এখন সময়:রাত ১০:৩৮- আজ: বুধবার-৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

এখন সময়:রাত ১০:৩৮- আজ: বুধবার
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-বর্ষাকাল

কবি জহরত আরা’র পাখিদের মিছিলে প্রসঙ্গে 

মুহাম্মদ ইসহাক

 

কবি ‘হাজার গোলাপ ও একটি জোনাকি পোকা’ কবিতায় লিখেছেন,

ভালোবেসে পেতে পারি অবিরাম ভালবাসা,

কেননা তোমার আর কোন কাজ নেই,

স্বেচ্ছায় বেকারত্ব বরণ করবে যদি আমি ধরি হাত,

পায়ের কাছে বসে থাকবে ইচ্ছে পূরণের পুরোহিত হয়ে,

পূজিত হতে পারি তোমার বেদীতে অনুক্ষণ! (পৃ. ৪৯)

কবিতার শব্দচয়ন ও লেখার ভাষা সহজ সরল ও সাবলীল। কবিতার প্রতিটি বাক্যে রয়েছে আবেগ ও ভালবাসার অনুভূতি। কবির কল্পনা শক্তি দিয়ে ও মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজিয়েছেন কবির নিজস্ব সাহিত্য জগৎকে। রোমান্টিকতা কি জিনিশ? তা উপরের কবিতায় কবি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চিন্তা ও কল্পনা শক্তি সবার থাকলেও কিন্তু মনের ভাবনা জগতে ফুটিয়ে তোলা সহজ না। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব স্বতন্ত্র জগৎ রয়েছে। কবি ‘পাখিদের মিছিলে’ কাব্যগ্রন্থে স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে মনের আনন্দে প্রেমময়ের ভঙ্গিতে লেখার সৌন্দর্য প্রকাশ করেছেন।

কবি ‘নীড়ে ফেরার গল্প’ কবিতায় লিখেছেন,

নীড়ে ফিরে খুলে বসবো গোপন ডায়েরিটা-

নিজেকে বড্ড ভালোবেসে কোথাও কোথাও

ছেলেমানুষী করে নানা রঙে আঁকব নিজের ছবি, বলব অন্য গল্প।

 

নীড়ে ফিরে পথের ক্লান্তি ঝেড়ে আজ আমি অন্য মানুষ হব কি? (পৃ.৫৫)

প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন দেখা ভালো। ছোটকালে শিশুদের নানা ধরণের রাজা-বাদশাহর কাহিনী ও স্বপ্নের গল্প বলে থাকে। শিশু অল্প বয়স থেকে স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করে। সেই সাথে নিজের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের চেষ্টা করে। কবি জহরত আরা আমাদের কল্পনা জগৎকে স্বপ্নের রাজ্যে ভ্রমণে সৃষ্টির রহস্যে ভরপুর করে তুলেছেন নিজের কবিতায়। তিনি কবিতায় আশার কথা বলেছেন। ভালবাসার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।

কবি ‘একদা এক স্বপ্নরাজ্যে’ কবিতায় লিখেছেন,

ভালোবাসা ছাড়া আমাদের আর কোন কাজ ছিল না।

খুব ভোরে যখন সূর্যের রাঙা মুখ ধীরে ধীরে জেগে উঠতো

সমুদ্রের রাশি রাশি জলের ভেতর থেকে, তখন প্রিয়তম আমার,

বাগানের সব ফুল তুলে এনে ছড়িয়ে দিত আমার শরীরে,

আমিও জেগে উঠতাম এক স্বপ্ন থেকে আরেক স্বপ্নে!

সে দেশে সবার চেয়ে, সবচেয়ে বেশি সুখী ছিলাম আমরা,

কারণ আমরা ছিলাম ভালোবাসায় জুড়িহীন! (পৃ. ৬৪)

প্রকৃতি ও পৃথিবী কতই সুন্দর! এই সুন্দর ভুবনে মানুষ কতই না বিচিত্র! রহস্যের ধরণীতে আমাদের বসবাস। সমুদ্রের গর্জন, পাহাড়ের দৃশ্য, আকাশের রঙের ছোঁয়া ও প্রাণীর ছলনায় মোদের জীবনকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলেছে। কবি জহরত আরা’র চিন্তার মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের বিষয়। তিনি প্রকৃতি, পাহাড়, সমুদ্র, বৃক্ষ ও পক্ষীকূল নিয়ে চিন্তা করেছেন। এসব চিন্তা ভাবনা জগতে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।

কবি ‘নির্বাসিত নিজ ভূমে…’  কবিতায় লিখেছেন,

দূরে, দূরদেশে ঘুরে বেড়াই!

এ আমার মানস-চারন! পাইরিনিসের পথে, আল্পসের চূড়ায়!

এই চারন আমার মলিন প্রতিদিনকে উজ্জ্বল করে,

আমি বসে থাকি পাইরিনিসের গ্রামে, সরল পাহাড়ি মানুষের মাঝে। (পৃ.১৫)

প্রেম ও ভালবাসা দু’টি খুবই পরিচিত ও মধুর শব্দ। কবি প্রেম ও ভালবাসা নিয়ে ভাবনাগুলো মনের আনন্দে লিখেছেন। রোমান্টিকতা রয়েছে কবির প্রেমময় ও ভালবাসার কবিতার ছন্দে ছন্দে। বইয়ের প্রতি ভালবাসা কবির অন্যতম প্রেম। কবিতার প্রতি ভালবাসা কবির প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। যেমন ভাললাগা, তেমনি ভালবাসা। বইয়ের কাভার পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “কবিতা শুধু লিখতে নয়, পড়তেও ভালো লাগে। কবিতা ভালো লাগার মাঝে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে সংবেদনশীল হওয়ার একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে। সংবেদনশীল মনের আয়না যেন কবিতা। প্রাত্যহিক জীবনের শৃঙ্খলায় আবেগের স্থান কম। কিন্তু তাই বলে আবেগ তো মরে যায় না। আকুতি খোঁজে প্রকাশের ক্ষেত্র। প্রেমের কবিতায় আবেগগুলো ঝরে পড়ে ঝর্ণার মত। প্রকৃতি এই প্রেমের উৎস।”

কবি ‘প্রেমপত্র’ কবিতায় লিখেছেন,

প্রিয়, কাল হঠাৎ কবিতা পড়তে গিয়ে

পূর্ণেন্দু পত্রীর শুভংকর আর নন্দিনীকে ঈর্ষা হচ্ছিল!

কী দারুণ সব ভালবাসার অভিব্যক্তি! মনে হল, তোমায় একটা চিঠি লিখি,

আমার প্রিয় কল্পনাগুলো চিঠিতে সাজাই থরে থরে!  (পৃ.২৭)

 

কবি জহরত আরা ৫ নভেম্বর ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানার বাড়ী লক্ষ্মীপুর শহর, কবির জন্মস্থান। স্কুল জীবন থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন নানান বিষয়ে প্রবন্ধ। পেশায় তিনি শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে  শিক্ষকতার পাশাপাশি মনের আনন্দে ও কল্পনায় লিখে যাচ্ছেন। চিন্তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যাচ্ছেন। স্কুলের ম্যাগাজিনে কবিতা লেখার মাধ্যমে লেখার জগতে প্রবেশ করেন। ইংরেজি সাহিত্য পড়াশুনা করেও বাংলা সাহিত্যে মনোযোগ দিয়েছেন কবি। সে হিসেবে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে বিষয়ে কবির ভালো জানাশোনা রয়েছে। পাখিদের মিছিলে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি ২০২০ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে কবির আরো কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়। পাখিদের মিছিলে (২০২০), রুপালি আলোয় মায়াবী পৃথিবী (২০২২),  গডমাদার (২০২৩),  বহতা নদীর স্রোত (২০২৪), সর্পদেবী ও একগুচ্ছ বাসনা (২০২৫) বইসমূহ উল্লেখযোগ্য।

তিনি ‘চিরসুখের দ্বীপে…’  কবিতায় লিখেছেন,

সমুদ্রপাড়ি দিয়ে যাব চিরসুখের দ্বীপে….

তারুণ্য সেখানে উচ্ছ্বল খেলায় মাতে দিনে-রাতে!

সংগীতের মূর্ছনায় গাছ, ফুল, প্রজাপতি গাইতে থাকে যৌবনের গান! (পৃ. ৩১)

নতুন বই পাঠকদের জন্য আনন্দের সংবাদ। নতুন বইয়ের ঘ্রান নিতে চায় পাঠক। লেখকের প্রথম বই হিসেবে মানে গুণে বেশ চমৎকার হয়েছে। যেকোন পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে বইয়ের প্রতিটি কবিতা। পাঠককে কবিতার সাথে গ্রাম -শহর, নদী-সাগর, পাহাড় -বৃক্ষ, প্রেম -ভালবাসা, গল্প -স্বপ্ন,  আকাশ -জমিন ও নানান কল্পনার জগতে ঘুরিয়ে নিয়ে যাবে কবির কাব্যময় বইটি। আমি কাব্যগ্রন্থটি ও লেখকের সার্বিক সাফল্য ও ব্যাপক প্রচার কামনা করছি।

 

জহরত আরা, পাখিদের মিছিলে, দেশ পাবলিকেশন্স, একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০, ঢাকা,  প্রচ্ছদ : মিনতি রায়, পৃষ্ঠা : ৬৪,  মূল্য : ২০০ টাকা।

 

 

মুহাম্মদ ইসহাক, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

রেম্ব্রান্টের জন্মশহর লেইডেন, ইনডেক্স পোয়েট্রি বুকস এবং কেইস নুটবুমের তিনটি কবিতা

আলম খোরশেদ বছর ছয়েক আগে জার্মান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আমন্ত্রণে বিশ্বখ্যাত নাট্যোৎসব থিয়েটার ট্রেফেন এর ছাপ্পান্নতম আসরে যোগ দিতে বার্লিন গিয়েছিলাম, পৃথিবীর আরও কুড়িটি দেশের

আমরাই শেষ জেনারেশন

বৈজয়ন্ত বিশ্বাস ভিক্টর আমরাই শেষ জেনারেশন, যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক,

আন্দরকিল্লা সাহিত্যপত্রিকা এবং স্মৃতিকাতর চাটগাঁ

প্রবীর বিকাশ সরকার “আন্দরকিল্লা” ম্যাগাজিনটি ২৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, আদৌ কম কথা নয়! সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজবিষয়ক একটি সাময়িকী বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর