মোহাম্মদ ইউনুস
প্রতিটি দেশের বিভিন্ন জনপদের তার নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল স্থাপনা,ভাস্কর্য বা স্তম্ভ। সে লক্ষ্যে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর বিভিন্ন মোড়ে গোল চত্বরে শিল্প কর্ম বা নান্দনিক স্থাপনা বাস্তবায়নের সিদ্বান্ত গৃহিত হলে আমাকে কিছু ডিজাইন সরবরাহ করার অনুরোধ জানান।বিভিন্ন মোড়ের স্থানিক গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ কিছু ডিজাইন ২০২৩ থেকে সরবরাহ করি। দীর্ঘ প্রস্তুতি আর সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের মাধ্যমে নগরীর ব্যস্ততম সড়কের চত্বরে চকবাজারে অলি খাঁ মসজিদের সামনে নির্মিত হল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর সহায়তায় ‘ইসলামিক মনুমেন্ট’।
গত ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এই মনুমেন্ট উদ্বোধন করেছেন সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দৃষ্টিনন্দন এই মনুমেন্ট চট্রগ্রাম তথা দেশের ১৬ কোটি মানুষের নজর কেড়েছে। এই অলি খাঁ মসজিদ চট্রগ্রামের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সপ্তদশ শতকে এই মসজিদটি স্থাপিত হয়। স্থানিক গুরুত্ব অনুধাবন করে এই স্থাপনা।
আমি ডিজাইনার হিসাবে এই স্থানের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক ভিত্তি মাথায় রেখে ডিজাইনে ইসলামিক মোটিফ এবং এরাবিক ক্যালিগ্রাফীকে প্রাধান্য দিয়েছি। চেষ্টা করেছি স্থাপনায় আধ্যাত্ব ভাবধারা যেন বজায় থাকে। রাতে আলোড় ব্যাবহারে একটা ড্রিমিং আবহ রাখার চেস্টা করেছি। সেই সাথে এলিমেন্টস অব ডিজাইনে বর্গক্ষেত্র,আয়তক্ষেত্র এবং গোলাকার ফর্ম বা সেইপ
এর ব্যবহার করে ডিজাইনে সামগ্রিক ইউনিটি এবং সমতা আনার চেস্টা করেছি। এই স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, রং এর ব্যবহার। সচরাচর রং বা গ্লাসের এর পরিবর্তে দীর্ঘ স্থায়িত্ব এবং উজ্জ্বল্যের কারণে ব্যয়বহুল রেজিন কালার ব্যবহার করা হয়েছে। অনুপ্রেরণা হিসাবে অনেক আগে মসজিদের জানালা বা দরজায় নকশা করে গ্লাসে এনামেল রং বা রঙিন গ্লাসে লোহা বা কাঠের ফ্রেমে বসানো হত। বিশেষ করে মধ্য যূগের গথিক শিল্পকলায় বিভিন্ন উপাসনালয়ে স্টেইনড গ্লাস ব্যবহার হতো। তারই সূত্র ধরে স্টীল ফ্রেমে রেজিন কালার ব্যবহার করা হয়েছে। আউটডোর ওপেন স্পেসে এই রঞ্জনের ব্যাবহার দেশে এই প্রথম।
তবে উল্লেখ থাকে যে, এই ডিজাইন বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রধান কারণ স্পেস বা জায়গার স্বল্পতা। অন্যদিকে ব্যস্ত সড়ক। আমি বাস্তবতাকে স্বীকার করছি যে, আমার ডিজাইনের শতভাগ কাজ পরিপূর্ণতা আসেনি। কারন, কাজটির নির্দেশ না বা স্ট্রাকচারাল ডিজাইন আমার হলেও নির্মাণের বিষয়টির দায়িত্ব ছিল ঠিকাদার আর মিস্ত্রীর। তবুও বাস্তবায়ন হল এই ইসলামিক স্মারক স্তম্ভ। মনুমেন্ট এর উচ্চতা ২৫ ফিট ব্যাস ১৭ ফিট মাত্র। ডিজাইনের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে গোল চত্বর এর ডিজাইন এবং মূল স্তম্ভের নকশা এক সাথে করা। সেই সাথে জরুরী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা রাখার কারণে ফিরে পেল গোলচত্বরে যানবাহনের শৃংখলা।
মোহাম্মদ ইউনুস, সাবেক ডিন, পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম