এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৪৩- আজ: শনিবার-১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৪৩- আজ: শনিবার
১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শরৎকাল

ভবিষ্যতে খাবারের টেবিলে থাকবে কৃত্রিম মাংস!

ফজলুর রহমান : কৃত্রিম মাংস হলো জবাই করা কিংবা সাধারণ মাংসের পরিবর্তে কোষীয় পর্যায়ের এক ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা। পুনরুৎপাদনশীল ওষুধের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কলা প্রকৌশলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম মাংস উৎপাদন করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কৃত্রিম মাংসই ভবিষ্যতের খাবার হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পরীক্ষাগারে তৈরি মাংসের অনুমোদন দিয়েছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র।

গবেষকদের মতে, বিশ্বের ১৪ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাসের সৃষ্টি হয় গবাদি পশু থেকে। অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণের এক-তৃতীয়াংশের জন্যই দায়ী খাদ্য উৎপাদন খাত। প্রতিদিন বিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সহজ বিষয় নয়। খাদ্য উৎপাদনের জন্য বন উজাড় থেকে শুরু করে পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য মজুদ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে উচ্চ পরিমাণে কার্বন নিঃসৃত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়বে এই কার্বন নিঃসরণ। সেই সঙ্গে জলবায়ু সংকট মোকাবেলাও কঠিন হয়ে পড়বে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃত্রিম উপায়ে দুধ ও মাংস উৎপাদনের চেষ্টা করছেন গবেষকরা। গবাদি পশু পালন ছাড়াই মাংস ও দুধ উৎপাদন এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

ইতোমধ্যে এ ধরনের বেশ কিছু গবেষণা ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা সেলুলার অ্যাগ্রিকালচার বা কোষনির্ভর কৃষির মাধ্যমে প্রাণীজাত খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করছেন। সরাসরি গরু থেকে ডিএনএ সংগ্রহের পরিবর্তে মিল্ক প্রোটিনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা করা জিন ছত্রাকের ভেতর প্রবেশ করান তারা। পরবর্তীতে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় ছত্রাক থেকে দুধ উৎপাদিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী নেট জিরো কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি ও শিল্পখাতের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পারফেক্টডে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখার স্বপ্ন দেখেন। এরকমই আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো সিঙ্গাপুরের টারটলট্রি ল্যাব। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বে প্রথম স্টেমসেল ব্যবহার করে দুধ উৎপাদনের চেষ্টা করে।

গবাদি পশু পালন কমিয়ে মিথেন গ্যাস নিঃসরণও কমাতে চান গবেষকরা। গ্রিনহাউজ গ্যাস হিসেবে মিথেন গ্যাস প্রথম ১০০ বছরে কার্বন ডাই অক্সাইড অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি তাপ ধারণ করে। গবাদি পশু পরিপাক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিঃসৃত হয় এই মিথেন গ্যাস। ভবিষ্যতে খামারের পরিবর্তে বায়োরিয়েক্টরে দুধ উৎপাদিত হবে।

একই উপায়ে পশুর সেল ব্যবহারের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে মাংসও উৎপাদিত হয়। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানী মার্ক পোস্ট প্রথম ল্যাবে উৎপাদিত গরুর মাংসের বার্গার সামনে আনেন। মার্কের প্রতিষ্ঠান মোসা মিট এখন মাত্র তিলের দানার পরিমাণ সেল থেকে ৮০ হাজার বার্গার তৈরি করতে পারে।

গরু ছাড়াও ভেড়া, শুকর, মাছ, মুরগি প্রায় সব ধরনের প্রাণী থেকেই সেলুলার মাংস উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে, সেলনির্ভর দুধ ও মাংস বাজারজাতকরণের কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। নতুন খাদ্যের ক্ষেত্রে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। একইসঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে খাদ্য সরবরাহের জন্য ল্যাবের বাইরে বৃহৎ পরিসরে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।

সেইসঙ্গে নতুন প্রযুক্তির জন্য বাড়বে উৎপাদন খরচ। তবে বড় পরিসরে উৎপাদন শুরু হলে কৃত্রিম দুধ ও মাংস উৎপাদন খরচ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত দুধ ও মাংসের পর্যায়ে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভিন্ন পদ্ধতির অনুসন্ধানও করছেন অনেকে। নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা গরু ও ভেড়ার জন্য এমন একটি ভ্যাকসিন উৎপাদন করছেন যা তাদের উৎপাদিত মিথেন গ্যাসের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।

তবে নতুন ধারার খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় কার্বন নিঃসরণ কমলেও এরসঙ্গে ভোক্তা আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্য শৃঙ্খলের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তনও অপরিহার্য হয়ে পড়বে।

এ মাংস কোনো প্রাণীকে হত্যা করে প্রস্তুত করা হয় না। স্বাস্থ্য, প্রাণী কল্যাণ এবং পরিবেশ সম্পর্কে ভোক্তাদের উদ্বেগের কারণে প্রাণীর মাংসের বিকল্পের চাহিদা বাড়ছে। ক্লিন বা কালচারড মাংসের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। এ ধরনের মাংস সাধারণ পরীক্ষাগারে প্রাণীর পেশিকোষ কালচার করে তৈরি করা হয়। তবে এর উৎপাদন খরচ বেশি বলে এখনো তা জনপ্রিয় হয়নি। বর্তমানে বিশ্বে দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষাগারে মাছ, গরু ও মুরগির মাংস নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৯ সাল নাগাদ বিকল্প মাংসের বাজার দাঁড়াবে ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

এরইমধ্যে সিঙ্গাপুরে এই কৃত্রিম মাংস বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্প্রতি পরীক্ষাগারে বানানো মাংসের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পরীক্ষাগারে কোষ থেকে এ মাংস বানানো হয়েছে। সেই মাংস খাওয়ার উপযোগী বলে এ অনুমতি দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। গত বুধবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো পরীক্ষাগারে তৈরি মাংস খাওয়ার অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র।

আপসাইড ফুডস কোম্পানি জীবন্ত প্রাণী থেকে কোষ সংগ্রহ করে মুরগির মাংস তৈরি করেছে। জীবন্ত প্রাণীর কোষ ব্যবহার করে স্টেইনলেস-স্টিল ট্যাংকে এ মাংস খাওয়ার উপযোগী করে বানানো হয়েছে। এফডিএর অনুমোদনের পর এখন দেশটির কৃষি বিভাগের অনুমোদন পেলেই পরীক্ষাগারে তৈরি এ মাংস বাজারে আসবে। অর্থাৎ মার্কিন কৃষি বিভাগের আরেকটু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ মাংস ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব হতে পারে।

এফডিএ কমিশনার রবার্ট এম ক্যালিফ এবং এফডিএর সেন্টার ফর ফুড সেফটি অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড নিউট্রিশনের পরিচালক সুসান মেইন বলেছেন, বিশ্ব একটি খাদ্যবিপ্লবের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং এফডিএ খাদ্য সরবরাহে এসব উদ্ভাবনকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এফডিএ জানিয়েছে, আপসাইড ফুডসের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

আপসাইড ফুডস নামের একটি খাদ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি পরীক্ষাগারে এ মাংস বানিয়েছে। এ কোম্পানির সদর দপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী উমা ভালেতি বলেছেন, ‘আমরা অনেক সংশয়ের মধ্যে আপসাইডের যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা ইতিহাস গড়েছি। এফডিএ আমাদের পরীক্ষাগারে তৈরি মাংস খাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।’

খাদ্য উৎপাদনের জন্য বন উজাড় থেকে শুরু করে পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য মজুদ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে উচ্চ পরিমাণে কার্বন নিঃসৃত হয়। তবে কৃত্রিম উপায়ে মাংস ও দুধ উৎপাদন মানুষের প্রয়োজনীয় আমিষ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবেলাতেও সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

ফজলুর রহমান: উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

আবির প্রকাশন

আপনি দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- ঘরে বসেই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারেন অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আবির প্রকাশন থেকে। আমরা বিগত আড়াই দশকে বিভিন্ন

গণতন্ত্রহীন রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাঙালি চিরকালই বিদ্রোহী। ইতিহাসের কোনো পর্বে সে কোনো পরাধীনতাকে বেশি দিন মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লি থেকে দূরে হওয়ায় এবং সাড়ে

বিপ্লব যাতে বেহাত না হয় ( সম্পাদকীয় – আগস্ট ২০২৪)

জুলাই মাসের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আগস্টের ৬ তারিখে ১৫ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব এই গণঅভ্যুত্থান ইতোপূর্বে ঘটিত গণ অভ্যুত্থানগুলোকে ছাড়িয়ে