হোসেইন আজিজ
বৃষ্টিভেজা এক সন্ধ্যা। আকাশে মেঘের ঘনঘটা, যেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে আজ। সব টেলিভিশন চ্যানেল আর সামাজিক মাধ্যমে বারবার ভেসে আসছে এক জরুরি বার্তা “তাৎক্ষণিক ও-পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন। জীবন-মরণ সমস্যায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।”
বার্তাটি যখন অনিকের চোখে পড়ে, তখনও সে জানত না— তার রক্ত শুধু এক মৃত্যুপথযাত্রীর জীবন বাঁচাবে না, উন্মোচিত করবে এক নীরব সত্যের দ্বার।
অনিক, এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক। বহুবার রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে সে। এবারও দ্বিধাহীন।
ছুটে গিয়েছে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে পৌঁছে দেখে, ভেতরে অদ্ভুত এক ব্যস্ততা। রোগীটি আর কেউ নয় দেশের খ্যাতিমান ধনকুবের, হায়দার সাহেব।
দুই পাউন্ড রক্তের দরকার, তৎক্ষণাৎ।
নার্স একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তাকে। না কোনো কাগজে স্বাক্ষর, না কোনো প্রশ্ন।
অনিককে শুইয়ে দেওয়া হয় বেডে। তার শিরা ধরে ধীরে ধীরে রক্ত চলে যায় অন্য এক শরীরে যার হৃদপিণ্ড তখন শল্যচিকিৎসকদের হাতে খোলা পড়ে আছে।
অপারেশন সফল হয়।
করিডোর জুড়ে উল্লাস, আত্মীয়দের চোখে জল, মুখে বিজয়ের হাসি।
তবে অনিক?
সে এক কোণে, প্লাস্টিকের এক চেয়ারে নিস্তেজ হয়ে বসে থাকে।
তার কাঁধে কেউ রাখে না একটি কৃতজ্ঞতার হাত। কেউ জিজ্ঞেস করে না,
“কেমন আছো তুমি?”
না কোনো মৌসুমি ফল, না একফোঁটা জল শুধু নিঃসঙ্গতা।
একসময় বিলাসবহুল একটি গাড়ি গেট পেরিয়ে বেরিয়ে যায়।
হায়দার সাহেবের স্ত্রী আর সন্তান জানালার কাচ নামায় না। অনিক উঠে দাঁড়ায়, তাকে বাড়ি যেতে হবে। তার পদতলে ঠান্ডা মেঝে— মনে হয়, বর্ষার জলে নিজেই ধুয়ে যাচ্ছে সে।
পিছন ফিরে দেয়ালে চোখ পড়ে। সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা—
“রক্তদান শুধু দায়িত্ব নয়, এক অদৃশ্য বন্ধন।”
সে একটু হেসে ফেলে। সেই হাসি না বিদ্রুপ, না বেদনা
এক বিষণ্ন, ভিজে সন্ধ্যার মতো নিঃশব্দ হাসি।
হোসেইন আজিজ, কবি




