শোয়ায়েব মুহামদ
শাহানা বলে, বেলায়াত স্টুডিও থেকে কি ছবিটা তুমি নিতে পারছো?
বেলায়াত এসেছে খানিক আগে, ট্রেনে। এসে জোহরের নামাজ শেষে গুটানো জায়নামাজ টেবিলে রেখে সোফায় বসেছে। শাহানার বাসা রেলস্টেশনের পাশে। প্ল্যাটফর্মের উল্টোদিকে শিমুলগাছ। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালে সবার আগে সেটি চোখে পড়ে। পাশের রেলের জমিতে সিমক্ষেত, ঢেড়শ, বরবটি লাগানো। গোবর লাঠি শুকাতে দেয়া। সেই গাছ বরাবর তাঁতিপাড়ার ভেতর দিয়ে সলিন রাস্তা চলে গেছে শাহানাদের বাড়ি হয়ে গজারিয়া দিঘি পর্যন্ত। শাহানার ঘর থেকেই আপ ট্রেন, ডাউন ট্রেনের শব্দ শোনা যায়। ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়। পেছনের ব্যালকানিতে দাঁড়ালে প্ল্যাটফর্মের লাল টিনের চাল, রেলওয়ের দিঘি, দিঘির পাড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়।
শাহানার কথা শুনে বেলায়াত এমনভাবে তাকায়, যেন সে শাহানার কথা শুনতে পায়নি। যেন কোনো শব্দই শুনেনি সে। শাহানা জানে, বেলায়াতের চেহারা দেখে সে কী ভাবছে তা সহজে বোঝা যায় না। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু ভাবছে না। আসলে মাথার ভেতর একের পর এক চিন্তার গিঁট খেলছে।
ভেতরটা জাল দেয়া পুকুরের শাপলা পাতার মতো এলোমেলো, অবিন্যস্ত। বুকের ভেতর পৌষের ধানকাটা বিলের মতো হু হু করছে বিষাদ। বাইরে ঝলমলে, হাসিখুশি চেহারা।
জবাব না পেয়ে শাহানা প্রশ্নটা পুনরায় করে না।
সে বলে, তোমার জন্য ভাত বসাই?
বসাও। বেলায়াত জানায়।
চুলায় ভাত বসিয়ে শাহানা সোফায় বেলায়াতের পাশে এসে বসে। গায়ে গা লাগিয়ে বসে। শাহানার ফ্ল্যাট তিনতলায়। তিলতলায় দুটো ফ্ল্যাট বাসা। আরেকটা তার ভাসুরের। শাহানা কিছু বলতে চায় বেলায়াতকে। ঘর নিরিবিলি, দুপুরের নির্জনতা। ব্যালকানির পাশে জানালা। জানালার দুই পাট খোলা। খোলা জানালা দিয়ে রোদ এসে পাশের সোফায় পড়ছে।
বেলায়াত শাহানার মুখের দিকে তাকায়। ধারালো চোয়াল, ছোটখাটো সুন্দর নাক। বর্ষার ভ্যানভর্তি লটকনের মতো হলুদাভ গায়ের রং। দুপুরের এ রকম নির্জনতায়, এ রকম নিরিবিলিতে ঘরে যখন আর কোনো জনমানব নেই, শাহানা চাইলে বেলায়াতকে কোনো গোপন কথা বলতে পারে। পাশের ঘরে, পর্দার আড়ালে আর কোনো লোক নেই সে গোপন কথা শোনার। বেলায়াতের পাশাপাশি বসেও, তার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসেও শাহানা কথাটা শুরু করতে পারে না। ফ্যানের ঘর্ঘর শব্দ শোনা যায়। বেলায়াত অপেক্ষায় থাকে শাহানা কিছু বলবে। কী বলতে পারে সে! শাহানা কি আসলে জানতে চাচ্ছে সে স্টুডিও থেকে ছবিটা নিল কিনা?
বেলায়াত শাহানার উরুতে হাত রাখে। আলতো করে রাখে। বলে, জানো শাহানা, আজ অনেক ভোরবেলা বেরিয়েছি।
এতক্ষণ বেলায়াত তাকিয়েছিল শাহানার দিকে। এবার শাহানা বেলায়াতের দিকে তাকায়।
বেলায়াত বলে, তোমাকে তো বলেছি শিউলি ফুলের কথা।
শাহানার মনে পড়ে।
দার্জিলিং থেকে বেলায়াত গেছে হায়দ্রাবাদ। মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা করে, এআইজি হসপিটালে ডাক্তার দেখাবে। উঠেছে পঞ্চগুট্টা এলাকায়। বেলায়াতের একমাত্র ছেলে তৌফিক পড়ে দার্জিলিংয়ের বোর্ডিং স্কুলে। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় বউ রোজিনা মারা যায় কোলন ক্যান্সারে। হায়দ্রাবাদে সেদিন সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মূল রাস্তা থেকে একটু ভেতরে তাদের হোটেল। হোটেলের সামনের রাস্তায় গোড়ালি অবধি পানি জমে গেছে। বৃষ্টি দেখে মক্কা মসজিদ আর চারমিনার দেখার শিডিউল বিকালে বদলে নিয়েছে। সকালে হোটেল রুমের ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে, বৃষ্টি ভেজা এই বিদেশি নগর দেখতে দেখতে তার ইচ্ছে হচ্ছিল, ভোরবেলা শিউলি ফুলগাছ তলায় ছড়িয়ে থাকা শিউলিফুল দেখতে। কখনো কখনো কোনো কোনো ইচ্ছে বুকের ভেতরটা এমন খালি করে ফেলে, মনে হয় যেন নির্জন রাস্তায় হু হু করে শীতের হাওয়া বইছে। আর সে কাঁপছে ফেলে আসা সেই সময়টার জন্য।
বেলায়াতের কৈশোরে, সে যখন নাইন টেনে পড়ে, বাসা ছিল চন্দনপুরা। চট্টগ্রাম কলেজের পেছন দিকে টি আলী লেইন। টি আলী, তোফেল আলি, রংপুর থেকে সাপ্লাই ব্যবসা করতে এসেছিল চট্টগ্রামে। দেশভাগ হওয়ার পরের বছর, ১৯৪৮ সালে। ঢুকতে পিলারে লেখা টি আলি লেইন, ১৯৪৮। সেই লেইনের একেবারে শেষ মাথায় ছোট পুকুরপাড়ে ছিল তাদের টিনশেড বাসা। টিনচালা ইটের দেয়াল ঘর। সেই ঘরের সামনে ছিল শিউলিগাছ। সে গাছ টিনের চালের উপর ঝুলে থাকত। দুর্গাপূজার আগে আগে এমন ফুল আসত গাছে, ভোরে সামনের খালি জায়গা চাদরের মতো ভরে যেত কমলা বোঁটার ফুলে। কোনো কোনো দিন বেলায়াত রাতে সাদা প্লাস্টিক বিছিয়ে দিত। রাতভর প্লাস্টিকে ঝরে পড়া ফুলগুলো প্লেটে করে এতে ওয়ারড্রবের উপর রাখত। সুঘ্র্রাণে ভরে যেত ঘর।
সে বলে, আজও ভোরে উঠে টি আলি লেইনের সেই টিনশেড ঘরটাকে, চালে ঝুঁকে থাকা শিউলিগাছকে খুব মনে পড়ছিল।
বেলায়াত ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় চন্দনপুরায়। টি আলি লেইনের উত্তর পাশে ছিল নালা। নালার ওপারে বড় জায়গা জুড়ে আলাদা আলাদা পুরনো বিল্ডিংয়ে টি আালির তিন ছেলের পরিবার থাকত। এখন নালার উপর স্ল্যাব দিয়ে ডেভেলপাররা বড় বড় বিল্ডিং করেছে। তবে তাদের বাসা এখনো সেই আগের মতোই আছে। শুধু পুকুর ভরিয়ে উঠানের মতো করেছে।
সে গেট খুলে তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। টিনের চালের উপর ঝুঁকে পড়া সেই পুরনো শিউলি ফুলের গাছ আর নেই। তার জায়গায় নতুন একটা শিউলি ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ঘরের লোহার দরজায় এখনো নীল রং। এ দরজায় রাতে দাঁড়ালে শিউলি ফুলের হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়া যেত।
উঠানে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকে দেখে সামনের রাস্তা থেকে ফারুক ভাই আসে। টি আলির নাতি, ছোট ছেলে আনিস সাহেবের সন্তান।
বলে, আরে তুমি বেলায়াত না?
পাশের গলি দানা পুকুর পাড়ে এক হিন্দু ফ্যামিলি ভাড়া থাকত। তাদের বড় মেয়ে শ্রাবণী পাল। শ্রাবণীদিকে প্রেম করে বিয়ে করেছিল ফারুক ভাই। ছয় মাস ভালো থাকলে ছয় মাস মাথায় গোলমাল থাকে।
ফারুক ভাই বলে, চলো বেলায়াত, চা খাই।
শ্রাবণীদিকে স্কুলে থাকতে ফারুক ভাইয়ের চিঠি পৌঁছে দিত বেলায়াত।
মুস্তফা বাবুর্চি গলির মুখে চায়ের দোকান দিয়েছে। সিঙ্গাড়া, মোগলাই পরোটা, সেঁকা পরোটা বানায়। মুস্তফা বাবুর্চি বিহারি। বিয়েশাদি করেনি, অকৃতদার। তার দোকানে চা খেতে বসে তারা।
ফারুক ভাই বলে, বিয়ে করেছিলি শুনেছিলাম। বউ কেমন আছে?
বেলায়াত হাসে। চা খেয়ে মুস্তফা বাবুর্চি, ফারুক ভাই থেকে বিদায় নিয়ে উঠে পড়ে সে।
বেলায়াত টি আলি লেইন থেকে বেরিয়ে সোজা চলে আসে রেলস্টেশনে। এগারোটার দিকে চাঁদপুরের দিকে যায়, মেঘনা এক্সপ্রেস। সে ট্রেনে উঠে শাহানার ঘরের পেছনের রেলস্টেশনে নামে।
বেলায়াতের কাছ থেকে উঠে শাহানা আবার রান্নাঘরে যায়। চুলায় বসানো ভাত ফুটছে। বল্কে বল্কে উঠছে চালের ফেনা। ফিরে এসে শাহানা বলে, ওই লোক আসছে আগামী মাসে।
ওই লোক মানে শাহাদাৎ। বাহরাইনে থাকে। রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান আছে। বছরে এক থেকে দুবার আসে। শাহানা নিজে হাই স্কুলের টিচার। উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন মাইল ভেতরে শেখেরহাট স্কুল। সেই স্কুলে যেতে হয় দুইবার ট্যাক্সি বদলিয়ে।
বেলায়াত কিছু বলে না। দেয়ালের দিকে তাকায়। টি আলি লেইনের লোহার দরজার মতো শাহানার ঘরের দেয়ালের রঙও নীল। সেখানে তিনটে কাঠের বক উড়ছে। আউটার স্টেডিয়ামে বিজয়মেলায় ঘুরতে গিয়ে বেলায়াতসহ কিনেছিল।
শাহাদাৎ আগামী মাসে আসবে—কথাটা বলতে গিয়ে শাহানার কণ্ঠে কেমন উৎকণ্ঠা খেলে। কেমন ভয়, কেমন অস্বস্তি। বেলায়াত শাহানার চাচাতো ভাই। বউ কোলন ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর শাহানা বেলায়াতের ঘনিষ্ঠ হয়, কাছাকাছি আসে। শাহানাকে আগে থেকে পছন্দ করত বেলায়াত।
বেলায়াত জিজ্ঞেস করে, অর্পা কোথায়?
অর্পা শাহানার মেয়ে। ভার্সিটিতে পড়ে নৃতত্ত্বে। হলে না থেকে বাসা থেকেই আসা-যাওয়া করে। অর্পা বলে সে হলে চলে গেলে শাহানা একা হয়ে পড়বে। শাহানাও মেয়ে হলে যাক চায় না। মেয়েকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না তার।
শাহানা বলে, ক্লাসে গেছে। আসতে আসতে বিকেল হবে।
বেলায়াত বলে, শাহাদাৎ আসলে তো ভালো। তোমার বাজার হাট করতে সুবিধা হবে।
শাহানা বলে, দূরে থাকতে থাকতে এখন আর কাছে আসলে ভালো লাগে না।
রুমের পাশের ব্যালকনিতে টবে নানারকম ফুল গাছ। চায়না রোজ, পূর্তলিকা, রেইনলিলি। ব্যালকনি বেশ খোলামেলা। বেলায়াত সোফা থেকে উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়। শাহানাদের বিল্ডিংয়ের আশেপাশে আর কোনো উঁচু বিল্ডিং নেই। পেছনের দিকে অনেকখানি জায়গা জুড়ে জামগাছ। হাওয়ায় জামগাছের পাতা দোল খাচ্ছে। আরো দূরে রাস্তা। রাস্তায় লাউয়ের ভ্যানগাড়ি যায়। লাউয়ের সবুজে ভ্যানগাড়ি সবুজ হয়ে আছে।
শাহানা ব্যালকনি থেকে সামনের ঘরে ঢুকবার দরজায় দাঁড়িয়ে বলে, রাতে ঘুম হচ্ছে না। ঘুম কেবল চোখে চোখে নাচে।
বেলায়াত বলে, তোমার মনে আছে অলংকার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার দিনটা?
কাঠবাদাম গাছের এক পাশে রোদ, আরেক পাশ ছায়া। অপরাহ্নে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমের রাস্তা দেখছে বেলায়াত। চোখ তার রিকশায়। মাছের পোনা বিক্রেতাদের সারাক্ষণ পাতিলের পানি কাঁপানোর মতো তার পরাণ অপেক্ষায় কাঁপছে। প্রতি রিকশা দেখছে সে। রিকশায় খুঁজছে রূপার অলংকারের মতো চকচকে মুখ।
শাহানা নেমে বলে, আইসক্রিম খাব।
মোড়ে মানুষের হট্টগোল, ট্যাক্সি, টেম্পো, বাসের জটলা। বেলায়াত দুজনের জন্য আইসক্রিম কিনে। আইসক্রিম খেয়ে শাহানা বলে, চলো একটু মার্কেটে যাই।
মোড় থেকে সামনে গেলে বড় শপিংমল। শপিংমলের ওপাশে ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে, অস্থায়ী দোকানে কাপড়, গহনা, ব্যাগ, নানা কিছুর পসরা।
রোদে ঘুরতে ঘুরতে খুব তৃষ্ণা পায় তাদের। টংঘরের দোকানে এসে চা খায়।
তখন গোটা দেশে দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধ। তারপরও মানুষজন বেরুচ্ছে। কোথাও বাসে ইট ছুডছে। রাস্তায় হঠাৎ টায়ার জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বিকট শব্দ তুলে রাস্তায় পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলে কয়েকদিন পরপর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতের ফাঁসির রায় শোনানো হচ্ছে। সে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অনেক দূরে গাইবান্ধায় এক কলেজ অধ্যাপককে খুন করে ফেলা হচ্ছে।
বেলায়াত চা খেতে খেতে মানুষের নিয়তির কথা বলে। আমরা কত কিছু হারিয়ে হারিয়ে কিশোরবেলা থেকে যুবকবেলায় পৌঁছি। নিজের ছায়া, নিজের স্মৃতি, নিজের রোদ, কতকিছু হারাতে হারাতে কিশোর থেকে যুবক হয়ে যাই। একটা পয়সার থলের জন্য মুখোশ-মানুষের পেছন পেছন ঘুরি। কখনো বাঘের শরীরে ভান্তের মুখোশ দেখি।
শাহানা হেসে ওঠে। ময়না পাখির ঠোঁটের মতো হলুদাভ মুখ আরো উজ্বল হয়ে ওঠে।
বেলায়াত বলে, গোসলের পর কেমন যেন শীত শীত করে। মন ভার হয়ে ওঠে। অনেকদিন পর পর দেখা হয় সূর্যের সাথে। সূর্যের উষ্ণতায় সূর্যস্নান করি। অদ্ভুত আনন্দ হয়। বলে সে হাসে।
শাহানা বলে, চলো, আজ স্টুডিওতে গিয়ে আমরা দুজনে একটা ছবি তুলি।
মার্কেটের নিচেই ছবি তোলার স্টুডিও। মার্কেটে ঢুকতে, রাস্তার পাশে। দুজনে স্টুডিওতে ঢোকে। শাহানার পরনে ছাইরঙ চেক চেক শাড়ি, বেলায়াতের সুতির ফিরোজা রং হাফ শার্ট। তারা পাশাপাশি বসে ছবি তোলে। দম্পতিরা ফ্রেমে বেঁধে শোবার ঘরে রাখে যে রকম ছবি, ঠিক সে রকম।
ফটোগ্রাফার বলে, আরেকটু গা ঘেঁষে বসেন। দাদার দিকে মাথাটা একটু হেলিয়ে দিন।
এরপর ক্যামেরার শার্টার টিপে। শাহানার মুখে হাসি। বেলায়াতের মুখে হাসি। হাসি হাসি মুখে তারা যুগল ছবি হয়ে যায়।
ছবি তুলে তারা খেতে হোটেলে ঢোকে। আলো থাকতে থাকতে শাহানার আবার ফিরতে হবে। বেলায়াত সাথে গিয়ে বাসার রাস্তায় দিয়ে আসবে। সন্ধ্যা হলেই বাইরে ককটেলের শব্দ, গুলির শব্দ। পুলিশের গাড়ির সাইরেন। নাশকতার মামলা হচ্ছে থানায়। অজ্ঞাতনামার তালিকায় বাজারের দোকানদারকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দরদাম করে দফারফা হলে ছেড়ে দিচ্ছে। পুলিশকে একা পেলে হামলা করছে, ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিচ্ছে।
স্টুডিওতে তোলা সেই ছবির একটা কপি বেলায়াত এনে দিয়েছিল শাহানাকে। শাহানা সেই ছবি তুলে রেখেছে স্টিলের আলমিরার ড্রয়ারে, কাগজের নিচে। তাদের যুগল ছবি, দম্পতির বেডরুমে ফ্রেমে বাঁধানোর মতো ছবি।
শাহানা বলে, টেবিলে ভাত বেড়ে নেই।
বেলায়াতের ক্ষিধে পেয়েছে। সাথে ঘুমও। শাহানা ডাইনিং টেবিলে ভাত বেড়ে আনে। শিপের ডাইনিং টেবিল। মাদামবিবিরহাট-ভাটিয়ারী-শীতলপুরে পুরনো জাহাজ কিনে এনে শিপইয়ার্ডে ভাঙে। সেসব আবার অকশনে কিনে নেয় লোকাল সব দোকানদার। আসবাবপত্র এক দোকানি, তৈজসপত্র এক দোকানি, ইলেকট্রনিক মাল আরেক দোকানি, জাহাজের গায়ের বড় শিট যায় রডের কারখানায়। সিঙ্গাপুর, পেগু, চীন, ইউক্রেন ঘুরে আসা জাহাজের ডাইনিং টেবিলে শাহানা ভাত বাড়ে। ডিম দিয়ে বেগুন ভর্তা, সর্ষে ইলিশ ভাজা।
শাহানা বলে, তোমার জন্য ডিম দিয়ে বেগুন ভর্তা বানালাম।
একদিন মিষ্টি আলু দিয়ে শুটকি রান্না করো। খেয়েছি অনেকদিন। খেতে খেতে বলে বেলায়াত।
তুমি আজ আসবে তা তো জানি না। জানলে আজই রান্না করতাম। সামনের শুক্রবার আসবে?
শাহানাও পাশের চেয়ারে বসে খাচ্ছে। বেলায়াত খেতে খেতে হাসে। বেলায়াত বলে, দেখি। আসলে জানাব।
খেয়ে সামনের রুমের বিছানায় শুয়ে পড়ে বেলায়াত। শাহানা পাকঘরে এঁটো গোছায়। খাওয়ার পর ধোয়াধুয়ি না করে রাখলে বিকালে অলসতা পেয়ে বসে। পাকঘর গুছিয়ে সামনের রুমে গিয়ে দেখে বেলায়াত ঘুমিয়ে গেছে। শাহানা তাকে ডাকে না। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে রেইনলিলির গোড়ায় পিঁপড়া এসেছে। হলুদের গুঁড়া বা ফিনিশ পাউডার দিয়ে দেখবে, না হলে টবে নতুন মাটি দিয়ে আবার লাগাতে হবে। সে এসে সামনের রুমের সোফায় বসে।
বেলায়াতের শ্যামলা চেহারা। উজ্বল শ্যামলা। এক ধরনের মায়া আছে চেহারায়। দেখতে ভালো লাগে। সবচেয়ে ভালো লাগে তার মনটা। নরম, টলটলে পানির মতো ঢেউ তোলা মন। রাগে, মন খারাপে, ঈর্ষায় সহজে সে মনে ঢেউ ওঠে।
স্টুডিও থেকে শাহানার কথামতো ছবিটা নেবে সে? শাহানা ভাবে।
শাহানাদের স্কুলে রাজিব নামে নতুন টিচার এসেছিল বছর তিনেক আগে জানুয়ারিতে। রেলস্টেশনের পেছনে ব্যাচেলর ভাড়া থাকত। শাহানা থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। কখনো কখনো সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার সময় লাইনের ট্যাক্সিতে একসঙ্গে হয়ে যেত। তাদের বাসাটা ডিটি রোড থেকে অল্প ভেতরে। শেষের দিকে প্রায় একসঙ্গে যেত। শাহানা আগে রের হলে রাজিবকে ডেকে নিত। রাজিব আগে বের হলে শাহানার জন্য অপেক্ষা করত। ডিটি রোডে নেমে আগে শাহানা আসত রিকশায়। রাজিবের সাথে পরে প্রায় দিনই হেঁটে আসত। শাহানা নিজের বাড়ি পর্যন্ত, রাজিব ব্যাচেলর বাসা পর্যন্ত। রাজিব তাকে প্রায় ফ্লার্ট করত। বলত, অনেক সুন্দর আপনি। বাসায় এলে ফোন করত সন্ধ্যার দিকে। শেষ দিকে রাতে। কখনো একা লাগলে, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মনটা হু হু করে উঠলে সেও ম্যাসেজ দিত। ছোট ছোট ম্যাসেজ।
কী করছ? খেয়েছ? শরীর কেমন আছে?
ততদিনে তারা পরস্পরকে তুমি বলে। অফিসের কাজে বেলায়াত তখন হয়ত গভীর সমুদ্রে, জাহাজে। তার ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে যাবে।
রাজিবের সাথে একবার ঘুরতে গেছে আকিলপুর বিচে। রাজিব বাঁধের নিচে সিমেন্টের বোল্ডারে বসে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে সেলফি তুলেছে। বলেছে, আমার কাছে থাক, স্মৃতি। তোমার মতো সুন্দরীর সাথে ছবি তোলাও ভাগ্য।
স্কুল থেকে দুপুরে ট্যাক্সিতে আসতে আসতে রাজিব বলে, তোমার বাসায় আজ খেতে যাব শাহানা।
রাজিবের কথা শুনে শাহানার বুক কেঁপে উঠে। রাজিব জানে অর্পা আজ নেই। শাহানা আর অর্পা সকালে একসাথে ট্যাক্সি স্টেশন পর্যন্ত এসেছে।
গাড়িতে ওঠার সময় বলেছে, মা, আজ আসতে রাত হবে।
শাহানা বুঝে তার খালি বাসায় কেন রাজিব আসতে চাইছে। সে বলে, আজ এসো না। পাশেই ভাসুরেরা থাকে।
তাহলে চলো শহরে কোথাও যাই। সকালে যাব, বিকালে ফিরব।
একদিন বর্ষায় ডিটি রোড থেকে বাসায় একসাথে রিকশায় আসতে গিয়ে মুখে চুমু খেয়েছিল রাজিব। সামনের প্লাস্টিকের পর্দা ফেলা। বৃষ্টি ছাঁটের আবছা আস্তরণ।
শাহানা বলে, ছুটির দিনগুলোতে তো বাসায় কাজ থাকে।
রাজিব বলে, তাহলে অর্পাকে তোমার আমার সেলফিগুলো দেখাব।
শাহানার মুখ সাদা হয়ে আসে। খানিক বাদে সে হেসে দেয়। বলে, শীত আসুক। আগামী মাসে যাব।
আগামী মাস আসার আগেই স্কুলে গণ্ডগোল শুরু হয়।
রাজিবের সাথে কথা বলার পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখে সুশ্রী একটা মেয়ে বসে আছে হেডমাস্টারের রুমে। মেয়েটা বলে, রাজিব তাকে বিয়ে করেছে, কিন্তু এখন বাসায় তুলে নিচ্ছে না।
শাহানা আরও শুনবার আগ্রহে হেডমাস্টারের রুমে বসে। মেয়েটার নাম পিংকি। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়স। একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করে। সুগঠিত শরীর, আলাদা টান আছে সেই শরীরের। তার ছোট বোনকে প্রাইভেট পড়াত রাজিব।
তার ক’দিন পরেই ম্যানেজিং কমিটির চাপে রাজিবকে চাকরি ছেড়ে অন্য কোথাও চাকরি দেখতে বলে হেডমাস্টার।
পরের সপ্তাহেই চাকরি ছেড়ে দেয় রাজিব। অনেকদিন খোঁজ থাকে না তার। মাস ছয়েক বাদে একদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফোন আসে শাহানার কাছে। গলা শুনেই শাহানা বুঝতে পারে, এ রাজিবের গলা।
রাজিব বলে, অর্পার সাথে বাসে দেখা হয়েছে তার। অর্পার ফোন নাম্বার নিয়েছে সে।
ওইদিন থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতে থাকে রাজিব। শাহানাকে বলে, শহরে এক রুমের ব্যাচেলর বাসা নিয়েছে সে। ছাদের চিলেকোঠায়। সে যেন আসে।
শাহানা বলে, পরে জানাবে। রাজিব রেগে ওঠে। ক্রুদ্ধ, অসন্তুষ্ট হয় সে।
শাহানা পরদিন ফোন করে বলে, আগামী বৃহস্পতিবার করে আসব। ব্যাসকুণ্ডের ঘাটে তিনটা করে থাকবে। স্কুল করে সোজা ব্যাসকুণ্ডে চলে আসব। তোমার সঙ্গে শহরে যাব।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজিব ব্যাসকুণ্ডে এসে অপেক্ষা করে। খানিক পর আসে শাহানা। সেলোয়ার কামিজ পরেই আসে সে। আসার আগে বাসায় গিয়ে সামান্য সাজগোজ করে।
রাজিব শাহানাকে দেখে আনন্দিত হয়ে ওঠে। পুলকিত হয়। শাহানা হাসে।
শাহানা বলে, চলো মন্দিরের দিকে একটু যাই। আজ তোমার সাথে শহরে যাব। নেবে?
রাজিব বলে রাতে থাকতে হবে কিন্তু।
শাহানা আবারও হাসে। তার চোখে কৌতুক, অনুমোদনের ভঙ্গি।
তারা হেঁটে শম্ভুনাথ মন্দিরে ওঠে। পাহাড় থেকে খাঁচায় করে বিলাতি গাব নিয়ে লোকজন নামছে। পাহাড়ের নিচে বিলাতি গাবের হাট। এ সময় পাহাড়ের বাগান থেকে লোকজন সব নিচে নেমে আসে। বাগানে লোক তেমন থাকে না।
সয়ম্ভুনাথ মন্দিরের পর ঝরনা। এরপর একটা পথ গেছে চন্দ্রনাথ মন্দিরে, আরেক পথ বিরুপাক্ষ মন্দিরের দিকে।
শাহানা বলে, চল বিরুপাক্ষ মন্দিরের দিকে যাই। ওদিকে গেছি কতদিন হয়ে গেছে।
বিরুপাক্ষ মন্দিরের দিকে খানিক উঠলে খাঁড়া পাহাড়। এ জায়গাটায় দাঁড়ালে পশ্চিমের সমুদ্র দেখা যায়। শাহানা রাজিবকে নিয়ে খাড়া জায়গাটায় দাঁড়ায়। নিচে অনেক গভীরে পাহাড়ের কানাল, গভীর খন্দক।
রাজিব বলে, দেখ, মনে হচ্ছে সমুদ্র কত কাছে।
শাহানা রাজিবের আরও গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। তার বুক রাজিবের বাহু স্পর্শ করে। রাজিব তার দিকে তাকিয়ে হাসে। শাহানাও হাসে। শাহানা উচ্চতায় প্রায় রাজিবের কাছাকাছি। সে রাজিবের কাঁধে হাত রাখে। সামনের দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে বলে, আসলেই অনেক সুন্দর।
খানিক পেছনে এসে গায়ের সব শক্তি একত্র করে রাজিবকে ধাক্কা দেয় সে।
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজিব নিচের খাদের দিকে পড়তে থাকে। তার মাথা পাহাড়ের ঢালুতে বড় সজনে গাছের গোড়ায় ধাক্কা খায়।
তিন দিন পর রাজিবকে পাওয়া যায়। মৃত। পত্রিকায় খবর আসে প্রেমিকা পিংকির সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছে সে।
রাজিবের তোলা সেলফির ঘটনায় শাহানার বেলায়াতের সাথে তোলা ছবির কথা মনে পড়েছিল। আবার সে ভুলেও গিয়েছিল।
বেলায়াত গভীর ঘুমে। ঘুমের ভেতরেই সে পাশ ফিরল। রাজিবের কথা কখনো বেলায়াতকে বলেনি সে। মনের ভেতরের কত কথা কাউকে না বলেই দুনিয়া থেকে চলে যেতে হয়, ভাবে শাহানা।
শাহাদাৎ দেশে আসবে বললে তার আবার ছবির কথা মনে পড়ে। বেলায়াত যদি তার ওপর কোনো কারণে রেগে গিয়ে তাদের যুগল ছবি শাহাদাৎকে দেখায়?
শাহানা সংসার ভালবাসে কিনা জানে না, তবে জানে তাকে এখানেই থাকতে হবে। তার পাশের ফ্ল্যাট ভাসুরের। রাজিব তাদের সেলফি, তাদের মেসেজ অর্পাকে দেখাবে বললে সবার আগে তার ভাসুরের মুখ মনে পডছিল। ভাসুর খুব স্নেহ করে তাকে। ছোটবোনের মতো জানে। অর্পাও বড় হচ্ছে। নতুন করে কোনো বিডম্বনা তার চলনসই জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলবে। সে আর ঝামেলা নিতে চায় না।
শাহানা অনেক ভেবে বেলায়াতকে বলেছিল, যুগল ছবি থেকে তার ছবিটা আলাদা করে নিয়ে একটা প্রিন্ট আনতে। বেলায়াত তার দিকে চেয়েছিল প্রশ্ন নিয়ে। তা বুঝতে পেরে শাহানা বলেছিল, তোমার সাথে আমার ছবিটা অনেক সুন্দর এসেছে। তাই চাচ্ছিলাম ওখান থেকে আমার ছবিটা আলাদা করে প্রিন্ট নিতে। স্টুডিওতে বললে করে দেবে।
শাহানা ভাবছিল যুগল ছবি থেকে তার ছবি পৃথক করে আলাদা পাসপোর্ট সাইজ ছবি প্রিন্ট নিলে যদি কেউ কখনো যুগল ছবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে, জবাব দেয়া যাবে। বলবে, তার পাসপোর্ট সাইজ ছবির সঙ্গে বেলায়াত নিজের ছবি জোড়া দিয়ে যুগল ছবি বানিয়েছে।
শাহানার ভাবনা বেলায়াতের ভাবনায় আসে না। সে বলে, আসলেই শাহানা, তোমার ছবি অনেক সুন্দর এসেছে। আমি ওখান থেকে কেটে তোমার পৃথক পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে আসব।
শাহানা বলে, তুমি পাসপোর্ট সাইজ ছবি আনলে আমি বাঁধিয়ে রাখব। যুগল ছবি তো সবার সামনে রাখা যায় না। এ ছবি রাখা যাবে।
শাহানা সোফায় বসে সেই ছবিটার কথা ভাবছিল। বেলায়াত কি ছবিটা আনবে না?
খানিক পরেই বেলায়াতের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখে শাহানা সোফায় বসে আছে। শাহানাকে অনেক সুন্দর লাগছে এখন। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। প্যান্টের পকেট থেকে ছোট সাদা খাম বের করে। খামে স্টুডিওর সিল দেয়া।
বেলায়াত বলে, নাও। তোমার পাসপোর্ট সাইজ ছবি। তার মনে হয়, এ ছবি পেয়ে শাহানা অনেক আনন্দিত হবে।
শাহানা খাম থেকে বের করে দেখে, যুগল ছবি থেকে তার ছবি আলাদা করে নিয়ে পাসপোর্ট সাইজ ছবি করা হয়েছে।
শাহানা বলে, চলো আজ কোথাও বেড়াতে যাই।
বেলায়াত বলে, কোথায় যাবে?
শাহানা বলে, চলো পাহাড়ের দিকে যাই।
তারা গাড়ি নিয়ে চলে আসে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গোড়ায়।
ব্রিজের উপর এসে গাড়ি থামে। নিচে ছোট পাহাড়ি নদী। ব্যাসকুণ্ডের পরেই নিরিবিলি পথ। দুপাশে গাবগাছ, পেয়ারার বাগান। ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁঝিঁ।
গাড়ি থেকে নেমে তারা শম্ভুনাথ মন্দিরের দিকে উঠতে থাকে। বাইরে এখনো রোদ হাওয়ার সাথে লুটোপুটি খেলছে। হাওয়ায় রোদ ধীরে ধীরে ফাল্গুনে ঝরে পড়া মেহগনি পাতার মতো বাদামি হচ্ছে, বিবর্ণ হচ্ছে। ঘনিয়ে আসছে বিকেল।
উঠতে উঠতে শাহানা ঘেমে ওঠে। তার দিকে চেয়ে বেলায়াত হেসে উঠলে বলে, অনেকদিন পর পাহাড় বাইছি। ক্লান্তি লাগছে। হনুমান মন্দিরের কাছে একটা বড় তুতগাছ।
বেলায়াত মোটা একটা ডাল ভেঙে নেয়।
উঠতে উঠতে হনুমান মন্দির থেকে নেওয়া তুতগাছের ডালটা শাহানাকে দেয় বেলায়াত। তোমার স্কুলের সামনের ছোট মাঠে লাগিও। বলে সে। যদি বেঁচে যায়, ধরে নেব আগের মতোই ভালোবাসো আমাকে।
হাওয়ায় ওড়া ঘুড়ির মতো বুক কেঁপে ওঠে শাহানার। তুতগাছ লাগালে নতুন পাতা গজাবে তো সে গাছে!
এটা কি ফুল?
হালকা বেগুনি রঙের ফুল। একটু স্মার্ট করে বললে, পার্পল রং। ছোট পার্পল রং ফুল। শম্ভুনাথ মন্দিরে উঠবার সিঁড়িতে ফুটে আছে। পাশেই ভৈরব মন্দির। মন্দিরের সামনের পাহাড়েও অনেকগুলো ফুলগাছ চোখে পড়ে। ফুলগাছে ফুল ফুটে আছে। শাহানা বলে, রুয়েলিয়া। বুনো রুয়েলিয়া।
বেলায়াত বলে, কি সুন্দর নাম! রুয়েলিয়া, রুয়েলিয়া। তোমার মতো সুন্দর শাহানা।
শোয়ায়েব মুহামদ, কথাসাহিত্যিক