এখন সময়:বিকাল ৩:২১- আজ: মঙ্গলবার-২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

এখন সময়:বিকাল ৩:২১- আজ: মঙ্গলবার
২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-বসন্তকাল

কর্ণফুলিকে জাতীয় নদী ঘোষণা করুন

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি

ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলা, নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা আত্মপ্রবঞ্চনা এবং প্রতারণার শামিল। ঐতিহ্যকে কিংবা ঐশ্বর্যকে অবহেলা করে  চলা  যায়, বলা যায়, ছলা কলা করা যায় কিন্তু মর্যাদাবান জাতিতে রূপান্তরিত হওয়া যায় না। তাতে বিবেকের বন্দীত্ব প্রকাশ পায়। সামগ্রিক জাতিগত বিবেকের মুক্তি আসেনা।

জাতির যা কিছু ঐশ্বর্য, যা কিছু অহঙ্কার, তার পরিচর্যা করতে হয় সব সময়। ঐতিহ্যের অহংকার ও তার মননশীলতা পরিচর্যায় সামগ্রিক মনোযোগ, অত্যাবশ্যক।

ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য, প্রজন্মকে স্বপ্নবান করার জন্য, দেশপ্রেমিক করার জন্য, দেশবোধে জাগরিত করার জন্য ঐতিহ্যের চর্চা করতে হয়।

আমাদের জাতিসত্তা হাজার বছরের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ, স্বকীয় সত্ত্বায় স্বীকৃত একটি সমৃদ্ধ জাতিসত্তা।

আমাদের জাতিসত্তার ভূ-প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক বিভিন্ন মাত্রার চড়াই- উৎরাই অতিক্রান্ত, তুলনামূলকভাবে পাকা-পোক্ত একটি জাতিসত্তা। সম্পদে, সম্ভারে, স্বকীয়তায়, সর্বজনীনতায় এটির গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃত।

উপনিবেশিক অপশাসন-শোষণ, জাতিগত, ধর্মগত শোষণ ও প্রতারণা, পারিপার্শ্বিক ও আন্তর্জাতিক চক্রে- বক্রে দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে, চরম মূল্য দিয়ে  স্বাধীন সার্বভৌম ব-দ্বীপীয় ভূখণ্ড হিসেবে আমরা জাতির হারানো সত্তাকে ভৌগলিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।

হাজার বছরের গৌরবের এই আখ্যান আমাদের অতীত, বর্তমান এবং আগামী দিনগুলোকে সমৃদ্ধ রাখবে- এ প্রত্যাশা আমাদের অন্তরের।

আমাদের প্রজন্মের প্রত্যাশা, আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের নিরন্তর স্বপ্নবান করে রেখেছে। স্বপ্নছোঁয়া, স্বপ্নধরা, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা এখন আমাদের অন্যতম কর্ম ও ধর্ম হওয়া উচিত।

 

হাজার নদীর জল ধোয়া মায়াবী পরশমাখা দেশ এই বাংলাদেশ। নদী এর ঐতিহ্য, নদী এর ইতিহাস, নদী এর সাংস্কৃতিক সম্ভারের অবারিত ভান্ডার। ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে, সংস্কৃতি ও সামাজিকতার সাথে, আচার ও বিচারের সাথে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও বিসর্জনের সাথে নদীর সম্পৃক্ততা, আন্দোলন-সংগ্রামের অংশগ্রহণ এ ভূখণ্ডের প্রতি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতি ফোঁটা জল এবং প্রতিটি প্রশ্বাসের বাতাসকে স্পর্শে, অনুভবে আবিষ্ট করে রেখেছে।

 

আমাদের হাজার ঐতিহ্যের অন্যতম সম্পদ- সম্ভার নদী মাতা, নদী ঐশ্বর্য। এ দেশের নদীর সাথে নারীর সম্পর্ক, খাল- বিল- হাওরের  সাথে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের সম্পর্ক, জীবনের সাথে জীবিকার সম্পর্ক, রাজনীতির সাথে পদ্মা- যমুনা -কর্ণফুলির সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধের সাথে নদীর জল ও জীবনের সম্পর্ক গর্বিত ইতিহাসের নিবিড় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ-অংশ।

 

গত শতকের মাঝামাঝি থেকে নদীর ঐতিহ্যকে আমরা বিলীন করে চলেছি। বিলুপ্তির তালিকায় রেখেছি। নদীতে ভাটিয়ালি গানের সুর লহরী, নদীর জলে বধূয়ার অবগাহন, নদীর বাদাম তোলা নৌকায় বণিক প্রেমিকের নিরুদ্দেশ যাত্রা কিংবা নদীতে বিরহীর ব্যথিত বিসর্জন আমাদের অতীতকে সমৃদ্ধ ও ভারাক্রান্ত করে রেখেছে। বর্তমানকে নির্লিপ্ত করে রেখেছে। ভবিষ্যতকে স্বপ্নহীন করে রেখেছে।

 

দক্ষিণ বাংলাদেশের কর্ণফুলি নদী একটি ঐতিহ্য। একটি ইতিহাস। একটি জীবন্ত সাংস্কৃতিক ভান্ডার। একটি জীবন নদী। কর্ণফুলির ঐতিহ্য বহুমাত্রিক। দিগন্তজোড়া। একটিমাত্র নদীকে বাংলাদেশের অর্থকরী নদী বলা হয়। অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ বলা হয়। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড বলা হয়ে থাকে কর্ণফুলিকে।

 

এই নদীর উভয় পাশে বিস্তৃত সাগরপাড় নিয়ে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত, বিকশিত এবং ব্যাপকতা পাচ্ছে, তার গুরুত্ব কখনোই বিস্মৃত হওয়া যাবে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার সাথে চলতে গিয়ে কর্ণফুলিকে অবহেলা করা যাবে না। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে বারবার আমলাতান্ত্রিক অপকৌশল, অপব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া, আঞ্চলিক অপরাজনীতির উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা আমাদের হতাশ করে চলেছে।

 

যে নদীর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ কথা বলে, স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়। যে নদীর ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়। যে নদীর শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রতিবেশ-পরিবেশ ডেল্টা প্লানের স্বপ্নকে বিস্তৃত করে। যে নদী হাজার বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশকে তুলে ধরে, সেই প্রাকৃতিক সম্পদের আঁধার নদীর দেহের ক্রমাবনতি, স্বাস্থ্যের জীর্ণতা, তদারকির অন্যমনস্কতা, উদাসীনতা আমাদের হতাশ করে। প্রাণের নদী কর্ণফুলীর প্রতি অবহেলা অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।

অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অর্থনীতির দ্রুত বর্ধনশীল একটি দেশ বাংলাদেশ।

 

এদেশে আমলাতান্ত্রিক সংকট আছে, রাজনৈতিক বাড়াবাড়ি আছে। দায়িত্বশীলদের অদূরদর্শিতা ও অজ্ঞতা আছে, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ববান ব্যক্তিদের স্বজনপ্রীতির দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড ছিল, আছে।

 

পদ্মা-মেঘনার চেয়েও নিবিড় ভাবে এ দেশের অর্থনীতিতে, অর্থের ভিতকে প্রতিদিন মজবুত করে দেয় যে নদীটি, তার নাম কর্ণফুলি।

 

এমনি পথ ধরে দিনের পর দিন নদীটির স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো নদীটিতে প্রতিদিন- প্রতিরাত দখল ও দূষণের কর্মযজ্ঞ মঞ্চায়িত হচ্ছে। দখল-দূষণে নদীর অবস্থা জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হচ্ছে। স্বাস্থা হানি ঘটছে, পানির রং বদলাচ্ছে, বাস্তুতান্ত্রিকতা বিপদাপন্ন হয়ে পড়ছে। নদীকে আদালত পাড়া পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

 

দেশে আমলা আছে, মামলা আছে, তাদের রহস্যজনক নির্লিপ্ততার নিরবচ্ছিন্ন নীরবতা আছে, আশ্বাস আছে, প্রশ্বাস আছে ,সুখকর বাণী আছে, কৌশলগত কর্মতৎপরতার কথা আছে, ড্রেজিঙয়ের নামে সুরসুরি আছে, অনৈতিক বাণিজ্য আছে, দখলদারিত্ব আছে। সবকিছু ছাপিয়ে দিনে দিনে নদীটি জীর্ণ হচ্ছে, শীর্ণ হচ্ছে, বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। বিপদাপন্ন হচ্ছে। দায় কার!

 

বহুমাত্রিক দূষক থেকে, দূষণ থেকে এমনকি শোষক কিংবা দখলদার থেকে মিলছেনা মুক্তি।

বিচারের বাণী নিভৃতে, নিরবে, নিষ্ফল আহাজারি করছে।

 

যে কেউ নদী পার গেলে দেখতে পাবে, নদীটি আগের চেয়ে দূষিত, বিড়ম্বিত , সংকুচিত এবং সমস্যাসংকুল। লোকদেখানো প্রক্রিয়ায় এর চিকিৎসা চলছে । ড্রেজিং ড্রেজিং

 

ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলা, নিলিপ্ততা, উদাসীনতা আত্মপ্রবঞ্চনা এবং প্রতারণার শামিল। ঐতিহ্যকে কিংবা ঐশ্বর্যকে অবহেলা করে  চলা  যায়, বলা যায়, ছলা কলা করা যায় কিন্তু মর্যাদাবান জাতিতে রূপান্তরিত হওয়া যায় না। তাতে বিবেকের বন্দীত্ব প্রকাশ পায়। সামগ্রিক জাতিগত বিবেকের মুক্তি আসেনা।

 

জাতির যা কিছু ঐশ্বর্য, যা কিছু অহঙ্কার, তার পরিচর্যা করতে হয় সব সময়। ঐতিহ্যের অহংকার ও তার মননশীলতা পরিচর্যায় সামগ্রীক মনোযোগ, অত্যাবশ্যক।

ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য, প্রজন্মকে স্বপ্নবান করার জন্য, দেশপ্রেমিক করার জন্য, দেশবোধে জাগরিত করার জন্য ঐতিহ্যের চর্চা করতে হয়।

 

আমাদের জাতিসত্তা হাজার বছরের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ, স্বকীয় সত্বায় স্বীকৃত একটি সমৃদ্ধ জাতিসত্তা।

আমাদের জাতিসত্তার ভূ-প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক বিভিন্ন মাত্রার চড়াই- উৎরাই অতিক্রান্ত, তুলনামূলকভাবে পৃক্ত-পোক্ত একটি জাতিসত্তা। সম্পদে, সম্ভারে, স্বকীয়তায়, সার্বজনীনতায় এটির গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃত।

 

উপনিবেশিক অপশাসন-শোষণ, জাতিগত, ধর্মগত শোষণ ও প্রতারণা, পারিপার্শ্বিক ও আন্তর্জাতিক চক্রে- বক্রে দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে, চরম মূল্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম ব-দ্বীপীয় ভূখন্ড হিসেবে আমরা জাতির হারানো সত্তাকে ভৌগলিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।

হাজার বছরের গৌরবের এই আখ্যান আমাদের অতীত, বর্তমান এবং আগামী দিনগুলোকে সমৃদ্ধ রাখবে- এ প্রত্যাশা আমাদের অন্তরের।

আমাদের প্রজন্মের প্রত্যাশা, আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের নিরন্তর স্বপ্নবান করে রেখেছে। স্বপ্নছোঁয়া, স্বপ্নধরা, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা এখন আমাদের অন্যতম কর্ম ও ধর্ম হওয়া উচিত।

 

হাজার নদীর জল ধোয়া মায়াবী পরশমাখা দেশ এই বাংলাদেশ। নদী এর ঐতিহ্য, নদী এর ইতিহাস, নদী এর সাংস্কৃতিক সম্ভারের অবারিত ভান্ডার। ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে, সংস্কৃতি ও সামাজিকতার সাথে, আচার ও বিচারের সাথে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও বিসর্জনের সাথে নদীর সম্পৃক্ততা, আন্দোলন-সংগ্রামের অংশগ্রহণ এ ভূখন্ডের প্রতি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতি ফোঁটা জল এবং প্রতিটি প্রশ্বাসের বাতাসকে স্পর্শে, অনুভবে আবিষ্ট করে রেখেছে।

 

আমাদের হাজার ঐতিহ্যের অন্যতম সম্পদ- সম্ভার নদী মাতা, নদী ঐশ্বর্য। এ দেশের নদীর সাথে নারীর সম্পর্ক, খাল- বিল- হাওরের  সাথে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের সম্পর্ক, জীবনের সাথে জীবিকার সম্পর্ক, রাজনীতির সাথে পদ্মা- যমুনা -কর্ণফুলির সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধের সাথে নদীর জল ও জীবনের সম্পর্ক গর্বিত ইতিহাসের নিবিড় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ-অংশ।

 

গত শতকের মাঝামাঝি থেকে নদী  ঐতিহ্যকে আমরা বিলীন করে চলেছি। বিলুপ্তির তালিকায় রেখেছি। নদীতে ভাটিয়ালি গানের সুর লহরী, নদীর জলে বধূয়ার অবগাহন, নদীর বাদাম তোলা নৌকায় বনিক প্রেমিকের নিরুদ্দেশ যাত্রা কিংবা নদীতে বিরহীর ব্যথিত বিসর্জন আমাদের অতীতকে সমৃদ্ধ ও ভারাক্রান্ত করে রেখেছে। বর্তমানকে নির্লিপ্ত করে রেখেছে। ভবিষ্যতকে স্বপ্নহীন করে রেখেছে।

 

দক্ষিণ বাংলাদেশের কর্ণফুলি নদী একটি ঐতিহ্য। একটি ইতিহাস। একটি জীবন্ত সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার। একটি জীবন নদী। কর্ণফুলির ঐতিহ্য বহুমাত্রিক। দিগন্তজোড়া। একটিমাত্র নদীকে বাংলাদেশের অর্থকরী নদী বলা হয়। অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ বলা হয়। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড বলা হয়ে থাকে কর্ণফুলিকে।

 

এই নদীর উভয় পাশে বিস্তৃত সাগরপাড় নিয়ে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত, বিকশিত এবং ব্যাপকতা পাচ্ছে, তার গুরুত্ব কখনোই বিস্মৃত হওয়া যাবে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার সাথে চলতে গিয়ে কর্ণফুলীকে অবহেলা করা যাবে না। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে বারবার আমলাতান্ত্রিক অপকৌশল, অপব্যবসায়িক প্রক্রিয়া, আঞ্চলিক অপরাজনীতির উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা আমাদের হতাশ করে চলেছে।

 

যে নদীর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ কথা বলে, স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়। যে নদীর ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়। যে নদীর শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রতিবেশ-পরিবেশ ডেল্টা প্লানের স্বপ্নকে বিস্তৃত করে। যে নদী হাজার বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশকে তুলে ধরে, সেই প্রাকৃতিক সম্পদের আঁধার নদীর দেহের ক্রমাবনতি, স্বাস্থ্যের জীর্ণতা, তদারকির অন্যমনস্কতা, উদাসীনতা আমাদের হতাশ করে। প্রাণের নদী কর্ণফুলির প্রতি অবহেলা অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।

অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অর্থনীতির দ্রুত বর্ধনশীল একটি দেশ বাংলাদেশ।

 

এদেশে আমলাতান্ত্রিক সংকট আছে, রাজনৈতিক বাড়াবাড়ি আছে। দায়িত্বশীলদের অদূরদর্শিতা ও অজ্ঞতা আছে, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ববান ব্যক্তিদের স্বজনপ্রীতির দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড ছিল, আছে।

 

অন্য যেকোনো নদীর চেয়েও নিবিড় ভাবে এ দেশের অর্থনীতিতে, অর্থের ভিতকে প্রতিদিন মজবুত করে দেয় যে নদীটি, তার নাম কর্ণফুলি।

 

এমনি পথ ধরে দিনের পর দিন নদীটির স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো নদীটিতে প্রতিদিন- প্রতিরাত দখল ও দূষণের কর্মযজ্ঞ মঞ্চায়িত হচ্ছে। দখল-দূষণে নদীর অবস্থা জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হচ্ছে। স্বাস্থা হানি ঘটছে, পানির রং বদলাচ্ছে, বাস্তুতান্ত্রিকতা বিপদাপন্ন হয়ে পড়ছে। নদীকে আদালত পাড়া পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

 

দেশে আমলা আছে, মামলা আছে, তাদের রহস্যজনক নির্লিপ্ততার নিরবচ্ছিন্ন নীরবতা আছে, আশ্বাস আছে, প্রশ্বাস আছে ,সুখকর বাণী আছে, কৌশলগত কর্মতৎপরতার কথা আছে, ড্রেজিঙয়ের নামে সুরসুরি আছে, অনৈতিক বাণিজ্য আছে, দখলদারিত্ব আছে। সবকিছু ছাপিয়ে দিনে দিনে নদীটি জীর্ণ হচ্ছে, শীর্ণ হচ্ছে, বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। বিপদাপন্ন হচ্ছে। দায় কার!

বহুমাত্রিক দূষক থেকে, দূষণ থেকে এমনকি শোষক কিংবা দখলদার থেকে মিলছেনা মুক্তি।

বিচারের বাণী নিভৃতে, নিরবে, নিষ্ফল আহাজারি করছে।

যে কেউ নদী পার গেলে দেখতে পাবে, নদীটি আগের চেয়ে দূষিত, বিড়ম্বিত , সংকুচিত এবং সমস্যাসংকুল। লোকদেখানো প্রক্রিয়ায় এর চিকিৎসা চলছে । ড্রেজিং ড্রেজিং খেলা চলছে।  ব্যক্তিবিশেষের অর্থ আয়ের  মাধ্যম হিসেবে নদীটি ভাড়া খাটছে, দেহ দিয়ে, সম্পদ দিয়ে। অধিকন্তু প্রতিবছরের অপ্রাসঙ্গিক জলাবদ্ধতার জল এই নদীটিকে বিড়ম্বিত করে, মুমূর্ষ করছে।

 

পরিবেশ জ্ঞানসমৃদ্ধ ড্রেজিং হচ্ছে না। দেশের আমলাতন্ত্র, রাজনীতির উদাসীনতা দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি বর্তমানের অন্তর্র্বতী সরকারেও তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষণীয়। নদীর স্বাস্থ্য এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোন রকম ধারনা, তাড়ণা না নিয়ে নদীটিকে নিয়ে কথামালার সস্তা রাজনীতি চলছে।

 

সংশ্লিষ্ট অনেকে প্রচলিত অপ্রচলিত কৌশলের ফাঁদে ফেলে নদীটিকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে।  তদারককারী, দাযত্বিশীল  ব্যক্তিদের নির্লিপ্ততায়, চরম উদাসীনতায়, একদিন হয়তো মহাবিপর্যয় ঘটবে।

সব স্বপ্নের সমাধি রচিত হবে। আমরা কি সেদিনের অপেক্ষায়?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমাদের উত্তরাধিকারের রাজনীতির দাযত্বিবোধ আমাদের পরিবেশ বোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তালে চলছে না।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যয়ের আলোয় পথে চলি, চেতনার শক্তিতে কথা বলি, জাতিসত্তার বিসর্জনের অমিত শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখি।

মহান স্বাধীনতার ৫৪তম বছর অতিক্রান্ত করে এসে জাতীয় অনেক কিছু অর্জন হলেও, বাংলাদেশের জাতীয় কোনো নদী নেই। এটিকে নির্লিপ্ত অথবা উদাসীনতা বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত, লাখো শহীদের রক্তের মিশেল দেয়া দেশ, মাটি, মানুষ, উত্তরাধিকার  যেখানে সজীব, সেদেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটিকে জাতীয় সম্মান না দেয়া, অদূরদর্শিতা, অজ্ঞতা , নির্লিপ্ততা এবং ইতিহাসকে অবমাননা করার সমতুল্য।  এ বিবেচনায় অস্তিত্বের নদী কর্ণফুলীকে জাতীয় নদী ঘোষণা করে এর প্রতি সুবিচার করা যায়।

অর্থকরী এই নদীটিকে জাতীয় নদী ঘোষণা করার বহু বিবেচ্য, যুক্তি ও দায় আছে। সে সবের কতিপয় নিম্ন লিখিতভাবে জাতীয় বিবেচনার জন্য তুলে ধরা যায় :

 

১. কর্ণফুলি বাংলাদেশের অর্থকরী নদী। এ নদী জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে।

২. কর্ণফুলি নদীর উপরে যে বন্দর প্রতিষ্ঠা তাকে সমুদ্র বন্দর বলা হলেও, আসলে এটি কর্ণফুলি নদী বন্দর।  বন্দর এবং কাস্টমস মিলে জাতীয় অর্থনীতিতে ৩৪ ভাগ অবদান রাখে এই নদী।

৩. এই নদীকেন্দ্রিক আয় থেকে  বছরে ৩৫০০  কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব অর্জিত হয়।

৪. দেশের বহির্বাণিজ্য ৯২ ভাগ এবং আন্তঃবাণিজ্যের  শতকরা ৯৮ ভাগ এই নদীর মাধ্যমে অর্জিত হয়।

৫. নদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত এই বন্দরটি বিশ্বের রেঙ্কিংয়ে ৬৪ তম।

৬. বাংলাদেশ অংশে দীর্ঘ ১৮৭ কিলোমিটারের পথপরিক্রমায় এই নদীর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে সতের নৃগোষ্ঠীর চলমান সামাজিক, সংস্কৃতিক ধর্মীয় ঐতিহ্য।

৭. সংস্কৃতিতে, সামাজিকতায়, অর্থনীতিতে, পরিবেশ প্রতিবেশে এই নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে।

৮. কর্ণফুলি নদীর বিস্তৃত মোহনা অত্যন্ত উর্বর। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জীববৈচিত্র্য ফ্লোরা, ফাওনা, প্লাংটন, বেনথোসে সমৃদ্ধ অতি উর্বর একটি অঞ্চল এ নদীর মোহনা।

৯. দেশের একমাত্র নদী যার সাথে এই অঞ্চলের ১৭টি শিল্পজোন এবং প্রায় সাড়ে তিনশত ছোট-বড় শিল্পের সংযুক্তি-সম্প্রৃক্তি আছে।

১০. উত্তর পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাম্পান সংস্কৃতির নদী কর্ণফুলি।

১১. নদীটিকে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড এবং প্রাণ প্রবাহ বলা হয়। বলা হয় দেশের অর্থকরী নদী।

১২. এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে কর্ণফুলি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।

১৩. দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যার তলদেশ দিয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্যের টানেল রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

১৪. এই নদীর সাথে সম্পৃক্ত- সংশ্লিষ্ট পাঁচটি নদীকে পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে এই কর্ণফুলি।

১৫. ঐতিহ্যবাহী হালদা নদীকে পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে এই কর্ণফুলি।

১৬. কর্ণফুলি নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে দুইশত ত্রিশ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় প্রায় শতবর্ষ যাবত।

১৭. এই নদীর বাঁধের অপর অংশে  কাপ্তাই লেক থেকে বছরে ১৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ সংগ্রহ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

১৮. সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে এ নদীর স্রোত, নিবিড়তা, জলপ্রবাহ সম্পৃক্ততা অনন্য, অসাধারণ। ইতিহাসের বিখ্যাত অপারেশন জ্যাকপট  সম্পন্ন হয়েছিল এ নদীর বুকে,  এর উষ্ণ জলপ্রবাহে; যা বর্বর দখলদার পাকিস্থানীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল এই বিরক্তপূর্ণ অপারেশন।

 

এভাবে এ নদীর গুরুত্ব বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যায় না।

এসব ঐতিহ্যিক, ঐতিহাসিক উপাদান একটি ভূখণ্ডের, একটি জাতিসত্তার অহংকারকে সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত করে, বহন করে জন্ম থেকে জন্মান্তরে। এই অহংকার আমাদের চেতনার অহংকার, মুক্তিযুদ্ধের অহংকার, জাতিসত্তার অহংকার।

 

দেশের আর কোন নদী এত বেশি ইতিহাস মিশ্রিত, ইতিহাস সংশ্লিষ্ট, ইতিহাস আশ্রিত, ঐতিহ্য-ঐশ্বর্য বহনকারী নয়। জনগণের দাবি, কর্ণফুলিকে জাতীয় নদী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।

আগেই বলা হয়েছে, আমাদের জাতিগত ঐতিহ্য, চেতনা, ঐশ্বর্য প্রত্যয়দীপ্ত পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান বাহন। এসব ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করে আমরা শূন্য হাতে, ভিন্ন পথে ভ্রান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব না।

অন্য সম্পদের সাথে আমাদের নদী সম্পদকে সুরক্ষিত করতে হবে। নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে হবে। তারুণ্যের মাঝে নদী সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী আখ্যান, তার প্রকাশ, বিকাশ ও বিস্তার ঘটাতে হবে। এসবের জন্যই কর্ণফুলি নদীকে জাতীয় নদী ঘোষণার পবিত্র কাজটি দ্রুত সম্পাদন করতে হবে।

 

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি, মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, কর্ণফুলি নদী গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত।

লাহোর প্রস্তাব বিকৃতির কারণে একাত্তর অনিবার্য হয়ে ওঠে

হোসাইন আনোয়ার ২৩ মার্চ ১৯৪০। পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে ২৩ মার্চের ইতিহাস। একটি ভুল ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয় সমগ্র পাকিস্তানে।

ইফতার পার্টি নয়, সেদিন যেন তারার হাট বসেছিল পিটস্টপে

রুহু রুহেল সমাজ ও সংস্কৃতির বড় পরিচয় সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে সামনের পথে অবিরাম এগিয়ে চলা। সাম্য সুন্দর স্বদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন বিবিধ মত ও পথকে

নভোচারী সুনিতা মহাকাশে ফুল ফোটায় পৃথিবীতে নারীর পায়ে শেকল পরায় কে?

প্রদীপ খাস্তগীর চমৎকার একটি সফল মহাকাশ সফর শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে। গত বছরের ৬ জুন মাত্র ৮ দিনের

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক

মানুষ ও মঙ্গল মানব

সরকার হুমায়ুন দুজন মহাকাশচারী- একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গেলেন। তারা নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেন। সেখানে তাদেরকে অতিথি হিসেবে মঙ্গলবাসীরা সাদরে