খুকীর স্বাধীনতা
আ ন ম ইলিয়াছ
নয় এ খুকী চঞ্চল অধিক চৌদ্দ বুবুর ফড়িং মন,
রাহেলা বুয়া উঠোন ঝাটে পুতুল ভাঙে সারাক্ষণ ।
পেঁচার ডাকে ভয়ে রাতে খুকীর নেই চোখে ঘুম,
বুবুর চালে ফন্দি করেও পায়না মায়ের বুকের উম।
করতে গেলে ইচ্ছামতো বাধা আসে সবখানে,
দাদীর মতো স্বাধীনভাবে করতে কিছু মন টানে।
বাবার শাসন কথায় বারণ মায়ের শাসন বকা ঝকা,
বুবু টানে চুলের বেণি চাচার শাসন আদর মাখা।
এমন হতো দাদার মতো খুকি কারো নয় অধীন,
সবাই করে সমীহ তারে বাড়ি জুড়ে সে স্বাধীন।
পুতুল খেলায় যেমন করে শাসন করতে গম্ভীর মুখ,
ভাবতে খুকীর মধুর লাগে ছোট্ট মনে জাগে সুখ।
অরণ্য ঘেরা ঘরের মাঝে আছে মানুষ এ ক’জন,
গোয়াল ঘরে গাই বাছুরে জাবর কাটে সারাক্ষণ।
পাতার ফাঁকে দোয়েলের শিস,ঘুঘু ডাকে ভর দুপুরে,
শুকনো ডালে মাছরাঙা পানকৌড়ির ডুব যে পুকুরে।
ঘরের চালায় চড়ুই বাসা বন্ধ চোখের ছা নড়ে,
মায়ের পরশ কাছে পেলে খাবার খেতে হা করে।
খুকীর পুতুল উঠোন জুড়ে বুবুর পুতুল ঘরের সাজ,
বাবা মায়ের আদর সোহাগ সুখ যেন চারিপাশ।
কয়দিন ধরে আলোচনায় বুবুর বিয়ে ঠিক হলো,
বিয়ের আগে বুবুর পুতুল খুকী পাবে সবগুলো।
ছোট চাচা ঢাকায় পড়েন আনন্দে থাকে সবসময়,
আসলে পরে মাতিয়ে রাখেন আনন্দে হাসে বাড়িময়।
হঠাৎ করে খবর আসে,চাচা নাকি যুদ্ধে লড়ে,
গ্রামের মোড়ল বারে বারে বাড়ি এসে খোঁজ করে।
মায়ের উধাও মুখের হাসি গোমড়া মুখো বাবার রুপ,
বুবুর কান্না নীরব ঘরে সবাই যেন জিন্দা শব।
মোড়ল আসে দুপুর শেষে সাথে লোক যুদ্ধের সাজে,
ঝড়ের বেগে গুলি ছুড়ে বাবা – মায়ের বুকের মাঝে।
দাদা -দাদী মূর্ছা ঘরে শখের পুতুল বুটের তলায়,
মোড়ল দিলেন ঘর দুয়ারে নিজের হাতে আগুন ধরায়।
বুবু যেন বাঘের মুখের হরিণ শাবক তাদের কাছে,
কোলে করে হায়েনারা নিলেন তুলে গাড়ির মাঝে।
ঘর পোড়া কালো ধোঁয়া শকুন উড়ে ছেয়ে আকাশ,
খুকী স্বাধীন একা কাঁদে বাবা মায়ের লাশের পাশ।