এখন সময়:বিকাল ৫:৫২- আজ: সোমবার-২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

এখন সময়:বিকাল ৫:৫২- আজ: সোমবার
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ: দর্শনের বিজ্ঞান

রাজেশ কান্তি দাশ

দর্শনের ক্ষেত্রে বস্তু ও ভাবের দ্বন্দ্ব অতি প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। বস্তুবাদী দার্শনিকেরা মনে করেন বস্তু থেকে জাগতিক সব কিছুর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক থ্যালিস (৬২৪-৫৪৭ খ্রি. পূর্ব) ভাবতেন জল থেকে সব কিছুর উৎপত্তি। কারণ গ্রীসে তখন নদী ও জলরাশির প্রাচুর্য ছিল। জলকে তিনি জীবনদায়ী শক্তি মনে করতেন। দার্শনিক হিরাক্লিটাস (৫৪৪-৪৮৩ খ্রি. পূর্ব) আগুনের সর্বগ্রাসী শক্তি দেখে মনে করতেন সবকিছু এসেছে আগুন থেকে। থ্যালিসকে বস্তুবাদের জনক বলা হয়। কারণ বস্তু থেকে সবকিছুর উৎপত্তি— এই কথাটা তিনিই প্রথম তুলে ধরেন। ডেমোক্রিটাস (৪৬০-৩৭০ খ্রি. পূর্ব) মনে করতেন, বস্তুগত কণা, অণু হলো প্রধান। বাকি সবকিছু গৌণ। এই অণু থেকেই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। এই বস্তুবাদী দার্শনিকদের মতে বস্তুজগত প্রধান। ভাবজগত হচ্ছে অপ্রধান। ভাবজগত বস্তুজগতের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। অন্যদিকে দার্শনিক সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খ্রি. পূর্ব) মনে করতেন বিশ্বজগতকে জানা যায় না। বিশ্বপ্রকৃতি অজ্ঞেয়।

তার কাছে মূল বিষয় ছিল নিজেকে জানা। তিনি আজীবন ভাববাদের পতাকা বহন করেছেন। প্লেটো (৪২৭-৩৪৮খ্রি. পূর্ব) মনে করতেন, জগত সৃষ্টির পিছনে মন বা ভাব প্রধান এবং ভাব থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি হয়েছে। তার মতে বস্তুজগত হচ্ছে অপ্রধান। এই ভাবজগতের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বস্তুজগত। বস্তুজগত ভাবজগতের নিয়ন্ত্রনাধীন। প্লেটোকে ভাববাদের জনক বলে গণ্য করা হয়। প্লেটোর পর আসেন এ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রি. পূর্ব)। এ্যারিস্টটল সম্পর্কে এঙ্গেলস বলেন যে তিনি ছিলেন প্রাচীন কালের সর্বশ্রেষ্ট প্রতিভা। এ্যারিস্টলের বক্তব্য হলো পরস্পর বিরোধী। তিনি এক মধ্যবর্তী অবস্থান রক্ষা করতে প্রয়াস পান। তিনি বস্তুবাদ ও ভাববাদ এই দুয়ের মধ্যে দোদুল্যমানতা দেখান।…সামগ্রিকভাবে বিচার করলে তার মতবাদ হলো বাস্তব ভাববাদী মতবাদ।…তার এই ভাববাদী মতবাদের নিজস্ব একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই জন্য লেনিন মন্তব্য করেন যে, তার মতবাদ হলো “অধিকতর বাস্তবধর্মী, প্লেটোর ভাববাদের থেকে আরও দূরে অবস্থিত ও আরও সাধারণ। সেইজন্য প্রকৃতিকে বিচার করার পরিপ্রেক্ষিতে তার দর্শন অধিকতর পরিমাণে বস্তুবাদ্”ী।১

 

মার্কসের দর্শন বস্তুবাদী। মার্কস মূলত তার দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সংক্রান্ত ধারণাটি নিয়েছিলেন জার্মান ভাববাদী দার্শনিক হেগেল ও বস্তুবাদী দার্শনিক ফুয়েরবাক থেকে। বলে রাখা ভালো, দ্বান্দ্বিক বা Dialectic শব্দটি এসেছে গ্রীক Dialego শব্দ থেকে। Dialego শব্দটির অর্থ কথোপকথন বা আলোচনা। Dialectic-এর ্অর্থ হল বিতর্ক বা আলোচনার মধ্য দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। আর বস্তুকে (যার ওজন ও আয়তন আছে এবং যা ইন্ত্রিয়গ্রাহ্য) প্রাধান্য দিয়ে যে আলোচনা তা বস্তুবাদ নামে পরিচিত। হেগেলের তত্ত্বটি দ্বান্দ্বিক ভাববাদ (Dialectical Idealism) ও ফুয়েরবাকের তত্ত্বটি যান্ত্রিক বস্তুবাদ (Mechanical Materialism) নামে পরিচিত। হেগেলের ভাববাদে ছিল মনের প্রাধান্য। অলৌকিকতা। তবে তিনি বিশ্বজগতকে ব্যাখ্যা করেছিলেন দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এখানেই তার শ্রেষ্ঠত্ব। হেগেলের মতে, জগতের সৃষ্টি, বিকাশ ও রূপান্তরের পেছনে রয়েছে ভাবের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া। তার মতে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই শাশ্বত নয়। সবকিছুই পরিবর্তনশীল। ভাব বা চৈতন্যের দ্বন্দ্বের ফলেই এ পরিবর্তন ঘটে। তিনি মনে করতেন ভাবজগতের দৃশ্যমান রূপ হলো বস্তুজগত। বস্তুজগত যেহেতু ভাবের প্রতিফলন মাত্র, তাই ভাবের পরিবর্তন বা বিকাশের সাথে সাথে বস্তুজগতের পরিবর্তন ও বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে ফুয়েরবাক বস্তুবাদের কথা বলে হেগেলের ভাববাদকে অস্বীকার করলেও তিনি জগত ব্যাখ্যায় দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার বদলে আধিবিদ্যক পদ্ধতি গ্রহণ করেন। ফলে ফুয়েরবাকের বস্তুবাদ ছিল নির্জীব, যান্ত্রিকতাসম্পন্ন, ঘটনার কার্যকারণ সর্ম্পকে বশীভূত। মার্কস হেগেল থেকে দ্বান্দ্বিকতার যৌক্তিক সারবত্তা নিয়েছিলেন আর ভাববাদ নামক জঞ্জাল বাদ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে মার্কস ফুয়েরবাক থেকে বস্তুবাদের “অন্তর্নিহিত সারভাগটুকু” গ্রহণ করেছিলেন আর আধিবিদ্যক পদ্ধতি অর্থাৎ আনুষঙ্গিক ভাববাদী এবং ধর্ম ও নীতি সম্পর্কীয় জঞ্জাল বর্জন করেছিলেন। ফুয়েরবাকের হাতে যে বস্তুবাদ প্রাণহীন বস্তুবাদে পরিণত হয়েছিল মার্কস ও এঙ্গেলস সে বস্তুবাদকে জীবন্ত বস্তুবাদে রূপান্তরিত করেন।… এবং একে বস্তুবাদের সর্বজনীন বৈজ্ঞানিক দার্শনিক তত্ত্ব হিসেবে বিকশিত করেন২। এই দ্বৈত চিন্তার নির্যাস থেকে মার্কস গড়ে তুলেছিলেন তার দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সংক্রান্ত তত্ত্বটি। মার্কস তার পুঁজি গ্রšে’র দ্বিতীয় জার্মান সংস্করণের উত্তরভাষে বলেছেন, “আমার ডায়ালেকটিক পদ্ধতি হেগেলের পদ্ধতি থেকে শুধু যে ভিন্ন তা নয়, তার একেবারে বিপরীত। হেগেলের মতে মনুষ্যমস্তিষ্কের জীবনপ্রক্রিয়া অর্থাৎ চিন্তনপ্রক্রিয়া, ‘ভাব’ নামে যাকে তিনি একটি স্বতন্ত্র সত্তায় পরিণত করেছেন, তা হল বাস্তব জগতের স্রষ্টা এবং বাস্তব জগত সেই ‘ভাবের’ দৃশ্যমান বাহ্যরূপ মাত্র। পক্ষান্তওে, আমার মতে মানব মনের মধ্যে বাস্তব  জগত প্রতিফলিত হয়ে চিন্তার যে বিভিন্ন রূপে পরিণত হয়, ভাব তা ছাড়া আর কিছু নয়”।৩

মার্কসের মতে, বস্তুজগত ভাবজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ জীবন চেতনাকে পরিচালিত করে। এখানে জীবন মুখ্য এবং চেতনা গৌণ। তার মতে, চেতনা জীবন থেকে উৎপন্ন হয়। মার্কসের দ্বন্দ্বতত্ত্ব বস্তুর ওপর গুরুত্ব দেয়। তিনি মনে করেন, বস্তুর মধ্যে দ্বন্দ্ব সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই ক্রিয়াশীলতার ফলে বস্তু ভাঙে এবং গড়ে। দ্বন্দ্বই বস্তুবাদের নিয়ম। তার মতে,  কোনো বস্তুর দুটি অংশের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে নতুন বস্তু সৃষ্টি হয়। যার প্রথম অংশটিকে স্থিতি বা বাদ দ্বিতীয় অংশটিকে প্রতিবাদ এবং নতুন সংশ্লেষকে সম্বাদ বলা হয়। এটাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ (Dialectical materialism) নামে পরিচিত। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ডিমের দুটি অংশ থাকে— সাদা ও হলুদ অংশ। সাদা ও হলুদ অংশের মধ্যে ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে জন্ম নেয় নতুন সত্তা, বা”চা। এখানে সাদা অংশকে স্থিতি বা বাদ (Thesis),  হলুদ অংশকে প্রতিবাদ (Anti thesis), নতুন সত্তাকে সম্বাদ (Synthesis)  বলা হয়। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের তিনটি সূত্র রয়েছে:

ক. বৈপরীত্যের ঐক্য ও দ্বন্দ্বের নিয়ম (Law of unity and conflict of opposites): দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে প্রতিটি বস্তুর মধ্যে পরস্পর বিরোধী প্রবণতা (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) বিদ্যমান। এই পরস্পর বিরোধী প্রবণতা আছে বলেই বস্তু ও ঘটনার মধ্যে স্ববিরোধীতা থাকে। এই স্ববিরোধীতা বা অর্ন্তর্দ্বন্দ্ব বস্তুর পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। একই কথা সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সমাজের মধ্যে পরস্পর বিরোধী প্রবণতা বা অর্ন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই সমাজের পরিবর্তন ঘটে। যেমন— দাস সমাজে দাসমালিক ও দাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্বের ফলে দাস সমাজের পতন ঘটে। এটা বৈপরীত্যের দ্বন্দ্ব। এর ফলে সামন্তবাদের উদ্ভব হয়। অর্থাৎ সামন্তবাদী সমাজের নীতি আদর্শ সর্ম্পকে দাসমালিক ও দাসের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়। এটাই বৈপরীত্যের ঐক্য। এই দুটো মিলে স্থাপিত হয় বৈপরীত্যের ঐক্য ও দ্বন্দ্বের নিয়ম। একইভাবে পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটে। দ্বন্দ্ব দু রকমের হতে পারে। বৈরি দ্বন্দ্ব ও অবৈরি দ্বন্দ্ব। পুঁজিবাদে পুঁজিপতির সাথে শ্রমিকশ্রেণির দ্বন্দ্ব হলো বৈরি দ্বন্দ্ব। এটা আদর্শিক। তাই এই দ্বন্দ্বের প্রকৃতি হলো শত্রুতামূলক। এই দ্বন্দ্ব নিরসনের পথ হলো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। সাম্রাজ্যবাদের সাথে অনুন্নত দেশের নিপীড়িত মানুষের যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান তা হলো বৈরি দ্বন্দ্ব। এর প্রকৃতিও শত্রুতামূলক এবং সমাধানের পথ হলো জাতীয় বিপ্লব। সামন্তবাদের সাথে পুঁজিবাদের দ্বন্দ্বও বৈরিমূলক দ্বন্দ্ব। অর্থাৎ শত্রুতামূলক। এর সমাধান গণতান্ত্রিক বিপ্লব। আবার শ্রমিকশ্রেণির সাথে পেটি বুর্জোয়া-সহ অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে তা হলো অবৈরি দ্বন্দ্ব। জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যেও দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এর প্রকৃতি হলো অশত্রুতামূলক। এ দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য আলাপ-আলোচনা-সহ ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করে এর মীমাংসা করা যেতে পারে।

খ. পরিমাণ থেকে গুণগত পরিবর্তনের নিয়ম (Law of transition of quantity into quality): দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে বস্তু তার গুণগত পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। পূর্বেকার রূপের অস্বীকৃতি তার মধ্যে উল্লম্ফন সৃষ্টি করে। এক গ্লাস জল ৯৯ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা পর্যন্ত বাষ্পে পরিণত হয় না। কিন্তু যখন আরও ১ ডিগ্রি যোগ করা হয় অর্থাৎ ১০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় রূপান্তরিত হয় তখন তা বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে বস্তুর মধ্যে একটা গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটাই হলো বস্তুর পরিমাণ থেকে গুণগত পরিবর্তনের নিয়ম। ডিম বাচ্চায় রূপান্তর হলে অনুরূপ পরিবর্তন ঘটে। মজুর শ্রমিকরা যখন পুঁজিপতিদের হটিয়ে কারখানার মালিক হয়ে ওঠে তখন তাদেও পরিবর্তিত অবস্থাকে গুণগত পরিবর্তন বলা যায়।

গ. নেতির নেতিকরণ সংক্রান্ত নিয়ম (Law of negation of negation): দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে বস্তু তার পূর্বের অবস্থায় যেতে চায় না। সে তার পূর্বের অবস্থাকে অস্বীকার করে। ফুলকে যেমন মুকুল করা যায় না তেমনি সন্তান ভ্রূণ হতে চায় না। বস্তুবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণার ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। সমাজ ব্যব¯’ায়ও এর অনিবার্যতা বিদ্যমান। যেমন- পুঁজিবাদ আবার সামন্তবাদ হতে চায় না কিংবা সামন্তবাদ দাস সমাজে ফিরতে চায় না। এই অস্বীকারকরণ ক্রমবিকশিত প্রতিটি সমাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটাই বস্তুর নেতির নেতিকরণ সংক্রান্ত নিয়ম।

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের এই তিনটি নিয়মের প্রয়োগ বস্তুর গঠন ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। মার্কস মনে করতেন, প্রকৃতিবিজ্ঞানের ঘটনা যেমন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে (গাছ থেকে আপেল পড়ার কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি) তেমনি সমাজের বিকাশ কিংবা পরিবর্তন বস্তুর দ্বান্দ্বিক চরিত্র অনুসারে সম্পন্ন হয় (Dialectical nature of matters determine social change and development)কারণ দ্বন্দ্বতত্ত্ব অনুসারে সকল বস্তুর মধ্যেই বৈপরীত্য, অসামঞ্জস্য বা অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং ঐ দ্বন্দ্বের ফলে বস্তুর মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। সমাজের পরিবর্তনে ভাব বা পরম সত্তার কোনো হাত নেই। তার মতে সমাজে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, সেই দ্বন্দ্বই সমাজকে বিকশিত করে। সমাজে বিদ্যমান বিপরীতধর্মী দুটি শ্রেণির মধ্যে সংগ্রামের ফলেই সমাজ বিকশিত হয় (Development of the society is the result of the struggle between two contradictory classes) বস্তুর দ্বন্দ্বনীতিকে যখন সমাজ বিশ্লেষণে প্রয়োগ করা হয় তখন তা হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (Historical materialism)

 

ফরাসি দার্শনিক ল্যুই আলথুসার মার্কসের অবদানকে শনাক্ত করতে গিয়ে দাবি করেছিলেন, মার্কসের ‘দর্শন আদতে বিজ্ঞান’।৪ দর্শনের ক্ষেত্রে মার্কস হেগেলের উল্টো মানুষটিকে স্বাভাবিকভাবে স্থাপন করেছিলেন মাত্র। অর্থাৎ হেগেলের পা উপরে ও মাথা নিচে রাখা মানুষটাকে সঠিকভাবে দাঁড় করালেন— মাথা উপরে দিয়ে পা নিচে রাখলেন। তিনি দর্শনকে সঠিকভাবে পথ দেখিয়েছেন। তার অন্ধকার পথ মসৃণ করেছেন। প্রায়োগিক পথের সন্ধান দিয়ে ঝলমল আলো তার ওপর ছড়িয়েছেন। বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দিয়েছেন। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সংক্রান্ত দর্শনকে তাই অনেকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলে থাকেন।

 

তথ্যনির্দেশিকা:

১. কমরেড আব্দুল হক গ্রন্থাবলী, সম্পাদনা-রমেন ঘটক চৌধুরী, প্রকাশক-ডা. এম. এ. করিম, পরিবেশক-চলন্তিকা বইঘর, ঢাকা,

প্রথম প্রকাশ ২২ ডিসেম্বর ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ২১৮-২১৯

২. ঐ, পৃষ্ঠা ২৩৩

৩. কার্ল মার্কস, পুঁজি, খন্ড ১ অংশ ১, সম্পাদনা-প্রফুল্ল রায়, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো ১৯৮৮:৩২-৩৩

৪. কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস, জার্মান ভাবাদর্শ, অনুবাদ-গৌতম দাস ২০০৯:২০

 

 

রাজেশ কান্তি দাশ, প্রাবন্ধিক, সিলেট

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না

শোয়েব নাঈম শব্দের মধ্যেই থাকে জীবনের আসল দর্শন। শব্দের কারণেই মানুষ হয় নির্বাসিত। এখন মঙ্গলের অমরতায় ঘামছে গ্রীষ্মের বৈশাখ মাস। মঙ্গল এই শব্দবোধে যতটা কল্যাণ

চীনের মতো আমাদেরও ভাবা উচিত

আমির হোসেন চীনে ফেসবুক, ই’নস্টাগ্রা’ম, ইউটিউব, গুগল, গুগল ম্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ, এমনকি ক্রোম ব্রাউজারও ব্যান! শুরুতে শুনে বিরক্ত লাগলেও এখন বুঝতে পারছি- ওরা আসলে অনেক আগেই

গল্পশূন্য জীবনের ইতিকথা

আন্দরকিল্লা ডেক্স : আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন

সংস্কার চাই : চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

নিখিল রঞ্জন দাশ সম্প্রতি চট্টগ্রাম এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামকে আগামী ২৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনকে দেয়া হবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজনে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের ৬০

চল্লিশ বছর পর জীবনের প্রথম প্রেম আবার ঝড় তুলল মৈত্রেয়ীর জীবনে “মির্চা, মির্চা আই হ্যাভ টোল্ড মাই মাদার দ্যাট ইউ হ্যাভ কিসড মাই ফোরহেড'”

নহন্যতে উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবীর এই উক্তি টি অবশ্যই পাঠকদের মনে আছে? মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর প্রেম কি শুধুই প্রেম ছিল নাকি সেই সাথে কিছু