এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৩০- আজ: রবিবার-১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

এখন সময়:সন্ধ্যা ৭:৩০- আজ: রবিবার
১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-শীতকাল

সাহিত্যের অনন্য ছোট কাগজ ‘আন্দরকিল্লা’

অমল বড়ুয়া : জাতীয় জীবনে মেধা মনন ও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশের অনিন্দ্য পট সাহিত্য। আর সাহিত্যের উৎকর্ষ ক্রমবিকাশ, পরিবর্ধন, পরিচর্যা, বিবর্তন ও সমৃদ্ধিতে অনবদ্য অবদান রাখে সাহিত্যের মুখপত্র ছোটকাগজ। যাকে লিটল ম্যাগাজিন বলা হয়। লিটল ম্যাগাজিন নতুন চিন্তা-চেতনা ও সাহিত্যভাবনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং লেখক ও পাঠকের মধ্যে সে নবচেতনাকে সঞ্চারিত করে। বাংলা সাহিত্যে প্রথম ছাপা সাহিত্য সাময়িকী তথা সাহিত্য মুখপত্রের সূচনা হয় দু’শ বছর আগে। আঠারো শতকের শেষ ভাগে ১৭৭৮ সালে বাংলার হুগলিতে প্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয়। এর পরই গ্রন্থ, সাময়িকী, পত্রিকা প্রকাশনার কাজ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় জন মার্শম্যানের সম্পাদনায় ১৮১৮ সালে বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্র ‘দিগ্দর্শন’ প্রকাশিত হয়। যা ছিল বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছাপা সাহিত্য পত্রিকা। আর বাংলা সাহিত্যে ছোট কাগজের সূচনায় গৌরবময় ভূমিকা রাখেন প্রমথ চৌধুরী। পাশ্চাত্যের অনুকরণে বঙ্গদেশে প্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রবর্তন করেন প্রমথ চৌধুরী। ১৯১৪ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’কে আধুনিক লিটল ম্যাগাজিনের আদিরূপ বলে গণ্য করা হয়। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ বাংলা ভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন। পরবর্তীকালে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘কল্লোল’, ১৯২৪ সালে প্রকাশিত ‘শনিবারের চিঠি’, ১৯২৭ সালে প্রকাশিত ‘কালিকলম’ ও ‘প্রগতি’, ১৯৩২ সালে প্রকাশিত ‘পূর্বাশা’ পত্রিকা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের ধারাকে ঋদ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশনা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, মূলত বাংলা সাহিত্যের উত্তরণ প্রক্রিয়ায় প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সাহিত্যের সেতুবন্ধন গড়ে ওঠার কারণে।

বাংলাদেশে ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম থেকে মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী ও সুচরিত চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সীমান্ত’। ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে পত্রিকাটি স্মরণীয় হয়ে আছে। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানীর সম্পাদনায় ১৯৪৯ সালে বের হয় ‘অগত্যা’; যাতে ছিল মধ্যবিত্ত, নব্যনাগরিক জীবনের এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন। যার ফলে পত্রিকাটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বহু লিটল ম্যাগাজিন। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষে বর্তমান বিশ্ব ছোট হয়ে আসছে। হাতের মুঠোয় চলে আসছে বিশ্বব্যাপী ঘটমান বিষয়াবলী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে। তার ফলে আমাদের সাহিত্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা। আর নব চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক হিসেবে নিরীক্ষাধর্মী লেখা প্রকাশের মাধ্যমে লিটল ম্যাগাজিনগুলোকে আশ্রয় করে সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের সাহিত্য। তেমনি নবচেতনার বারতায় সাহিত্যের বিকাশে, নতুন ধারা নির্মাণে, জনমানসে তার প্রভাব ফেলতে বিগত পঁচিশ বছরের সুদীর্ঘকাল সময়ব্যাপী প্রকাশিত হচ্ছে বিশিষ্ট কবি, প্রকাশক ও সম্পাদক নুরুল আবসার সম্পাদিত ‘আন্দরকিল্লা’ নামক ছোট কাগজ। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ ভাবনামূলক কাগজ ‘আন্দরকিল্লা’র যাত্রা ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে। শুরু থেকে এই কাগজের গুণগত মান, সৌষ্ঠব ও মননশীলতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর সম্পাদক। ২৫ বছরের দীর্ঘ অভিযাত্রায় বদলেছে অনেক কিছু, ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষের দ্রাঘিমায় হারিয়ে গেছে কতো নদী-জল, অন্ধকারের অতল গহ্বরে পথ হারিয়েছে কতো পথিক, শুকিয়ে ঝরে গেছে কতো পত্র-পল্লব, নিভে গেছে কতো আলো, বহু জীবন। কালের অববাহিকায় অর্থনীতি আর প্রযুক্তির মেরুকরণে হারিয়ে গিয়েছে অনেক ছোট কাগজ। কিন্তু সংশপ্তক ‘আন্দরকিল্লা’ বহু বন্ধুর পথ মাড়িয়ে প্রতিকূলতার ধকল সরিয়ে ধ্যানি-যোগীর মতো ঠাই রয়ে গেছে তার অনিন্দ্য সাধনায়। দিন বদলের গানে এখনো তার পথচলা অবিরাম সম্মুখে। ঘুণেধরা সমাজের অচলায়তনের নাগপাশ ছিন্ন করে সত্য ও সুন্দরের প্রকাশে দুর্মর আন্দরকিল্লা প্রবহমান অনন্তসলিলা ঝরনার মতো বর্ণ ও শব্দের অমিয় নান্দনিক শৈলী সৃজনে ব্যাপৃত। বিষয় নির্বাচন, বিন্যাস, অলংকরণ, মান ও মননশীলতায় অনন্য ও অদ্বিতীয় ‘আন্দরকিল্লা’। পত্রিকাটি প্রায় আড়াই দশক ধরে তরুণ সমাজের চিন্তার জগতকে প্রভাবিত করে আসছে। আর হয়ে উঠেছে সমকালীন প্রগতিশীল নতুন লেখকদের সাহিত্যচর্চার চারণভূমি। বলা হয় যে, সাহিত্যের ছোট কাগজের হাত ধরেই সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটেছে আধুনিকতার। উত্তরাধুনিকতার চর্চাও চলছে সাহিত্যের ছোট কাগজকে ঘিরে।

প্রগতিশীল চিন্তারও আবির্ভাব ঘটেছিল সাহিত্যের ছোট কাগজকে কেন্দ্র করে। সাহিত্যের ছোট কাগজই তৈরি করে দেয় সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি। আর তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘আন্দরকিল্লা’;যেখানে আধুনিকতার পাশাপাশি উত্তরাধুনিকতারও চর্চা পরিলক্ষিত হচ্ছে।  সম্পাদক নুরুল আবসারের প্রাগ্রসর চিন্তা, মেধা, অভিলাষ, মনীষা, বোধ ও বোধি এবং রুচিশীলতা আন্দরকিল্লাকে সাহিত্যের মুখপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিতকরণে মূল ক্রীড়া হিসেবে কাজ করছে। সম্পাদকীয় রুচি, নিষ্ঠা, ধৈর্য, মেধা, মনন সবকিছুতেই অনন্যতার পরিচয় দিয়ে নুরুল আবছার যোগ্য সম্পাদক হিসেবে প্রকাশ করছেন আন্দরকিল্লা। তারই হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে প্রায় সব নতুন কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাহিত্যের ছোট কাগজ যে শুধুই আত্মপ্রকাশজনিত অপরিণত লেখার অমনিবাস নয়, নুরুল আবসার সেটাও প্রমাণ করেছেন। সাহিত্যের ছোট কাগজ মানেই হবে সেই পট, যা জগতের সকল সৃজনশীলতা নিয়ে নিরীক্ষার পাশাপাশি প্রবল ও দ্বিধাহীনভাবে মানুষ ও জীবনের কথা বলবে। কাজ করবে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতা আর  নৈতিকতার পক্ষে।

এখন সাহিত্যের ছোট কাগজ থেকে আমাদের সাহিত্য আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটে প্রসারিত হচ্ছে। ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে সাহিত্যের ছোট কাগজের বিকল্প। এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য ভালো বেশ কিছু সাহিত্যের ছোট কাগজ প্রকাশ হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত শক্তিশালী সৃজনশীল, বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রভাবসঞ্চারী সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘আন্দরকিল্লা’ অন্যতম। এ সময়টায় বেড়েছে মুদ্রণ-ব্যয় তাছাড়া বিজ্ঞাপনের বিকেন্দ্রীকরণের প্রভাবে ছোট কাগজের জন্য পর্যাপ্ত শ্রম ও সততার তীব্র অভাব লক্ষ্য করা যায়। এতো এতো বিড়ম্বনার মধ্যেও বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা ও কষ্ট স্বীকার করে নিজের পুত্রসম এই ‘আন্দরকিল্লা’-কে জিইঁয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সম্পাদক নুরুল আবসার। তার দৃঢ় প্রচেষ্ঠায় অব্যাহত থাকুক ‘আন্দরকিল্লা’র ক্লান্তিহীন অগ্রযাত্রা। বাংলা সাহিত্যের প্রোজ্জ্বল আগামীর জন্য ‘আন্দরকিল্লা’র এই অগ্রযাত্রা আরও বেগবান ও শক্তিশালী হোক- এই প্রত্যাশা রইল।

 

অমল বড়ুয়া, কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

৭১ এর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ

হোসাইন আনোয়ার ১৯৭১ সাল ১৪ ডিসেম্বর দিয়েই শুরু করছি। ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে লে. জেনারেল নিয়াজী ফোনে রাওয়ালপি-িতে সামরিক বাহিনীর প্রধান সেনাধ্যক্ষ জেনারেল আবদুল হামিদকে

সেকাল ও একালের চট্টগ্রাম

মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি   নদী—পাহাড়—সাগর, অবারিত মাঠ, সবুজ— সোনালি ফসলের ক্ষেত, বৃক্ষরাজি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাকৃতিক ভান্ডার—শ্বাশত বাঙালিয়ানার অফুরন্ত উৎস। সকালের সোনা মাখা হলুদ নরম

আমি শ্রাবণ!

সৈয়দ মনজুর কবির   মাস খানেক হলো হামিম সাহেব সিরাজগঞ্জের এডিসি হয়ে এসেছেন। শহরের ভেতর সরকারি বাড়ি। দুসপ্তাহ আগে পরিবার নিয়ে এসেছেন। পরিবার বলতে স্ত্রী