয়ে বলতে লাগলেন, ‘বুঝলে আমার বয়সতো এখন প্রায় পঁয়ষট্টি ছুঁই ছুঁই, এই পর্ণগ্রাফি তৈরির পেশাটা আর এন্জয় করছি না।’ উত্তরে মাদাম মিয়ে বলে, ‘তাইতো আর কতো; আজকের শুটিংটা কি বন্ধ করতে বলবো, মঁসিয়ু ক্রিস্টফ।’ মঁসিয়ু ক্রিস্টফ তার বাম চোখটা ঈষৎ সংকুচিত করে বলে, তাই হোক।

শুটিং বন্ধের সিগন্যালটা পেয়ে, নিল, আলবার্তোকে ইশারা করে বলে, ‘চলো এখনই আমাদের গ্রিনভিলে ফিরে যেতে হবে।’ আলবার্তো ভ্রু কুঁচকিয়ে প্রশ্ন করে, নর্থ ক্যারিলোনা? নিল বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয়, আরে মিসিসিপির ছোট্ট শহর গ্রিনভিল, যেখানে আমরা একদা বেড়ে উঠেছি একসাথে।

আলবার্তো প্রশ্ন করে, সেই পেঁচানো সিঁড়ির বাড়িটিতে? নিল একশ মাইল স্পিডে মোটর সাইকেলের গতি বাড়িয়ে পেছনে ফিরে, বাতাসের ভিতর বলে, ই-য়া-স-স।

মন্ট্রিল থেকে গ্রিনভিল(মিসিসিপি) সোজা পথ নয়। প্রায় আড়াইহাজার কিলোমিটারের পথ দুইদিনে পাড়ি দিয়ে, দুজনে শুয়ে আছে সস্তা হোটেলের ডাবল খাটে।

আলবার্তো : প্রভু, শুনেছি জেনিফারদের গ্রিনভিলের বাড়িটার কিছু পরেই নাকি তোমাদের পৈত্রিক বাংলো। তুমি সেখানে যাবেনা?

নিল : কথাটা আমিও ভাবছিলাম কিন্ত বাস্তবে স্বপ্নটা মনে হয় স্বপনই থেকে যাবে। কারণ গত বছরের এই সেপ্টেম্বর মাসেই, আমি বাবার ড্রয়ার থেকে প্রায় নব্বইহাজার ডলার নিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম, সাথে বাবার এই অতি প্রিয় হার্লে-ডেভিডসন মোটর-সাইকেলটি সহ। আসলে আমার আর কোন ভাবেই আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে ইচ্ছে করছিলো না, তাই পালিয়ে এলাম। কিন্তু এখনতো দেখছি এই নারীর পিছু জীবনটাও আর ভালো লাগছে না। তাছাড়া টাকা পয়সাও ফুরিয়ে আসছে অতি দ্রুত।

আলবার্তো : ও বুঝতে পেরেছি, মানে আর কিছুদিন পরেই তোমাকে কাজের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে। শোন প্রভু, আমরা কিন্তু মেক্সিকান মানে মেসটিজো, মানে কিছুটা আদি ইন্ডিয়ান, কিছুটা স্পেনিশ। আমরা আমেরিকায় আসি, আমেরিকা জয় করার আশায়। তাই বলে ঠিক এইভাবে একজন আপাদমস্তক ব্যর্থ যুবকের পেছনে জীবনটা তছনছ করতে চাই না। কতো আশা নিয়ে তোমাকে প্রভু বলে ধরে নিয়ে ছিলাম, বলে আলবার্তো কাঁদতে শুরু করে দেয়। এই পুঁচকে, আড়াই ফুটের দেহটা নিয়ে জন্মলাভ করাটা যে কতোটা দুঃখের, সেটা তুমি সুঠামদেহি স্বাভাবিক মানুষ কখনও বুঝে উঠতে পারবে না। সে কান্না জুড়িয়ে আরও যোগ করে বলে, এই ছত্রিশ বছর বয়সে শুধু একবার নারীসঙ্গ লাভ করেছিলাম, তাও লুজিয়ানার গালে আলতো একটা চুমু। কতোকাল আগের কথা অথচ সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। আর তোমার কাছে তো প্রেম মানেই কেবল নারীসঙ্গ। এটা কি একটা জীবন হতে পারে? ধর্ম নেই, কর্ম নেই, কোন কিছুতেই বিশ্বাস নেই, শুধু ভোগ আর ভোগ। গত একবছরে তো তোমাকে কোনদিন চার্চে যেতেও দেখলাম না, এমনকি প্রভু যীশুর নাম, মুখে নিতেও শুনলাম না।

নিল : আলবার্তোর মুখে ঝাঁজালো বাণীগুলো শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে, হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না। (কিন্তু মনে মনে সে আলবার্তোকে সত্য কথাগুলো তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ দেয়)। বিকেল গড়িয়ে একটা লম্বা ঘুমের পর নিল, জেনিফারকে ফোন দেয়। অন্য প্রান্ত থেকে একটা অচেনা নারী কণ্ঠ বলে ওঠে, কাকে চায়?

নিল : জেনিফার ভান ডার হার্টনকে।

অচেনা মহিলা : তীব্র চিৎকারে জেনিফার, জেনিফার বলে ডাকতে শুরু করে।

জেনিফার : কেন ফোন করেছো লম্পট নিল? তুমি জানোনা আগামী পরশু প্যারিশে(কেন্দ্রিয় চার্চ) আমাদের বিয়ে।

নিল : কিন্তু তুমি একজন বিশ বছরের তরুণী হয়ে, পঁচিশ বছরের বয়।জ্যেষ্ঠ একজন ধনি ব্যবসায়ীকে কেন বিয়ে করতে চললে? তাছাড়া এই বয়সে কি পুরুষদের অতো চাহিদা থাকে?

জেনিফার: এই চাহিদা শব্দটা শুনতে এখন আমার বড়ই বিরক্ত লাগে। তোমার মাথায় কি কেবল সেক্স শব্দটাই ঘুর ঘুর করতে থাকে। শোন নিল, তুমি কিন্তু একজন চরমভাবে নিমফোমিয়া আক্রান্ত রোগী। আর তোমার সাথে মেলামেশা করতে করতে, আমার ভিতরেও যে সেই রোগ বাসা বাঁধেনি, সেটাও মিথ্যে না। বুঝলে, এই গ্রিনভিলে পড়ে থাকলেও আমি সবই খবর

রাখি; তুমি নাকি এক লেবানিজ পর্ণ তারকার সাথে পর্ণছবিতে অভিনয় করতে গিয়েছিলে। বুঝলে তোমার বাবা, মানে মিঃ প্যারেরা আমাদের বাসায় এসেছিলো তোমার খবর নিতে। অনেক কথার মাঝে, আমি কি উত্তর দিয়েছিলাম ঠিক মনে নাই কিন্তু কেবল এটা মনে আছে যে, আমার সর্বশেষ উত্তর ছিলো, তোমার সাথে আমার সম্পর্ক চুকে গেছে।

নিল : কি বাবা এসেছিলো আমার খোঁজে? শোন জেনিফার, পর্ণছবিতে অভিনয় করতে গিয়েছিলাম ঠিক কিন্তু তোমার কথা মনে পড়তেই, আর বিয়ের কথা শুনতেই এই আড়াইহাজার কিলোমিটারের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এলাম সাঁই করে। তারপরও কি—-

জেনিফার : তোমাকে আমার ভালো করে চেনা হয়ে গেছে। সেই কøাস-টু থেকেই তো তোমাকে চিনি। কিন্তু বয়সন্ধি কাল পেরিয়ে তোমার যে, এতোটা রুপান্তর ঘটবে, সেটা আমি কখনও ভাবতেও পারিনি। ভাবতে পারিনি, তুমি এতোটা নোংড়া প্রকৃতির মানুষে রুপান্তরিত হবে!

নিল :  যতোই কিছু হোক, আমি কিন্তু তোমাকে অন্তর থেকে ভালোবাসি।

জেনিফার : শোন, ভালোবাসার প্রসঙ্গটা টেনে এনে, আমাকে ইমোশ্যানেল হাইজাকিং করবে না। আমি পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী, মি: ম্যাক্কালামকে বিয়ে করে ছাড়বো। এই আমার শেষ কথা।

নিল : কিন্তু, কিন্তু করতেই অন্যপ্রন্তের ফোন কেটে যায়।

গ্রিনভিলের সুন্দর আবাহাওয়ায় ফুটপাথ ধরে হাঁটতেই, একটা তন্নি তরুণিকে দেখে, নিল তার স্বভাবস্বিদ্ধ রুপে আবার ফিরে আসে। কিন্তু এবার বাদ সাধলো পুঁচকে আলবার্তো, সে মোটরসাইকেলের পেছনের সিট থেকে নেমে, সামনের চাকায় ভর দিয়ে হেন্ডেল দুখানা ধরে ফেল্লো, ‘আর বল্লো চলো আজকে তোমাকে নিয়েই চার্চে যাবো। ঐ যে দেখো, সেন্ট জোসেফ চার্চ, আমি জানি তোমরা প্রোটেস্টাইন কিন্তু তোমার আপত্তি না থাকলে আজকে আমরা একটা সুন্দর সন্ধ্যা কাটাবো দুশো বছরের পুরনো ক্যাথলিক চার্চটিতে।’ নিলও সাই দিয়ে বল্লো, বেশ।

চার্চের ভিতরে ঢুকতেই নিল, অর্গানের সুরে মুহূর্তেই অভিভূত হয়ে পড়ে। সুরটা বাখের খুব পরিচিত একটা সুর, স্কুল জীবনের প্রান্তে সে বেশ কয়েকবছর সঙ্গীতে বিশেষ পারদর্শি হয়ে উঠে ছিল কিন্তু পিসটির নাম কোনভাবেই মনে আসছিলো না। সে আলবার্তোকে প্রশ্ন করতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় আর মনে মনে বলে, জীবনে যে কোনদিন স্কুলেই যায়নি সে কি আর ‘য়োহান-সেবেস্তিয়ান-বাখের’ সুরের খবর রাখবে? চার্চটির গঠন অনেকটা গোথিক ধাঁচের কিন্তু বারোশত থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত চার্চগুলোর মতো কারুকার্যময় নয়। চার্চের ভিতরে অল্টারে প্রবেশ করতেই সে হুহু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর আলবার্তোকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘এতোদিন কেন চার্চে এলাম না, আলবার্তো।’ নিলের কাণ্ড দেখে আলবার্তোর চোখেও জল নেমে আসে কিন্তু সে নিজেকে সামলিয়ে অল্টারের ওপর উপুর(প্রস্টেটের ভঙ্গিতে) হয়ে শুয়ে পড়ে। একজন পাদ্রি এসে তাকে তুলে নিয়ে বলে ওঠে, লেট কনফেস, কনফেস অর্থাৎ পাপ স্বীকার করে নাও, হে মানব সন্তান। পুরোহিত এবার আলবার্তোকে বক্স-কেবিনেটের সামনে বসে পাপ স্বীকার করতে অনুরোধ করে। কনফেশন চলছে তো চলছে, ওদিকে পিউতে(চার্চের বেঞ্চ) অপেক্ষারত নিলের বাবার কথা মনে পড়ে যায়, বুঝলে বাছা আমার, একদিন এতো বড় বড় ক্যাথিড্রেল নিয়ে, কারুকার্যময় মিনারগুলো নিয়ে এই চকচকে খ্রিষ্টান ধর্মটা একদিন থমকে দাঁড়াবে, চার্চগুলো শূন্য হয়ে পড়বে, ব্যাপটাইজ করার জন্যেও লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিলের বাবা বরাবরই নাস্তিক গোছের এক মানুষ, তাই ছেলেমেয়েগুলোকেও বড় করতে চেয়েছেন মুক্ত চিন্তা দিয়ে কিন্তু কোন সন্তানই বাবার জ্ঞানের পরিধির ধারে কাছেও ঘেঁষতে পাড়েনি। উপরন্ত, হিতে বিপরীতই ঘটেছে, বড় মেয়েটা হয়েছে একটা কলগার্ল, একমাত্র ছেলে আদরের নিল যে আদর পেতে পেতে আবার কোন পথে যাবে, সেটাই এখন গ্রিনভিলের একটা প্রধান আলোচনার বিষয়। এতো কিছুর পরও একমাত্র মেঝ-মেয়ে অ্যাঞ্জেলাই  নার্সিং পেশাটা বেছে নিয়ে  প্যারেরা পরিবারের কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা করে চলেছে আর পাঁচটি মানুষের জীবন যাত্রায় কিছুটা সুখের পরশ বয়ে এনেছে, তাতেও কম কি। বারোটার ঘন্টা বাজতেই, নিল নিজেকে আবিষ্কার করলো চার্চের পিউতে ঘুমন্ত এক বালকের মতো। চার্চ থেকে বেড়োতেই, মিঃ প্যারেরার হাস্যোজ্বল মুখখানা দেখতেই, নিল ড্যাড বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

মিঃ প্যারেরা : বাছা যা হয়েছে, হয়ে গেছে। এখন বাবা থাকতেই জীবনটাকে আবার নতুন করে গুছিয়ে নাও।

নিল : বাবা, যে টাকাগুলো আমি চুরি করেছিলাম সেগুলো আমি একদিন শোধ করে দেব।

মিঃ প্যারেরা : আপন সন্তানের পাপ স্বীকার করতে শুনে, ছেলের কানে গুন গুন করে বলে ওঠে, টাকাগুলে আর ফেরত দিতে হবে না। তুমি যে, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ, সেটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। পরের দৃশ্যটি দেখার মতো, নিল আর আলবার্তোকে ব্যাকসিটে বসিয়ে, মি. প্যারেরা তার অতি প্রিয় হার্লে-ডেভিডসনটা চড়ে ঘরমুখী হলেন।

 

 

চিরহরিৎ, গল্পকার

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে