এখন সময়:রাত ৩:০৮- আজ: বৃহস্পতিবার-২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:রাত ৩:০৮- আজ: বৃহস্পতিবার
২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

চার্লস সিমিকের নোটবুক থেকে অনুভূতির অনু-কণিকা

ভাষান্তর: মোশতাক আহমদ

 

চার্লস সিমিকের জন্ম তদানীন্তন যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেডে, ১৯৩৮ সালে। কৈশোরে সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি রচনা করেছেন অজস্র কবিতা, গদ্যরচনা, অনুবাদকর্ম। পেয়েছেন পুলিৎজার পুরষ্কার, ওয়ালেস স্টিভেন্স সম্মাননা, ম্যাকআর্থার ফেলোশিপ; হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পোয়েট লরিয়েট। নিয়মিত লিখতেন দা নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকসে, দা প্যারিস রিভিউয়ের কবিতা সম্পাদক ছিলেন। মূল রচনাস্রোতের পাশাপাশি নোটবুকে প্রচুর মননশীল ভুক্তি রেখে গেছেন, যাতে কবিমনের খোলামেলা প্রকাশ আছে- এতে আছে বুদ্ধিদীপ্ত, কৌতূহলী সব মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ যা তাঁর পঠনপাঠন ও  অভিজ্ঞতার নির্যাস। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই মৌলিক ও মহৎ কবির মৃত্যু হয়। এখানে মূলত তাঁর দা মনস্টার লাভস হিস ল্যাবিরিন্থ শীর্ষক প্রকাশিত নোটবই এর পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া আরো কিছু ভুক্তির ভাষান্তর করা হল।

 

১. যে কবিতাটি আমি লিখতে চাই সেটা আসলে অসম্ভব। আমি একটি জলে ভাসমান পাথরের কাহিনি লিখতে চেয়েছি।

 

 

২. ভবিষ্যৎ গবেষকদের প্রতি অনুরোধ :

বহুল প্রচারিত দৈনিকের পুরনো ফাইল ঘেঁটে পড়বেন না; তার বদলে কবিদের লেখা পড়ুন।

 

৩. কবিতার ‘ফর্ম’: যথার্থ ‘টাইমিং’ ছাড়া আর কিছু না। শব্দ আর ছবিকে অর্থবহ করে তুলতে তাদের মাঝখানে ঠিক কতটুকু নৈঃশব্দ্যের প্রয়োজন সেটা বিচার করতে জানা।

স্ট্যান্ড- আপ কমেডিয়ানরা এই বিষয়টি খুব ভালো করে জানে!

 

৪. পরাবাস্তবতার বিরুদ্ধে আমার প্রধান অভিযোগ :

পুজা করবে কল্পনার, অথচ সামনে মূর্তি বসিয়ে রাখবে প্রজ্ঞার।

 

৫. হতে পারে, কবিতাও জ্ঞান লাভের একটা জায়গা। কিন্তু বেশিরভাগ কবিতাই যা বলে থাকে তা আমরা আগে থেকেই জানি।

 

৬. দেসদিমোনা, জুলিয়েট, ওফেলিয়া, লেডি ম্যাকবেথ আর আমি মিলে এই শহরটাকে লাল রঙে আঁকছি!

 

৭. সত্য কখনো চোখে দেখতে পাওয়া যায়,

সত্য কখনোবা কানে শুনতে পাওয়া যায়।

আমাকে যদি বেছে নিতে বলো তাহলে আমি চোখে দেখতে পাওয়া নীরব সত্যটুকুর পক্ষপাতি হব।

 

৮. তিন প্রকারের কবি আছে:

যারা কোনো চিন্তাভাবনা না করেই লিখে, যারা চিন্তা করতে করতে লিখে আর যারা আগে চিন্তা করে নিয়ে তারপরে লিখতে শুরু করে।

 

৯. দর্শনের একজন চতুর অধ্যাপক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কবিরা আসলে কী করতে চায়?”

উত্তরে বললাম, “কবিরা সেসব বিষয়ে জানতে চায়, যেসব বিষয়কে আদৌ শব্দে ধারন করা যায় না।”

 

১০. দুই পদ্ধতিতে সৃষ্টি করা যায়:

যা আগে থেকেই আছে সেটাকে উন্মোচন করা; অথবা, সম্পূর্ণ নতুন কিছু গড়া।

আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি দুটি পদ্ধতিতেই বিশ্বাস করি।

 

১১. অধিকাংশ কবিই নিজের ব্যবহৃত রূপক নিজেই বুঝেন না।

 

১২. কবিতা আর দর্শনের মধ্যে দ্বৈরথ :

ওহে খোকা, এটি কোনো ট্রাজেডি নয়, বিলক্ষণ এক মহৎ কমেডি।

 

১৩. “কবিতার সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ‘কাব্যিকতা’।”

এই কথাটি কোন মনীষী বলেছেন তা আমি ভুলে গেছি!

 

১৪. বর্ণনাধর্মী কবিদের প্রতি পাউন্ড যা বলেছিলেন তা দিয়ে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? :

উন্নত মানের গদ্যে যা আগেই বর্ণনা করা আছে, তা আর নতুন করে মাঝারি মানের পদ্যে বলতে যেও না।

 

১৫. লোক কবিতায় আপনি নিশ্চিতভাবে একটা আবহাওয়া রিপোর্ট পাবেন; যেমন, সূর্য ঝলমলে দিন, বাতাস বয়ে যায় আনমনা, শীতের সকালে কুয়াশার চাদর ইত্যাদি।

লোক কবি জানেন : ব্যক্তির সাথে মহাবিশ্বের তাৎক্ষণিক সংযোগ স্থাপনই বিচক্ষণতার কাজ।

 

১৬. সৃজনশীলতা হচ্ছে এমন কিছু সৃষ্টি করা আগে যার অস্তিত্ব ছিল না; অথচ সৃষ্টির পরে মনে হবে সেটি চিরকাল ধরেই ছিল।

 

১৭. যা কখনো ধারনাও করা যায়নি, অথচ যার জন্য সবারই অপেক্ষা, এবং জন্মমাত্র নিজের জাত চিনিয়ে দিতে পারে নতুন কবিতার এমনই প্রকৃতি। এ যেনবা যীশুর পুনরাবির্ভাব।

 

১৮. রূপকই প্রমাণ করে দেয় : স্বর্গ আর নরকের অস্তিত্ব আছে

 

১৯. আমার সর্বশেষ আবিষ্কার : দুটো ডিম পাশাপাশি রাখলে দেখা যায় এমনকি তাদের আকার বা গঠনও এক নয়।

২০. কবিতাকে সবাই নিজের মতো ভাষান্তরিত করে দেখতে চায়, কেবল কবি বাদে।

 

২১. কবিতা হচ্ছে সিঁদেল চোরের হাতে ধরা মাংসের টুকরা, যেটা দিয়ে সে গৃহস্থের কুকুরকে বিভ্রান্ত করে।

 

২২. সবাই যখন জেগে থাকে, সে ঘুমায়; সবাই যখন ঘুমায় তখন সে জেগে থাকে; আর কেউ নয়, সে হচ্ছে কবি।

 

২৩. সীসাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কেন বুলেটের ছাঁচে ঢুকে পড়ছ? তোমার কি আলকেমিদের ভবিষ্যৎবাণী মনে নাই ? তুমি কি  স্বর্ণ হবার আশা ছড়েই দিয়েছ? কেউ উত্তর দেয় না। সবাই গভীর নিদ্রায়।

সীসার পারমাণবিক সংখ্যা ৮২

স্বর্ণের পারমাণবিক সংখ্যা ৭৯

 

২৪. ইনসমনিয়া হচ্ছে রাত্রিচর ট্রাভেল এজেন্সি যারা দূরের পর্যটনের বিজ্ঞাপন দেখাতে থাকে ।

২৫. আমার খালি বোতলটার ভিতরে আমি একটা বাতিঘর বানাচ্ছিলাম, অন্যেরা ব্যস্ত ছিল জাহাজ নির্মাণে।

 

২৬. আমি যদি কোনো কিছুতে বিশ্বাস করে থাকি তাহলে সেটা হচ্ছে আত্মার ভেতরের গভীর রাত্রি। বিস্মিত হওয়া আমার ধর্ম, রহস্য আমার উপাসনালয়।

 

২৭. ভুলো মনের লোকেরা যেভাবে তাঁদের ছাতা বা দস্তানা ফেলে যায়, আমি সেভাবেই আমার নিজের টুকরোগুলোকে নানা জায়গায় ফেলে আসি, অনেক রকম দুর্ভাগ্য বিতরণ করতে করতে সেগুলোর রং খুবই দুঃখভারাক্রান্ত।

 

২৮. ওদের ডিনারের প্লেটে মেঘের জোগান পেতে হলে আকাশকে ভেঙ্গে পড়তে হবে।

 

২৯. সে লিখে কেননা অন্যের ব্যাকুলতা তাকে ছুঁয়েছে আর চিরদিন অপরকে না ছুঁতে পারার ব্যর্থতাগুলোও তাকে ছুঁয়ে যায়।

 

৩০. নীরবতাই একমাত্র ভাষা, যে ভাষায় ঈশ্বর কথা বলেন।

 

৩১. কবিতা : অন্ধকার পথের শুরুতে রেখে দেওয়া তিনখানা বেমানান জুতো।

 

৩২. যখন কেউ আমাকে জিগ্যেস করে কোথায় সুখ পাওয়া যায়, আমি বলি আগে রান্না করতে শিখো।

 

৩৩. তারাগুলো সবজান্তা, তাই আমরা ওদের মনের কথা বুঝতে চাই।

ওরা কত দূরে, তবু ভাবি খোলা আকাশের নিচে ফিসফিস করে বললেও ওরা শুনবে।

 

 

৩৪. কবিতা হচ্ছে নিরবতার অনাথ শিশু।

 

৩৫. বিজ্ঞপ্তি।।

কবিতাগুলোকে ঝটপট সেলাই করে একটা কম্বল বানিয়ে দিতে দিতে পারবে এমন একটা সুঁই আবশ্যক।

 

৩৬. একমাত্র কবিতাই আমাদের সাথে অন্যের দূরত্বগুলো মেপে দেখাতে পারে।

 

৩৭. বিনির্মানবাদীরা ভাষা থেকে অভিজ্ঞতার বিচ্ছেদ ঘটাতে চান; আমার মনে পড়ে যায় সেই  মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েদের যারা নিজের সন্তানদেরকে রাস্তার ছেলেমেয়েদের সাথে খেলা করতে দিতে চাইতেন না।

 

৩৮. গৌণ কবিদের সময় আসছে। বিদায় হুইটম্যান, ফ্রস্ট, ডিকিনসন। তাদেরকে স্বাগত জানাই,  যাদের কবিখ্যাতি ঘনিষ্ট কিছু পরিবার, এক দুই জন ঘনিষ্ট বন্ধুর বাইরে যাবে না। নিদ্রাতুর বাচ্চারা কাঠের আলমারি খুলে পুরনো কবিতা খোঁজার শব্দে বিরক্ত হবে; কবিতা খুঁজতে একটু বেশিই ঘাটাঘাটি করতে হচ্ছে কেননা কবির স্ত্রী সেগুলো গত গ্রীষ্মে ঘর সাফাইয়ের সময় ফেলে দিয়েছে কীনা সেই সন্দেহও অমূলক নয়। বন্ধুদের সাথে ডিনারের পর এক জগ লাল মদ নিয়ে বসবে তারা।

অন্ধকারে বাইরে তাকিয়ে কেউ একজন বলবে, মনে হয় তুষারপাত শুরু হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি করো। কবি পড়তে শুরু করবে মুখে রক্তিমাভা নিয়ে, নাটুকে ভঙ্গিতে; সে এক বিশাল কবিতা যার শেষ স্তবকটা হারিয়ে গেছে কীনা সেকথা জানা যাবে পড়তে পড়তে।

 

৩৯. যখন আপনি একাকী দাবা খেলছেন তখন প্রতিবারই আপনার দান।

 

৪০. নিদ্রাহীনতা হচ্ছে অধিবিদ্যার মতো; চলতে থাকুক।

 

৪১. আরো অনেকের মতো আমিও বেড়ে উঠেছি সেই সময়ে যখন মুক্তির কথা প্রচার করা হত আর দাসের শিবির গড়ে তোলা হতো।

 

৪২. একালের সাহিত্য তত্ত্বগুলোর অভিলাস হচ্ছে কল্পনারহিত সাহিত্য সৃষ্টি করা।

 

৪৩. রুশ মানুষখেকোরা কি বৃটিশদের চাইতে খারাপ? বৃটিশরা শুধু পা খায়, কিন্তু রুশিরা আত্মাসহ খায়। আমি আন্না আলেকজান্দ্রানোভাকে বললাম, কিন্তু উল্টো সে আমার আত্মাকেই ভক্ষণ করতে শুরু করল!

 

৪৪. প্রিয় ফ্রেডরিখ, এই পৃথিবীটা এখনো মিথ্যা, নৃশংসতা আর সৌন্দর্যে ভরা

স্মৃতি হচ্ছে বিছানার পাশে সারারাত জেগে থাকা ট্যাটু শিল্পী।

 

৪৬. ইতিহাস অচ্ছে একটা রান্নার বই। একনায়কেরা এখানে প্রধান শেফ। দার্শনিকেরা মেনুবই লিখেন। যাজকেরা ওয়েটার। সামরিক বাহিনির লোকেরা দ্বার রক্ষক। আর যেটাকে গানের সুর ভেসে আসা মনে করছেন সেটা হচ্ছে কিচেনে কবিদের বাসন মাজার শব্দ।

 

৪৭. আমি ঈশ্বরকে বিরক্ত করার জন্য লিখি। মৃত্যুকে হাসানোর জন্য লিখি। আমি লিখি কেননা এখনো ভালোভাবে কাজটা সেরে উঠতে পারিনি।

 

৪৮. একটা মাছির পায়ে জুতো পরানো সহজ কাজ নয়। রুশ প্রবাদ, কিন্তু ওরা কবিদের কথা ভুলে গিয়েছিল।

 

৪৯. নিতশে বলেছিলেন, “ দার্শনিকদের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয় তাঁদের হাসির উচ্চতা দিয়ে।“ কিন্তু তিনি নিজেই হাসতে জানতেন না।

 

৫০. কবিতার অভিপ্রায় হচ্ছে যারা আগে কবিতা বুঝত না, কবিতা বিষয়ে তাদের পূর্ব ধারনার কাছেই ফিরে যাওয়া।

 

৫১. শেষকৃত্যের গম্ভীর আনুষ্ঠানিকতায় নিরবতা ভেঙে দেয়া অপ্রতিরোধ্য বকবক করনেওয়ালা লোকটির মতোই কবি বলে যান। লোকজন তাকে কনুই দিয়ে ঠেলা দিয়ে কথা না বলতে নিষেধ করে আর সে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায়; মেনে নেয় যে এটি কথা বলবার উপযুক্ত জায়গা না। কিছুক্ষণ পর সে যথারীতি বিড়বিড় করতে থাকে।

 

৫২. আহ, মেইল বক্সে আনোখা প্রাপকের উদ্দেশে লেখা প্রেমপত্রটির সাথে আটকা পড়ে যাওয়াটা কতই না মধুর, যে পত্রে আছে প্রেম নিবেদন আর হাজারো চুম্বনের বুদবুদ।

 

৫৩. আমি শুনতে পছন্দ করি বিষন্ন সুরে বাজানো কোনো আনন্দের সংগীত।

 

৫৪. কবিতা বিষয়ক যে কোনো প্রতিরোধই এক ধরণের মূর্খতা।

 

৫৫. আমেরিকান সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। যখন কাউবয়রা ঘোড়ার জিনে বসে এমিলি ডিকিনসনের কবিতা পড়ত আর মার্চপাস্টরত সৈনিকদের ওভারকোটের পকেটে থাকত ওয়ালেস স্টিভেন্সের কবিতার বই।

 

৫৬. শব্দ দিয়ে যে কথা বলতে পারি না, আলোকচিত্র সেই কথাই বলে।

 

৫৭. কে যেন বলেছে, “ঈশ্বরের যদি পান করা এতই অপছন্দ তাহলে তিনি মদকে এত উত্তম করে বানিয়েছেন কেন?”

 

৫৮. প্রতিটি জাতিই সেই সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায়, যা তারা অন্য জাতির প্রতি করেছে ।

 

৫৯. আমাদের ধনীরা চোরদের চাইতে ভাল চৌর্যবৃত্তি জানে।

 

৬০. অনু কবিতা। ছোট্ট করে বলো, কিন্তু সবকিছুই বলো!

 

৬১.  বিড়ালের মতোই, এ হৃদয় অন্ধকারে বহুদূর দেখতে পায়।

 

৬২. কল্পনার একটা পর্যায়ে এসে মানুষ বুঝতে পারে ‘অনন্ত’ বলতে কী বুঝায়!

 

৬৩. আমি আমার দুঃখগুলো দিয়ে একটা কাগজের এরোপ্লেন বানিয়েছিলাম। সেটা উড়ে গিয়ে তোমার চমৎকার কপালে ভুপাতিত হল!

 

৬৪. স্বপ্ন দেখলাম, ঈশ্বর তার সৃষ্টিকর্মের ব্লার্ব লিখতে বলছেন আমাকে!

 

৬৫.  পার্কের সবুজ ঘাসে এক অজানা প্রেমিক জুটির বসে থাকার ছাপ রয়ে গেছে।

 

৬৬. আমাদেরও যে একটি মন আছে, পাখিরা গান গেয়ে সেটা মনে করিয়ে দেয়।

 

৬৭. আমি দেখে এলাম, চিড়িয়াখানার প্রাণীরাও আমার মতোই একঘেয়ে জীবন নিয়ে হতাশ।

 

৬৮.  আমি আশা করি, কবির চেয়ে কবিতাই সুন্দরভাবে প্রকাশিত হবে।

 

৬৯. প্রেসিডেন্ট বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঐ দেশ আমাদেরকে ভালবাসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঐ দেশে বোমা মেরে চলব।

 

৭০. একটা প্রেমের কবিতা সংকলন ভায়াগ্রাকে বেকার করে রাখতে পারে।

 

৭১. ফকনার কোথাও কবিতার সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছিলেন, কবিতা যেনবা একটি পিনের উপর ভেসে থাকা মানব ইতিহাসের সমগ্র হৃৎপিণ্ড।

 

৭২. যে কোন সাহিত্যচর্চার গোপন অভিলাস থাকে ঈশ্বর ও শয়তানের নজরে পড়া।

 

৭৩. ঈশ্বর কবিতাকে ধন্যবাদ দিবেন কারণ ওদের জন্যেই তিনি স্বর্গে।

 

৭৪. কবিতা অনেকটা ব্যাংক ডাকাতির মতো; অনুপ্রবেশ করো, সবার মনোযোগ আকর্ষণ করো, অর্থ কড়ি তুলে নাও, চম্পট দাও!

 

৭৫. আজকের দিনের বিভীষিকাগুলোই ভবিষ্যতে আমাদেরকে নস্টালজিয়ায় ভোগাবে।

 

৭৬. সে ছিল মনোবিশ্লেষণের ওস্তাদ- একটা সদ্যজ্বলা দিয়াশলাই অন্ধকারে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কী ভাবছে সেটাও সে ধরতে পারত।

৭৭. গাছগুলো নিয়ে বাতাস একঘেয়েমিতে ভোগে; পাথরগুলো নিয়ে সমুদ্র, শিশুরা স্কুল নিয়ে আর বাবা-মায়েরা উপসনালয় নিয়ে একঘেয়েমিতে ভোগে।

 

৭৮. সিনেমা শেষ হয়ে গেলে শাদা পর্দাটা কী ভাবছে?

 

৭৯. দুর্ভাগ্যের নিলাম ঘরে দর ডাকার লোকের অভাব হয় না।

 

৮০. মনের সুড়ঙ্গ শহরে আমি যে কতবার হারিয়ে গেলাম!

 

৮১. বিষয়বস্তু যতটা সহজ, তার স্বপ্নটা ততো বিশাল।

 

৮২.  মনোযোগী চোখ এক সময়ে ঠিকই শুনতে আরম্ভ করে।

 

৮৩. দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে থাকলে যে কোনো বস্তুই আয়নার কাজ করতে শুরু করে।

 

৮৪.  চারপাশ এত নিরব যে হোমারের কানে আসা এজিয়ান সাগরের ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।

 

৮৫. প্রকৃতিও একঘেয়েমিতে ভোগে। তাইতো সে ভূমিকম্প ঘটায়, হারিকেনের তান্ডব হানে, আগ্নেয়গিরির মুখ খুলে দেয় আর পুরনোদেরকে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে যায়।

 

৮৬. শীতের রাত, ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। এক অনিকেত নারী পথের কোনে বসে ঈশ্বরের সাথে কথা বলছে। ঈশ্বর বরাবরের মতোই কিছুই শুনছেন না।

 

৮৭. আরেকটি শতাব্দী এসে গেল, যেখানে গভীর চিন্তাশীল মানুষ নিজেকে একাকী ও বাকরুদ্ধ দেখতে পাচ্ছেন।

 

৮৮. যেখানে আইনের কঠোর মানদণ্ড মেনে চলাই আদর্শ, সেখানে কবিতার স্থান নাই।

 

৮৯. কোলাজ হচ্ছে মরমীদের মাধ্যম।

 

৯০. ফ্রেডরিক জেমসন বলেছেন ভবিষ্যৎ হবে উত্তর- ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী। উনি বলেননি সেটা কী স্ট্যালিনের নাকি হিটলারের নাকি মাওয়ের মডেলে হবে।

 

৯১. একজন কবি হিসেবে বিশ্বের অধীশ্বর নিরাশার ধোঁয়াশায় ঘেরা

 

৯২. অনেক অভিজ্ঞতা ভাষাকে এড়িয়ে যেতে দক্ষ করে তুলে। ভাষা হচ্ছে বিষ্ময় আর সচেতনা থেকে পতনের নাম।

 

৯৩. গদ্য কবিতা হচ্ছে স্ফিংক্সের মূর্তির মতো – পুরাণে উল্লিখিত নারীর মুখ ও সিংহের দেহবিশিষ্ট ডানাওয়ালা দানব। অর্থ্যাত গদ্য আর পদ্যের সমন্বয়ে গড়া বকচ্ছপ দানো।

 

৯৪.  গতানুগতিকতাকে রক্ষা করাই লিরিক কবিতার কাজ।

 

৯৫. শুরুতে আমাদের মাথায় ছিল হুইটম্যান, ডিকিনসন আর পো। হুইটম্যান আমাদের হোমার, ডিকিনসন আমাদের স্যাফো। তাহলে পো’র জায়গাটা কোথায়?

 

৯৬. আমার এক ছাত্র জেফ ম্যাকরে বলেছে, জীবন এক সুন্দর বিষাদের নাম।

 

৯৭. রাজরাজড়াদের আমলে যুদ্ধের ফলাফল বিষয়ে ভুল ভবিষ্যতবাণী করার জন্য জনসমক্ষে উপদেষ্টা ও মন্ত্রীদের সাজা হত, প্রকাশ্যে ফাঁসি হত। আমাদের যুগে তাঁরাই ‘বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে টেলিভিশনে কথা বলেন।

 

৯৮. বলকানের অর্থনীতির প্রধান উৎস হচ্ছে এতিম কারখানা আর বলির পাঁঠা খামার।

 

৯৯. স্বপ্ন: আমি সেই অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে বসে আগুন বিষয়ক একটা বই পড়ছি।

 

১০০. কবিতার কাছ থেকে দুটো দিনের কৃপা নিয়ে আমি বেঁচে আছি।

 

১০১. দেরিদা যদি ঠিক বলে থাকেন তাহলে কবিরা এতকাল অন্ধকারে হুইশেল বাজিয়েছে।

 

মোশতাক আহমদ, চিকিৎসাবিদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও গবেষক

কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণপুরুষ

আ.ম.ম. মামুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম মৌলিক কবি। রবীন্দ্র অনুবর্তী একগুচ্ছ কবির একজন তিনি নন। তিনি অন্যরকম স্বতন্ত্র। শিল্প সাধনায়,

আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ 

প্রবীর বিকাশ সরকার ১৯২৯ সালে বহির্বিশ্বে অবস্থানকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে ঘটেছে যুগপৎ দুঃখজনক এবং আনন্দদায়ক কিছু ঘটনা। যা নিয়ে বাংলায় সামান্যই আলোচনা হয়েছে, অথবা

হিংস্র ও বুনো অপশক্তির বিনাশ চাই

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা বড়ই অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এই ঋতুটির তেজ আগে কখনও এত তীব্র ছিলো না। ইতোমধ্যেই