সাম্প্রতিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এদেশের আপামর জনগণের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মুক্তিযুদ্ধের পর এতো বড় এত শক্তিশালী আন্দোলন দেশের মানুষ দেখেনি। এত হতাহতও আগে কোনদিন হয়নি। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে মানুষ জীবন—মরণ সামনে রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বৈষম্য ঘুচিয়ে সাম্যের রাজনীতি চেয়েছিল, কিন্তু দু’মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে সিন্দাবাদের সেই ভূত বা দৈত্য আবারও জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া অতি সাধারণ। পেট ভরে দু’বেলা ভাত খেতে পারলেই এদেশের মানুষ ধন্য রাজার গীত গায়। কিন্তু সে পেট ভরে দু’বেলা ভাত খেতে মানুষ এখন হিমসিম খাচ্ছে। কারণ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য। মানুষের এই সামান্য চাওয়া যখন অপাংক্তেয় হয়ে যায় তখন মানুষগুলো ক্ষেপাটে হয়ে যায়। যাচ্ছে তাই করে, যাচ্ছে তাই বলে। যা এখন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি।
যদিও সরকারের মূল কাজ একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা, তারপরেও রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা উচিত ছিল। কিন্তু অন্তবতীর্ সরকার সেটি করেনি। তারা এখন হামলা—মামলা—গ্রেপ্তার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। মব জাস্টিসে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের ছাত্ররা মামার বাড়ির আবদার করে শিক্ষাবোর্ড গুলোতে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার জন্য সেনা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিল। কিন্তু দৃশ্যমান কোন কাজ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের সংস্কারের কাজও মন্থরগতিতে চলছে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা খাতকে সংস্কারের বাইরে রেখে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলা করা মোটেও ঠিক হয়নি।
এইভাবে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করলে দীর্ঘ ইতিহাস রচনা করা যাবে। যা এখানে বয়ান করার সুযোগ নেই। এই দেশের আপামর জনসাধারণ অন্ধ বিশ্বাস করে এই অন্তবতীর্ সরকার গঠন করেছে। সরকার বিগত দু’মাসে স্বপ্ন জাগানিয়া কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হয় না। এই প্রসঙ্গে কবি বিশ্বজিত চৌধুরী’র বালিকা চেয়েছিল চাঁদ, পেয়েছে আধুলি’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায়।
গণমানুষের স্বপ্নভঙ্গের আগে তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে সবকিছু নিরর্থক হয়ে যাবে। আমরা আশা করবো সংশ্লিষ্ট সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।