এখন সময়:রাত ৯:৫৩- আজ: বুধবার-৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

এখন সময়:রাত ৯:৫৩- আজ: বুধবার
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

বর্ষা দুপুর

দীপক বড়ুয়া

প্রতি বছর ফাগুণ আসে।

ফাগুণ এলে আমি ছুটে যাই রাঙামাটি।নির্জন জায়গা। নদীর কোলে সুনসান শহর। প্রতিবারে পর্যটন হোটেলে উঠি।দোতলায়। কয়েক বছর ধরে যাচ্ছি।হোটেলের সবাই জানে,চেনে। ভালোও বাসে।

হোটেল রুমের পেছনে ছোট্ট একটি ঝুলবারিন্দা। বারিন্দায় ছাদ নেই। খোলা। সূর্যের আলো,মুক্ত হাওয়ায় ভরে থাকে সারাক্ষণ। সন্ধ্যের পরও স্নিগ্ধ আলোরা খেলে। অপূর্ব লাগে। আমার ভীষন পছন্দ।

ঝুলবারিন্দার খানিক দূরে নদী। নীল জল। শান্ত।

ধীরেধীরে বাড়ে, কমে।

পড়ন্ত বিকেলে ঝুল বারিন্দায় বসি। দূরের নদী দেখি। ঝিরঝির হাওয়া গায়ের সাথে মিশে যায়। নানা ধরণের পাখি উড়ে। মিষ্টি সুরে ডাকে।

 

চাটগাঁ শহরের মতো এখানে কোলাহল নেই। ধূলো, গাড়ির কালো ধোঁয়া উড়েনা। মনে হয়,সুনীল স্বর্গ।

বাসায় এই আনন্দ নেই।

এ আসে,ও আসে। স্বজনেরা ভীড় করে। বন্ধু! কেউ আসেনা। মা বলে,

-তোর কি কোনো বন্ধু নেই?

আমি চুপ থাকি। মা নিজের কাজে চলে যায়।সকাল-সন্ধ্যা অফিস করি। বাসায় ফিরি। হৈ- হুল্লোড় ভালো লাগেনা। একা, একাই ভালো লাগে আমার। সারাক্ষণ নিজের রুমে বসে টিভি দেখি। পড়ি। দেশি, বিদেশি মাগাজিন। সময় কেটে যায়।

সময়মতো খেয়ে শুয়ে থাকি।বিছানাই সাথি। কথা বলি বিছানার সাথে। একান্ত অন্তরের।

 

শুক্রবারে ও তাই।

অফিস বন্ধ। দেরীতে উঠি। মা ডাকেনা।বাসায় মা ছাড়া কেউ নেই। মায়ের দূরের এক বোন থাকে।

অসহায়, একা। মা বলেছে,- আমার কাছে থাক।

আমিও একা। ছেলেটা সারাদিন অফিসে থাকে।

দু’জনে  কথা বলবো। সময় চলে যাবে।

রাঙামাটি আমার প্রিয় শহর। একটি মিষ্টি মায়ের গন্ধ পাই। স্নিগ্ধ পরিচ্ছন্ন হাওয়া। সন্ধ্যার সাথেসাথে রাঙামাটি ঘুমিয়ে পড়ে। কি মধুঝরা পরিবেশ!

বাসার নিয়মে হোটেলের নীচে গিয়ে খাই।রুমে ফিরি। টিভি অন করে বালিশে মাথা রাখি। রাঙামাটির হোটেল রুমের বিছানার সাথেও ভাব করি। ভাব হয় দু’জনার।  মধুর ভাব! কারো সঙ্গে রাগ, অভিমান নেই। দারুণ! ঘুম আসে, যায়। মাঝরাতে কখন ঘুমপরি এসে ঘুম পাড়িয়ে যায়। একসময় ঘুমিয়ে পরি।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠিনি।ঘুম আমাকে ছাড়েনা।আমিও ঘুমকে।

সকাল সাড়ে নয়টায় ঘুম ভাঙে। মুখে ব্রাশ দিয়ে সকালের নাস্তা করতে নীচে যাই। নাস্তা শেষে রুমে আসি। জানালার পর্দা সরিয়ে দিই। নদীর দিকের জানলার পর্দা। কি সুন্দর নদী! নদীর জল! আলোয় চিকচিক করে। সূর্যের ঝলমলে আলোয় রুম ভরে যায়।

ঝুলবারিন্দার দরজা খুলি।এক ঝাঁক বাতাস গায়ে ঘেষে যায়। কিযে ভালো লাগে! দরজা খুলতেই দেখি,পাশের রুমের ঝুলবারিন্দায় একজন মেয়ে। দাঁড়িয়ে দূরের নদী দেখছে। ওমা, সত্যি কি মেয়ে? ঠিক, মেয়েতো! জর্জেট শাড়ি পরেছে। এলো চুল। বাতাসে উড়ছে। ঘুরতেই মুখ দেখি। ফর্সা নয়। উজ্বল শ্যামলা। তবে ভারি মিষ্টি।

এই ক’বছরে এরকম ঘটনা ঘটেনি। পাশের রুমে মেয়ে কখনও দেখিনি।এবারেই প্রথম। লজ্বায়, ভয়ে দরজা বন্ধ করে দেই।

নিজের বিছানায় শুয়ে থাকি।এভাবে অনেকক্ষণ শোবার পরে কৌতুহল জাগে। মেয়েটি কি এখনও আছে? এবার দরজা না খুলে জানলার ফাঁকে দেখি। নেই। হয়তো মেয়েটি রুমে নিজের কাজ করছে।

ভাবি, মেয়েটি নিশ্চয়ই  মা-বাবার সাথে এসেছে। তা’ছাড়া একটি মেয়ে এতদূর একা কিভাবে আসবে! দ্যুত! কি আজেবাজে ভাবছি। হোটেলে কে আসলো কে গেলো,তা’তে আমার কি?

দুপুরের স্নান সেড়ে খেতে যাই নীচে। কেউ খেতে আসেনি তখন। শুধু  শেষের টেবিলে একজন মেয়ে খাচ্ছিলো। দেখি, সেই মেয়েটি,একা। পরনে সেলোয়ার-কামিজ। সবুজ রঙের। গলার কাছাকাছি ওড়না। তা’ও সবুজ রঙের। মেয়েদের সবকিছু আলাদা। সব ম্যাচিং করে পরে।টিপ,নখ পলিস,পার্টস ব্যাগ, চ্যান্ডেল। অপূর্ব! চুল খোলা। ফ্যানের মুদু হাওয়ায় উড়ে।

এটা একটি নতুন ফ্যাশন। আজকাল মেয়েরা চুল বাঁধে না। চুল খোলা রাখে। শ্যাম্পুকরা চুল। কার না ভালো লাগে!

আমি দূরের একটি টেবিলে বসি। ওয়েটারকে খাবার অর্ডার দেই।মেয়েটিকে দেখি। সত্যি সুন্দরী।

 

আমার খাবার আসতেই মেয়েটি হাত ধুতে বেসিনে যায়। যাওয়ার সাথেসাথে মৃদু গন্ধ নাকে কিলবিল করে। আমি খেতে শুরু করি।

দুপুরে শুয়ে থাকি।ঘুম আসেনা।সময় ফুরোয়না। হাঁটি। সোফায় বসে টিভি অন করি। কখন যে ঘুম আদরে জড়িয়ে রাখে জানিনা।

বিকেল সাড়ে চারটায় ঘুম ভাঙে। চোখে জল ছিটাই।চা খেতে ইচ্ছে হয়। সিঁড়ি ভেঙে নীচে নামি।

সেই টেবিলেই বসে মেয়েটি। একা। নাস্তা করছে। এবার সত্যিসত্যি মনে হলো মেয়েটি একা। সাথে কেউ নেই।

আমিও একটি টেবিলে বসে চা’র অর্ডার দেই।ঠিক দুপুরের মতই আমার চা আসার সাথেই মেয়েটি চলে যায়।

মেয়েটি এবার পরেছে ম্যাকসি।জল রঙের। রুচি আছে মেয়েটির। কি পারফিউম ব্যবহার করে বুঝিনা তবে বেশ দামি।

রুমে আসি। বিকেলে  ঝুলবারিন্দায় বসি। প্রতিদিন। ঐখানেই বসে রাঙামাটির প্রকৃতি দেখি।

দরজা খুলতেই দেখি,মেয়েটি প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে কিজানি পড়ছে। পাশাপাশি বারিন্দা।

মেয়েটি এবার পরেছে শাড়ি। পাতা রঙের। ম্যাচিং সবকিছু। সুন্দর! মেয়েটির বারেবারে কাপড় পরার অভ্যেস আছে মনে হয়।

এবার আমি লজ্বাকে বিসর্জন দিয়ে ঝুলবারিন্দায় চেয়ারে বসি। হাতে লিটন ম্যাগাজিন। পাতা উল্ঠাই।পড়ায় মন বসেনা। নানা কৌতূহল খেলে।

আড়চোখে মেয়েটিকে দেখি। অনেকক্ষণ।

মেয়েটি অহংকারী। একটিবারও আমাকে দেখছেনা।ছিঃছিঃ আমি নি:লজ্বের মতো মেয়েটিকে দেখছি!

নিজেকে ছোট মনে হলো। নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। রুমে ঢুকছি,তখনই মেয়েটি বলে, চলে যাচ্ছেন! অভিমানে?

-আমাকে বলছেন? আমি বললাম।

-হ্যাঁ, আপনাকেই  বলছি।

-হুম, তাই!

-কখন এলেন, চট্টগ্রাম থেকে নিশ্চয়ই!

-হ্যাঁ,চট্টগ্রাম থেকেই। কিভাবে বুঝলেন, চট্টগ্রাম থেকে এসছি!

-ধারণা করলাম। একা এসেছেন?

-হ্যাঁ,একা। কয়েক বছর ধরে আসছি। রাঙামাটি আমার প্রিয় শহর। নির্জন।পরিচ্ছন্ন। বন্ধে চলে আসি প্রতিবার।

-বসুননা,দাঁড়িয়ে কেন?

-আপনি ও কি একা এসেছেন?

-হ্যাঁ, একা। পরিবারে আমার কেউ  নেই। মা গত বছর মারা গেছেন। বাবা পাঁচ বছর আগে। একা। রাঙামাটি আসার অনেকদিনের ইচ্ছে। আমি একটি বিদেশী অফিসে চাকরি করি।আমার বস বিদেশী। মেয়ের মতো ভালোবাসে।

একুশে ফেব্রুয়ারির বন্ধে সাতদিন ছুটি চাইলাম।

দিলেন। আরো বললেন, দূরে কোথায় যাবে?আমি বললাম,রাঙামাটি যাবো।

আমার বস বললেন, রাঙামাটি দারুণ সুন্দর। সবার মুখে শুনেছি। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

-চলুননা স্যার, এক সঙ্গে যাই।

-না না, এবার নয়। অফিসে অনেক কাজ। পরে কোনো একদিন যাবো। সাবধানে থাকবে। ঐটুকু বলে চলে এলাম।

 

– আপনার বাড়ি?

-চট্টগ্রামে। জামালখানে থাকি। বাবার বাড়ি।নিজের।

-বাসায় আর কে থাকে?

-আমার মাসী। মার ছোট বোন। সে ও একা।কেউ নেই।

-দু’জনের দারুণ মিলতো! আমার মা আছে। মায়ের ছোট বোন,  ও। সে ও একা।

দু’জনে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা ঘিরে ধরে আমাদের।মশার রাজত্ব বেড়ে যায়। আমি বললাম,

-চলুন, রুমে ফিরে যাই এবার।মশা বেশিক্ষণ থাকতে দেবেনা আর।

মেয়েটি আমাকে দেখে থাকে,অনেকক্ষণ।

তারপর বলে,

-রাতের ডিনারটা এক সঙ্গে করবো। আপত্তি নেইতো! রাত নয়টায় কিন্তুু!

-ঠিক আছে তাই হবে।

দু’জনেই রুমে যাই।

অনেক বছর পরে একান্তে একটি মেয়ের সাথে কথা বললাম। অফিসে অনেক মেয়ে চাকরি করে। সিনিয়র হিসেবে আন্তরিকতায় কথা হয়না।

রাত নয়টায় দরজায় টকটক শব্দ হয়।

দরজা খুলতেই দেখি পাশের রুমের মেয়েটি। আমাকে বলে,-আমি নীচে যাচ্ছি, আপনি আসুন।

কাপড় পরে নীচে নামি।

মেয়েটি দু’জনের একটি টেবিলে বসে। মুখোমুখি বসি।

-কি খাবেন? আপনার পছন্দের খাবার খাবো আজ।

-হঠাৎ আমার পছন্দের!

-আপত্তি আছে?

-না, তা নয়।

-বলুন,কি খাবেন?

-ডাল,ভাজি, মুরগীভুনা।

-শুধু এই!

-এর বেশি কি খাওয়া যাবে?

ঠিক আমার পছন্দের খাবারের অর্ডার দেয়।আমি কাছাকাছি থেকে মেয়েটিকে দেখি। অপূর্ব!

এবারেও পরেছে শাড়ি। আকাশের রঙে। শাড়ি,ব্লাউজ,টিপ।

আমাকে চুপ দেখে মেয়েটি প্রশ্ন করে,

-আপনি কম কথা বলেন?

-হ্যাঁ।

-কেন?

-আমার স্বভাব।

-চলুননা কালকে রাজবন বিহারে যাই।

-হ্যাঁ, চলুন।

-সকাল দশটায়।

-ঠিক আছে, সকাল দশটায় তৈরি থাকবো।

খাওয়া শেষে বিল দিতে যাই। মেয়েটি বারণ করে।

বলে,-আমি অর্ডার দিয়েছি,বিলটা আমিই দেবো।

আমি না করিনা।

এক সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠি। আমার পরের রুমটা মেয়েটির। তাই বললাম, টা- টা!সকালে দেখা হবে।

মেয়েটি একটুকরো হাসি ছুঁড়ে। কিছু না বলে নিজের রুমে পা বাড়ায়।

স্বপ্ন!যেন তরতাজা স্বপ্নটি। জানা নেই, চেনা নেই!কত আপনার,কাছের দু’জন। সত্যি কি তাই কখনও হয়?

অনেক ভোরে ঘুম ভাঙে।পাখির ডাকাডাকি নেই।বাইরে অন্ধকার খেলে। রুমের সিলিং ফ্যান ঘুরে।ধীরে। সেটারো একটি শব্দ আছে। ছন্দ আছে।মন্দ নয়।

মুখ হাত ধুয়ে সোফায় বসি। পানির বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢালি।খাই।অনেকদিনের অভ্যেস এটা।

গতকালের মতো দরজায় শব্দ হয়।ঘড়ি দেখি,সকাল সাতটা বাজে। অনেক সময়তো! দরজা খুলতে দেখি মেয়েটি।

-এত্তো সকালে?

-নাস্তা করবেন না!

-করবোতো।

-চলুন,আমি যাচ্ছি।

নাস্তা শেষে মেয়েটি বলে,

-এখনি যাবো রাজবন বিহারে। সকালে  ভন্তে দেখবো।চোয়াইং খাবার পরে দেশনা দেবেন, শুনবো।ওরা নাকি ধুতাঙ্গ ভিক্ষু। জ্ঞানের কথা বলেন। জীবনদর্শনের ব্যাখ্যা দেন।

মেয়েটি কি বৌদ্ধ! ভন্তে, ধুতাঙ্গ ভিক্ষুর কথা বলছে!

আমি কাপড় পরে বাইরের বারিন্দায় অপেক্ষা করছি।এ কটুও দেরি নয়। মেয়েটি চলে আসে। বলে,চলুন।

অবাক হয়ে যাই আমি। মেয়েটির কাপড় পরার বিশ্লেষনে।

এবার পরেছে লাল পাড়ের শাদা শাড়ি,শাদা ব্লাউজ, শাদা টিপ,শাদা নখ পলিস। কি অসামান্য সাজ।

নীচে নামতেই ড্রাইভারকে ফোন করি।গাড়ি এসে দাঁড়ায়। মেয়েটি বলে, আমার ও গাড়ি ছিলো। বস্ অফিসের একটি গাড়িও দিয়েছে। যাতে যাওয়া-আসায় অসুবিধে না হয়।

সোজা বনভন্তের মন্দিরে।

 

অপরূপ সুন্দর! সবকিছু নিয়মে চলে। ভন্তের চোয়াইং খাওয়া, একসঙ্গে আসা, বসা, উপাসক উপাসিকাদের দেশনা দেয়া। কোনও হৈচৈ নেই।

মেয়েটি প্রত্যেক উপসনালয়ে ঢুকে মোম জ্বালায়, দানবক্সে দান করে। আমিও করি। কিছুক্ষণ দেশনা শুনি।মন ভরে যায় দেশনায়। পৃথিবীতে সকল ধর্ম শান্তির কথা বলে। আমরা ধর্মের নিয়ম মানিনা। নিজের ইচ্ছেয় চলি। তাই এতো কষ্ট সইতে হয়।

সাড়ে এগারটায় বেরিয়ে পড়ি দু’জন।

মেয়েটি বলে, – জানেন অনেকদিনের  ইচ্ছে বনভন্তের মন্দিরে আসবো। এলাম,শান্তি পেলাম।সারাজীবন এখানে কাটিয়ে দিতাম, জীবনটা ধন্য হতো। চলুন হোটেলে ফিরি।

আমার কোনও কথা নেই।যেন মেয়েটি আমার সব,অভিভাবক। রাজবনবিহার থেকে হোটেলে আসার পথটা সাপের মতো আঁকাবাঁকা।পথের দুইদিকে জল আর জল!স্বচ্ছ নীল।গাড়ির জানলা খোলা।ঝিরঝির হাওয়ায় গা শীতল হয়ে যায়।গাড়িতে তেমন কথা নেই কারো।

দু’জনেই চুপ।

হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড়ায়। নেমে নিজের রুমে যাই দু’জনে। যাবার আগে মেয়েটি বলে, একটায় খেতে যাবো।

আমি বললাম,-আচ্ছা।

বাথরুমে ঢুকে স্নান করি। খুব ভালো লাগছে এবার। কোনদিকে যাবার কথা থাকলে টেনশন হয়।

দুপুর একটায় দু’জনে খেতে যাই নীচে।আমি প্রথমে বললাম,- কি খাবেন বলুন!

মেয়েটি আমার কথায় হাসে। ঠোঁটে লিপষ্টিক নেই। খাবেতো, তাই!পরেছে গাঢ় গোলাপের শাড়ি।বাকি সব ম্যাচিং। কি অসাধারন মেয়ে।জানিনা কতটা শাড়ি-ব্লাউজ এনেছে!সখিন মেয়েটি।

-হাঁসের মাংস,ডাল,শাক,রুইমাছ। মেয়েটি বললো।

ওয়টার অর্ডার নিয়ে যায়।

-পৃথিবীতে সব কিছুই অদ্ভুত সুন্দর!আমি বললাম।

-মানে!মেয়েটি প্রশ্ন করে।

-দেখুননা,সকাল শুরু থেকে খেতে আসা পর্যন্ত সব সুন্দর!কোনো কিছুর সঙ্গে মিল নেই। সব নতুন।

-এটা মনের ব্যাপার। নতুন করে সাজাতে চাইলে সবাই পারে।এতো কঠিন কিছু নয়।

খাবার আসার সাথেসাথে পরিবেশন করে মেয়েটি।

-বলেন, শুরু করেন।

খাওয়া শেষে আমি বলি,আজ বিকেলে ঝুলন্ত ব্রিজে যাবো। বোটে চড়বো। কি বলেন!

-মন্দ নয়। এটাও নতুন।

বিকেল চারটার আগে বেরুই দু’জন।

ঝুলন্ত ব্রিজে হাঁটি।লোকজন কম। মাঝামাঝি পৌঁছুতেই মেয়েটি হাতের মোবাইলটা একজনকে দিয়ে বলে,ভাইয়া আমাদের কয়েকটা ছবি তুলবেন!

-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।

কয়েকটা ছবি তুলে দু-জনের।

মেয়েটি বলে, ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ।

 

না থেমে বলে, চলুন বোটে চড়বো।

দু’জনে নীচে নেমে বোটে উঠি।আমরা দু’জন। বোট ছাড়ে। কি অপূর্ব! আনন্দ! চারিদিকে জল,শুধু জল! মাঝখানে আমাদের চলন্ত বোট। মেয়েটি সেলফি ছবি তুলে।

বলে, -কাছে আসুন।

এই দিন আবার কোন দিনও ফিরবে আমরা জানিনা। স্মৃতি হয়ে থাকবে।

একগুচ্ছ ছবি তোলে মেয়েটি। পাশাপাশি।

বলে,-

-ভাববেন না,আপনার মোবাইলে শেয়ার করছি।

কি সহজ সরল মেয়েটি। মনের মধ্যে কিচ্ছু নেই।

আমি দেখি মেয়েটিকে। এবার মেয়েটি পরেছে সলোয়ার-কামিজ।টুকটুকে লাল। লাল ওড়না। টিপ,লাল নখ পলিস।

এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু পাল্টায় কি করে! যাদু জানে? কি জানি!

মেয়েটি প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা আপনি স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন?যুদ্ধের কথা যত শুনি মনটা কান্নায় ভরে যায়।

-আমার তখন জন্মই হয়নি। তবে মা-বাবার মুখে শুনেছি।কি ভয়াবহ! হিংস্র! যুদ্ধে অনেক মানুষ মারা গেছে। কতো মেয়ে নির্যাতিত হয়েছে। আমি বললাম।

-থাক,আর বলবেননা।সহ্য হয়না। মানুষ নয়, ওরা পশু। চলুন ফিরি এবার।

ক’টা দিন সহজে কেটে যায়  আনন্দে। যাবার দিন আসে।রাতে  খাবার টেবিলে বলি,-

-আমি কাল যাচ্ছি। আপনি  কখন যাবেন?

আমাকে দেখে। ভাবে। চুপ থাকে কিছুক্ষণ। উত্তর দেয়না আমার কথার। আমিও চুপ থাকি।

মেয়েটি হঠাৎ বলে,

-আর ক’টাদিন থাকলে অসুবিধে হবে?

-অফিস আছেতো! সবতো আমার উপর।কিভাবে থাকি বলুন!

-তাই -ই! ঠিক আছে।কি আর বলবো। মানুষের জীবনে কাজটাই প্রধান।ওরকম কাজের প্রতি, প্রতিটি মানুষের আগ্রহ থাকলে দেশ আজ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতো না। সত্যিসত্যি সোনার বাংলাই হতো।

-একটি কথা বলবো? আমি ছোট্ট গলায় বললাম।

-হ্যাঁ, নি:সংকোচে বলুন।

-এতোদিনে এতো কথা বলেছি দু’জন। কারো নাম কেউ জিগ্যেস করিনি।হয়তো প্রয়োজন পড়েনি। এবারতো প্রয়োজন আছে। বলবেন?

আমার চোখে মেয়েটির লাজুক দুটো চোখ। যেন হাসছে।ঠোঁট দুটোও হাসে। টুক করে বলে,

-বর্ষা, আমি বর্ষা।

-দুপুর, আমি দুপুর! আমি ও বললাম।সহজে।

হাঃ! হাঃ! হাঃ!

দু’জনেই হাসি। ইচ্ছেমতো। থামেনা হাসি।

এক সময় থামে।

তখন বর্ষার চোখে জল টলমল করে।

আমার চোখের জলও।

উষ্ণ,শীতল নয়।

আর কথা হয়না।

দু’জনে  সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠি। আমার রুমের সামনে বর্ষা দাঁড়ায়। এক মিনিট। তারপর নিজের রুমে পা বাড়ায়। ধীরেধীরে।

আমি বর্ষার চলে যাওয়া দেখি।

ভাবি!

এটা কি?

ভালোলাগা!  না  ভালোবাসা?

না অন্যকিছু!

 

 

দীপক বড়ুয়া, গল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক

রেম্ব্রান্টের জন্মশহর লেইডেন, ইনডেক্স পোয়েট্রি বুকস এবং কেইস নুটবুমের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ বছর ছয়েক আগে জার্মান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত নাট্যোৎসব থিয়েটার ট্রেফেন এর ছাপ্পান্নতম আসরে যোগ দিতে বার্লিন গিয়েছিলাম, পৃথিবীর আরও কুড়িটি দেশের

আমরাই শেষ জেনারেশন

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর আমরাই শেষ জেনারেশন, যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক,

আন্দরকিল্লা সাহিত্যপত্রিকা এবং স্মৃতিকাতর চাটগাঁ

প্রবীর বিকাশ সরকার “আন্দরকিল্লা” ম্যাগাজিনটি ২৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, আদৌ কম কথা নয়! সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিষয়ক একটি সাময়িকী বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর