ড. ওবায়দুল করিম
জ্যাঁ জ্যাক রুশো বলেছিলেন “Man is born free but everywhere he is in chain বাংলা করলে দাঁড়ায়” মানুষ জন্মায় স্বাধীনভাবে কিন্তু পরে হয় শৃঙ্খলিত”। মনে হয় উদ্ধৃতিটি এমন হলে যথার্থ হতো, “মানুষ জন্ম নেয় শৃঙ্খলিত হয়ে এবং শৃঙ্খলার (order) মাঝেই দিন গুজরান করে”. যা ইংরেজীতে হতে পারে Man is born in chains and everywhere he enchains him all along his life”.একটু ব্যাখ্যা থাকা দরকার।
আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয় যা দিয়ে আমরা জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করি। কান আছে-সব শুনতে চায়, কিন্তু শোনা হয়না, কেননা আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্ম, আদর্শ ইত্যাদি সব শুনতে বাধা দেয়, তৈরি করে taboo বা নিষেধাজ্ঞা। চোখ আছে-সব দেখতে চায়, কিন্তু দেখা হয়না,কেননা আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্ম, আদর্শ ইত্যাদি সব দেখতে বাধা দেয়, তৈরি করে taboo বা নিষেধাজ্ঞা। জিহবা আছে-সব খাবারের স্বাদ নিতে চায়, কিন্তু সব স্বাদ নেয়া যায় না, কেননা আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্ম, আদর্শ ইত্যাদি সব স্বাদ নিতে বাধা দেয়, তৈরি করে taboo বা নিষেধাজ্ঞা। নাক আছে-সব শুঁকে দেখতে চায় কিন্তু সব শোঁকা যায় না, কেননা আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্ম, আদর্শ ইত্যাদি সব শুঁকে দেখতে বাধা দেয়, তৈরি করে নিষেধাজ্ঞা। ত্বক আছে-অনেক কিছুই স্পর্শ করতে চায়,কিন্তু তা হয়না,কেননা আইন-কানুন, রীতি-নীতি,মূল্যবোধ,ধর্ম,আদর্শ ইত্যাদি সব স্পর্শ করতে বাধা দেয়, তৈরি করে taboo বা নিষেধাজ্ঞা। বলা হয়, সব সমাজেই আছে, আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ইত্যাদি, সমাজের মানুষ হিসেবে এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এই খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াই হলো ‘সামাজিকীকরণ’। তো রাষ্ট্র, পরিবার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, সংগঠন সমাজে এলে এক শৃঙ্খলিত জীবন শুরু হয় মানুষের। আর এই শৃঙ্খলিত শৃঙ্খলায় (social order ) জন্ম নেয়া শিশু সামাজিক হতে চাইলে তাকে সমাজের আইন-কানুনসহ অন্যান্য শৃঙ্খলার অধীনতো হতেই হবে। আর এই শৃঙ্খলিত জীবন থেকেই আসে শৃঙ্খলা বা নিয়মবদ্ধ জীবন।তাহলে কি একথা বলা যাবে, মানুষ নিজেই এক শৃঙ্খলিত জীবন তৈরি করেছে এক শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজ তৈরি করবার জন্য, যা সভ্যতার সূচনা ও বিকাশের একেবারেই প্রাথমিক শর্ত।
ড. ওবায়দুল করিম
উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি