আবদুল মোমেন
মুকসুদপুর বাস স্টেশনে নেমে রিকশায় উঠলাম। রিকশায় চড়ে দুই তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর কটিয়াদি গ্রামে পৌঁছলাম। জনবহুল গ্রামটি পেছনে ফেলে হাঁটা শুরু করলাম।
মনে অনেক দুশ্চিন্তা! অস্থিরতা ও হতাশা জেঁকে বসেছে। মা, বাবা, বউ আর দুই সন্তান নিয়ে সংসার। আমার যা আয় তা দিয়ে পুরো মাস চলে না। মাস শেষে দেনা হয়ে যায় ম্যালা টাকা। সেই দেনার দায় মেটাতে হিমসিম খেতে হয়। তার ওপর কয়েকটি মাল্টিপারপাস কোম্পানি থেকে মাসিক কিস্তিতে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেটে চলছি আর দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ভাবছি।
এতো দায় দেনা কী করে মেটাবো। মা বাবার আবদার, বউ বাচ্চার নানা চাহিদা কী করে পূরণ করবো। চরম দুশ্চিন্তার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সংজ্ঞা ফিরলো। তখন নিজেকে গ্রাম থেকে অনেক দূরে আবিষ্কার করলাম।
চারদিকে খোলা মাঠ। মাঠে ফসলি জমি।
ফসল ফলে নানা জাতের, সারা বছর। চারদিকে সবুজ আর সবুজ।
মাঠের মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে মেঠোপথ।
পথের দু ধারে মেহগনি গাছের সারি, মাঝে মাঝে ঝোপঝাড়। বাতাসে গাছের মগডাল নড়ছে। রোদের আলোতে গাছের ছায়া
খেলছে। খোলা মাঠে বাতাসের শনশন শব্দ সুর তুলেছে ।
পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল নারিকেল গাছে ঘেরা বড় একটি পুকুর। পুকুরের সামনের পাড়ে আম গাছের ছায়ায় কাঠের তক্তার বৈঠকখানা। আহ! কি সুন্দর স্নিগ্ধ পরিবেশ! মনোমুগ্ধকর হিমেল হাওয়ায় হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
মেঠোপথ ধরে আরো খানিকটা এগোলে অপূর্ব সুন্দর ছোট্ট একটি কাঁচা ঘর। ঘরটি কাঁচা হলেও সব কিছু পরিপাটি। সামনে বারান্দা। বড় উঠান। উত্তর-দক্ষিণে জানালা। জোছনার আলো রাতে অনায়াসে ভেতরে প্রবেশ করে। দক্ষিণা হাওয়া নির্বিঘেœ ঘরের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে।
এরকম একটা বাড়িতে আমরা বসবাস করছি। মাঠের নানা জাতের ফসলে আমাদের রোজগার। সে রোজগারের অর্থ খরচ করে বছর কুলিয়ে আরো জমা থাকে। কোনো টেনশন নেই। নেই কোনো প্যারা। আমার মা, বাবা বিকেলে নাতিদের নিয়ে উঠানে খেলছে। বউ পুকুর থেকে তুলে আনা তাজা মাছ রান্না করছে। অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশে চলছে আমার সুখের সংসার।
হঠাৎ ঘরের দরজায় প্রচ- শব্দে বউ ডাকছে। উঠো উঠো। কিস্তির টাকার জন্য লোক এসেছে। উঠোৃ। বউয়ের চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভাঙলো। স্বপ্ন ভেঙে সংজ্ঞা ফিরলো।
আবদুল মোমেন, গল্পকার