চলতি মাসের শেষের দিকে ও আগামী মাসের শুরুর দিকে দিন সাতেকের মধ্যে জাতীয় ও ধর্মীয় দুটি দিবস ও উৎসব প্রবহমান জীবনধারাকে রাঙিয়ে দিয়ে আনন্দময় ঢেউ জাগায়। প্রথমটি স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তার অভ্যুদয়ের ৫৪তম বার্ষিকী। দ্বিতীয়টি পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আর পাশাপাশি দুটি দিবস পালন ও উদযাপন অত্যন্ত তাৎপর্যময়। আমাদের জীবনধারায় পালিত ও উদ্যাপিত এই দু’টি দিনই ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। আত্মপলব্ধি ও পরিশুদ্ধির মাধ্যমে দেশ, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিকে সাম্য, মৈত্রী ও মুক্তির বন্ধনে আবদ্ধ করার দীক্ষা দেয়।
একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বাঙালি নিধনে অপারেশন ক্রাকডাউন শুরুর সাথে সাথেই ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়েই বীর বাঙালির ‘স্বাধীনতা’ নামক সূর্যটি পূর্বদিগন্তে উদিত হয় এবং শুরু হয় নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র জনযুদ্ধ। এই জনযুদ্ধের বিজয় সাধিত হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং ৩০ লক্ষ বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমায়। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য এত বিশাল ত্যাগের দ্বিতীয় নজিরটি নেই। তাই বাঙালির স্বাধীনতা দিবস বিশাল ও অফুরন্ত ত্যাগের এক তুলনাবিহীন নিদর্শন। নীল আকাশের জ্বলজ্বলে ধ্রুবতারার মত চিরসত্য।
পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উদ্যাপিত ও পালিত হয় ৩০ দিনের উপবাস, সংযম, এবাদত ও অফুরন্ত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে পরম প্রাপ্তি ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মহিমায় উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উদযাপন এবং এই উদযাপন উৎসবে পরিণত হয় বলেই সর্বজনীন। ধর্মের শুদ্ধ পবিত্রতার স্পর্শে কল্যাণ, মঙ্গল, শান্তি ও সাম্যের বারতাটি তখন সকলের জন্য সমার্থক হয়ে উঠে। তাই ঈদ-উল-ফিতর ধর্মীয় ভাবাবেগের মাহাত্ম্যটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগে আমাদের সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসব আনন্দ ও মহামিলনের সেতুবন্ধন।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে সকলকে শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারক।