বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা বড়ই অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এই ঋতুটির তেজ আগে কখনও এত তীব্র ছিলো না। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড সীমা অতিক্রম করেছে। এখন সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যে রাতের প্রতিক্ষণে অস্বস্থির লাগামছাড়া দৌঁড় কিছুতেই থামছে না। ছিটে-ফোঁটা কিছুটা হলেও, ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতে কাঁপানো রুদ্র কাল-বোশেখীর দেখা সাক্ষাৎ নেই বললেই চলে। আসলে প্রকৃতির এই আচরণ কী অকারণ? প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আমরা প্রত্যেকে না হলেও, প্রায় সকলেই যে কোন ভাবে প্রকৃতিকে অল্প-বিস্তর কষ্ট দিচ্ছি; পরিবেশকে নষ্ট করছি।
এই নগরবাসী, যাদের জীবন প্রান্ত সীমায় তারা শৈশবে যে চট্টগ্রাম নগরীকে অপূর্ব মুগ্ধতায় দেখেছে তার সাথে বর্তমান চট্টগ্রাম নগরীর যৎকিঞ্চিৎ মিলও খুঁজে পাওয়া যায় না। এক সময় কোর্ট হিলে প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণে গেলে সেখান থেকে পুরো নগরীটাকে দেখা যেতো। কর্ণফুলির জললতিকার ছন্দময় নৃত্য ফুটে উঠতো; এমনকি নিকট দূরের বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজের আলো জ্বলমল ঝিলমিল রেখা দৃষ্টিসীমায় ফুটে উঠতো। সেই স্মৃতি এখন কেবলই ছবি। আর কী ভয়ানক নিষ্ঠুরতায় নিধন হয়েছে এই নগরীর পাহাড়-টিলাগুলো। তাহলে কীভাবে বলি এই নগরী পাহাড় ও টিলাময়? একসময় কর্ণফুলী নদী থেকে চাক্তাই খাল দিয়ে মাল বোঝাই সাম্পান শহরের ভেতরে ঢুকে যেতো। এখন চাক্তাই খালে সাম্পানতো দূরের কথা ডজন দেড়েক খালও উধাও হয়ে গেছে। এই অপঘাত পক্ষাঘাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর, যা মানবসৃষ্ট। এই চিত্র সবখানে। মানুষ ও মাটি বিভ্রম ও বিপথগামিতায় নিমজ্জিত। চারদিকে মেধা ও মননের জগতে এক অদৃশ্য দুর্ভিক্ষ ‘সভ্য’ জগতের ক্ষতগুলোকে স্পষ্ট করলেও এক ধরণের নীরব-নির্বিকার অসহায়ত্ব বোধ-বুদ্ধি-বিবেককে হিমঘরে আবদ্ধ করেছে। এ থেকে মুক্তি পেতেই হবে—এই আপ্তবাক্য শুধু মুখের কথা। তাই কাঙ্ক্ষিত শান্তি, সুখ ও স্বস্তি কী সোনার হরিণ!
হিংস্র ও বুনো অপশক্তির অনায্য দাপট ও আধিপত্যে চারিদিকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা; এই খেলা শুধু মানুষের বিরুদ্ধে নয়, প্রকৃতির বিরুদ্ধেও। তাই রুষ্ট প্রকৃতির অভিশাপ-অভিজ্ঞাত থেকে মুক্তি পেতে হলে সভ্যতা বিরোধী হিংস্র ও বুনো অপশক্তির বিনাশ চাই।




